দাগ খতিয়ান নাইতো আমার/ঘুরি আতাইর পাতাইর...
পিলখানার দরবার হলে বিডিআর বিদ্রোহে প্রাণ বাচাতে বাথরুমে আশ্রয় নিয়েছিলেন সুনামগঞ্জের সন্তান এলাহি মঞ্জুর চৌধুরী লিটন। সেখান থেকেই প্রিয়তমা স্ত্রী তান্নি মঞ্জুর চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে শেষ কথা হয় তার। ওইদিন সকাল ১০.৪৫ মিনিটের সময় তিনি স্ত্রীকে মোবাইলে বলছিলেন, ''আমরা কামানের মুখে আছি। তুমি দরোজা-জানালা বন্ধ করে আমার সন্তানদের নিয়ে সাবধানে থেকো। আমরা চারজন বাথরুমে আশ্রয় নিয়েছি, দোয়া করো।
'' তারপরই লাইন কেটে যায়। ট্রাজেডির ৬দিন অতিবাহিত হলেও এখনো খোজ মিলেনি তার। তার বেচে থাকা নিয়ে স্ত্রী সন্তান, স্বজনরা সন্দিহান ও উদ্বিঘ্ন।
ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার বিডিআর জোয়ানরা অস্ত্র সমর্পনের পর তার স্ত্রী তান্নি মঞ্জুর চৌধুরী, এসএসি পরীার্থী বড় মেয়ে ঝুমানা চৌধুরী, ২য় মেয়ে ফারাহ চৌধুরী ও ছেলে ফাইয়াজ চৌধুরী বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান। গণকবর, সুয়োরেজ, পিলখানার সদর দফতর থেকে অন্য সেনা কর্মকর্তাদের লাশ উদ্ধার হলেও এখনো নিখোজ রয়েছেন লে. ক. এলাহী মঞ্জুর চৌধুরী।
তার স্ত্রী তান্নি, মেয়ে ঝুমানা, ফারাহ ও পুত্র ফাইয়াজসহ স্বজনরা এখনো প্রতীা করছেন ২৫ তারিখের কামানমুখরিত সকালের মত কর্নেল এলাহী মঞ্জুরের আরেকটি ফোন আসবে...।
পিলখানা ট্রাজেডির খবর পেয়ে লে. ক. এলাহী মঞ্জুর চৌধুরীর বড় ভাই শাহজাহান মঞ্জুর চৌধুরী সপরিবারে শনিবার লন্ডন থেকে ছুটে এসেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার খোজ না পাওয়ায় চরম উদ্বিঘœ হয়ে পড়েছেন তারা। লে. ক. এলাহীর বাল্য বন্ধু আইনজীবি আইনুল ইসলাম বাবলু বলেন, আমাদের বন্ধুদের মধ্যে জীবনযাপনে সবার উর্ধ্বে থেকেও সবচেয়ে বিনয়ী ও সদালাপি ছিল সে। ক্রিকেটের মাঠে সে ছিল অলরাউন্ডার।
স্কাউটের ড্রাম নিয়ে সে ছিল মুখরিত। তার মত ভালো মানুষের এমন ট্রাজিক পরিণতি মেনে নেওয়া যায়না।
সুদর্শন এলাহী মঞ্জুর চৌধুরী লিটন কিশোর বয়সে শহরের স্পার্ক ক্রিকেট টিমের ডাকসাইটে ক্রিকেটার, স্কাউটার ও নামকড়া অ্যাথলেট ছিলেন। একজন বিনয়ী ও সদালাপি হিসেবে তার বেশ সুনাম ছিল। সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি ও সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন।
পরিবারের ৩ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে সবার ছোট এলাহী মঞ্জুর লিটন ছিলেন পরিবারের সবার প্রিয়। সেনাবাহিনীতে যোগদানের পর তিনি সপ্তম ব্যাচে কমিশন লাভ করে পর্যায়ক্রমে লে.ক. পদে উন্নীত হন। তিনবার জাতিসংঘ মিশনে সম্মানের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
লে.ক. এলাহী মঞ্জুর চৌধুরী ১৯৬২ ইং সনে শহরের উকিলপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার মূল বাড়ি জেলার দিরাই উপজেলার সরমঙ্গল গ্রামে।
ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান এলাহীর পিতা মরহুম মুজিবুর রহমান চৌধুরী ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলার প্রখ্যাত আইনজীবি। বড় ভাই হুমায়ুন মঞ্জুর চৌধুরী বর্তমানে জেলা আইনজীবি সমিতির সিনিয়র আইনজীবি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।