এমন চারটি বিষয় নিয়ে এই প্রজন্ম কথা বলছে যে বিষয়গুলোর সাথে মুক্তিযুদ্ধ, সায়ত্বশাসন, কূটনীতি, ধর্ম এবং জনগনের রাজনৈতিক সচেতনতা সরাসরি ভাবে জড়িত। স্বাধীনতার ৪২বছরের মধ্যে ৩০ (ত্রিশ) বছরের বেশি সময় এই দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে ছিল স্বাধীনতা বিরোধীরা। ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে এখনও এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং দেশ ধ্বংশের লিপ্সায় কাতর রাজাকারের দল এবং দোষররা । অতএব, তাদের দুবর্ল ভাবার বা হেয় করে দেখার কোন ধরনের অবকাশ নেই।
১৯৪৭ সালের ধর্মীয় আধিক্যের ভিত্তিতে দেশবিভাগের মাধ্যমে ভারত এবং পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
মুসলমান আধিক্যের কারনে তৎকালীন বাংলা ইস্ট পাকিস্তান নাম নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তভূক্ত হয়। ফলে সম্পুর্ন ভিন্ন ভাষা, সাহিত্য, কৃষ্টি এবং ঐতিহ্যের দুইটি পৃথক অঞ্চল একই সার্বভৌমত্বের অন্তর্গত হয় যার শাসক গোষ্ঠীর অধিকাংশই পশ্চীম পাকিস্তানের ছিল। পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠির শোষন, নিপীড়ন, দৈত-নীতি এবং সৈরাচারী মনোভাব এদেশের মানুষকে চরমভাবে আন্দোলিত করে। একে একে আঘাত হানা হয় ভাষা, কৃষ্টি এবং ঐতিহ্যের উপর। এই অঞলের মানুষের মাতৃভাষা পরিবর্তনের মত একনায়কতান্ত্রীক এবং যুক্তিহীন সিদ্ধান্ত দিতেও কার্পন্য করেনি তারা।
রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে এদেশের যুবসমাজ ১৯৪৮ সালে মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করে আন্দোলন শুরু করে এবং ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারী ১৪৪ধারা ভঙ্গের কারনে ঘাতকের বুলেটে রাজপথ রঞ্জিত হয় ভাষার দাবীতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের। নিহত হন সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার সহ আরও অনেকে। টর্চার সেলে নিয়ে নির্মম নিযাতন করা হয় ভাষা সৈনিকদের। নিযাতনে প্রান হারান মুসলিম ছাত্রলীগের প্রথম আহ্বায়ক দবির সহ আরও অনেকে। এই রক্তত্যাগ তীব্রতর করে এবং গনআন্দোলনের মুখো শোষকগোষ্ঠী নতিস্বীকার করে ১৯৫৬সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।
[আস্থার সংকট প্রকট হয় পরবর্তী দশকে শোষক শ্রেনীর অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক উন্নয়ন পরিকল্পনায়। বিদ্রোহ দানাবাধে এদেশের জনমনে। পশ্চিম পাকাস্তানের প্রভাব ও স্বৈর দৃষ্টিভঙ্গীর বিরূদ্ধে প্রথম পদক্ষেপ ছিল মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা। ১৯৪৯ সালে এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নিবার্চনে বিজয় এবং ১৯৬৫ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক জেনারেল আইয়ুব খানকে পরাজিত করার লক্ষ্য নিয়ে সম্মিলিত বিরোধী দল বা 'কপ'-প্রতিষ্ঠা ছিল পাকিস্তানী সামরিক শাসনের বিরূদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানী রাজনীতিবিদদের নেতৃত্বমূলক আন্দলোনের মাইলফলক।
পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকারের প্রশ্ন ১৯৫০-এর মধ্যভাগ থেকে উচ্চারিত হতে থাকে। ১৯৬০ দশকের মাঝামাঝি থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ধারণাটি প্রকৃষ্ট হতে শুরু করে। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাঙালীর মুক্তির সনদ “ছয় দফা" প্রস্তাব করেন যার ফলশ্রুতিতে ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকাস্তানকে বিচ্চিন্ন করার অভিযোগে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় দায়ের করা হয়। রাজনৈতিক অসমতা
জনসংখ্যার দিক দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তানের বৃহত্তর অংশ হওয়া সত্ত্বেও দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তান কুক্ষিগত করে রাখে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে ক্ষমতার বন্টন পূর্ব পাকিস্তানের অনুকূল হওয়ায় পশ্চিম পাকিস্তান "এক ইউনিট তত্ত্ব" নামে এক অভিনব ধারণার সূত্রপাত করে, যেখানে সমগ্র পশ্চিম পাকিস্তান একটি প্রদেশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
এর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের ভোটের ভারসাম্য আনা। মজার ব্যাপার হল বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর পাঞ্জাব প্রদেশ প্রস্তাব করে পাকিস্তানে সরাসরি জনসংখ্যার বন্টনের ভিত্তিতে ভোট অনুষ্ঠিত হোক, কারণ পাঞ্জাবিরা ছিল সিন্ধি, পশতুন, বালুচ বা পাকিস্তানের অন্য যেকোন গোত্রের তুলনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ।
একেবারে শুরু থেকেই পাকিস্তানে শাসনের নামে ষড়যন্ত্র শুরু হয়, আর এই ষড়যন্ত্রে মূল ভূমিকা পালন করে সামরিক বাহিনী। যখনই পূর্ব পাকিস্তানের কোন নেতা, যেমন খাজা নাজিমুদ্দিন, মোহাম্মদ আলী বগুড়া, অথবা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতেন, তখনই পশ্চিম পাকিস্তানীরা কোন না কোন অজুহাতে তাদের পদচ্যুত করত। নানারকম টালবাহানা করে জেনারেল আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা দখল করে নেন এবং দীর্ঘ ১১ বছর ধরে পাকিস্তানে তার স্বৈরতান্ত্রিক শাসন চালু থাকে।
পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের এই অনৈতিক ক্ষমতা দখল পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়েই চলে।
পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি চূড়ান্ত নাটকীয়তার মুখোমুখি হয় যখন ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। দলটি পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ টি আসন হতে ১৬৭ টি আসনে জয়লাভ করে এবং ৩১৩ আসনবিশিষ্ট জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, যা আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের অধিকার প্রদান করে। কিন্তু নির্বাচনে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো শেখ মুজিবের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিরোধিতা করেন। তিনি প্রস্তাব করেন পাকিস্তানের দুই প্রদেশের জন্যে থাকবে দু'জন প্রধানমন্ত্রী।
"এক ইউনিট কাঠামো" নিয়ে ক্ষুব্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে এরূপ অভিনব প্রস্তাব নতুন করে ক্ষোভের সঞ্চার করে। ভুট্টো এমনকি মুজিবের ৬-দফা দাবি মেনে নিতেও অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন। মার্চের ৩ তারিখ পূর্ব ও পশ্চিম অংশের এই দুই নেতা পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টকে সঙ্গে নিয়ে দেশের ভাগ্য নির্ধারণে ঢাকায় বৈঠকে মিলিত হন। তবে বৈঠক ফলপ্রসূ হয় না। মুজিব সারা দেশে ধর্মঘটের ডাক দেন।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে চারদফা দাবী পেশ করেন এবং জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি গ্রহনের আহ্বান জানান। ২৫মার্চ রাতে ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার এবং “অপারেশন সার্চ-লাইট” নামে ঢাকায় নরকীয় হত্যাকান্ড সংঘটিত করেন। গ্রেফতারের পূর্বে বঙ্গবন্ধু পূ্ব-বাংলার স্বাধীনতা ঘোষনা করেন এবং ঘোষণাটি চট্টগ্রামে অবস্থিত তত্কালীন ই.পি.আর এর ট্রান্সমিটারে করে প্রচার করার জন্য পাঠানো হয় ২৬শে মার্চ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের কয়েক'জন কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এম.এ.হান্নান প্রথম শেখ মুজিব এর স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রটি মাইকিং করে প্রচার করেন। ২৭শে মার্চ মেজর জিয়া ঘোষনাপত্রটি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে পাঠ করেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
বাঙালী জাতির জন্য সংগ্রাম ছিল অস্তিত্বের এবং পাকহানাদারদের জন্য ছিল হত্যা, নিযাতন, ধর্ষন ও নিপীড়নের। পাক বাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে রক্তের হলি খেলায় মাতে জামাতই ইসলাম, ছাত্র সংঘ, মুসলিম লীগ সহ আরও কিছু দল। পাকিস্তান এই ভূ-খন্ডের স্বাধীনতার স্বপ্ন ভুলুন্ঠীত করার জন্য ১,২৫,০০০ সৈন্য মোতায়ন করে সাথে প্যারা মিলিশিয়া বা শান্তিবাহিনীর সদস্য হিসেবে যোগদেয় আরও ২৫,০০০। পাকিস্তান রক্ষার জন্য শান্তিবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালীর উপর মধ্যযুগীয় নিযাতন শুরু করে। জামায়াতের তৎকালীন আমীর গোলাম আজম থাকেন রাজাকার বাহিনীর মূল কমান্ডার ।
পাক হানাদার এবং রাজাকার বাহিনীর সকল অপচেষ্টা ব্যর্থ করে এদেশের মুক্তিকামী মানুষ, মুক্তিযোদ্ধারা দেশকে স্বাধিনতার দিকে ধাবিত করছিল। পরাজয় যখন সুনিশ্চিত তখন তারা এই দেশের মেরুদন্ড তথা দেশের খ্যতনামা শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল বুদ্ধিজীবী, লেখক, কবি, সাংবাদিকদের হত্যা শুরু করে। আত্ন-সমর্পনের পূর্ব মূহুর্তে দেশকে মেধাশূণ্য করে ব্যর্থ রাষ্ট্র করার লক্ষ্যে এই হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। এই নিধনে নেতৃত্ব দেন মতিউর রহমান নিজামী, কামরুজ্জামান, কাদের মোল্লা, সাকা চৌধুরী সহ জামাত এবং মুসলিম লীগের শীর্ষ নেতারা। অবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকবাহীনি ৯৩,০০০ সৈন্য সহ আত্নসমর্পন করে এবং এদেশের স্বাধীকার মেনে নেয়।
যে স্বপ্ন এবং সায়ত্বশাসনের প্রত্যাশা নিয়ে জাতি নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রামে ত্রিশ লক্ষ্ তাজা প্রান, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম, বিশিষ্ট শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক, কবি, গীতিকার, সুরকার, শিল্পীদের হারিয়ে দেশ স্বাধীন করেন মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তার কোনটিই অর্জিত হয়নি। কারন ৭১’এর পরাজিত শক্তি। ৯মাসের সশস্ত্র সংগ্রামে স্বাধীকার লাভ করা যুদ্ধবিদ্ধস্থ একটি জনপদের কয়েকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ন ছিল। মিত্র বাহিনীর সৈন্য প্রত্যাহার, শরনার্থী পূনর্বাসন, আহত মুক্তিযুদ্ধাদের চিকিৎসা এবং বর্ধনশীল অর্থনৈতিক কাঠামো গঠন। ১৯৭২ সালে প্রনীত সংবিধানের ভিত্তেতে রাষ্ট্রের চারটি স্তম্ভ করা হল যথাক্রমে: গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বাঙালী জাতীয়তাবাদ।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে প্রনীত হয় এই সংবিধান। ষড়যন্ত্র এবং ৭১’এর পরাজয়ে হায়নাগুলো নেকড়ে হয়ে আবার থাবা দেয় বাংলার মানচিত্রে। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা, ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চার জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহম্মেদ, ক্যাপ্টেন মুনসুর, সৈয়দ নজরুল এবং কামরুজ্জামানকে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতার চেতনার টুটি চেপে ধরা হয়। বাংলার স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে সাথে নিয়ে স্বপ্নের স্বাধীনতার চেতনায় শেষ পেরেক ঠুকেন রাষ্ট্রপতি মেজর জিয়া। তিনি মুল স্তম্ভ পরিবর্তন করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রবর্তন করেন।
তিনি সকল রাজাকার, আলবদর এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তিকে রাজনৈতিক সুবিধা প্রদান এবং এজেন্ডা বাস্তবায়ন শুরু করেন। তার মৃত্যুর পর এই দায়িত্ব অত্যান্ত আস্থা এবং নিষ্ঠার সাথে পালন করছেন তার সহধর্মীনি বেগম জিয়া। ১৯৭৫ সালে সামরিক ক্যু এর মাধ্যমে আরেক রক্ত গঙ্গায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, প্রগতি এবং ভাবনা সমূলে ধ্বংশের সর্বাত্ত্বক প্রচেষ্টা শুরু হয় এর সাথে যুক্ত হয় রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষীগত করার নগ্ন প্রতিযোগীতা। দেশীয় দালালদের ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগীতার আড়ালে হত্যা শুরু হয় সামরিক, বেসামরিক খ্যতনামা, প্রগতিশীল ধারার অবশিষ্ট বুদ্ধিজীবী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের। হত্যা করা হয় কর্নেল তাহের এর মত দেশপ্রেমিক বিপ্লবীকে।
ধ্বংশ করা হয় মুক্তিযুদ্ধের সকল নথি। নিজেদের মত করে বিকৃত ইতিহাস রচনা করে ধোকা দেয় পরবর্তী প্রজন্মকে। হতাশ মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম এর পর ৭১’এর দালালদের মাস্টারপ্লানে ২য় প্রজন্মটি গড়ে উঠে সংশয়ী প্রজন্ম (কনফিউসড জেনারেশন) হিসেবে। এক পৃথিবী স্বপ্ন একে যে প্রজন্ম স্বাধীকারের সংগ্রাম করল; এক সাগর রক্তের স্বাধীন বাংলা করায়ত্ব করে নিল মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি। আওয়ামীলীগের বেঁচে থাকা নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করা শুরু করে।
এরপর ১৯৯০,১৯৯৬, ১৯৯৮, ২০০১, ২০০৩, ২০০৪, ২০০৫, ২০০৬, ২০০৭ এবং এখন ২০১২ সালেও তাদের স্পর্ধা এতটুকু কমেনি। উল্লেখিত সালগুলোতে জামাতী এবং এই ঘাতকদের কর্মকান্ড নিয়ে আরেকটি পোস্ট লিখার প্রত্যয় রাখলাম।
১। একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচাঁরের অওতায় যাদের আনা হচ্ছে তারা সবাই নেতৃস্থানীয় এবং পাকিস্তানের অকৃত্তিম তাবেদার ও দালাল। তাদের বিচাঁরের রায় কাযর্কর করা প্রধানমন্ত্রীর জন্য বেশ কঠিন চ্যালেন্জ ।
এই চ্যলেন্জের অংশীদার আমরা সবাইও। কেননা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আমরা আওয়ামীলীগকে ভোট দিয়ে আইন প্রনয়ণের ক্ষমতা দিয়েছি। এই বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পযর্ন্ত জাগরনের গান বন্ধ করা যাবে না। তাই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে।
২।
যে কথাটি লেখার জন্য এতবড় ইতিহাস উল্লেখ করলাম তা হচ্ছে জামাতের কাযর্কলাপ। একাত্তরের রনাঙ্গনে পাক-হানাদারের দোসর এই রাজকার, জামাত, শিবির হত্যা, ধষর্ণ, নিযার্তনের লোমহর্ষকর বিভিষিকা তৈরী করে। ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবি হত্যার মাধ্যমে তাদের নীতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা দিয়েছে, এই চক্রে যুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যা, চার জাতীয় নেতা হত্যা, মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজিবি, রাজনীতিবিদ হত্যা, সমগ্র দেশে জঙ্গীবাদ, জামাতের বীজ বপন, বোমা হামলা, রগ কাটা, সিরিজ বোমা বিস্ফোরন, বিদেশী কূটনৈতিক হত্যা চেষ্টা সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহকে ধর্মের দোহাই দিয়ে সাম্প্রদায়িকতার বুলি আওড়ানো, শিক্ষার্থী হত্যা, শিক্ষক হত্যার মত এমন কোন ন্যাক্কারজনক কাজ নেই যা তাদের জন্য অসম্ভব। তাই আমাদেরও প্রস্তুত হতে হবে। ইতিহাস বলে তারা আবার একটি ১৫ আগষ্ট, ৩ নভেম্বর এর খোঁজ করছে।
এদের প্রতিহত করার জন্য প্রয়োজন সবর্ক্ষেত্রে সচেতনতা।
প্রস্তাবনা: প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিত সভা-সমাবেশ এর মাধ্যমে রাজাকার, শিবির, জামাত এবং তাদের দোষরদের গত ৩০ বছরের কর্মকান্ড বোঝাতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন জেলাভিত্তিক, থানাভিত্তিক এবং তৃনমূল পযার্য়ে প্রশিক্ষিত তরুন সেচ্ছাসেবক (যোদ্ধা) দল। সেচ্ছাসেবক পাওয়া যতটা সহজ ঠিক ততটুকু কঠিন হবে প্রশিক্ষিত সেচ্ছাসেবক পাওয়া। এভাবে আমার হিসাবে প্রায় একলক্ষাধিক প্রশিক্ষিত যোদ্ধা প্রয়োজন।
টিউমার কাটলে ক্যান্সার নিরাময় হয়না। ক্যামো থেরাপি দিতে হবে যাতে জাতি আর কখনও ক্যান্সারাক্রান্ত না হয়। ইমরান ভাই, পিয়াল ভাইয়েরা ভেবে দেখবেন। প্রস্তুতির যথেষ্ট সময় মনেহয় নেই। তবে সময় কিন্তু এখনও আছে!।
২য় পর্ব (মতামত ও প্রস্তাবনা)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।