আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাতৃভাষার মাধ্যমে ধর্মপালন কেন সম্ভব নয়?

সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!!

আরবী ভাষার প্রতি একটা অসম্ভব রকমের শ্রদ্ধা খুব ছোটবেলায়ই পরিবার বা সমাজ কর্তৃক আমাদের মগজে ঢুকানো হয়। ঠিক এই কারণে রাস্তাঘাটে বা এখানে সেখানে আরবী ভাষা সম্বলিত কোন কাগজ পরে থাকতে দেখা গেলে আমরা সযত্নে তা তুলে এনে চুমে খাই। যদিও আমরা জানিনা এই কাগজে ঠিক কি লেখা আছে। ধর্মটা যে আমরা না বুঝে কতোটা অন্ধভাবে পালন করি তা প্রতিদিন আমাদের চোখের সামনে ঘটে যাওয়া অনেক উদাহরণের মাঝে এটি কেবল একটি। আমরা ভুলে যাই কিংবা মানতে চাইনা বা আমাদের মানতে দেয়া হয়না যে পৃথিবীর অন্যান্য ভাষার মতো আরবীও একটি ভাষা।

পৃথিবীর অন্যসব ভাষার মতো আরবী ভাষায়ও অশ্লীল শব্দ বা পক্তি আছে, আরবী ভাষায়ও গালি আছে, আরবী ভাষায়ও বিকৃতি আছে। প্রকৃতপক্ষে সব ভাষাতেই এগুলোর উপস্থিতি থাকবে এবং থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ ভাষার প্রধান কাজ হচ্ছে ভাবের আদান ও প্রদান তা যে প্রকারেরই হোক না কেন। আরবী ভাষাও এর বাইরের কিছু নয়। পূর্বেই বলেছি ভাষার প্রধান কাজ হচ্ছে ভাবের আদান ও প্রদান।

ভাবের এই আদানটা সুষ্ঠুভাবে কেবলমাত্র তখনই সংঘটিত হবে যখন আমরা আদানের এই মাধ্যমটিকে অর্থাৎ ভাষাটিকে সহজে বুঝতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। সহজে বুঝার জন্য বা বুঝাবার জন্য নিজ মাতৃভাষার বিকল্প আর কোন কিছুই হতে পারবেনা। মাতৃভাষার মাধ্যমে আপনি যতো সহজে বুঝতে পারেন বা বুঝাতে পারেন তা অন্য কোন ভাষার মাধ্যমে বুঝানো কোন রকমেই সম্ভব নয় যতোক্ষণ পযন্ত না আপনি এই ভাষাটিতে বুৎপত্তি অর্জন করতে পারবেন। ঠিক এই কারণে পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের পদ্ধতি বেছে নিয়েছে। প্রয়োজনে তাঁরা অন্যভাষার বই নিজ ভাষায় অনুবাদ করে নিচ্ছে।

ঠিক একই পন্থা দেখবেন আপনি খ্রীস্টান মিশনারীদের মাঝেও। মিশনারীরা যেদেশে ধর্মপ্রচার করতে যায় প্রথমে সেই দেশের ভাষা ও সংস্কৃতিকে করায়ত্ত্ব করে। তাঁদের যাবতীয় পুস্তকও সে ভাষায় অনুদিত করে। এর লক্ষ্য একটাই- সহজেই সে দেশের মানুষের সাথে মিশে নিজেদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা। কিন্তু আমরা সব দিক থেকেই ব্যতিক্রম।

তাই এসব উদাহরণ আমাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। আমরা না বুঝেই শুধুমাত্র ছওয়াবের আশায় প্রতিদিন তোতাপাখির মতো কোরআন পড়ি, নামাজ আদায় করি। ঐ কোরআনে কী লিখা আছে তা আমি জানিনা। ঐ নামাজে আমি স্রষ্টার কাছে কি চাইছি তাও আমি জানিনা। খুতবার সময় ঈমাম সাহেব সুললিত কণ্ঠে যা বলে যান তার বিন্দুমাত্রও আমার বোধগম্য নয়।

আমি শুধু নিবিষ্টচিত্তে ছওয়াবের আশায় তার মুখের দিকে চেয়ে থাকি। তিনি ভুল বলে গেলেও মনে মনে সুবহানাল্লাহ বলি। না বুঝে শুধুমাত্র ছওয়াবের আশায় অন্ধভাবে এই ধর্মপালনই আমাদের ধর্মীয় গোড়ামীর প্রধান কারণ। ভাষার ভিন্নতা বা ভাষাটিকে না বুঝার কারণে প্রতিনিয়ত ধর্মচর্চা করে গেলেও আমরা ধর্মীয় বিধিবিধানগুলোর কিছুই জানিনা। আর আমাদের এই না জানার সুযোগটাই নিচ্ছে তথাকথিত মোল্লা শ্রেণী।

যখন খুশি নিজের সুবিধা মতো ফতোয়া দিয়ে সমাজকে বিভক্ত করছে এবং ধর্মকে করছে কলুষিত। অথচ ধর্ম পালনের পদ্ধতিটা যদি বাংলায় হতো তবে এই গোড়ামি থেকে সমাজ অনেকাংশে মুক্ত হত। ধর্মীয় বিধি-বিধান সম্পর্কে আমরা সাধারণেরাই পারদর্শী হতে পারতাম। ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আমাদেরকে ঠকিয়ে নিজের সুবিধা আদায় করতে পারত না। ধর্মকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতেও পরিনত করতে পারতনা।

আমরা সর্বস্তরে মাতৃভাষা প্রচলনের কথা বলি। আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন দিবসে সর্বস্তরে মাতৃভাষা প্রচলনের বলিষ্ট ঘোষণাও দেন। এখন আপনি যদি সর্বস্তর বুঝান তবে এর মাঝে নিশ্চিতভাবে ধর্মও পড়ে। অবশ্য শুধুমাত্র মাতৃভাষা প্রচলনই এক্ষেত্রে প্রধান উদ্দেশ্য নয়। বরং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ধর্মকে সাধারণের বোধগম্য করা, সুষ্ঠুভাবে পালন এবং একে কলুষতা মুক্ত করা ।

আমার মনে এই বিষয়টি নিয়ে ভাববার মতো যথেষ্ট সুযোগ ও কারণ আমাদের জাতীয় ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের রয়েছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.