জীবনটা যেন এক বর্ণীল প্রজাপতি
(চলছে ৩)
ফোন রিসিভ করলাম। কথা তেমন ফাটাফাটি গোছের কিছু হলনা। যতটা এক্সাইটেড মনে করেছিলাম। জাস্ট কেমন আছেন, ভাল আছি টাইপের। তবু, ওইটুকুতেই দেখি আমার আবারও সপ্ন দেখা শুরু হয়ে গেল।
হায়রে, এই পাগল মনরে নিয়া কি করি! কিন্তু, একটা বেপার, লোকটা কিছুতেই স্বীকার করছেনাতো, আমার ফোন নাম্বারটা সে কই পেল? একটা সন্দেহ দানা বাঁধতেছে। তাইলে কে এইটা? আমার পরিচিত কেউই নাতো!
ধুর, কথা বলতে থাকি। এক সময় তো এইটা জানা যাবেই। আর, যদি ভুয়াই হয়......! ধুর! এত ভেবে কোন লাভ নাই। যা হবার হবে।
এরপর বেটা মাঝে মাঝেই ফোন করে। কথা হয়। হতেই থাকে। এর ভেতর তন্বী জিেজ্ঞস করেছিল, কিরে তোর ওই শ্রাবণ আবার ফোন টোন করেছিল? আমিতো সোজা অস্বীকার। নাহ, করেনাইতো।
কেন যে মি্থ্যা কথা বলে ফেললাম, জানিনা। শুধু মনে হল, অদের বললেও বিশ্বাস করবেনা। উলটো আরও হাসাহাসি করবে। কি দরকার!
চলতে থাকল, কথার পর কথা। কত কথা।
আস্তে আস্তে আমিতো উইক হতে হতে পুরা কাইত। বেটা এত সুন্দর করে কথা বলে। তার সব কথাতেই যেন রসে ভরা। এত মধুর! ওহ!
ধীরে ধীরে এটা দুইজনেরই মধ্যে কাজ করতে লাগল। দুইজনেরই দেখি দুইজনকে ভাল লাগতে শুরু করেছে।
ও আমাকে দেখতে চাইল। আমি কিভাবে দেখাব, ওকে। ও থাকে সেই কোথায়! মুন্সিগঞ্জ। ওখান থেকে সে আসবে আমার কাছে। আমাকে একদিন বলল, চল আমরা দেখা করি।
আমিও তো তাই চাই। কে লোকটা দেখতে হবে। আসলেই আমার সাথে কেউ ফান করছে কিনা তা জানতে হবে।
কিন্তু কই, বলাই সার। দেখা করার ডেট আর ঠিক করেনা।
এর ভেতর, আমি আবার আমার চাচাতো বোনকে এই বেপারে একটু বলে রেখেছি। জাস্ট পূ্র্বাভাস দিয়েছি আরকি। পুরোপুরি ঘটনা কিছুই বলি নাই। আমার আম্মাকে ওর মা আবার বলেছে," তোমার মেয়ের তো বোধহয় কাউকে পছন্দ হয়েছে। এইরকমই শুনা যাইতেছে।
যাক পছন্দ হইলেতো ভালই, আমরাও এইটাই চাই। "
মিতু দেখি আমার জাস্ট পুর্বাভাস থেকেই ঘটনা চারিদিকে প্রচার করে দিচ্ছে। বেপারটায় আমার রাগ হওয়ার পরিবর্তে মজাই লাগতেছে। "হুম, দেখ, আমিও নিজে পছন্দ করতে পারি। ভাল জিনিসই আনতেছি, অপেক্ষা কর।
"......ভাবলাম মনে মনে।
এখন ওর সাথে আমার সম্পর্ক আরও গভীরে পৌছে গেছে। সবচেয়ে আগে, বলব, মামিকে, না না বলব চাচিকে। এই দুইজন মানুষ আমাকে এত আদর করেন। আর, আমার কথারও মূ্ল্যায়ন করেন খুব।
আগে তাদেরকে জানাতে হবে। তারপর নারাই ছেলে দেখে বাসায় আমার বাবা-মাকে জানাবে। আমার বর ভাইয়াকে বলতে পারলে বেশ হত। কিন্তু, উনি ভীষণ রাগী। আর, তাছাড়া যত উইকই হইনা কেন, মনের ভেতর একটা বেপার এখনও খচ খচ করতেছে।
আসলেই লোকটা আসবেতো। নাকি মিতু, তন্বীদের কথাই সত্যি হয়ে যাবে। খুব টেনশন হইতেছে!!
এর ভেতর কথা বলা থেমে নেই। আমার ফোন করাই লাগেনা! ও সারা দিনই আমাকে ফোন করছে। আমার খোঁজ খবর নিচ্ছে।
ও এত কেয়ারিং! আর আমি কিভাবে ওকে মিথ্যে ভাবতেছি। মন শাসন করে। আগে দেখাই করিনা। তারপর দেখা যাবে।
তাররররররররপরররর.........আসলো সেই বিশেষ দিন।
আজ আমাদের পরস্পরের দেখা হবে। ও আসবে আজ আমার কাছে। আমার সাথে দেখা হবে। খুশিতে আমার মনটা নেচে বেড়াচ্ছে! কি মজা কি মজা! আজ আসবে আমার প্রিয় আমার সাথে দেখা করতে।
আমি জানিয়েছিলাম, কোথায় দেখা করবে? আমি আমার নিজের নিরাপত্তা আর বাসার কাছে যেন ধরা না খাই সেইজন্য, আমার এলাকার কাছাকাছি একটা জায়গার কথা বললাম।
ও বলল, "মিথিলা, আমিতো ওই জায়গা চিনি না। " পরে বলল, "আচ্ছা ঠিক আছে। চিনে নেবনে। "
আমি ভাবতেছি, কি পড়ে যাব আজ? প্রথম দিন দেখা। শাড়ি পড়ব কি? উফ্, কার সাথে এই বেপারে আলোচনা করি! কারো সাথে করার উপায় নাই।
আবার, হঠাৎ শাড়ি পড়লে মা সন্দেহ করতে পারে! থাকগা, শাড়ি পড়া লাগবেনা। ড্রেসই পড়ি। কিন্তু, তাতেও ঝামেলা। কোনটা পড়বো? অবশেষে অনেক ভেবেচিন্তে, একটা গোলাপী জর্জেট জামা আছে , ওইটাই পড়লাম।
তারপর, আচ্ছা, একটু দেরি করেই যাই।
সব জায়গায় দেখা যায়, কোথাও পৌছানোর কথা থাকলে আমি সবচেয়ে আগে গিয়ে উপস্থিত। আর, তাছাড়া, এই খানে, ছেলে আগে এসে পৌঁছাক, তারপরে আমি যাই। লজ্জা করতেছে। খুব।
রিক্সা করে যাচ্ছি আর ভাবতেছি, আমাকে সাম্নাসামনি দেখে ও আমাকে পছন্দ করবেতো! যদি, আমাকে ওর ভাল না লাগে।
এমনি কত চিন্তা। কত রকম ভাবনা। আহারে! কতদিন পর, আমার সপ্ন পূ্রন হতে যাচ্ছে। আমার প্রেমিক পুরুষ। অবশেষে.........!!!
কিন্তু, পোউছে গেলাম কতক্ষন আগেই।
আশে পাশে কত লোক আস্তেছে। জাচ্ছে। আমার দিকে ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছে। সন্দেহ করতেছে? কি জানি!
লজ্জা করেতেছে!
৩০মিনিট পার হয়ে গেল! বেটারতো কোন খবরই নাই। কি বেপার? দিলাম ফোন।
ধরেনা। তবে, ব্যাক করল। বলে," এইতো সোনামনি, আর একটু অপেক্ষা কর। "
আহা, ওর কথা শুনে মনটা গলে গেল আবার। আচ্ছা , ঠিক আছে, থাকি আরও কিছুক্ষন।
এভাবে কেটে গেল আরও কিছুটা সময়। কিন্তু, আর ভাল্লাগছেনা রে বাবা! এতক্ষন লাগবে কেন? ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জ কি অনেক দূরে! দূরে হলেই কি, আগে থেকে রওনা দিলেই পারত। ধুর, আর ভাল্লাগছেনা যে! নাহ, আবার ফোন দিলাম। বাহ, এবার দেখি ফোন বন্ধ। একি! আবার দিলাম ফোন , নাহ সত্যিই বন্ধ।
ধুর.........!!!
খুব রাগ হল। মনও খারাপ হল। ধুর, বাসায় যাইগা! আর থেকে কি হবে!!!
পরে, বাসায় গিয়েও তো মন টিকছেনা। চলে আসা কি ঠিক হল? এছাড়া আর কিইবা করার ছিল! এলনাতো সে। সারাদিনই খারাপ গেল।
রাতও কাতেনা। এটা কি হল! আর, কোন খবরও তো দেয়না। পরে, আমি আবার, ফোন করলাম, এভাবে থাকতে না পেরে। ফোন বাজল অনেক বার। ধরেনা কিছুতেই।
কাছে পেলে, খাইয়া ফেলতাম। ধুৎ!!!
পরে, দেখি, একটা মেসেজ এসেছে! শ্রাবণ??!! "ইস্, ও বোধহয় অসুস্থ, তাই আসতে পারেনি। " পাগল মনকে বুঝাই। কিন্তু, নাহ্!!! মেসেগ পড়ে জানা গেল, আমার এই অনুমান সঠিক নয়। কোন অসুখ টসুখ নয়।
মেসেযে লিখেছে,......" তোমার কন্ঠস্বর এত সুন্দর! কথা বলতে বলতে এতটা হয়েছে। আসলে, তুমি যেই বংশই-মর্যাদায় মানুষ হইছ, আমার সাথে তোমাকে কল্পনাই করা যায়না। আমাকে ক্ষমা কইরো। এর বেশি আর কিছু বলার নাই। "
কি কথা!!! এক কথায় সম্পর্ক শেষ! এত সোজা! আমার মন তো মানে না।
আবার ও ফোন দেই। ধরেনা। আর কোনদিনই ধরলোনা। বছর পেরিয়ে গেল।
কয়েক বছর পর......
বিয়ের কথা বার্তা চলতেছে একটা।
ছেলে ভালই। আমেরিকায় পিএইচডি করতেছে। ছুটিতে দেশে এসেছিল। খালার বাসায় আমাকে দেখেই পছন্দ করে ফেলেছে। তারপর আর কি!
জানালা দিয়ে রাতের আকাশের তারা দেখতেছি আর ভাবতেছি.........অনেক দিন পর শ্রাবণের কথা মনে পড়ল আজ।
লোকটা আসলে কে জানাই হলনা আর। কেন যে মানুষ এমন করে! তারা একবার ভাবেও না তার বিপরীত মানুষটার পরে কি হবে। মরেও যেতে পারতো তো ও। কিন্তু, নাহ্, আছেতো বেঁচে। এটাই কি জীবন!
(সমাপ্ত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।