আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আটলান্টিক সিটিঃ-১

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

আটলান্টিক সিটিঃ "য়্যড সাম নাইট টু ইয়োর লাইফ"!-১ ব্যাবসায়ীক প্রয়োজনে ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে শেষবার আমেরিকা যাই। ফ্লোরিডায় আমার ব্যাবসায়ীক কাজ শেষ করে দীর্ঘদিনের প্রবাসী বন্ধু ফরিদের ওখানে গিয়েছি। ব্যাবসায়ী ফরিদ থাকে নিউইয়র্ক। বহু বছর যাবত আমেরিকাতে যাওয়া হয়, হিউস্টনে ১৯৮৬-১৯৮৮ এই দুই বছর একনাগাড়ে থাকাও হয়েছিল, তখন সুযোগ পেলেই ঘুড়ে বেড়িয়েছি যখন যেখানে সুবিধা-কিন্তু কখনো আটলান্টিক সিটির বিশ্ববিখ্যাত ট্রাম্প তাজমহল ক্যাসিনোতে যাওয়া হয়নি। সেবার ঢাকা থেকে যাত্রার আগেই সিদ্ধান্ত ছিল-আমরা কয়েক বন্ধু আটলান্টিক সিটিতে যাবো।

আমি ছাড়া অন্য ৫ বন্ধুই দীর্ঘ দিনের আমেরিকা প্রবাসী। আমার সৌযন্যে এক বন্ধু শামীম এসেছে হিউস্টন থেকে, সানি এসেছে ডেট্রয়েট থেকে। ১২ জুলাই আমরা নিউইয়র্ক থেকে গ্রেহাউন্ড বাসে আটলান্টিক সিটি রওয়ানা করি। আটলান্টিক সিটিতে পৌঁছতে নর্মালী আড়াই ঘন্টা লাগার কথা। কিন্তু কয়েক যায়গায় ট্রাফিক জ্যাম থাকায় আমাদের পৌঁছুতে প্রায় ৩ ঘন্টা লেগে যায়।

সাড়ে ছয়টায় আমাদের বাস আটলান্টিক সিটি রিসোর্টের সামনে পৌঁছে। চারিদিকে চমতকার সবুজের সমারোহ, চমতকার ঝকঝকে সুউচ্চ বিল্ডিং, ছিমছাম নিরিবিলি শহর দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। সুর্য অস্ত যাবে সাড়ে আটটায়। সুতরাং বিকেলের নরম রোদে দিনের আলোয় আটলান্টিক দেখার বাড়তি সুযোগ পেলাম। আমরা নিউইয়র্ক থেকে বাসে রাউন্ড ট্রিপ টিকেট কিনেছিলাম ৩৫ ডলারে।

বাস থেকে নেমেই প্রথম চমক পেলাম! বাসের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে টিকেটের কুপন ছিড়ে নিচ্ছে গোট্টা গাট্টা এক নিগ্রো মেয়ে। টিকেটের ওয়ানওয়ে কুপন ছিড়ে নিয়ে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে একটি করে কার্ড। কার্ড হাতে নিয়েই পেলাম সেই চমক-একটি ২০ ডলারের ক্রেডিট কার্ড! এই কার্ড দিয়ে আমি ক্যাসিনোতে জুয়া খেলতে পারবো। জুয়ার শহর আটলান্টিক সিটিতে নেমেই জুয়া খেলার জন্য ২০ ডলার ফাউ পেয়ে অবাক হলাম। য়ামার জীবনে পরিশ্রম ব্যতীত কোন দিন ফাউ কিছু পাইনি।

এবারই পেলাম-তাও আবার জুয়া খেলার জন্য টাকা! এই সিটিতে ৯০% পর্যটক আসে জুয়া খেলতে। হয়তবা অনেকেই আসে আমাদের ৬ বন্ধুর মত শুধু মাত্র অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য। আপনি যাতে জুয়া খেলায় উদ্বুদ্ধ হন-সেই জন্যই আপনাকে ২০ ডলার দিয়ে জুয়া খেলায় প্রলুব্ধ করছে আটলান্টিক রিসোর্ট কর্তিপক্ষ। ফাউ পাওয়া ২০ ডলার দিয়ে শুরু করবেন তারপর নেশা ধরে গেলে আপনার পকেটের সব ডলার খেয়ে ফেলবে জুয়ার শল্ট মেশিনের পেট। আমাদের প্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণ গিয়েছিলেন এই আটলান্টিক সিটিতে জুয়া খেলতে।

সারারাত জুয়া খেলে সর্বশান্ত হয়ে না খেয়ে সারারাত ক্যাসিনোতে কাটিয়ে নিউইয়র্ক ফেরার বাস ভাড়া নাথাকায় ভিক্ষা করার কথাও ভাবছিলেন। না, তাঁকে শেষ পর্যন্ত ভিক্ষা করতে হয়নি তাঁর বন্ধু নিউজার্সি থেকে এসে তাকে উদ্ধার করেছিলেন। কবি নির্মলেন্দু গুণের লেখা "ভ্রমন সমগ্র" বইতে আটলান্টিক সিটিতে তার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে এই তথ্য পড়েছিলাম। বাস থেকে নেমে আমরা হেঁটে ক্রমশ উঁচু একটা রাস্তায় ঊঠলাম। এই রাস্তাটি আর এক বিস্ময়! সমুদ্রের পাড় ঘেঁষে পুর্ব-পশ্চিমে চলে যাওয়া ৬০/৭০ ফিট চওড়া রাস্তাটি কাঠের ফালি দিয়ে তৈরী।

আটলান্টিক সিটির এই কাঠের রাস্তাটিও একটি দেখার মত আইটেম। ওয়াকওয়ের জন্য নির্মিত এই রাস্তাটি ৭ কিঃমিঃ দৈর্ঘ। এটাই নাকি পৃথিবীর সব চাইতে লম্বা কাঠের তৈরী রাস্তা। চমতকার মসৃন কাঠের ফালিগুলো জ্যামিতিক কোন তৈরী কাঠের রাস্তাটি নির্মিত হয়েছে। অদ্ভুত সুন্দর এই রাস্তাটির নাম ব্রড ওয়াক এয়্যভিন্যু।

পৃথিবীর নানাদেশ থেকে আগত পর্যটকগন এই রাস্তায় হাটছে। আমরাও আজ তাদের সাথে শামিল হয়েছি। অদ্ভুত এবং আনন্দময় স্বপ্নীল পরিবেশ! রাস্তার বামে সমুদ্র আর ডানে সারি সারি ক্যাসিনো, হোটেল, রেস্টূরেন্ট, স্যুভেনির শপ, ফুলের ল্যান্ডস্কেপ। দীর্ঘ বাস জার্ণীর পর আমরা ক্ষুধার্ত, কিছু খাওয়া দরকার। রাস্তার পাশে খাবারের দোকানগুলোতে প্রচন্ড ভীড়।

লাইনে দাঁড়িয়ে চিকেন বার্গার এবং এক গ্লাশ কফি নিলাম। রাস্তার পাশে বসার যায়গায় বসে অন্যান্যদের মত আমরাও খেয়ে নিলাম। বিকেলের সোনারোদ গায়ে মেখে আমরা হাটছি। রাস্তার শুরুতেই ১০০ ব্রড ওয়াক এয়্যভিন্যুতে ট্রাম্প তাজমহল ক্যাসিনোর অবস্থান। সামনেই আটলান্টিক মহাসাগর।

সাগরের পানিতে পা ভিজালাম। সমুদ্রের পাড়ে বিশাল এয়্যমুজমেন্ট পার্ক। পাড় থেকে লোহার তৈরী মাচারমত করে পার্কটিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সমুদ্রের উপড়। এই পার্ক তৈরী করা হয়েছিল ১৯০৬ সালে। এটিই সমুদ্র পাড়ের পুরাতন এয়্যামুজমেন্ট পার্ক।

এই পার্কে রয়েছে নানারকম এক্সাইটিং রাইড। ইয়াং ছেলে মেয়েরা ভীড় করেছে পার্কে। এক্সাইটিং রাইডগুলোতে উঠে আনন্দের আতিশয্যে মহা উল্লোসিত, ভয়ে আর্তচিতকার চেচামেতিতে মুখোরিত পুরো এলাকা। পার্কের অনেক উপড় রোপের উপড় থেকে বিকট শব্দে চলছে মটর সাইকেল, তার নীচে অন্য এক রোপের ঝুলেঝুলে যাচ্ছে রমণীয় যুবতীদের সাথে তাদের পুরুষ পার্টনার। ব্রড ওয়াক এয়্যভিন্যুর পাশে ক্যাসিনো, সপ ছাড়াও আছে ম্যাসাজ পার্লার।

থাই, ফিলিপিনো মেয়েরা পর্যটকদের আরাম দেবার নানান আয়োজন নিয়ে পশার সাজিয়ে বসেছে। হস্তরেখাবিদও দোকান সাজিয়ে বসে আছে ভাগ্য গণনার জন্য। য়ামরা একটা একটা করে দেখছি আর হাটছি। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে, চারিদিকে জ্বলে ঊঠছে নানা রংয়ের নিয়ণ বাতি। বিশাল হাইরাইজ হোটেল ক্যাসিনোগুলো তাদের রাতের মোহনীয় রুপ ধারন করতে শুরু করেছে।

সারাক্ষণই ভেসে আসছে ধুমধারাক্কা মিউজিকের শব্ধ। আটলান্টিক সিটির আসল রুপ দেখে আমরা অভিভুত! আমরা নিজেদের মধ্যে এক অজানা উত্তেজনা অনুভব করছি। হোটেল, ক্যাসিনো, বার, পাব এবং ডিসকোগুলো আগত মানুষদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। রাতের আটলান্টিক অপরুপ সাজে ঝলমল করছে। মাতোয়ালা সারারাত জেগে থাকবার জন্য সম্পুর্ণ প্রস্তুত হয়ে আছে।

আমরা রিসোর্ট ক্যাসিনোর বিশাল কাঁচের দড়জা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করি এবং বিস্ময়ে অভিভুত হয়ে যাই। এতো বড় ক্যাসিনো ফ্লোর আগে কোন্দিন দেখিনি। শত শত শ্লট মেশিনের সারি, ঝকঝকে কার্পেট মোড়ানো ফ্লোর, মৃদু আবছা আলোয় কয়েকশত মানুষের হালকা গুঞ্জন ছাপিয়ে শ্লট মেশিনের যান্ত্রিক রোমাঞ্চকর শব্ধ বুকের মধ্যে একধরনের উত্তেজক অনুভুতি আলোড়ন তোলে। শ্লট মেশিনগুলো অত্যাধুনিক এবং নানা ধরনের জুয়া খেলার কায়দায় তৈরী। কারো সাহায্য ছাড়াই নিজেনিজে ইচ্ছেমত শ্লট মেশিন নির্ধারন করে জুয়া খেলা যায়।

(শেষ পর্ব আগামীকাল)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.