মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র ও পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে গতকাল আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ। রাজধানীর মতিঝিল ও শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে অভিযানে 'নিহতের' সংখ্যা নিয়ে সংস্থাটি অসত্য তথ্য উপস্থাপন করেছে বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই অভিযানে কার্যত কেউ নিহত হয়নি। তবে আগে মারা যাওয়া কয়েকজনের লাশ সেখানে রাখা হয়েছিল।
তদন্ত কর্মকর্তা, পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম সাধারণ ডায়েরির তদন্ত শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে এ প্রতিবেদন দাখিল করেন। মহানগর পুলিশের অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এবং ঢাকার আদালতের পুলিশপ্রধান আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও দণ্ডবিধি আইনে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শাপলা চত্বরে ৫ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে কেউ নিহত কিংবা নিখোঁজের ঘটনা ঘটেনি। বরং হেফাজতের কর্মীরা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। হেফাজত কর্মীদের আক্রমণে শাহজাহান নামে পুলিশের এক এসআই নিহত হন। সারা দিনের সংঘর্ষে মোট ১১ জন নিহত হন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিভিন্ন ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ছবি সংগ্রহ করে ফটোশপের মাধ্যমে বানোয়াট ক্যাপশন তৈরি করে অধিকার ১০ জুন প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তা পর্যালোচনায় দেখা যায়, একাধিক জায়গায় একই ব্যক্তিকে দুবার করে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তালিকায় ৭ ও ৯, ১৬ ও ৫৮, ১৮ ও ২০ এবং ৬ ও ২৩ ক্রমিক নম্বরে একই ব্যক্তিকে দেখানো হয়েছে। ক্রমিক ৩০-এর আল-আমিন, ক্রমিক ৩৬-এর জাহিদুল ইসলাম সৌরভ, ক্রমিক ৪৮-এর সোহেল, ক্রমিক ৫৬-এর জসিম জীবিত রয়েছেন। কামালউদ্দিন খান নামে এক ব্যক্তি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ক্রমিক ১২-এর মাসুম বিল্লাহ, ক্রমিক ১০-এর লুৎফর রহমান, ক্রমিক ২৬-এর মাওলানা মোহাম্মদ হাসান, ক্রমিক ২৯-এর লোকমান, ক্রমিক ৩১-এর জুবায়ের, ক্রমিক ৩৫-এর বাবু গাজী, ক্রমিক ৬০-এর জালাল আহম্মেদ সম্পর্কে দেওয়া তথ্য সঠিক নয়। অধিকারের প্রতিবেদনে উল্লেখিত ছয়জন ঢাকার বাইরে মারা যান। নিহত দাবি করা অন্তত ১১ জন আদতে জীবিত। ক্রমিক ১-এর সিদ্দিকুর রহমান (বাসচালক) বায়তুল মোকাররম এলাকার দক্ষিণ গেটে হেফাজত কর্মীদের আক্রমণে মারা যান। তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, অধিকার নিহতের সংখ্যা নিয়ে কাল্পনিক তথ্য প্রকাশ করেছে, যা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে আসামিরা সরকারের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করেছেন। তারা বানোয়াট প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি করেছেন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
প্রসঙ্গত, হেফাজতের সমাবেশে অভিযান নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কোনো অস্ত্র ব্যবহার কিংবা গুলি করেননি। ওই দিন কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় ১৩ জন মারা যান বলেও তখন জানানো হয়েছিল। অন্যদিকে, হেফাজতে ইসলামসহ বিরোধী দলের নেতারা নিহতের সংখ্যা কয়েক হাজার বলে দাবি করেন। সম্প্রতি অধিকার ৬১ জনের প্রাণহানি হয়েছে উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন দেশ-বিদেশের কয়েকটি সংস্থার কাছে পাঠায়। কিন্তু সরকার চাইলে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলে, একটি তদন্ত কমিশন গঠন করলেই সেখানে তালিকা জমা দেওয়া হবে। এরপর ১০ আগস্ট আদিলুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি এখন কারাগারে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।