অপেক্ষা
ঘড়ি পরিষ্কার করার মতো অদ্ভুত পেশায় তার আসার কথা ছিলো না। বাপদাদা ছিলেন কৃষক। বাপ সুদের ওপর টাকা ধার নিয়েছিলেন এক আগরওয়ালার কাছ থেকে। সুদ জমে এতো বেশী হলো যে শেষ পর্যন্ত সব জমি আর বাড়ির বেশীরভাগ বেচতে হলো প্রায় পানির দামে। বিপদে পড়া মানুষের জমি কেউ ন্যায্য দাম দিয়ে কিনতে চায় না।
সেই শোকে বাবা মারা গেলেন অল্প দিনের মধ্যেই। মা ভাইবোন মিলে আট জনের সংসারের ভার তার কাঁধে। আর কিছু না পেয়ে গ্রামের এক জনের বুদ্ধিতে এই বিচিত্র কাজে নিরুপায় হয়ে নেমেছে সে।
এই সব কথা ভাবছিলো রহিম উদ্দিন তার সাইকেলে বসে। সাইকেলটার সাথে বিশেষ কায়দায় ঘড়ি সাফ করার যন্ত্রপাতি লাগানো হয়েছে।
শহরের সবচেয়ে ব্যস্ত সড়কে ঘড়ি সাফ করার কাজ করে সে। সকাল থেকে ১০/১২টি ঘড়ি সাফ করেছে । ঘড়ি প্রতি নেয় দু'টাকা।
কাজ না থাকলে রহিম বসে বসে মানুষ দেখে। সবাই কী ব্যস্ত হয়ে ছোটে।
কারো নজর নেই কোন দিকে। কতো কাজ যেন সবার। শুধু তারই বুঝি কাজ নেই। সে ধৈর্য ধরে কাস্টমারের জন্য অপেক্ষা করে। যখনই সে মানুষের দিকে তাকায় তখন আপনা আপনিই প্রথমে চোখ যায় বাঁ হাতের কবজিতে।
কতো বিচিত্র ঘড়ি শোভা পায় সেখানে। আগে মেয়েরা ঘড়ি পরতো ডান হাতে। আজকাল তারাও বাঁ হাতে ঘড়ি পরতে শুরু করেছে।
রহিমের বেশীরভাগ কাস্টমার যুবক। খুব সেজেগুজে আসে।
এসেই খুব তাড়তাড়ি ঘড়ি সাফ করতে বলে। মুখে ফুটে থাকে অস্থির ভাব। বোঝাই যায় বিশেষ কারো কাছে যাবার জন্য ছটফট করছে। তাই খুব দ্রুত ঘড়ি সাফ করা শিখে নিয়েছে রহিম। কিছু কাস্টমার আছে ফুলবাবু গোছের।
তারা সেই তাড়নায় আসে ঘড়ি সাফ করাতে। তাদের তাড়া থাকেনা। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সাফ করিয়ে নেয় ঘড়ির সর্বাঙ্গ।
৩৪ বছর বয়স রহিমের। ভাঙাচোরা চেহারা।
এখনো বিয়ে করেনি। অথচ গ্রামে তার সমবয়সীরা মেয়ের বিয়ে দিচ্ছে। তার বিয়ের প্রস্তাব এসেছিলো কয়েকবার। রহিম সাহস করেনি।
আজ দুপুরের পর থেকে একজন কাস্টমারও আসেনি।
বিকেল গড়িয়ে গেলো। কতো মানুষ যাচ্ছে। সে মানুষ দেখতে থাকে। হঠাৎ চোখ আটকে গেলো অদ্ভুত সুন্দর এক কবজিতে। গোলগাল, তুলতুলে, গৌরবর্ণ ! সোনালী রঙের ঘড়িটি সেখানে চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে।
হাত ছেড়ে মুখে তাকিয়েই মুগ্ধ হয়ে গেলো সে। মেয়েটি অপূর্ব সুন্দরী ! কিন্তু সে অপরূপা ওর দিকে না তাকিয়ে আপন মনে চলে গেলো। ঘোরলাগা চোখে অপলক চেয়ে রইলো রহিম............................. !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।