Let the wind blow out the candles
প্রতিবারই পহেলা বৈশাখ টা আমার বছরের অন্যতম সেরা ফালতু দিন হিসেবে প্রমাণিত হয় যখন রিকশা/টিকশা না পেয়ে পুরো ঢাকা শহরের অর্ধেকটা হেটে পা ফুলিয়ে ঘরে ফিরে আসি। আর প্রতিবারই কানে ধরি আর বের হব না... সামনের কোন পহেলা বৈশাখে। যদিও এই কানে ধরা কোনবারই কাজে লাগে না আর প্রতিবারই নতুন কোন না কোন বর্ষবরণ উদযাপনের সিস্টেম বের করি আর দিনশেষে বরাবরের মত বেকুব হই স্কুলে থাকতে একটু বেশিই পান্খা ছিলাম তাই অন্য সবার চেয়ে একধাপ এগিয়ে ঢাকার এমাথা থেকে এমাথা টইটই করে ঘুরে বেড়াতাম বন্ধুবান্ধব সহ। পান্খা বলতে আবার এটা বুঝবেন না যেন বান্ধবী গার্লফ্রেন্ড নিয়ে অস্থির। এ জিনিসটা আমার কোনদিনই হয়নি, আর অদূর ভবিষ্যতে যে হবে সেটারো কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না স্কুল জীবন গেল, ভাবলাম কলেজে তো উঠলাম.... এইবার কিন্তু কিসের কি।
আমাদের টহল দলের সদস্য সংখ্যা এক এক করে কমতে লাগল, সবাই পেয়ে গেছে কাছে থাকার সন্গী, আর আমি যেই সেই আমড়া কাঠের ঢেঁকিই থেকে গেলাম। আগে আমাদের পহেলা বৈশাকের প্রোগ্রামটা ছিল এরকম- পান্জাবীটা খুজে বের করা (ঈদের পর যেটা আর কোনদিনই পরা হত না), এরপর বাপের কাছ থেকে কিছু পয়সা জোগাড় করে বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে বের হওয়া। বোকার মত হয়ত বিকেলের দিকে টিএসসি'র দিকে, দুনিয়ার সব মানুষ যখন রাস্তাঘাটের ট্রাফিক কন্ট্রোলের বারোটা বাজিয়ে একই গন্তব্যে ছুটেছে। পাবলিকের মুন্ডুপাত করতে করতে টি/এস/সির দিকে যাওয়া, সেখানের রমরমা অবস্থা দেখে খানিকটা উৎসবের আমেজে এসে মুহূর্তেই বেকুব হওয়ে যাওয়া, এরপর যুগলদের প্রেমমধুর পরিবেশে বর্ষবরণ (?) দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে (আর খানিকটা নিজের অসহায়ত্ব দেখেও ) আবার ট্র্যাক চেন্জ করে ধানমন্ডির দিকে যাওয়া। গন্তব্য হয়ত রাইফেলস স্কোয়ারের উপরে থান্ডারবোল্ট বা লেকের পার।
ওখানে গিয়ে অবশ্য সুন্দরী ছাড়া অন্য কোন উৎসবের আমেজ খুজে পাওয়া যায়না, থান্ডারবোল্ট তো তখন বিড়ির ধোয়ায় ধূম্রমুখর। দুনিয়ার সব মানুষ যেন পন করে এসেছে বিড়ি খেয়ে ধোয়া এখানে ছাড়বেই! আর লেকের ওখানে তো... থাক আর না বলি । যাইহোক বাঙালী অতিহ্যের পুরোপুরি গুষ্ঠি উদ্ধার করা ধানমন্ডি এলাকার বড়লোকী আমেজে বর্ষবরণ ঢং দেখে বাড়ি ফেরা এবং যথারীতি আম্মুর ঝাড়ি....
এইগেল কলেজ পর্যন্ত বর্ষবরণের ঢং। গতবার ভার্সিটির ফার্স ইয়ারে, তাই অন্য সবার মত এবার নতুন আমেজে বর্ষবরণের প্রস্তুতি থাকবে সেটাই আশা করা স্বাভাবিক, অন্তত আর সবার মত সন্গিনী আশা করাই যায় (আজকাল পড়াইতে গিয়ে দেখি সিক্সের ছেলেরও গার্লফ্রেন্ড থাকে ) ..। কিন্তু আমার কপাল বলে কথা, কপাল এমনই পোড়া, যে আমার সবচেয়ে ক্লোজ ফ্রেন্ডটা ছাড়া বাকি সবাই নিজের ধান্দায় চলে গেল।
এই ফ্রেন্ডটা আবার পড়ে মেডিকেলে, তাই চাপের ঠেলায় ওর সাথে ঠিকমত দেখাই হয়না, বৈশাখের পরেরদিন আবার নাকি ওর কিসব আইটেম না কি। মানে চাপ আর পিছে ছাড়ছে না। রমনার দিকে ভার্সিটি+কলেজের কিছু ফ্রেন্ড (আর তাদের গার্লফ্রেন্ড ) ছিল, তাই পুরোনো+নতুন ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা সাক্ষাতের জন্য ১১টার দিকে রমনার দিকে গেলাম, আর যথারীতি মানুষের চাপে পিষ্ট হয়ে তওবা করতে করতে গৃহে ফেরত। বলাই বাহুল্য মোবাইল ফোনের জটিল নেটওয়ার্কের জন্য ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা হবার কোন সুযোগও তৈরি হয়নি।
এবার তাই ঠিক করেছিলাম বেরই হব না পহেলা বৈশাখে।
কিন্তু আমার উড়ু উড়ু মন, ঘরে থাকে কতক্ষণ, তাই এবারও বেস্ট ফ্রেন্ডটাকে নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম, যদিও অনেক দুপুরে, ১টার দিকে। প্রথমে ওকে নিয়ে গেলাম ভার্সিটি। রিকশা ভাড়া ১৫ টাকা বেশি দিতে হল, তাও গা করলাম না। কারণ ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়ে আন্টির কাছ থেকে বকশিশ পাওয়া গেছে এম্নিতেই আন্টি আমাকে আদর করেন বহুত, আর গেছিও বহুদিন পর। ভার্সিটিতে কিছু ক্লোজ ফ্রেন্ড হয়ে গেছে, তাদের নিয়ে কলাভবনের দিকে গেলাম।
এদিকে আমার স্কুলের এক ক্লোজ ফ্রেন্ড এবার ল'তে চান্স পাইছে, তার ওপর নয়া বান্ধবী, তাই সে ফোন করে বলল তাকে একবার দর্শন না দিলেই নয়। যাইহোক গিয়ে আইবিএর দিকে আরো কিছু পুরোনো বন্ধুবান্ধব পেয়ে গেলাম, আর পায় কে! জটিল আড্ডা। ভালই লাগছিল, তবে ঐযে, নানা মুনি নানা মত। এখানে আবার শুরু হল নেক্সট কোন জায়গায় যাওয়া যায় সেটা নিয়ে গ্রুপিং। এক ফ্রেন্ড নাকি আরজে হৈছে, তার ভাবসাব আর নববর্ষের দিনে বাংরেজি ফটর ফটর দেখে মন চাইল পিটাই যাই হোক, ফ্রেন্ড মানুষ, তাই মাফ।
এরপর এদের নিয়ে চলে আসলাম নিজের ভার্সিটিতে। উদ্দেশ্য বৈশাখী তাস মেলার আয়োজন করা কয়েক রাউন্ড টোয়েন্টি নাইনের পর অবশ্য সেটা বাদ দিতে হল, কারণ ইতোমধ্যে সন্ধ্যা এসে পড়েছে, আলোয় আর কার্ড দেখা যাচ্ছে না। বাসায় ফেরা নিয়ে অবশ্য কারো কোন চিন্তাও আসেনাই, কারণ রাতের মেইন আকর্ষণ শিরোনামহীন, আর নিজেদের ব্যান্ড তো আছেই। কয়েকজন ফ্রেন্ড অবশ্য সন্গী/সন্গীনি নিয়ে হাওয়া, তারাও বৈশাখী আমেজে টান্কিবাজির পর ফিরে আসল ক্যাম্পাসে, আর আড্ডাটা আরো জমল। ক্যাম্পাসে আর্কিদের ফটোগ্রাফী একজিবিশন ছিল, সেটা দেখছিলাম, আর সেই সাথে নিজেদের ভার্সিটির ব্যান্ডের পারফর্ম দেখতে দেখতে শিরোনামহীনের জন্য অপেক্ষা।
অবশেষে ১০টার দিকে আসল শিরোনামহীন। শুরু ক্যাফেটেরিয়া দিয়ে। এরপর একে একে বন্ধ জানালা, পাখি, বুলেট কিংবা কবিতা, নদী, সূর্য, ইচ্ছেঘুড়ি, ভেবে দেখেছ কি, গোধূলী আর সবশেষে হাসিমুখ। প্রিয় ব্যান্ডের পারফর্মেন্সে সবাই তখন মাতাল। গলা অনেক্ষণ আগেই ভেঙেছে।
পুরো ক্যাম্পাস কাপানো পারফর্মেন্সের পর সাড়ে এগাড়োটায় শিরোনামহীন বিদায় নিল। আমরাও যেযার হলে/বাসায় ফিরলাম। মোবাইল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আম্মুর ঝাড়িটা অবশ্য প্রত্যাশিতই ছিল
এখন পর্যন্ত এটাই আমার জীবনের সেরা পহেলা বৈশাখ, কালকে একটা সিটি আছে, পেছানোর চেষ্টা চলছে, তবে সেটি সফল হবার তেমন কোন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। শূণ্য একটা মনে হয় আমার জন্য অপেক্ষায় আছে, নববর্ষে টিচারদের তরফ থেকে উপহার হিসেবে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।