সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার মধ্য দিয়ে সরকার সমঝোতার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে বলে মনে করছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হলে তাতে অংশ নেবে না বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এ সিদ্ধান্তে অটল থাকলে শীঘ্রই আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি দেবে বিএনপি। তবে এ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য গভীরভাবে বিশ্লেষণ করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ১৮ দলের মনোভাব পরীক্ষা করতে চান কি না তাও করা হচ্ছে পর্যবেক্ষণ।
দলের সিনিয়র নেতাদের ছাড়াও জোটের শকিরদের সঙ্গে বসে এ নিয়ে শীঘ্রই আলোচনা করে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি নির্ধারণ করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। হরতাল, অবরোধ ছাড়াও বিএনপি জোট যেতে পারে এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনে। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচিবদের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের তিন মাসের মধ্যে, অর্থাৎ ২৭ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই অন্তর্বর্তী সময়ে জাতীয় সংসদ বহাল থাকবে, তবে অধিবেশন বসবে না।
মন্ত্রিসভা থাকবে, কিন্তু কোনো নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেবে না। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, 'সংসদ বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনে সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী সমঝোতার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। তার এ সিদ্ধান্ত মানবে না ১৮ দলীয় জোট। নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশ নেব না আমরা। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন মেনে নেবে না জনগণ।
'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। কারণ তিনি কখন কী বলেন তা বোঝা মুশকিল। তিনি বারবার তার অবস্থান বদল করছেন। কিছুদিন আগেও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অক্টোবরে সংসদ ভেঙে দেবেন। কিন্তু এখন বলছেন, সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচন করবেন।
আশা করি অচিরেই তিনি সংসদ ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা পুনরায় দেবেন। আর সেটিই হবে জাতির জন্য মঙ্গলজনক। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্ত শুধু সমঝোতার পথই রুদ্ধ করেনি, এটি বহাল থাকলে দেশ নির্ঘাত চলে যাবে সংঘাতের দিকে। অস্থিতিশীলতা, নৈরাজ্য, অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগে স্থবিরতা, অর্থনৈতিক বিপর্যয় বেড়ে যাবে সবকিছু। ফলে সব দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ।
' স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন, 'দেশের জনগণ কোনো দল বা গোষ্ঠীর সম্পদ নয়। বরং সকল ক্ষমতার উৎসই হচ্ছে জনগণ। আর জনগণই চিরকাল সব স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে এসেছে এবং বিজয় অর্জন করেছে। কাজেই কোনো ষড়যন্ত্রই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। বাংলাদেশেও এর ব্যত্যয় ঘটবে না।
' তিনি বলেন, 'আমরা কোনো ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করি না, করবও না। আমরা চেষ্টা করছি জনগণকে সম্পৃক্ত ও সচেতন করার। কোনো প্রহসনের নির্বাচন এ দেশে মেনে নেবে না জনগণ। তারা তা রুখে দেবে। বিএনপিও জনগণকে সঙ্গে নিয়েই ক্রমান্বয়ে আন্দোলনের দিকে যাচ্ছে, যে আন্দোলনে জনগণ ছিনিয়ে আনবে তাদের বিজয়।
' প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, 'এর মাধ্যমে সমঝোতার শেষ সম্ভাবনাও বন্ধ হয়ে গেল। প্রধানমন্ত্রী মূলত দলীয় সরকারের অধীনে একতরফা নির্বাচনেরই ঘোষণা দিলেন। কিন্তু দেশের জনগণ তা মেনে নেবে না কখনোই। সংঘাত-সংঘর্ষ হলে দায় সরকারকেই নিতে হবে। ' ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, 'সরকার যদি একতরফা নির্বাচনের দিকেই যায়, তাহলে তা হবে তাদের স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।
এত দিন মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও কার্যত একদলীয় বাকশালের দিকেই যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের এই প্রহসনের নির্বাচন রুখে দেবে জনগণ। এ জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করবে ১৮ দল। ' রাজধানীর নয়াপল্টনে গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১৮ দলীয় জোটের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল নির্বাচনকালীন দায়িত্ব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে আরও বলেন, 'আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে দেশের মানুষ কেবল হতাশাগ্রস্তই নয়, আরও বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এত দিন সরকারের মন্ত্রীরা বলেছেন, এখনো সমঝোতার সুযোগ আছে।
সংসদে আসুন, সেখানে আলোচনা করে সংকটের সমাধান করা যাবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর সে সুযোগের অবসান ঘটল। ' তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, 'সংসদ বহাল রেখে আরেকটি সংসদ নির্বাচন করার বিধান বিশ্বের কোন দেশে আছে? অথচ প্রধানমন্ত্রী বারবার বলে যাচ্ছেন, বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো বাংলাদেশেও নির্বাচন হবে। নির্দলীয় সরকারের বাইরে নির্বাচন করা হলে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব। দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করা হবে।
' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন যদি প্রধানমন্ত্রীর শুভবুদ্ধির উদয় হয়, তাহলে সংকটের সমাধান হতে পারে। তবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের তৎপরতাকে 'ক্ষমতা কুক্ষিগত' করার অপপ্রয়াস উল্লেখ করে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, 'জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে তোয়াক্কা না করে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়েছে সরকার। দেশের ৯০ ভাগ মানুষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। আর সরকার চায় ভিন্ন লেবাসে বাকশাল কায়েম করতে। অতীতে তারা ১১ মিনিটে সংসদে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করেছিল।
আজ তারা একতরফাভাবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে কার্যত 'বাকশালী গণতন্ত্র'ই প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যাতে গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই। জনগণের দাবি উপেক্ষা করে আবার ক্ষমতায় গেলে তারা মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করে নেবে বলে আমরা মনে করি। ' ১৮ দলীয় জোটের মহাসচিবদের বৈঠকে নির্বাচনের সময়কার সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ছাড়াও চলতি মাসে নরসিংদী, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেটে খালেদা জিয়ার জনসভার প্রস্তুতি, জোট নেতা মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের গ্রেফতার ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।