আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বপ্নবাজ

... ... ... ...
তিরতিরে বাতাস বইছিল। চৈত্রের স্বভাবসুলভ এলোমেলো বাতাস, ঢেউগুলোও তাই এলোমেলো কিছুটা। তারই মাঝে ভেসে চলছিল নৌকাটা। না, কোন মাঝি ছিল না। কেবল যাত্রী ছিল একজন।

সে শুধু শুয়ে শুয়ে আকাশটা দেখছিল যেন, আকাশে তখন ধবধবে সাদা দলছুট মেঘের ছুটোছুটি। মধ্যে মধ্যে তেড়িয়া হয়ে ছুটে আসা বুড়ো কালো মেঘগুলোর হুমকি... মেঘের খেলা দেখতে দেখতে হয়তো বৈঠা বাওয়ার ইচ্ছে মরে গিয়েছিল তার। এলোমেলো বাতাসে ইতস্তত ভেসে চলা মেঘের দল হয়তো মনে করিয়ে দিচ্ছিল কাশবনের গল্প। এরকম কোনো এক দিনে তারা শুয়েছিল কাশবনে...ঠিক এরকমই কোন চৈত্রমুখর দিনে। সেদিনও এমনি করে কাঠফাটা রোদ্দুর ছিল, তবু ছায়া হয়ে দুলছিল দেড় মানুষ সমান লম্বা কাশফুলগুলো।

এলোমেলো মেঘ ছুটোছুটি করে আজ যেমনি ভাবে সূর্যটাকে ঢেকে দিচ্ছে, তেমনি করে সেদিন কাশফুলগুলো ছায়া হয়ে ছিল। চিৎ হয়ে শুয়ে তারা দুজনে কাশফুলের খেলা দেখছিল। কাশফুল আর মেঘেদের খেলা, সাদায় সাদায় রোদ ঢেকে দেবার খেলা কিংবা সূর্যের সাথে মেঘের বিরামহীন ছোয়াছুয়ি... এইসব দেখতে দেখতেই হয়তো বলছিল অনর্থক কিছু কথা, দুজনে মিলে বুনছিল অদেখার স্বপ্ন। চৈতালী বাতাসে কাশবনে এক শনশন আওয়াজ হতো, সে আওয়াজে তাদের কথাগুলো একান থেকে ওকান হতে হতেই হারিয়ে যেত, কাশফুলের মাথায় ঢেউ খেলিয়ে নদীর পাড়ে চলে যেত। সেই নদীর কিনারা বেয়ে সেই কাশফুলের বনটাকে পেছনে ফেলে নৌকাটা এগিয়ে যাচ্ছিল, আজ সে আর কোনো কথা বলছিল না।

‘তারা’ থেকে ‘সে’ হয়ে যাবার অভিমানে নাকি অন্ধ কোন হতাশ রাগে...কে জানে? জানি শুধু aim in life রচনার aimless life এর মতো হালছাড়া নৌকায় সে দিগ্বিদিক ছুটে যাচ্ছিল। এলোমেলো ঢেউ সে নৌকাকে নিয়ে যেমন খুশি তেমন করে খেলছিল। চৈত্রের রুদ্রমূর্তি ঝড় সে নৌকাকে একটানে বাদামের খোসার মত উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু তাতেও মনে হয় নৌকার সে যাত্রীর কোনো উদ্বেগ হল না। নিরুত্তাপ সে মানুষ চোখ বুজে চিৎ হয়ে শুয়ে রইলো, স্বপ্ন, অতীত আর কল্পনার মিশেলেই হারিয়ে গেল।

তারপর এমনি করে অনেক অনেক অনেক-দূর ভেসে গেল নৌকাটা...এলোমেলো উদাসীন পথিক হয়ে। শেষ বিকেলে বহুদূর থেকে উড়ে এসে বসলো ক্লান্ত একটা কাক। নৌকার কিনারায় বসে সে পাখা জুড়ালো। স্রোতের টানে এলোমেলো ভেসে যাচ্ছিল নৌকা, আর তাতে অদ্ভূত নীরবতা...একটু অবাক হলো যেন কাকটা। কয়েকটা ছোট্ট কিন্তু সতর্ক লাফে সে ঘুরে বেড়াল মানুষটাকে ঘিরে।

মানুষটা যেন দেখেও দেখলো না, এক চুল নড়লোও না। তারপর... তারপর ক্ষুধার্ত কাকটা ঠোকর বসিয়ে দিল চোখের কাছটায়...আর্তনাদ করার মত প্রাণ তখন আর সে মানবদেহে ছিল না। চোখ খুবলে খুবলে খেয়ে চলা ক্ষুধার্ত কাকটা জানতো না...ঐ চোখে অনেক স্বপ্ন ছিল।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.