নৌকা আর ধানের শীষে ভোট দিয়ে সোনার বাংলার খোয়াব দেখা আর মান্দার গাছ লাগিয়ে জলপাইর আশা করা একই! বিস্ময়ের ব্যাপার হল দিনের পর দিন আমরা তাই করছি!!
মর্টগেজ মার্কেট নিয়ে জানতে চেয়েছিলেন একজন। মর্টগেজ মানে বন্ধক। আগে সোনা বন্ধক রাইখা মানুষ বাইন্যা (স্বর্নকার) থেকে টাকা ধার নিত কড়া সুদে। চরম দরিদ্র বাংলার ইতিহাসে ঘটি, বাটি বন্ধকেরও নজির আছে। গ্রামে জমিজমা বন্ধক এখনও নিত্যদিনের কারবার।
ব্যাংকগুলোর বন্ধকী ঋন বিশ্বজোড়া। গ্রাহক যাতে টাকা মেরে ভেগে না যায় সে জন্যে এ ব্যবস্থা। কিন্তু প্রশ্ন হল ভ্যালুয়েশনের। লোনের পরিমানটা সাধারনত জমির/ বাড়ী/স্থাপনার বাজার দামের সাথে সামন্জ্যস্যপূর্ন হয়।
সূদী কারবারের জমজমাট ইউ.এস. ইকোনোমীতে তা হয়নি।
Over valuation হয়েছে ব্যাপক। শুধু তা না Hedging, Sub prime নামক নানান বাহারী নামে প্রায় অনিয়ন্ত্রিত 'লোনে'র বেচাকেনার মার্কেট গড়ে উঠে। একজন গ্রাহকের সব কটি লোনের দায়ভার নিয়ে নেয় আরেক জন, সেটা সহ তৃতীয়জন। গোড়ার ভিত্তি কিন্তু ঐ 'মর্গেট্জ'টা! দিন কে দিন উহার ভ্যালু বেড়েছে। কোন কারন ছাড়া! বেলুনকে ফুলাতে চাইলে আপনি পারবেন।
কিন্তু কতটা? সুতরাং এখন ফুটোশ!!!!!!!!!!
এই 'ফুটুশ' কারবার বাংলাদেশেও যে শুরু হয়নি তা না। লক্ষ্য করলে দেখবেন মশা, মাছি বা তেলাপোকার মত গজিয়েছে ব্যাংক, বীমা, লিজিং, ক্ষুদ্র ঋন, কো-অপারেটিভ, মার্চেন্ট ব্যাংক, শেয়ার ব্রোকারেজ, মিউচুয়াল, এসেট ম্যানেজার, ফ্যক্টরিং ইত্যাকার হরেক রকম 'আর্থিক' কারবার। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ক্ষুদ্র ঋনের হাঁট বসিয়েছে ব্র্যাক, আশা রা। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে IDLCর মত নামকরা ফার্ম লোন দিচ্ছে। IDCOL, IPDC, IIDFC র মত 'শিল্প মুখী'রাও 'Consumer Loan' দেবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
BRAC, SCB, EBL, DBL, HSBC র সুরেলা কন্ঠি (না জানি চেহারা কেমন!) বা 'সশরীরে ধাওয়াকারী'দের Credit card, Car loan, Grocery Loan ইত্যাদি ক্রয়ের প্রতিনিয়ত আহবানে সাড়া না দিয়ে থাকা অনেকের জন্যই দুশ্কর। বিনিয়োগ করার mutual fund নিজেই 'নিরাপদ বিনিয়োগ স্থল হিসেবে' শেয়ার বাজারে সুনাম কুড়িয়েছে! নতুন কোন উৎপাদনশীল উদ্যগীকে ঘেউ ঘেউ করে তাড়িয়ে দিলেও দোকানদারদের ভালো কদর ব্যাংকারদের কাছে। প্রয়োজন না থাকলেও কিছু ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দিবেনই। এগুলোর অনিবার্য ফল 'অমেরুদন্ডী ধাচেঁর দোকানদারী অর্থনীতির' বিকাশ। যার মূল শুধুমাত্র 'ভিনদেশে শ্রমবিক্রি ও নিজদেশে কাপড় সেলাই' বাবদ প্রাপ্ত মাইনে! দুটিই এখন মুখ ফিরাতে শুরু করল বোধ হয় (আল্লাহ রক্ষা করুন আমাদের)।
তবুও সুদের হার এখনো কমেনি!
বাচার উপায়:
বাচতে হলে জানতে হবে। এবং সেটা সরকারকে প্রথমে। এবং আমল করতে হবে। সেটাও সরকারকে প্রথমে। তবে-
১।
প্রথম কাজই হল- সাবালক মন্ত্রীদের নাবালক কথাবার্তা বন্ধ করা। 'জঙ্গীতে ছেয়ে গেছে দেশটা' বলে কার পায়ে কুড়াল মারছেন? বি.এন.পি জামাতের না দুবাইয়ে চাকরি নিয়ে আতংকিত যুবকটির? না কি এক্সপোর্ট অর্ডার নি্যে চিন্তিত ব্যবসায়ীর? উপজেলা চেয়ারম্যানের পাজেরো গাড়ী না প্রতি উপজেলায় একটি গরুর খামার? কোনটি এমুহুর্তে আর্জেন্ট?
২। ফালতু জিনিসের আমদানী বন্ধ করে দেয়া। এবং সে সমস্ত বস্তু যাতে ৬ মাসের মধ্যে এদেশে উৎপাদন শুরু হয় তার ব্যবস্থা করা। টুথব্রাশ বা বলপেনের মত শিল্প আমদানীর চোটে ধ্বংস হয়েছে।
৩। দুতাবাসগুলোকে Manpower and Goods/Service Export এর স্পেসিফিক টার্গেট দেয়া এবং পুরন করতে পারলে পুরস্কার না পারলে তিরস্কার এর বিধান। শুয়ে বসে, প্রটোকল খাওয়ার দিন শেষ।
আসি লং টার্মে কি করা। বলা বাহুল্য- উৎপাদন, সেবা, মূল্যসংযোজন, বৈচিত্র হয় এমন আসল মেরুদন্ডী অর্থনীতির বিকাশ সাধন ছাড়া বিকল্প নেই।
যাতে ঝড়ঝাপটা কম গায়ে লাগে। টাকা দিয়ে শুয়ে বসে টাকা বানানো কে বড্ড কঠিন করে ফেলতে হবে। টাকা বানতে হলে হাটেঁ, মাঠেঁ, ঘাটেঁ যেতে হবে। চায়না থেকে তিন নম্বরি ইলেকট্রনিক্স ১০% আমদানী ও ৯০% চোরাচালনী করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাবার 'ঈষর্নীয়' রাস্তাটা ডাইভার্ট করতে হবে। Unilever, Nestle র মত নামকরা কোম্পানি প্রচুর মাল বিদেশে বানিয়ে এখানে শুধু বিপনন করে।
আকামটা পুরোপুরি বন্ধ করা দরকার। এভাবে চরমতর উৎপাদনমুখি আসল অর্থনিতির পথে ঘাড় ধরে গোটা জাতিকে নিয়ে যেতে হবে। নাহলে প্রায় সবারই খবর আছে। এই ব্লগারকুলেরও! (শেষ)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।