আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধারাবাহিক আয়োজন : শব্দের কাছে ফেরা-১......... Nury Afrin's Notes

মানুষ যা কল্পনা করতে পারে, তা সে অর্জন করেত পারে।

ধারাবাহিক আয়োজন : শব্দের কাছে ফেরা-১ Share Yesterday at 11:06pm ১.পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী রাগাশ্রয়ী সঙ্গীতের প্রবাদ পুরুষ। তিনি বলেছেন, গান হল- হাওয়া দিয়ে ছবি আঁকা। চিত্র হল- রং দিয়ে ছবি আঁকা। আর কবিতা হল- শব্দ দিয়ে ছবি আঁকা।

এভাবে বিমূর্ত মূর্ত হয়ে ওঠে। মনের বাড়ির দরোজা খুলে যায। ঢোকা যায় রূপের ভুবনে। ২.কবি সৈয়দ সামসুল হক বলেন- কথা বলাবার জন্যে আমরা শব্দ ব্যবহার করি; কবিরাও তাই করেন। আমরা ঠিক-ঠিক শব্দ ভেবে না পেলে কাউকে জিগ্যেস করি কিম্বা অভিধানের পাতা উল্টাই।

কবি তার শব্দের জন্যে নিজের ভেতরে প্রবেশ করেন। কারণ, কবির কাছে শব্দ, শব্দ নয়- কয়েকটি লক্ষণ ও ব্যঞ্জনা ধরেই একেকটি শব্দ এবং অভিধানে তা পাওয়া যাবে না। কবি জানেন, একেকটি শব্দ একেকটি অনুভব; মাছ, মাছ নয়, মাছের অনুভব; দেশ, দেশ নয়, দেশের অনুভব; তুমি, তুমি নয়, তুমি-র অনুভব। কবি জানেন, শব্দ ধ্বনিসঙ্গীত ধরে; শুষ্কং কাষ্ঠং শুকনো কাঠ, নিরস তরুবরও শুকনো কাঠ; দুটোর ধ্বনিসঙ্গীত আলাদা- শুষ্কং কাষ্ঠেই যেন শুকনো কাঠ খটখট করে উঠছে, নিরস তরুবরে নয়। কবি জানেন, একেকটি শব্দ হচ্ছে সেই ভাষাভাষী জাতির ইতিহাস-সভ্যতা-সংস্কৃতির সাঁটলিপি; কৃষ্ণচূড়া এ বাংলাদেশে শুধু ফুল নয় ভাষা আন্দোলনকে ধরে; রক্তে এ বাংলাদেশকে একাত্তরকে ধরে; গায়ে হলুদ শরীরে হলুদ লেপন নয়, বিয়ের খবরটা পৌছেঁ দেয়।

এবং কবি জানেন, শব্দ আসলে চিত্র; মূর্ত বিমূর্ত সকল শব্দই যে চিত্র তা যে-কোনো শব্দের মূল বিশ্লেষণ করলেই বেরিয়ে আসবে। শব্দের ওই অনুভব, ওই ধ্বনিসঙ্গীত, ওই সাঁটলিপি, ওই চিত্রই- কবিতা লিখতে গিয়ে যদি শব্দ সন্ধানই করেন কবি তো ওই সকলই সন্ধান করেন এবং তার পঙক্তিতে স্থাপন করেন। ৩. কবি ডব্লু এইচ অডেন বলেছেন, কবিতা লেখার আশা করতে হলে শব্দের চারধারে থাকা চাই, শোনা চাই পরস্পর কী তারা বলে। অডেন আরো বলছেন, কবিতাকে চিত্রের মতো দৃষ্টিগ্রাহ্য করবার প্রয়াস আমাদের নিয়ে যায়- যে, ক হচ্ছে খ-এর মতো, গ হচ্ছে ঘ-এর মতো, চ হচ্ছে ছ-এর মতো। তিনি বলেছেন, এও যথেষ্ট নয় যে যা আমি লিখেছি তা কেবল সত্য; আমার কাছে তৃপ্তিকর হতে হলে কবিতাটিকে হতে হবে সার্বভৌম।

৪. আমার ধারণা, একটি কবিতার ওই সার্বভৌম আসতে পারে কেবল তখনই যখন কবি শব্দের চারিত্র ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারেন। শব্দের চারিত্র যেমন আছে, তেমনই আছে তার স্পর্শ এবং ভার। কোনো শব্দ ভারী, কোনো শব্দ নির্ভার। কোনো শব্দ খসখসে, কোনো মসৃণ। কোনো শব্দ নিরেট, কোনো শব্দ প্রতিধ্বনিময়।

এমনকি, কোনো শব্দ গোল, কোনো শব্দ চৌকো! এর প্রতিটিই কোনো না কোনো কাজে লাগে- লাগানো চাই। কিছুশব্দ কবিতায় ব্যবহারই করবো না, এটা হয় না। বাতিল বলে কোনো শব্দ নেই। তবে, হ্যাঁ, বাতিল হয়ে যায় কোনো শব্দ যখন তা একজন পূবৃবর্তী কবির কবিতায় এমনভাবে খেটেছিলো যে পরিণত হয়ে গেছে ক্রীতদাসে। রবীন্দ্রনাথের বহু শব্দই এখন আমাদের কাছে বাতিল হয়ে গেছে- কারণ সে সকলের ওপর পড়ে গেছে তাঁর সিলমোহর।

*সূত্র : সৈয়দ শামসুল হক- মার্জিনে মন্তব্য।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।