আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরাবাস্তব জগৎ

...ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাচিয়া,সদাই ভাবনা, যা কিছু পায়, হারায়ে যায়, না মানে স্বান্তনা...
নিউট্রিনো জেনারেটরটা চালু করে রিহান তার তৈরী সময় ভ্রমন যন্ত্রটাতে চেপে বসলো। এটাকে আসলে ঠিক সময় ভ্রমন যন্ত্র বা টাইম মেশিন বললে ভুল হবে। তিন পায়ার উপরে দাড় করানো হুড তোলা গাড়ির মতো যন্ত্রটা আসলে সমান্তরাল বিশ্বে যাবার একটা যান। বেশ কয়েক বছর আগে প্রমাণিত থিওরী অনুযায়ী আমাদের সমান্তরালে ঠিক আমাদের মতোই একটা মহাবিশ্ব আছে। তবে সেটা তৈরী প্রতিপদার্থ দিয়ে।

সেখানে এটমের মধ্যে ইলেক্ট্রন গুলো ঘুরে উল্টো দিকে। সেখানে আছে রিহানের মতোই আর এক রিহান। প্রতি পদার্থে তৈরী প্রতি রিহান। তেমনি আছে এষার মতো প্রতি এষা। এষা হলো রিহানের দশ বছরের মেয়ে।

যে মেয়েটা একটা রাত রিহানের কাছে গল্প না শুনে ঘুমোতে পারতো না। একটা বিকেল বাবার সাথে ঘুরতে না বেরোলে এষা সেদিন আর পড়তে বসতে পারতো না। মুখ গোমড়া করে রাখতো। মা মরা মেয়েটাকে আগলেই তো এতোদিন বেঁচে ছিলো রিহান। কিন্তু , দু’মাস আগে, হ্যাঁ মাত্র দু’মাস আগে একটা এক্সিডেন্টে মেয়েটাকে হারাতে হয় রিহানের।

খুব সাধারন একটা দিন ছিলো সেটা। প্রতিদিনের মতো সেদিনো সূর্য উঠেছিলো, সেদিনো বিকেলটায় বাবার হাত ধরে ঘুরতে বের হয়েছিলো এষা। প্রতিদিন তারা যে পার্কটায় ঘুরতে যায়, সেখানেই গিয়েছিলো। রাস্তা পার হবার সময় হঠাৎ একটা কাঠবেড়ালীকে পথের ওপাশে দেখে দৌড় দিলো এষা। একটা লালচে রঙের গাড়ি এসে তার ছোট্ট দেহটাকে ছিটকে ফেললো দু’হাত দূরে।

কালচে পিচের রাস্তা রক্তে লাল হয়ে গেলো। নিথর দেহটি নিয়ে আরো নিথর হয়ে বসে রইলো রিহান। রিহান এখনো সেই দিনটা ভুলতে পারে না। মেয়েটার হাসি মুখটা দেখবার জন্য প্রবল ভাবে কাঁদে তার মন। একবার, শুধু একটিঁবার ছোট্ট এষার জীবন্ত মুখটা দেখার জন্য তাই রিহান নেমেছে এই সর্বনাশা পরীক্ষায়।

গত দুইটি মাস যন্ত্রের মতো খেঁটে একা সে এই যন্ত্রটি বানিয়েছে। রিহান জানে, একটুকু ভুল পারে পুরো বিশ্বভ্রম্মান্ডকে ধ্বংস করে দিতে। যদি তার পরীক্ষাটি সফল হয়, আর ভুলে একবার যদি সে পরাবাস্তব জগতের কোন প্রতি পদার্থকে স্পর্শ করে ফেলে, তাহলে হয়তো পদার্থ প্রতিপদার্থের সংঘর্ষে পুরো মহাবিশ্বই ধ্বংস হয়ে যাবে। তারপরও রিহান পারে নি। একটিবার কেবল একটিবার এষার মুখটি দেখার জন্য সে রাত দিন কাজ করে গিয়েছে এই যন্ত্রটি বানানোর জন্য।

যন্ত্রটাতে চেপে নিয়ন্ত্রন কেবিনেটের লাল রঙের সুইচটিকে স্পর্শ করে রিহান তার পরীক্ষাটি শুরু করে। খুব ধীরে ধীরে তার চারপাশে একটা চতুমাত্রিক বলয় তৈরী হয়। তৃতীয় মাত্রার জগতের কারো পক্ষে সেটা দেখে বোঝার কথা নয়। কিন্তু রিহান বুঝে, সে এখন একটা চতুর্মাত্রিক সুড়ঙ্গের মধ্যে প্রবেশ করছে। অনেকটা ব্লাক হোলের মতো।

এই সুড়ঙ্গের অপর পাশে আছে আর একটা জগত। পরাবাস্তব জগৎ। দু’মাস আগের অন্য পৃথিবী। যেকানে তখনো এষা বেঁচে আছে। সেই ছোট্ট মুখটা একবার, মাত্র একবার দেখে সে ফিরে আসবে আবার তার জগতে।

তার পরীক্ষাটি কি সফল হবে। সে নিজেই জানে না। আসেলেই কি সে যেতে পারবে সমান্তরাল বিশ্বে। প্রচন্ড বেগে চলছে যানটা তাকে নিয়ে চলেছে অন্য জগতের দিকে । প্রবল বেগের সাথে পাল্লা দিয়ে নিজেকে অচেতন হওয়া থেকে বাঁচাতে চেষ্টা করে রিহান।

কিন্তু এক সময় আর পারে না। রিহান যখন চোখ খুললো, তখন দেখে সে তাদের সেই পার্কটিতে বসে আছে। সময়টা বিকেল। বিকেলটা খুব চেনা চেনা লাগছে। চারদিকে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে খেলছে।

একটা শিশু আর একটা শিশুর হাতের আইসক্রীমটা নিয়ে দৌড় দিয়ে পালাতে গিয়ে ঘাসের উপর পরে গেলো। তাই দেখে অন্য শিশুটি হাসছে। ঠিক এই দৃশ্যটি কোথায় যেন দেখেছে সে। কোথায় দেখেছে সে? হঠাৎ মনে পরে যায়, এটা সেই বিকেল। যে বিকেলে তার ছোট্ট মেয়ে এষা তাকে ছেড়ে চলে গেছে।

সে দিনও সে আর এষা যখন পার্কের এই জায়গটা দিয়ে যাচ্ছিলো, ঠিক এই দৃশ্যটিই দেখেছিলো সে। রিহান উঠে দাড়ায়। একটু এগিয়ে যায়। কিছুদূর গিয়ে সে দেখতে পায় সে আর এষা হাত ধরে রাস্তা পার হচ্ছে। সেই রাস্তা।

যেখানে লালচে গাড়িটা এসে তার এষাকে তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে গেছে। দূর থেকে দেখছে সে। সেই পরিচিত বিকেল। হঠাৎ রাস্তার ওপাশ থেকে সে লাল গাড়িটাকে আসতে দেখে। ঠিক অন্য পাশে একটা কাঠবিড়ালি।

সে দেখতে থাকে তার প্রতিমূর্তি প্রতি রিহান প্রতি এষাকে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে, রাস্তার অপরপাশে একটা কাঠ বিড়ালি, লালচে গাড়িটা ধেয়ে আসছে। এষা কাঠবিড়ালিটা দেখে দৌড় দিয়েছে। লালচে গাড়িটা ধেয়ে আসছে। এখনই এষাকে ধাক্কা দিবে। কি করবে এখন রিহান।

সে এই জগতের কোন কিছুই স্পর্শ করতে পারবে না। কারন এখানে সব কিছুই তৈরী প্রতিপদার্থ দিয়ে। কোন কিছুকে স্পর্শ করলেই পদার্থ প্রতিপদার্থের সংঘর্ষে তার সত্যিকারের মহাবিশ্ব আর এই সমান্তরাল প্রতি মহাবিশ্ব দুটোই ধ্বংস হয়ে যাবে। এষা দৌড় দিয়েছে, লালচে গাড়িটা এগিয়ে আসছে। রিহান নিজেকে আটকে রাখতে পারে না।

যদিও জানে এই এষা আসল এষা নয়, অন্য একটা বিশ্বের অন্য এষা, তারপরও রিহান দৌড়ে যায় এষাকে বাঁচাতে। সরিয়ে দিতে হবে এষাকে যাতে গাড়িটা তাকে ধাক্কা দিতে না পারে। দৌড়ে গিয়ে সে প্রতি এষাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। চতুর্মাত্রিক জগত থেকে একদল চতুর্মাত্রিক প্রাণী আবিষ্কার করে, তাদের কাছাকাছি থাকা দুটো ত্রিমাত্রিক জগত একই সাথে প্রবল বিস্ফোরনে ধ্বংস হয়ে গেছে। যদিও কারনটা তারা উদ্ঘাটন করতে পারে না।

এই গল্পের বিজ্ঞানটুকু: কয়েকদিন আগে একটা বই পড়েছি। Beyond Einstein, মিচিও কাকু আর জেনিফার ট্রেইনারের। দারুন একটা বই। এখানেই পেলাম থিওরীটা। আমাদের ঠিক সমান্তরালে আর একটা বিশ্ব থাকা খুব সম্ভব।

যেটা হবে অ্যান্টিম্যাটার বা প্রতি পদার্থের বিশ্ব। সেখানে আমাদের মতো সবার প্রতিরূপ থাকতে পারে। কিন্তু সবই প্রতি পদার্থের তৈরী। এই ধারনার পক্ষে কিছু গাণিতিক ব্যাখ্যা আছে। এক বিশ্ব থেকে অন্য বিশ্বে যেতে হলে অবশ্যই আমাদের অন্য একটা মাত্রা ব্যাবহার করতে হবে।

ব্যাপারটা অনেকটা একটা খোলা বইয়ের মতো। একটা খোলা বই। এক পাশের পাতার ঠিক প্রতি রূপ অন্য পাশের পাতাটি। কিন্তু তার মিরর ইমেজ। বই এর পাতার তলটুকুকে দ্বিমাত্রিক জগত চিন্তা করলে, এক পাতায় রাখার একটি বিন্দুকে অন্য পাতায় আনতে সেটাকে উপরে তুলতে হবে।

মানে অন্য একটা মাত্রা ব্যাবহার করতে হবে। এই গল্পে সেই থিমটাই ব্যাবহারের চেষ্টা করেছি। জানি না, গল্পটা খুব জটিল কিছু হয়ে গেলো কিনা।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।