সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............
আটলান্টিক সিটিঃ "য়্যড সাম নাইট টু ইয়োর লাইফ"!-২
প্রথম পর্বঃ- Click This Link
ভিন্ন ভিন্ন মেশিনে ভিন্ন ভিন্ন এমাউন্টের খেলা- খেলা যায়। কোন কোন মেশিনগুলোতে মাত্র ২৫ সেন্ট থেকে শুরু করে এক ডলার প্রতি পয়েন্টে খেলতে পারেন। মেশিনে ডলার ঢু্কানোর যায়গায় ২০ ডলার ঢুকালে যদি ২৫ সেন্টের মেশিন হয় তাহলে ডিসপ্লে স্ক্রীনে ৫০০ পয়েন্ট আপনার ক্রেডিট দেখাবে। তারপর আপনি প্রতিবার বাটন টিপবেন একপয়েন্ট করে কাটা যাবে। বাটন টিপলে স্ক্রীনের পাশাপাশি চারটি বিভিন্ন ছবি স্থির হবে।
যদি একই রকম ছবি যেমন পাশাপাশি ৪ টা হার্ট, কিম্বা ৪ তা স্প্রেড, ডায়মন্ড কিম্বা অন্য যেকোন ৪ টি একই ধরনের তাসের ছবি এসে যায়-তাহলেই বাজী মাত! ঝনঝন করে আপনার ক্রেডিট বাড়তে থাকবে। এমনকি আপনি ২০ ডলার দিয়ে পেয়ে যেতে পারেন ২০০ ডলার কিম্বা ২০০০ ডলার!যদি সবগুলোই কিং/কুইন কিম্বা ফোর ট্রাম্প (চার টেক্কা) লেগে যায়-তাহলেতো আপনিই ঐ দিনের রাজা বনগিয়া! কেউ কেউ পেয়েও যায়-তখন শোনা যায় উল্লাশ ধ্বনি! আপনি খেলা শুরু করে যেকোন সময় ইচ্ছামত খেলা শেষ করতেও পারেন। খেলা শেষ করতে চাইলে ক্যাশ বাটন টিপলেই আপনার পাওনা টাকার স্লীপ বেড়িয়ে আসবে। এই টাকা ক্যাশ করতে চাইলেও অসুবিধা নেই। অন্য মেশিনে ঐ বারকোডওয়ালা স্লীপ্টা ঢুকালেই নগদ ডলার বেড়িয়ে আসবে।
আমরা আমাদের ফাউ পাওয়া ২০ ডলার দিয়ে খেলা শুরু করি। ডলারের যায়গায় ক্রেডিট কার্ড ঢুকালেও কোন অসুবিধা নেই। আপনি আপনার ক্রেডিট কার্ডের কত টাকা খেলবেন তা আগেই নির্ধারন করতে পারেন আবার আপনার ইচ্ছামত যেকোন সময় তা বাড়ানো-কমানো যেতে পারে। আমরা ৬ জন আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম-আমরা হারি কিম্বা জিতি কোন অবস্থাতেই ১০০ ডলারের বেশী খেলবোনা। খেলায় পুরো ১০০ ডলার হেরেও এই সিদ্ধান্তে শুধু আমি একাই অটল থাকতে পেরেছিলাম।
অন্যরা কেউ ৩০০ ডলার থেকে ২০০০ ডলার পর্যন্ত খেলেছিল এবং যথারিতি হেরেছিল। আমি ২৫ সেন্টের মেশিনে বসে খেলা শুরু করি-নিশ্চিত হারবো জেনেই। কিন্তু আমি কম হারতে চাই এবং দীর্ঘ সময় ধরে খেলে হারতে চাই-তাই আমার এমন ছোট এমাউন্টের মেশিন বেছে নেয়া। আমাদের বাস নিউইয়র্ক ছেড়ে যাবে সকাল ৫ টার সময়। সারারাত খেলতে হবে-আমার সময় কাটাতে হবে এভাবেই.........।
১০ ডলার হারার পর হয়ত ৮ ডলার জিতি। আবার হারতে থাকি, হয়ত অনেক্ষণ পর আবার কিছু জিতি। এই জিতে যাওয়াই হয় জুয়াড়ীদের কাল! হঠাত অনেক টাকা জেতার স্বপ্ন নিয়ে মানুষ নেশায় পড়ে যায়। খেলতে খেলতে শেষ পর্যন্ত সর্বশান্ত হয়ে ঘরে ফেরে। আমার ধারনা-মাত্র ১০% লোক খেলায় জিতে, ৯০% লোক শুধু .....।
আমরা ৬ বন্ধু যেযার মত করে খেলতে থাকি। কিছু হারি, কিছু জিতি, ভাগ্য বদলের আশায় মেশিন বদল করি। এভাবেই চলতে থাকে। সুন্দরী মেয়েরা এসে কি খাবো জানতে চায়। ড্রীংকসের কথা বলতেই মুহুর্তের মধ্যে ড্রিংকস নিয়ে হাজির।
বন্ধুরা অভ্যস্ত। তাদের শ্লোগান হলো-"বিনে পয়শায় যত পারো খেয়ে নাও"। এখানে সফট ড্রীংক তেমন একটা নেই, সব হার্ড......... রংগীন পানিতে মাতোয়ারা। যেমেয়েটি ড্রিংকস সার্ভ করছিল-তাকে ১ ডলার বখশিস দিতেই মুখে চমতকার হাসি ফুটিয়ে থ্যাংকস জানিয়ে চলে যায়। আবার খানিক পর এসে জানতে চায়-কী খাবো? আমাদের ফাঊ পাওয়া ২০ ডলার ইতোমধ্যে শ্লট মেশিনের উদর পুর্তি হয়েছে।
নিজের গাটের নির্দিস্ট পয়সায় হাত দিয়েছি-ইতোমধ্যে আমার এমাউন্টের অর্ধেক শেষ। ক্ষুধা অনুভব করায় আমরা ৬ জন ক্যাসিনো থেকে বেড়িয়ে ব্রড ওয়াক এয়্যভিন্যু ধরে হেটে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে চিকেন ফ্রাই, পিজা এবং কফি দিয়ে ডিনার করি।
ডিনার শেষে আবার ফিরে যাই ক্যাসিনোতে। নতুন মেশিনে নতুন খেলায় মেতে ঊঠি। আমি আর বন্ধু ফরিদ যতটানা খেলি-তার চাইতে বেশী ঘুরে দেখি।
ফরিদ মুলত আমার জন্যই আমার সাথে ঘুরে ঘুরে আমার কৌতুহল মেটাতে সাহায্য করছে। এখানে বিনোদনের "যতরকম" আছে-সবই মিলবে......। যার যেমন চাহিদা-তাই বেছে নিতে হবে। দোতলায় ডিসকো দেখতে গিয়ে আমার চোখতো চড়কে ওঠে! বুক কাঁপানো মিউজিকের শব্দ এবং উদ্দ্যাম নৃত্য দেখে কিছু সময় কাটাই। আমেরিকান মেয়েরা আমেরিকার মতই রীচ এবং অভিজাত।
গায়ের রঙ, ফিগার এবং নৃত্যে আভিজাত্য ফুটে ওঠে। স্বল্পবাস উদ্ধত যৌবন ধরে রাখতে পারেনা, পাপড়ী ছড়ানো গোলাপের মতো ফুটে থাকা শরির দেখতে আনন্দই লাগে! সমুদ্রের পাড়ের এই বিনোদন শহরে সারা পৃথিবী থেকে কত রকম মানুষ এসেছে! এটি পুরোপুরি আনন্দের শহর। এখানে এলে মনেই হবেনা এখানে মৃত্যু আছে, এখানে জ্বরা আছে, দুঃখ কস্ট আছে! এখানে এসে শুধু মনে হবে-এখানে শুধু আনন্দ। আনন্দই জীবন। এখানে আমিই রাজা, আমিই সম্রাট! এখানে কোন সামাজিক বন্ধন নেই, এখানে যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবাই এখানে ভাসছে শুধু আনন্দের বন্যায়।
আমরা ট্রাম্প তাজমহল ক্যাসিনোর দিকে এগিয়ে যাই। এর বিশালত্ব আর আলো ঝলমল রুপ দেখে অভিভুত হয়ে যাই। এটি এতোই বিশাল যে-আসল আগ্রার তাজমহলের মত কয়েকটি তাজমহল এর ভিতরে ঢুকে যাবে। তাজমহলের স্থাপত্য কলার সাথে মিল রেখে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। আমি ট্রাম্প তাজমহলের একটা শর্ট ব্রীফ স্যুভেনির চেয়ে নিলাম ইনফর্মেশন সেন্টার থেকে।
এটির নির্মাতা/ মালিক মিঃ ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার কোম্পানীর নাম ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল রিসোর্ট। তাজমহল ছারাও এই আটলান্টিক সিটিতে তার আরো কয়েকটি বিখ্যাত ক্যাসিনো আছে। এই তাজমহল ক্যাসিনোতে আছে-১২৫০ টি রুম, ২৩৭ টি সুইট। প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ১৯৯০ সনে ট্রাম্প তাজমহলের যাত্রা শুরু হয়।
১,৫৮,৫০০ বর্গ ফুট আয়তনের এই বিশাল ক্যাসিনো রিসোর্টে শতশত জুয়ার শ্লট মেশিন ছাড়াও আছে-হুইল ফর ফরচুন সুপার স্পীন, এলভিস মাল্টি স্ট্রাইক, ফিফটি লাইন, ডিল অর নোডিল, ক্যাশ একপ্রেস হাইপার লিংক, নানা ধরনের পোকার গেইম, ভিডিও মাল্টি কয়েন গেইম। চমতকার টেবিল গেইমে আছে, যেমন-ট্রাই ইওর লাক, ব্লাক জ্যাক ইত্যাদি। আরো রয়েছে-আকর্ষনীয় হার্ডরক ক্যাফে, আছে নানান স্বাদের নানা আকারের ৮ টি অভিজাত রেস্টুরেন্ট। ১৮৫৪ সালে আটলান্টিক সিটির গোড়াপত্তন হয়। নিউ জার্সির অন্তর্গত ফিলাডেলফিয়ার কাছে।
মাত্র ৫০ বর্গ কিঃমিঃ আয়তনের এই দ্বীপ দেশের জনসংখ্যা মাত্র ৪০ হাজার। এটি প্রকৃতপক্ষের একটি রিসোর্ট টাউন। চমতকার সমুদ্র সৈকত, বিনোদন এবং গ্যাম্বলিং এর জন্য বিখ্যাত।
"য়্যাড সাম নাইট টু ইয়োর লাইফ"-এই শ্লোগান নিয়ে এমজিএম গ্রান্ড আটলান্টিক সিটি তৈরী করছে সিটি সেন্টার ইস্ট নামে আরো একটি বিশাল রিসোর্ট ক্যাসিনো। ৭২ একর জমির উপড় নির্মাণাধীন এই রিসোর্টে থাকবে ৩০০০ স্যুইট এবং তা হবে প্রতিটি আলাদা আলাদা নকশায়।
সেখানে থাকবে ১৫০০ সীটের থিয়েটার হল, কনভেনশন সেন্টার, ম্যাসেজ পার্লার, রেস্টুরেন্ট, নাইট ক্লাব, ডিসকো, পাব এবং ৫ লক্ষ বর্গ ফুটের রিটেইল সেন্টার। ওখানে জুয়া খেলার জন্য যে ফ্লোর তৈরী হচ্ছে-তাতে শ্লট মেশিন থাকবে ৫০০০ টি, ২০০ টি টেবিল গেইম এবং ৩ টি পোকার রুম। এটির নির্মাণ কাজ ২০১২ সালে.
আমেরিকায় যারা বেরাতে যাবেন তাঁরা এই চমতকার বিলাশবহুল সৌন্দর্য আর নানা বিনোদনের শহর আটলান্টিক সিটিতে যেতে ভুলবেননা এবং "য়্যড সাম নাইট টু ইয়োর লাইফ"!
শেষ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।