আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হুজুরদের রাজনীতি: হারাম! হারাম!! ইসলামে রাজনীতি হারাম!!! থুক্কু হালাল!!!!

নৌকা আর ধানের শীষে ভোট দিয়ে সোনার বাংলার খোয়াব দেখা আর মান্দার গাছ লাগিয়ে জলপাইর আশা করা একই! বিস্ময়ের ব্যাপার হল দিনের পর দিন আমরা তাই করছি!!
মোঘল সাম্রাজ্যের পতনের মধ্যদিয়ে রাজকার্য থেকে ভারতবর্ষের হুজুররা ছিটকে পড়েন। রাজভাষা ফার্সি পুরোপুরি বেফজুর হয়ে পড়ে ইংরেজ দরবারে। ফার্সি, উর্দু, আরবির মিশ্র মাধ্যমে তাফসীর, তাজবিদ, ফিকাহ, হাদিস, নাহু, ছরফ (আরবি ব্যকরন), আদাব (আরবি সাহিত্য) ইত্যাদি শাস্ত্রের অধ্যয়ন, অধ্যাপনা, লিখন, সংকলনের মধ্যে ডুবে যান বিক্ষুব্ধ আলেম সমাজ। নব্যব্রিটিশদের প্রতি ঘৃনা এতটাই প্রবল ছিল যে ভাষা ইংরেজিকেই ওনারা শুকুরের মাংস মনে করেন। রাজনৈতিক ফাঁকতালে সুযোগটা নেয় ধড়িবাজ হিন্দু সম্প্রদায়।

দ্রুত ইংরেজি আয়ত্ব করে ব্রিটিশ নরঘাতক ঔপনিবেশিক শাসকদের পদযুগল দ্রুত ওদের জিহ্ববার তলে নিয়ে নেয়। শিকেয় থাক দেশপ্রেম, মানসম্ভ্রম। লাভটাও হয় নগদ। সাদা চামড়ার নীচের পদগুলো বগলদাবা। গুটিকতেক মুসলিম লোকও কালক্রমে তাতে যোগ দেয়।

ব্রিটিশরাজ ও ভারতীয় বরকন্দাজের ইংরেজ শাসনে দু'শতাব্দীর গোলামির সুচনা হয়। সম্পদশালী ভারতবর্ষের ধন, মাল, ঐতিহ্য, ভাষা, সংস্কৃতি লুট হয়ে ইংল্যান্ড পাড়ি জমায় আর চুইয়ে পড়া নুন নেমক খেয়ে এদেশীয় কুত্তারা জিহবা চাটতে থাকে। হুজুররা প্রায় নির্বাসিত জীবন বেছে নেন। মূল জনগোস্ঠি বাংলার কৃষক চাপা পড়ে যান জুলুম, শোষন আর নির্মমতার পদপিস্ঠে। নামে দুর্ভিক্ষ।

উল্লেখিত জ্ঞানচর্চার বাইরে মসজিদে নামাজ পড়ানো, কোরান খতম, মিলাদ মাহফিল, সিজনাল ওয়াজ নসিহত, আকিকা, কাফন দাফনের মত রিচুয়াল কাজকর্মে সীমাবদ্ধ হয়ে যায় তাদের জগৎ। নিজেদের তান্ত্রিক মাদ্রাসা, মসজিদের মিম্বর ও গোরস্থানের বাইরে তাদের উপস্থিতি প্রায় অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায়। সে ধারাই এখনও চলমান। পরাজিত জীবনের সাথে মিশ্রিত হয় নানা ধরনের কূপমন্ডুকতা, কূসংস্কার, বাইরের পৃথিবীর সাথে সংশ্লেষহীনতাজনিত অজ্ঞতা ও জড়াগ্রস্ততা। ব্রিটিশরাজ অর্ধশতক আগে বিদায় নিলেও রেখে যায় নিজেদের শাসনপ্রনালী, তল্পীবাহক সমাজের নিয়ন্ত্রককূল।

মেধাবি, বিত্তশালীরা সংগতকারনে সে শিক্ষায়, সে পথে হাঁটছে। ভাল চাকুরে, ভাল ব্যবসায়ী হবার জন্য। এ ব্লগার যেমন। দুর্বল মেধা, দরিদ্র প্রান্তিক মানুষের ততটুকু দৌড়ে সামিল হবারও সামর্থ্য নেই। ফলে মুস্ঠির চালে গড়ে উঠা এবতেদায়ি, হেফজখানা, ক্বওমি মাদ্রাসা কিংবা মাদ্রাসাই তাদের ভরসা।

ঘুর্নাবর্তে সুবিধাবঞ্চিত প্রজন্ম। ঠিক এ প্রেক্ষাপটেই রাজনীতি থেকে নিরাপদ দুরত্বে থাকা শাস্ত্রিয় মুসলিম জন গোস্ঠির বা আলেমসমাজের বা মওলানা বা হুজুরদের জন্ম। রাসুলুল্লাহর আমলে বা চার অনুসারীর যুগেও সাধারন মুসলিম ও হুজুর মুসলিম এ ধরনের শ্রেনীবিভাগ পাওয়া যায়না। যাহোক, টিভি দেখা হারাম, গান শোনা হারাম, মাইক বাজানো হারাম, মহিলা রাস্তায় বের হওয়া নাজায়েজ, ছবি তোলা নাজায়েজ! এসব হারাম আর নাজায়েজের প্লাবনে রাজনীতিও ভেসে যায়। রাজনীতি করা হারাম- মোটা দাগে এ হাইপোথিসিসের অন্ধকারে হারিয়ে যায় হুজুরকূল।

এখনও সামাজিক বা সুশীল (!) পরিমন্ডলে "ইসলাম" শব্দটি উচ্চারন করলে অনেকের ভ্রু কুঞ্চিত হয় (প্রায় ৯৯% ভাগ মুসলিম কলিগদের কোম্পানিতে 'আসসালামুআলাইকুম' মেইল দিয়ে খারাপ কোন কমেন্ট না পেলেও 'কিছু একটার গুন্জন' পাই। সবাই 'গুড মর্নিং' লিখে জাতে উঠতে চাচ্চে। বলি! রাস্তাঘাটে, বাপ চাচা, শশুরকে কি গুড মর্নিং বলি আমরা), আর "ইসলামের রাজনৈতিক" দিক নিয়ে কথা উঠালে রীতিমত দাংগা হাংগামা বেধে যায়। মজার ব্যাপার হল হাংগামাকারীরা সবাইই মোটামুটি মুসলিম। ভালো মুসলিমও অনেকে।

তারা বলে, পবিত্র ধর্মকে রাজনীতির ময়দানে টেনে আনার দরকার কি? তার মানে- রাজনীতি অপবিত্র হয়ে পড়েছে মোটামুটি। আত্নস্বীকার। এহেন সামস্টিক মনোবৈকল্যের আতুঁড়ঘর হল- যুগের পর যুগ হুজুরকূলের রাজনীতি নিস্পৃহতা। পুরোনো যুগের নবীদের সত্য অসত্য মিশ্রিত কেচ্ছা কাহিনী, সুরেলা ফারসি শে'র, পাঠ্য দোয়ার ফজিলত, রেওয়াজ রসম, কবর ও তৎপরবর্তী জীবনের ব্যাপক বর্ননার মধ্য দিয়ে ওনাদের বয়ান শেষ হয়ে যায়। বিশ্ব, দেশ, সমাজ, আইন, বিদ্যমান রাজনৈতিক ও অন্যান্য অনাচারের ব্যাপারে উনাদের একদিকে যেমন রয়েছে অজ্ঞতা অন্যদিকে সচেতন এড়িয়ে চলা।

পাছে যদি মসজিদ কমিটি ক্ষ্যাপে যায়! তবে এত সরল নয় ইতিহাস। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে পয়লা সংগ্রামও তারাই করেন। বালাকোট যুদ্ধ। সসম্মানে শহীদ হন পরাশক্তিকে রুখতে গিয়ে আহমদ বেরলভীর নেতৃত্বে। ভিন ভাবধারার রাজনীতির (ভারতীয় কংগ্রেস)মাধ্যমে হলেও দেশ পুনুরুদ্ধারে নামেন মওলানা আবুল কালাম আজাদ।

পুরোপুরি ইসলামিক রাজনীতির মিশনে নামেন আবুল আ'লা মওদূদি প্রমুখ। তার গঠিতদল নিখিল ভারত জামায়াতে ইসলামীকে সর্বাধিক সুসংগঠিত ধর্মীয় রাজনৈতিক দল বলা যায় যারা বিপুল সংখ্যক বাংলা ও ইংরেজী মাধ্যমের (অ-মাদ্রাসা) মুসলিমকেও দলভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানির ন্যাপ আরেকটি উদাহরন। তাছাড়া খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম, ইসলামী শাসন তন্ত্র আন্দোলন, ইসলামীক ফ্রন্ট বা ইসলামী ঐক্যজোট। অধুনা আওয়ামীলিগ ও বিএনপি ও কিছু মাওলানাকে ভাড়া করে ওলেমা লীগ বা ওলেমা দল উইং খুলে বসেছে! তাই রাজনীতি করা হারাম।

''গোমরাহ জমাতীরা ইসলামের মধ্যে রাজনীতি ঢুকিয়ে দিন ইসলামের সর্বনাশ করল'' ধরনের বক্তব্য এখন কম পাওয়া যায়। পরিবর্তে "মওদূদিবাদ নিপাত যাক, মার্কিন যুক্তরাস্ট্র নিপাত যাক, তসলিমা নিপাত যাক" ইত্যাদি শ্লোগানে আকাশ বাতাস কেপেঁ উঠে "বিবিধ" হুজুর দলের সমাবেশ থেকে। স্থান- বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট। আর নানান দল উপদলের উপর দোষারোপ। কাফের ঘোষনা।

আঁতাত। একদার হারাম রাজনীতি এখন হালাল। (থুক্কু)।
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৭ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.