আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আটলান্টিক পাড়ের, কাসাব্লাংকায়

কিছু দেশ দেখার সুযোগ হয়েছে এই জীবনে। ভ্রমণ আমার ভাল লাগে্‌ তাই সবার মাঝে তা জানাতে চাই। সবার উপরে ভালোবাসি বাংলাদেশ । ধন্যবাদ পুরানা বাজার - কাসাব্লাংকা নিউইয়র্ক জন এফ কেনেডি এয়ারপোর্ট থেকে রয়াল এয়ার মারক এ আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে ভোর ৭ টার দিকে কাসাব্লাংকা পঞ্চম মোহাম্মদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমার প্লেন ল্যান্ড করল । রানওয়েতে নেমে সাটল বাসে করে টার্মিনাল বিল্ডিং এ এলাম ।

মরক্কোতে শীতের জন্য ঘন কুয়াশা এবং বেশ ঠান্ডা। ট্রান্সফার ডেস্ক এ এসে জানলাম ইমিগ্রেশন ফরমালিটিজ শেষ করে হোটেলে যেতে হবে । মরক্কোর ভিসা আগেই নিয়ে এসেছিলাম । লোকজন আরবী ও ফ্রেঞ্চ ভাষায় কথা বলে । এয়ারপোর্ট তেমন জাকজমকপুর্ণ মনে হলো না এবং মানুষের ব্যবহারও তেমন পছন্দ হলো না ।

সবকিছু কেমন যেন ঢিলেঢালা । মনে হলো এরা হোটেলে না নিতে পারলেই যেন খুশি । বাইরে এসে পাশের বিল্ডিং এর দোতালায় এলাম । এখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর হোটেলের কাগজ ও কার্ড দিল । হোটেলের নাম আজুর হোটেল থাকার পাশাপাশি আমাকে ব্রেকফাষ্ট ও লাঞ্চের কুপন দিল ।

তারপর সাথের জিনিষপত্র নিয়ে বাসে এসে বসলাম । বাসও তেমন একটা আরামপ্রদ না কেমন যেন চনমনে ভাবটা নেই মনে । আমেরিকা যাওয়ার পথেও কাসাব্লাংকা এয়ারপোর্টে ট্রানজিট লাইঞ্জে ছিলাম । তখন ভাবছিলাম ফেরার পথে দেশটা আরও কাছে থেকে দেখা যাবে । এরা মাগরেব আরব,কালো ও সাদা দুই বর্ণেরই মানুষ এখানে আছে ।

তবে আরবরা সংখ্যায় বেশী । মধ্যপ্রাচ্যের আরবদের মতো এদের তেমন সম্পদ না থাকায় জৌলুষ কম । যাক অনেকক্ষণ বাসে বসে ছিলাম, বাস আরও যাত্রী আসে কিনা সে জন্য অপেক্ষা করছিল । কাসাব্লাংকা শহরটা নতুন ও পুরানো মিলে । পুরানো মাটির বাড়ীঘর ভেংগে নতুন ডিজাইনে তৈরী হচ্ছে ।

সবকিছু পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে । আগের গরীবি অবস্থা সব জায়গাতে দেখা যাচ্ছে । লাল বা মেটে খয়েরী ধরনের মাটি,মরুভূমির মত তবে কিছু ঘাসও আছে। এয়ারপোর্ট শহর থেকে দুরে, আশেপাশে তেমন কোন স্থাপনা নেই । দুই লেনের রাস্তা , রাস্তায় তেমন কোন ট্রাফিক নেই ।

তবে নিয়ম কানুন আমেরিকাতে যা দেখে এসেছি তার তুলনায় অনেক বাজে । রাস্তায় মানুষ জন তেমন একটা দেখলাম না । চল্লিশ মিনিট বাসে ভ্রমণ করে আমরা হোটেলে এসে পৌছালাম । হোটেলটা মুল শহর এর এক কোনায় আটলান্টিকের পাড়ে টুরিষ্ট এলাকায় । ৩ তলায় রুম পেলাম ।

সাধারণ দুই/তিন তারা হোটেল আহামরি কিছু নয় । তবে টুরিষ্ট এ ভর্তি । হোটেলের রিসিপশান বা আশপাশও তেমন আকর্ষনীয় করে সাজানো না । রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করতে নীচে ডাইনিং এ এলাম । এখানে নাস্তা বেশ সীমিত ।

ব্রেড বাটার, এক গ্লাস জুস ,কেক ও কফি , পানি কিনে খেতে হবে কোন রকমের পানি সরবরাহ করা হয় না । এ দেশে খাবার পানির অভাব বোঝা গেল । আমাদের দেশে পানির এই সমস্যা আমরা কখনো বুঝিনি। উত্তর আফ্রিকায় আগে মিশর দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল । আল্লাহতায়ালা আজ মরক্কোর কাসাব্লাংকা শহরে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন ।

আলহামদুলিল্লাহ । একজন পর্যটক হিসেবে আমি শহরটা ঘুরে দেখার জন্য প্রস্তুতি নিলাম । মরক্কো এখনও রাজা দ্বারা শাসিত । আরব দেশ গুলোর মত রাজতন্ত্র এখানে । মানুষরা স্বাধীন ভাবে থাকলেও তাদের পেছনে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দারা মনে হয় নজরদারী করে ।

কেউ মন খুলে কিছু বলে না । এদিক ওদিক দেখে । মরক্কোর রাজধানী রাবাত এ কোন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর নেই । কাসাব্লাংকায় নেমে গাড়ীতে করে যেতে হয় । এটাও এক ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ।

১১ টার দিকে বেশ রোদ । রোদের তাপও বাড়ছে শীত শীত ভাবটা আর নেই । হোটেল রিসিপশন থেকে হোটেল এর কার্ড নিলাম ও শহর দেখার কথা বলায় ট্যাক্সি করে ঘুরে দেখতে বলল । আমি হোটেলের কাছে পার্কিং করা ট্যাক্সি ডাকলাম । ১০০ দেরহাম দিয়ে শহর দেখার জন্য ট্যাক্সি ঠিক করলাম ।

এটা প্রায় ১২ ডলারের মত । এসব ট্যাক্সি ড্রাইভার ট্যুরিষ্টদেরকে সবসময় শহর ঘুরিয়ে দেখায় । ট্যাক্সি নিয়ে শহর দেখতে বের হলাম । রাস্তঘাট প্রায় ফাঁকা । তাপমাত্রা বেশ।

এখানে অনেক যতেœর সাথে সবুজকে ধরে রাখার চেষ্টা অব্যাহত আছে । কাসাব্লাংকা - মরক্কো আমরা আটলান্টিক মহাসাগরের পাড় থেকে শহরের দিকে চলছি । পথে সৌদি বাদশাহ এর প্রাসাদ দেখলাম । বাদশাহ মরক্কোতে বেড়াতে এলে এই প্রাসাদে অবস্থান করেন । বিশাল এলাকা জুড়ে সুরম্য প্রাসাদ দেয়াল অনেক উচু তাই রাস্তাথেকে মুল ভবন দেখা যায় না ।

দুর থেকে তা দেখতে হয় । সারা বৎসর লোকজন এটার দেখাশোনা করে । মাঝে মাঝে বাদশাহ হাওয়া বদলের জন্য এখানে আসেন সব ধারনের সুযোগ সুবিধা এখানে বর্তমান । পুরানা বাজার এলাকায় ড্রাইভার আমাকে নিয়ে এলো । আমাদের দেশের মতই নোংরা এবং ঘিঞ্জি তবে জনসংখ্যা কম বলে মানুষ একটু কম ।

বাড়ীঘর পুরানো । অলি গলি দিয়ে দোকানে যেতে হয় । স্যুভেনির কিনতে চাইলাম । তবে এখানে সেই চীনের বানানো চিরাচরিত স্যুভেনির পেলাম না । মরক্কোর শিল্পীদের হাতের কাজের জিনিষ পত্র আছে , দাম বেশ চড়া ।

আমি মরক্কো লিখা ২/৩ টা ছোট স্যুভেনির কিনলাম। কাপড় চোপড়ে হাতের কাজ ভালই । আরবী ডিজাইন তবে দাম অত্যন্ত বেশী । কাপড় কিনতে ইচ্ছে হলো না । ছবি তুললাম ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে ।

সূর্যের তাপ আস্তে আস্তে বাড়ছে । কিং হাসান ২ মসজিদ এরপর কিং হাসান মসজিদে এলাম । আটলান্টিকের পাড়ে বিশাল মসজিদ । মূল ভবনের দেয়ালে আটলান্টিকের স্রোত এসে আছড়ে পড়ছে । বিশাল এলাকা নিয়ে এই মসজিদ মধ্যভাগে টাইলস/মোজাইকের বিশাল ফাঁকা জায়গা ।

মসজিদের অভ্যন্তরে যাওয়ার সময় ছিল না হাতে । ভিতরে ঢুকে ফিরতে ফিরতে এক ঘন্টা সময় চলে যাবে বলে মনে হচ্ছিল । বিশাল কারবার । তাই বাইরে থেকে ছবি তুললাম । এটাকে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মসজিদ বলা হয় ।

এরপর কাসাব্লাংকা পোর্ট এলাকায় গেলাম । পুরানো বন্দর এখন আধুনিকায়নের জন্য কাজ চলছে। গোটা শহরটাকেই মনে হলো পুরানো খোলস পরিবর্তন করে নতুন খোলসে ধীরে ধীরে প্রবেশ করছে । সম্পদের প্রাচুর্য এদের তেমন নেই । তাই এদেশের পরিবর্তন একটু ধীরে হচ্ছে।

দুপুরের লাঞ্চের সময় হয়ে এলো তাই হোটেলে ফেরার পালা ড্রাইভারকে আমার রুমের খাবার গুলো দিয়ে দিলাম । সে খুব খুশি । হোটেলের আশে পাশে ড্রাইভারকে দিয়ে ছবি তুললাম বেশ কয়েকটা । হোটেলের উল্টো দিকেই টুরিষ্টদের জন্য ছাতার ব্যবস্থা । ছাতার নীচে বীচ বেড গুলো পাতা বহু ইউরোপীয় পর্যটক এখানে সানবাথ করছে।

এদের কক্সবাজারের মত প্রাকৃতিক বিচ নেই তাই কৃত্রিম ভাবে কংক্রিটের বিশাল ফ্লোর বানানো আছে আটলান্টিকের পাড়ে । সাগর এখানে বেশ উত্তাল । বড় বড় ঢেউগুলি এধরনের চাতালে আছড়ে পড়ছে, এর মাঝে ছাতার নীচে পর্যটকরা রোদে শরীর পোড়াচ্ছে । অনেক পার্যটকের ভীড় ,তাদের জন্য সব ধরনের পানীয় সার্ভ করার ব্যবস্থা রয়েছে। এসব জায়গায় শুধুমাত্র বিদেশীরা যেতে পারে।

আমি বিদেশী তাই কোন সমস্যা নেই তবে বাংলাদেশের অকৃপন রোদ যে ভোগ করেছে তার কাছে এই রোদের প্রয়োজন তেমন নেই । তাই হোটেলে ফিরে এলাম । ্েহাটেলে সুন্দর কয়েকটা বুটিক শপ আছে যেখান থেকে সুন্দর কাজ করা একটা শাল কিলাম । ফ্রান্সে প্রস্তুত এমব্রয়ডারী বেশ ভাল লাগল । দুপুরের লাঞ্চ ও একদম মাপা , সালাদ, এক চামচের মত ভাত , মাছ ফ্রাই,ব্রেড ও সাথে এক বোতল পানি ।

রুমে এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম । ৪টায় নীচে নেমে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম । বাস এলো এয়ার পোর্টে চলে এলাম বাসে করে । কাষ্টম ফর্মালিটিজ শেষ করে ডিউটি ফ্রি এলাকায় চলে এলাম । এখানে কোন কিছুই কিনতে ইচ্ছে করলো না ।

জৌলুস ও তেমন নেই এখানে । ডুবাই আবুদাবী এয়ার পোর্টের ডিউটি ফ্রি যারা দেখেছে এসব দেখে তাদের কেনা কাটা করতে ইচ্ছে করবে না । ৬ টার পর চেক ইন। সন্ধা ৭-৩০ এ প্লেন কাসাব্লাংকার মাটি ছেড়ে আকাশে উড়াল দিল। ভাল ভাবেই কেটে গেল কাসাব্লাংকায় একটি দিন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.