আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী মুক্তিযোদ্ধা শহীদ গিরীন্দ্র সিংহ

প্রান্তিক জনগোষ্ঠিগুলোর ভাষা ও জাতিগত অস্তিত্বের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও সমমর্যাদা দাবী করছি

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি ছাড়াও অন্যান্য জাতিসত্তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল অনেকেই বিষয়টা প্রায় ভূলে থাকতে চান ৷ ফলে ইতিহাসের পাতা থেকে বাদ পড়ে যায় তারা৷ হিসাব-নিকাশ না করে কেবল অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ কীভাবে জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, ইতিহাসের পাতা থেকে বাদ পড়ে যায় সেই পরিচ্ছেদ৷ ... এ রকমই এক শহীদের নাম গিরীন্দ্র সিংহ ৷ জাতিগত পরিচয়ে মণিপুরী −বিষ্ণুপ্রিয়া আদিবাসী সম্প্রদায়ভূক্ত। জন্ম তার ১৯৩০ সালে তৎকালীন মৌলবীবাজার মহকুমার কমলগন্জের মাধবপুরে আউলেকি গ্রামে। ... মনিপুরী গ্রামের পেছনে নদী সংলগ্ন শ্বশানঘাট থেকে পাক বাহিনী ও তাদের দোসরদের সাথে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তার সংগঠন ও নেতৃত্তে ছিলেন গিরীন্দ্র। সাধারন অস্ত্র লাঠি, বর্শা এবং আরো নানান প্রাচীন অস্ত্রকে সম্বল করে পরিচালিত হয় এই লড়াই। রক্তে লাল হয় ধলাই নদীর পানি।

১৯৭১ সালের আগষ্টের ১২ তারিখে হানাদাররা মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া সমাজের পুরোহিত সার্বভৌম শর্মাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গুলি করে মেরে ফেলে। এরপর ফুঁসে উঠে গিরীন্দ্রের নেতৃত্তে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সমাজের তরুন সম্প্রদায়। মুক্তিবাহিনীতে মণিপুরী যোদ্দ্ধাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বাবুসেণা সিংহ, থইবা সিংহ, নিমাই সিংহ, বাসন্তী সিংহ, বসন্তকুমার সিংহ, পদ্মাসেন সিংহ, রবীন্দ্র সিংহ, আনন্দ সিংহ, মন্ত্রী সিংহ, নীলমণি চ্যাটার্জ্জিসহ অসংখ্য বীর তরুন জীবন বাজি রেখে মাতৃভূমি রক্ষার যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। কেউ অস্ত্র হাতে,কেউ সংবাদবাহক হিসাবে, কেউ বা সংগঠকের ভূমিকায়, আর গিরীন্দ্র ছিলেন তাদের মধ্যমণি।

গিরীন্দ্র ছিলেন অসীম সাহসি ও অসাধারন দৈহিক ক্ষমতার অধিকারী। যুদ্ধের পাশাপাশি মাধবপুর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খাবারদাবার সরবরাহের দ্বায়িত্ব ছিল তার উপর। মাঝেমধ্যে গোপনে এস ভীতসন্ত্রস্ত মণিপুরীদের অভয় দিয়ে আবার ফিরে যেতেন কর্তব্যস্থলে। মাগুরছড়ায় মাইন পাতার কাজ তাকে দেয়া হয়। ... আশ্বিন মাসে দুর্গাপুজার সময় (সেবছর অবশ্য শুধু ঘটপুজো হয়েছিল) মাধবপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অপারেশনের সময় শত্রুসৈন্যদের হাতে ধরা পড়েন ।

এরপর তাকে জীপে করে ধলাই ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সপ্তাহখানেক আটকে রেখে নৃশংসভাবে শারীরিক নির্যাতন চালিয়েও তার কাজ থেকে কোন তথ্য বের করতে না পেরে তাকে হত্যা করে লাশ ধলাই নদীতে ভাসিয়ে দেয় পাকবাহিনী ও তার দোসররা। যে ধলাই নদীর তীর থেকে অকুতোভয় এই মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রামের ডাক দিয়ে মণিপুরী তরুনদের উজ্জিবীত করেছিলেন, সেই ধলাইয়ের পানিতেই তার সমাধি ঘটে। ... স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মযজ্ঞের অন্যতম এই কারিগরের পরিবার ও উত্তরসুরিরা কেউ আজ পর্যন্ত রাস্ট্রের কাছ থেকে কোন আনুকুল্য পায়নি, কারণ গিরীন্দ্রকে তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা সাটিফিকেট বা পদক দিয়ে জাতে তোলা হয়নি । ... কয়েক বছর আগে স্থানীয় উদ্যোগে শিববাজারের মণিপুরী ললিতকলা একাডেমী প্রাঙ্গনে শহীদ গিরীন্দ্র সিংহের একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছে।

অভাবক্লিষ্ট গিরীন্দ্রের উত্তরসুরিরা সেই স্মৃতিস্তম্ভের দিকে তাকিয়ে পাওয়া ন্যুনতম সান্তনায় রাস্ট্রের উদাসীনতাকে কখনোই মেনে নিতে পারেনা। বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ গিরীন্দ্র সম্বন্ধে বিস্তারিত একটি নিবন্ধ আজকের প্রথম আলোতে (০৯ মার্চ , ২০০৮) ছাপা হয়েছে। আগ্রহী পাঠক প্রথম আলোর ১১ পৃষ্ঠায় লেখাটি পড়তে পারেন ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.