প্রতিটি ব্যর্থ প্রেমই আমাকে নতুন অহঙ্কার দেয়, আমি মানুষ হিসেবে একটু একটু জ্ঞানী হয়ে উঠি, দুঃখ আমার মাথার চুল থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়, আমি সমস্ত মানুষ থেকে আলাদা হয়ে এক অচেনা রাস্তা দিয়ে ধীরে ধীরে হেঁটে যাই মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখা। নিজের সীমিত সীমা ডিঙ্গিয়ে আরো সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া। কিন্তু সব মানুষ কি পারে স্বপ্ন সফল করতে ??স্বপ্নলোকের সিঁড়ি স্পর্শ করার সুযোগ কম মানুষই পায়। স্বপ্ন দেখে যারা স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটাতে পারে তারা নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান, পরিশ্রমী কুশলীও বটে।
গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের তরুণীরা নতুন একটি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।
অনেকেই মডেল হতে চায়। হতে চায় ছোট বা বড় পর্দার নায়ক-নায়িকা। হতে চায় মিডিয়া জগতের রঙ্গের দুনিয়ার কর্মী । তবে মডেল হওয়ার দিকেই ঝোঁক অধিকাংশের। কারণ মডেল হতে তেমন প্রতিভা না থাকলেও চলে, শুধু সুন্দর মুখাবয়ব ও চলনসই ফিগার থাকলেই হলো।
তাছাড়া মডেলের স্ট্যাটাসও অনেক বেশি।
সঙ্গত কারণেই এ প্রবণতায় আচ্ছন্ন হয়েছে অনেক স্বপ্নবাজ তরুণী। কেউ এতো বেশি এই স্বপ্ন-আক্রান্ত, তারা ভাবে মডেল হতে না পারলে জীবন বৃথা। সুতরাং মডেল হওয়ার জন্য সোজা কিংবা বাঁকা পথ যত পন্থাই অবলম্বন করা প্রয়োজন, তার কিছুই করতে পিছপা হয় না তারা। কিন্তু পর্দা সবাইকে নেয় না।
অনেককেই ছুড়ে ফেলে আস্তাকুঁড়ে।
২০১১ সালের শুরুতে একটি ইংরেজি দৈনিকে অল্প কয়েকদিন কাজ করি। সেই অফিসের এক নারী কলিগ আমাকে কথায় কথায় বলল তার একটি ঘটনা । একটি বেসরকারি রেডিও চ্যানেলের এক উচ্চপদস্থ কর্মককর্তার কাছে চাকরীর অনুরোধ করলে সেই ভদ্রলোক একদিন তাকে চাকরীর শর্ত হিসেবে একটি কুপ্রস্তাব দেয় । মেয়েটি বুঝতে পেরে আগে ভাগে সটকে পড়ে।
আসলে পুজিবাদী ব্যবস্থায় পণ্যকে ক্রেতার হাতে দেওয়ার মূল্য দেওয়া হয় । অর্থাৎ আগে দেওয়া পরে নেওয়া তথা মূল্যবিনিময় । কিন্তু বিপত্তি হলো পণ্য হিসেবে ব্রান্ড দেওয়া নারীর শরীরের ক্ষেত্রে । এখানে আগে নারীর শরীর, পরে স্বপ্ন পূরণের প্রতিশ্রুতি। আর এক্ষেত্রে কোন গ্যারান্টি নেই।
নেই ডকুমেন্ট । তাই স্বপ্ন পুরণ না হলেও নারী খুজে পায়না তার বিনিময় মূল্য। একসময় এসব নারী অন্ধকার জগতে প্রবেশ করে। আর মিডিয়া যেহেতু অনেক শক্তিশালী । তাই এর কর্মকর্তারাও পাওয়ারফুল ।
ফলে প্রতিকার চাওয়ার কোন সুযোগ নেই । মান-সম্মানের ভয়তো আছেই ।
চলার পথে অনেক কিছু চোখে দেখি। নির্বাক পুতুল হয়ে দেখা ছাড়া করার কিছুই থাকে না। একদিন এক ক্যামেরা ম্যান আমাকে বলল, ভাই আমাদের অফিসে কেউ কাউকে চেনে না ।
অথচ দেখি মাঝে মাঝে ধানমন্ডির কেএফসি থেকে একসঙ্গে বের হতে...। এ যেন এক নীরব কৃতি,,ফাসঁ না হলে আড়ালেই থেকে যায়। কখনও কখনও দু একটি খবর বেরিয়ে আসে। মানুষের কান খাড়া হয়।
এক সিনিয়র আপু, তার চ্যানেলে আমাকে ঢুকতে প্রস্তাব দেয়।
কিন্তু ডেস্ক পছন্দ হয়নি বলে সেখানে আর যায়নি । কয়েক মাস পরে হলের এক বন্ধু আমাকে দেখায় সেই আপুর ভিডিও। চোখকে বিম্বাস করতে পারছিলাম না । মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাছ থেকে বিষয়টি নিম্চিত হলাম ।
নির্বাক হয়ে যাই। সাথে সাথে তার নাম্বারে মিসকল দেই । দেখি নাম্বার খোলা। ভাবলাম কল না দেওয়াটাই বেটার। তারপর থেকে আপুকে আর মিডিয়ায় তেমন আর দেখি না।
এরপর থেকে পিছনে শোনা কথাগুলো আর অবিশ্বাস করতে পারলাম না..একটি ঘৃর্না জন্মাল এ জগতের প্রতি। এখনও এদেশের মিডিয়া জগত নারীর জন্য নিরাপদ নয় বরং কন্টকময়।
গ্রহণ-বর্জনের এই অবিনাশী খেলায় কারো জীবন, বেঁচে থাকা কণ্টকাকীর্ণ হয়ে ওঠে। স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। মিডিয়ার চোরাবালিতে মেয়েরা পা দেয় বেশি।
যেহেতু তাদের হারানোর মতো সম্পদ ছেলেদের তুলনায় কিঞ্চিত অধিক। তাদের অস্ত্র শরীরী সম্পদ, যা টাকার চেয়েও উপাদেয়। প্রয়োজনে এই সম্পদ ব্যবহার করতে দিতে দ্বিধা করে না মেয়েরা।
এসব করতে করতে, স্বপ্ন পূরণের নেশায় তারা এতোবেশি তলিয়ে যায়-ফেরার পথ থাকে না। চোখের সামনের স্বপ্নটুকুও ক্রমশ ম্লান হতে শুরু করে।
স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হওয়ার পরই যখন নিজেদের ভুলটুকু ধরা পড়ে; তখন আর কিছুই করার থাকে না। কারণ অধিকাংশের জন্যই এটা ‘ওয়ানওয়ে রোড’। এই ওয়ানওয়ে রোডের যাত্রী হয়ে অনেকেই হারিয়ে গেছেন দূর সীমানায়।
চলার পথে পরিচয় হওয়া এক তরুণী বলেছিল তার মডেল হওয়ার স্বপ্নের কথা , মিডিয়া জগতের বাসিন্দা হওয়ার স্বপ্নের কথা। সেদিন কথা শুনে হেসেছিলাম আর মনে মনে বলেছিলাম , মেয়ে তোমার স্বপ্ন পুরণ হয়ত হবে কিনা জানি না ।
যদিও হয় , তবে তার বিনিময় মূল্য হয়ত অনেক বেশী দিতে হবে.. তার ওপর টিকে থাকার প্রশ্ন তো রয়েছেই..
এসব তরুণীরা যে জগতের বাসিন্দা হওয়ার স্বপ্নে মশগুল, সে জগতের খানাখন্দে ঘাপটি মেরে আছে নানামুখী অন্ধকার। অতল এ অন্ধকার ডিঙিয়ে আলো ঝলমল জগতে প্রবেশ সহজসাধ্য নয়। কিন্তু নামযশের মোহে অন্ধ মডেল যশোপ্রার্থীরা এসবের তোয়াক্কা না করে এগিয়ে যান স্বীয় লক্ষ্যপানে। লক্ষ্যপানে পৌঁছাতে প্রয়োজনবোধে তারা সমাজ, সংস্কৃতিবিরোধী কাজ করতেও দ্বিধা করেন না।
মডেল হওয়ার যে সর্বনাশা খেলায় আমূল জড়িয়ে পড়ছেন এদেশের মধ্যবিত্ত আর উচ্চমধ্যবিত্ত তরুণীরা, এ প্রবণতা মোটেও সুস্থ নয়।
শর্টকাটে মডেল হওয়ার চেয়ে মডেল হওয়ার জন্য যে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হয় সে চিন্তা বা চেষ্টা অনেকেরই নেই। ফলে শর্টকাটের কাজেই অনেক সময় ঘটে যাচ্ছে দুর্ঘটনা। স্বপ্ন পরিণত হচ্ছে দুঃস্বপ্নে। এ সর্বনাশা প্র বণতা, আকাশকুসুম কল্পনায় রাশ টানতে না পারলে দুঃস্বপ্নের পালা ক্রমশ ভারীই হতে থাকবে। বাড়তে থাকবে লাশ আর আত্বহত্যা ??
মনে পড়ে যায় ভারতীয় ফিল্ম পাড়া কাপানো সাবেক নায়িকা শ্রীদেবীর একটি বক্তব্যে “ প্রতিভা আর যোগ্যতা না থাকলে ডিরেক্টর আর প্রডিসিউআরদের বিছানায় শুয়ে কেউ বেশিদুর এগোতে পারে না”
যদিও তসলিমা নাসরিন তার দেহতত্ব কবিতায় লিখেছিলেন, “ এ আমার শরীর ,অথচ এর ওপর আমার কোন হাত নেই, প্রকৃতি আমাকে বাজায় , আমি তার শখের শেতার” ।
তবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় প্রকৃতি নারীকে বাজায় না বরং পুরষ নারীকে বাজায় আর নারীই পুরুষের শখের শেতার.....
এ জগতটা সত্যিই বড় সেলুকাস ....!!!
সবিশেষ কিছু পক্তি মনে পড়ে গেল
"আমি স্বপ্ন দেখি,
দেখি স্বপ্নভঙ্গের হাহাকার কিংবা স্বপ্ন বাস্তবায়নের উল্লাস,
দেখি সমাজের অন্যায় অবিচারের সাথে স্বপ্নের সংঘর্ষ,
কিন্তু সবশেষে হঠাৎ ভাবি, সবই কি অর্থহীন স্বপ্ন!!!
হোকনা তাই, তবু স্বপ্ন দেখি,
কারণ, হতেও তো পারে জীবনটাই একটা স্বপ্ন.......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।