প্রান্তিক জনগোষ্ঠিগুলোর ভাষা ও জাতিগত অস্তিত্বের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও সমমর্যাদা দাবী করছি
পৃথিবীর ইতিহাসে কেবল দু'টি ভাষার জন্যই জনগণকে লড়াই করতে হয়েছে, বুকের রক্ত ঝরাতে হয়েছে - ভাষা দু'টি হলো বাংলা এবং বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী। তামিল ও কন্নাড়া ভাষাকে প্রাদেশিক ভাষা করার দাবীতেও আন্দোলন হয়েছে, তবে কেবল বাংলা ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষার আন্দোলন পুরোপুরিভাবে জাতিগত অস্তিত্তের সাথে সম্পর্কিত ছিল। বাংলার মতোই বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদেরকে তাদের মাতৃভাষার স্বীকৃতির জন্য কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে। সেই সংগ্রামে অনেক রক্ত ও প্রাণ ঝরেছে এবং সে সংগ্রাম ছিল বাংলা ভাষা আন্দোলনের চেয়েও দীর্ঘতর। মাতৃভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও মাতৃভাষায় শিক্ষার দাবীতে ভারতের আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে গত শতকের পঞ্চাশের দশক থেকে প্রায় অর্ধশত বছর ধরে সংঘটিত হয়েছে এক রক্তক্ষয়ী আন্দোলন।
সেই আন্দোলনের চরম পর্যায়ে পুলিশের গুলিতে আত্মাহুতি দিয়েছিল সুদেষ্ণা সিংহ নামের এক বিদ্রোহী তরুণী।
বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী নামে পরিচিত ভাষিক সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠির আদিভূমি হলো ভারতের উত্তর পুর্বাঞ্চলের মণিপুর নামের একটি রাজ্য। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ থেকে নানান রাজনৈতিক এবং সম্প্রদায়গত সংঘর্ষের কারণে এবং বিশেষ করে ১৮১৯-১৮২৫ সনে সংঘটিত বার্মা-মণিপুর যুদ্ধের সময় ব্যাপক সংখ্যক মণিপুরীর অভিবাসন ঘটে পার্শ্ববর্তী রাজ্য আসামের কাছাড়, ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশে। অভিবাসী মণিপুরীদের মধ্যে বলতে গেলে সবাই মৈতৈ, বিষ্ণুপ্রিয়া এবং পাঙন(মণিপুরী মুসলিম) সম্প্রদায়ের [১]। বিষ্ণুপ্রিয়াদের ভাষার নাম বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী এবং মৈতৈদের ভাষা মৈতৈ বা মীতৈ।
মণিপুরে প্রায় ত্রিশটিরও বেশী বৈচিত্রময় জাতির মানুষের বাস হলেও সেখানে মৈতৈরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। মৈতৈ ভাষা সেখানে লিঙগুয়া ফ্রাংকা। ইমফাল, বিষ্ণুপুর ও নিংথৌখঙের বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী যারা ছিল তারা প্রায় সবাই মৈতৈ ভাষা গ্রহন করার ফলে মণিপুরে বিষ্ণুপ্রিয়া ভাষা প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে ভারতের সাম্প্রতিক সেন্সাস থেকে মণিপুরের জিরিবাম অঞ্চলে কয়েক হাজার বিষ্ণুপ্রিয়ার পরিসংখ্যান পাওয়া যায়।
ভারতের মণিপুরসহ বরাক ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বরাবর একটি আন্ত:জাতিগত দ্বন্দ্ব আছে কে মণিপুরী আর কে মণিপুরী নয় তা নিয়ে।
ভারতের মণিপুর অঞ্চলেই বিষ্ণুপ্রিয়া বা মৈতৈ পরিচিতির বা ভাষার উদ্ভব। যদিও বিষ্ণুপ্রিয়া এবং মৈতৈ এই দুইটি জাতিকে বরাবর রাষ্ট্রীয় নথিপত্র ও দলিল দস্তাবেজে ‘মণিপুরী’ হিসেবে দেখানো হয়। ভারতের ভাষানীতির ভিত্তি স্যার জর্জ গ্রিয়ারসনের ‘লিংগুস্টিক সার্ভে অব ইন্ডিয়া’ গ্রন্থে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের স্পস্টভাবে ‘বিষ্ণুপুরীয়া মণিপুরী’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে [২]। তার পরেও এসব অঞ্চলগুলোর রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম বরাবর এই আন্তঃজাতিগত দ্বন্দ্ব থেকে নানান ফায়দা নিতে চায়। আর তা হচ্ছে কৌশলে ভাষিক সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ভাষা ও জাতিগত অস্তিত্বকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও সমমর্যাদা না দেয়া।
মাতৃভাষার আন্দোলন আর সেন্সাসের সহায়তায় রাস্ট্রের প্রতারনা
আসাম ও ত্রিপুরায় বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষার স্বীকৃতির আন্দোলন দানা বাঁধে ১৯৫০ সন থেকে। ১৯৫৫ সনে মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালুর দাবীর দাবীতে 'নিখিল বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী মহাসভা'র উদ্যোগে ভাষা পরিষদ গঠিত হয় এবং ভাষার অধিকারের দাবীতে আন্দোলন শুরু হয়। ভাষিক সংখ্যালঘু বিষয়ক কমিশনসহ নানান রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সঙ্গে পত্র ও স্মারকলিপিসহ নিয়মতান্ত্রিক মাধ্যমে বারবার বৈঠক হয় বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী নেতৃবৃন্দের, পরবর্তীতে তা ব্যাপক গনআন্দোলনের রূপ নেয়[৩]। কিন্তু সরকারের ঔদাসীন্য, ছলচাতুরী ও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার কারণে দুটি রাজ্যেই প্রাণের দাবী মুখ থুবড়ে পড়ে বারংবার। জনগনের নায্য দাবীকে ব্যর্থ করতে ভারত সরকার সেন্সাস রিপোর্টের গণনায় প্রতারনার আশ্রয় নেয় [৪]।
ক. ভারতের ১৯৫১ সনের সেন্সাস রিপোর্ট অনুযায়ী সমগ্র ভারতে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী জনসংখ্যা হলো ১১৪ জন (মণিপুর রাজ্য), অথচ এর ৬০ বছর আগে ১৮৯১ সনে স্যার জি.এ. গ্রীয়ার্সন মণিপুর রাজ্য এবং সিলেট জেলায় প্রায় ২৩,০০০ বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীর অস্তিত্বের কথা উল্লেখ করেছিলেন।
খ. ১৯৬১ সনের ভারতীয় সেন্সাসে আসাম রাজ্যের বরাক উপত্যকার করিমগঞ্জের পাথারকান্দিতে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের জনসংখ্যা মাত্র ১ জন নারী দেখানো হয়, অথচ সেখানে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের জনসংখ্যা ছিল ২২,০০০ এরও বেশী। ত্রিপুরায় কমপক্ষে ২০,০০০ বিষ্ণু্প্রিয়া মণিপুরীর বিপরীতে গননা করা হয় মাত্র ১১ জন পুরুষ। আর বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীদের ঘনবসতিপুর্ণ অঞ্চল কাছাড়ের প্রায় ৬৬,০০০ এর জায়গায় ধরা ১৫,১৫৫ জন।
গ. ১৯৭১ সালে পাথারকান্দির জনসংখ্যা দেখানো হয়েছে ১০,১৬৪ জন।
অর্থাৎ ১ জন নারী ১০ বছরে কোন পুরুষের সহায়তা ছাড়াই ১০,১৬৪ জন্মদান করেছে! আবার নারীহীন ত্রিপুরায় ১৩ জন পুরুষ ১০ বছরে জন্ম দিয়েছে ৯৮৮৪ জনের!
রাষ্ট্রের এইসব উদ্ভট ও হাস্যকর জনপরিসংখ্যানিক দলিল থেকে আমরা ধারণা করতে পারি প্রান্তিক জাতি বিষয়ে রাষ্ট্র কি ধরনের মনোযোগ ও উদ্যোগ বহাল রাখে।
বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ঘটনাপঞ্জী (১৯৫৫-১৯৯৬)
সত্যাগ্রহ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৬১ সালের ২ জুলাই ভাষা পরিষদ ভাষা দাবী দিবস পালন করে। ১৯৬৫ সালের ২-৮ জুলাই ভাষা দাবী সপ্তাহ পালন করা হয়। ১৯৬৭ সালের ২ জুলাই দাবী সপ্তাহ ১২ দিন দীর্ঘায়িত করা হয় এবং কাছাড় জেলার সর্বত্র পাবলিক সভা সমাবেশ করা হয়, এইসব সভায় সেন্সাসের জালিয়াতির বিরুদ্ধে জোরদার বক্তব্য রাখা হয়। ১৯৬৮ সালের মে মাস থেকেই স্কুল, কলেজসহ রাস্তা ঘাটে পিকেটিং, ধর্মঘট, গণশ্লোগানের কার্যক্রম শুরু হয়।
১৯৬৮ সালের জুলাই মাসেই পাবলিক সভা গুলো আরো ব্যাপক বিস্তৃত হয় এবং ১৯৬১ সনের উপনিবেশিক আদমশুমারী প্রতিবেদন পোড়ানো হয়। ১৯৬৯ সালের ১৫ অক্টোবর কাছাড়ের বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী শিক্ষার্থী ও যুবসমাজ রক্ত দিয়ে রক্তস্বার কর্মসূচি পালন করে। এর পরপরই ভাষা আন্দোলন আরো চূড়ান্ত গণ রূপ নেয় এবং ব্যাপক ধর্মঘট, ধরপাকড়, বন্ধ কর্মসূচি চলতে থাকে। ১৯৬৯ সালের ২২ অক্টোবর কাতিগড়া বন্ধ কর্মসূচি থেকে ৭ জন ভাষাবিদ্রোহীকে গ্রেফতার করা হয়। ৩০ অক্টোবর ২৬ জন, ৩১ অক্টোবর ৫ জন নারী আন্দোলনকারীসহ ৩ জন, ১ নভেম্বর ২৯ জন এবং ৩ নভেম্বর ১৯৬৯ গ্রেফতার হন ৩৮৫ জন।
১-৫ নভেম্বরের ভেতর তিন জেলার ডিসি অফিসে পিকেটিং করে চেয়ার দখল করে নেয়া হয়, ৪-৫ নভেম্বর ১৯৬৯ গ্রেফতার করা হয় ১১১ জনকে। রাষ্ট্রের ধরপাকড় ও নির্যাতনমূলক শাসনের বিরুদ্ধে ১১-১৩ নভেম্বর ১৯৬৯ তারিখে শিলচর শহরে বিশাল গণসমাবেশের আয়োজন হয়। শিলচর, নরসিংহপুর, হাইলাকান্দি ও পাথারকান্দিতে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে ফেলেন ভাষাবিপ্লবীরা, এই ঘটনায় সরকার ২৩৮ জনকে গ্রেফতার করে। ১৭ নভেম্বর ১৯৬৯ শিলচর বন্ধ থেকে ৩০০ জন সত্যাগ্রহীকে গ্রেফতার করা হয়। হাইলাকান্দির ওএসএ মাঠে বিশাল সমাবেশ ডাকা হয় একই সনের ২১ নভেম্বর, হাইলাকান্দি বন্ধ থেকে সবচেয়ে বড় ব্যাপক ধরপাকড় হয়, প্রায় ১৫০০ জন ভাষাবিদ্রোহীকে সরকার গনগ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়।
১৯৭০ সাল থেকে ভাষা আন্দোলন অন্য মোড় নেয়। ১৯৭০ সালের ১৯-৩০ এপ্রিলের ভেতর কাছাড়, ত্রিপুরা ও শিলং-এ ২৪ ঘন্টার গণঅনশণ করেন বিষ্ণুপ্রিয়া ভাষাবিদ্রোহীরা। ১৯৭২ সালের ১২ ডিসেম্বর কাছাড়ের সর্বত্র ৪৮ ঘন্টার গণঅনশণ, ১৯৭৪ সালের ৯ মার্চ কাছাড়ের সর্বত্র ৭২ ঘন্টার গণঅনশণ পালন করা হয়। ১৯৭৮ সালের ২ ডিসেম্বর করিমগঞ্জ ও কাছাড়ের সর্বত্র ‘সংখ্যালঘু বাঁচাও দিবস’ পালন করা হয়। একুশে ফেব্রুয়ারি যেদিন বাঙালির মাতৃভাষা দিবস, সেই তারিখে ১৯৭৯ সালে সমগ্র কাছাড়ে পালিত হয় অবস্থান ধর্মঘট।
[৫]
আন্দেলনের মুখে ১৯৮৩ সালের ২৫ অক্টোবর আসামের রাজ্য সরকারের কেবিনেট মিটিং-এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, কাছাড় ও করিমগঞ্জ জেলার স্কুল গুলোতে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষাকে প্রাথমিক পর্যায়ে অন্তর্ভূক্ত করার। কিন্তু অজানা কারণে ৮ ডিসেম্বর ১৯৮৩ তারিখে তা স্থগিত করা হয়। আবারো ‘বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ছাত্র ইউনিয়ন’ আন্দোলনের ডাক দেয়। ১৯৮৫ সালের ২ জুলাই বিপুল অংশগ্রহনে পালিত হয় দাবীদিবস। এরপর আন্দোলন চলতে থাকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত।
১৯৮৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পালিত হয় ১২ ঘন্টা ‘রেল রোকো কর্মসূচি’। ১৯৮৯ সালের পয়লা ডিসেম্বর বিধান সভা চলাকালীন সময়ে দিসপুরে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রিলে অনশন পালিত হয়। ১৯৮৯ সালের ২৭ জুলাই তারিখে সরকার আবারো বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা চালুর জন্য আরো একটি নোটিফিকেশন করে এবং ৬ আগস্ট ১৯৮৯ তারিখে তা আবার স্থগিত করে। লড়াকু ছাত্ররা সম্মিলিতভাবে ১৯৯২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ১৫ দিনের ভেতর বিষ্ণুপ্রিয়া ভাষা চালু করার দাবী জানিয়ে চরমপত্র দেয়। ঐদিন শিলচর গান্ধিবাগ ময়দানে প্রায় দশহাজার মানুষের এক বিশাল জমায়েতের মাধ্যমে এই চরমপত্র দেয়া হয়।
কিন্তু ঐ চরমপত্রকে কোনো গুরুত্ব না দেয়ায় ভাষা-আন্দোলন আরো দ্রোহী হয়ে উঠে এবং ১৯৯২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর গঠিত হয় ‘বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী গণসংগ্রাম পরিষদ’। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সময়কালের মধ্যে অসংখ্যবার ২৪ ঘন্টা, ৩৬ ঘন্টা, ৪৮ ঘন্টা এবং ১০১ ঘন্টার রাজপথ রেলপথ অবরোধ, গনঅনশন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। এসব কর্মসূচির ফলে বরাক উপত্যকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
অবশেষে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৫ সালের ২৬ মে ত্রিপুরা রাজ্য সরকার ত্রিপুরা রাজ্যের প্রাথমিক স্কুল গুলোতে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষাকে অন্তর্ভূক্ত করে। কিন্তু আসামে এ দাবীটি তখনো সাফল্যের মুখ দেখেনি।
আন্দেলন থেমে থাকেনা। সে আন্দোলনের সূত্র ধরে পাথারকান্দিতে, (যেখানে ১৯৬১ সালের সেন্সাসে ১ জন বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীকে গননা করা হয়েছিল) ৫০১ ঘন্টার রেল অবরোধ কর্মসূচীর ঘোষনা দেয়া হয়। ১৯৯৬ সালের ১৬ মার্চ সেই কর্মসূচীতে পুলিশ গুলীতে সুদেষ্ণা সিংহ নামের এক ভাষাবিপ্লবী তরুণী শহীদ হলে গোটা আসাম বিক্ষোভে ভেঙে পড়ে। গনআন্দোলনের মুখে সরকার ন্যায্য দাবী মেনে নেয়। ২০০১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী বরাক উপত্যকার ১৫২টি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণী থেকে চালু হয় বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষায় পাঠ্যবই 'কনাকপাঠ'।
কিন্তু থেমে থাকেনি রাস্ট্রের প্রতারনা ও দমননীতি। স্কুলগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের জন্য শিক্ষক নিযুক্তি নেই, পাঠ্যবই নেই, নেই সরকারের ঐকান্তিকতা। প্রশাসনিক জটিলতার নামে চলে নানান টালবাহানা। কিন্তু মাতৃভাষার সম্মান রক্ষা করতে শিক্ষকরা মাসের পর মাস পড়িয়ে যান বিনা বেতনে। এর মধ্যে মণিপুরী-অমণিপুরী বিতর্ক সৃস্টি করে মৈতৈ ও বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়কে মুখোমুখি করা হয় ভ্রাতৃঘাতি যুদ্ধে।
দীর্ঘদিন আইনি লড়াইয়ের পরে সব বিতর্কের অবসান ঘটায় গৌহাটি হাইকোর্ট এবং ভারতের সুপ্রীম কোর্ট। ২০০৬ সালের ৮ই মার্চ সুপ্রিমকোর্টের এক যুগান্তকারী রায়ের মাধ্যমে ‘বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী’ নামের জনমদুঃখীনি ভাষাটি রাষ্ট্রীয় অনুমোদন পায়।
তথ্যনির্দেশ:
১. Religious development in Manipur in the 18th and 19th Century/ Dr M Kirti singh,Imphal, 1980, page 12-13
২. Linguistic Survey of India, 1891. Compiled by Sir G. A. Greirson, Vol V, Page 419
৩. ফাগু (বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষার পত্রিকা), বর্ষ ২, সংখ্যা ১০, শিলচর ১৯৬২
৪. মণিপুরী জাতিসত্তা বিতর্ক: একটি নিরপেক্ষ পাঠ/ অসীমকুমার সিংহ, সিলেট, ২০০২
৫. Let History and Facts speak about Manipuris / NBMM, Assam, 1984
আরো পড়ুন:
১. বরাক উপত্যকার বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা আন্দোলনের বিস্তারিত ঘটনাপঞ্জী (১৯৫৫-১৯৯৬) - পাভেল পার্থ
২. ভাষার জন্য শুধু বাংলাদেশের বাঙালীরাই প্রাণ দিয়েছে একথা সত্য নয়
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।