আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের লাভ ও ক্ষতি



পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের রায় হওয়ার পর থেকেই আমি উৎফুল্ল ছিলাম, যদিও নিশ্চিত ছিলাম এই রায় বাস্তবায়ন করতে উদ্যোগ নিতে গরিমসি করবে প্রশাসন। এমন কি এটা বাস্তবায়নের জন্য বারংবার তাগাদা সত্ত্বেও দেখা যাবে সরকার প্রতিবারই ৬ সপ্তাহ সময় নিবে। বাংলাদেশে বিডিআর ট্রাজেডীর পর থেকে রাজনীতিতে তিনটি ধারা, বিডিআর ষড়যন্ত্র কিংবা সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতা কিংবা অন্তর্ঘাত কিংবা আন্তর্জাতিক চক্রান্ত, চলমান ধারণাগুলোর সবগুলোই কিংবা কোনো একটা সত্য- কিংবা প্রতিটাই আংশিক সত্য। এর সাথে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি- যা ন্যয়সংগত কিন্তু এর ব্যপকতা এবং সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আর প্রত্যাশার সাথে সরকারে উদ্দেশ্যমুখীতার ব্যবধান। সরকার প্রতীকি বিচারের ব্যবস্থা করতে আগ্রহী ছিলো কিন্তু বিচারের আশ্বাস পেয়ে বাঙালী রাজাকারদের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই মামলা করছে, প্রত্যেকেই নিজের পরিজন ও সম্পদের উপরে ১৯৭১ সালে ঘটে যাওয়া অত্যাচার ও অনাচারের বিচার চাইছে।

যদিও নিশ্চিত নই এখনও, তবে নাটোরে একজন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রধানের বিরুদ্ধেও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এমন নয় যে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধাপরাধ করেন নি, সাময়িক ক্ষোভ কিংবা প্রতিশোধস্পৃহা থেকে তারাও সংক্ষিপ্ত বিচারে রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের কিংবা পাকিস্তানপন্থী ব্যক্তিদের হত্যা করেছে। সেসব কারণে যদি কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত করা হয় সেটা যুক্তিসংগত, তবে বিগত জোট সরকারের সময় দলীয় পরিচয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় পত্র বিলি করা হয়েছিলো, এমন কি মুক্তিযোদ্ধাদেরও দলীয় পরিচয়ে সংকীর্ণ করে ফেলবার মতো নোংরা দলীয়করণ শুরু হয়েছিলো এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের দখল নিয়েছিলো হঠাৎ করেই সনদে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে ওঠা জোট সরকারের তল্পিবাহকেরা, যদি সেই সনদীমুক্তিযোদ্ধাদের ভেতরে কেউ কেউ প্রকৃত রাজাকারও হয়ে থাকে তবে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উত্থাপিত হওয়া বিগত জোট সরকারের আমলের নোংরামিকেই প্রকাশ করবে শুধু। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনে সরকারী উদ্যোগ কম ছিলো না, এমন কি কোনো েক অদৃশ্য ব্যবস্থায় মাত্র ১ মাসের ভেতরেই বাজারপরিস্থিতিকে অনেকটা নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে পেরেছে বর্তমান সরকার। সুতরাং এই সময়ে রাজনীতির অন্য একটা অংশ হলো সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের সিদ্ধান্তকে বহাল রাখা।

সেটা করলে আমার আনন্দিত হওয়ার একটাই কারণ আছে- এই সংশোধনী বাতিল করলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে বৈধতা দানের অধ্যাদেশটিও বাতিল হয়ে যাবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন অনেক শব্দ আর আইনের মারপ্যাঁচে যা করতে চেয়েছে সেটা এই একটা সংশোধনীকে বাতিল ঘোষণা করলেই করে ফেলা সম্ভব। সেই সময়ে খালেদা জিয়ার বাসা নিয়ে এই রসিকতা না করলেও হতো। কিংবা এটা নিয়ে হঠাৎ করে আসর গরম করবার কোনো প্রয়োজন ছিলো না, দলীয় রাজনীতির সংকীর্ণতা প্রমাণের জন্য এর বিকল্প অনেক কিছুই আওয়ামী লীগ কর্মী নেতা ও সমর্থকেরা করছে , আলাদা করে সাংবিধানিক ভাবে, সংসদে নেচেকুঁদে এমন রাজনৈতিক নোংরামি না করলেও হতো। এটা নিয়ে মাঠ গরম হবে এটা নিশ্চিত ছিলো, হাইকোর্ট মামলা নিতে চাইছে না, বিচারপতিদের অনাগ্রহ বিষয়টাকে আদালতের কাঠগরায় নিস্পত্তি হওয়ার বাদলে রাজপথে নিষ্পত্তি হওয়ার মতো একটা অবস্থানে ঠেলে দিলো।

বিচারপতি ও বিচারকদের নিজস্ব দলীয় আনুগত্য আছে, জামায়াতে ইসলামীর অসংখ্য কর্মী ও নেতা হাইকোর্টে উকিল ও বিচারক হিসেবে কর্মরত। একই সাথে উকিল ও বিচারপতি দল ও উকিল ও বিচারপতি লীগও আছে আদালত পাড়ায়, দলীয় করণের নামে সব কিছুতেই দলের মনোগ্রাম লাগিয়ে দেওয়ার প্রবণতা যে রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির দৈন্যতা এটা কোনো দলীয় সমর্থক কিংবা নেতারা উপলব্ধি করতে পারে না। সেই সময়ে মওদুদ আহমেদ প্রচ্ছন্ন হুমকি দিলো খালেদা জিয়ার বাসভবনের ইস্যুর সাথে পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের ইস্যু, যা বাতিল হলে জিয়াউর রহমান ও এরশাদের ক্ষমতারোহনও অবৈধ বিবেচিত হবে, বিএনপি নামক দলটির জন্মের বৈধতা হয়তো ক্ষুন্ন হবে না, কিন্তু একজন সংবিধান লঙ্ঘনকারীর হাতে জন্ম নেওয়া একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত হবে বিএনপি- এবং জিয়াউর রহমান এবং সামরিক শাসক একশাদের অবৈধ ঔরসে জন্ম নেওয়া ও প্রতিপালিত রাজনৈতিক দলটির নাম হবে জামায়াতে ইসলামী। সুতরাং জামায়াতে ইসলামী চাপে আছে, তাদের শীর্ষ পর্যয়ের নেতাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি, তাদের দলীয় সংগঠনের বৈধতা, তাদের রাজনীতির বৈধতা নিয়ে অসংখ্য প্রশ্ন সামনে। হয়তো আগামি দিনে পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের বিরুদ্ধে আন্দোলনই হবে মূল রাজনৈতিক আন্দোলন যা সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ নিতে পারে।

কিন্তু আমার নিজের ধারণা বিএনপি কিংবা এর সমমনা দলগুলোর আদালতের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া উচিত। এটা ঘটলেও বিএনপির সমর্থক কিংবা সদস্য সংখ্যায় ভাটা পড়বে না, তাদের সমর্থকের কমতি হবে না। বরং তারা নিজেদের রাজনীতিকে সংগঠিত করতে পারবে কারণ তাদের শরীরে ক্যান্সারের মতো জন্ম নেওয়া জামায়াতে ইসলামীকে নিপূন অস্ত্রোপচারে নির্মূল করে দিবে এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে ঘোষিত রায়কে মেনে নেওয়া।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।