আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে...
মোহাম্মদ সোয়েব, খেটে খাওয়া তরুণ, তার গ্ল্যামার নেই। দেশে আবার কাজও নেই, তাই তিনি বেরিয়ে পড়েছিলেন ভাগ্যের খোঁজে। মাসখানেক আগে দালালের প্রলোভনে ভুলে একদিন বঙ্গোপসাগরে অপেক্ষমাণ একটি নৌকায় উঠে বসেছিলেন মালয়েশিয়া যাওয়ার আশায়। ছিলেন না তিনি, সঙ্গে ছিল আরো চার শতাধিক মানুষ, আরো কটি নৌকায়। উত্তাল উপসাগরে নিয়ন্ত্রণহীন নৌকা ভেসে চলে লক্ষ্যহীন।
একসময় ভাসতে ভাসতে থাইল্যান্ডের সমুদ্রসীমানায় ঢুকে পড়ে নৌকাগুলো। থাইল্যান্ড নৌবাহিনীর একটি জাহাজ নৌকাগুলো আটক করে মানুষগুলোকে নিয়ে যায় এক নির্জন দ্বীপের ক্যাম্পে। সেখানে ১৫ দিন ধরে নৌ ও সেনাসদস্যদের নির্যাতন চলে দিকভ্রান্ত মানুষগুলোর ওপর।
এরপর ছয়টি নৌকা রেখে দিয়ে ২৫ মিটার লম্বা একটি নৌকার মধ্যে সবাইকে গাদাগাদি করে উঠানো হয়, সঙ্গে দেওয়া হয় ৪০০ মানুষের জন্য একটি প্লাস্টিকের চাদর আর কিছু খাবার। তবে ইঞ্জিনটি খুলে নেওয়া হয় নৌকা থেকে।
একটি থাই নৌজাহাজ প্রায় ১৮ ঘণ্টা ধরে টেনে নিয়ে মাঝসমুদ্রে নৌকাটি ছেড়ে দেয়। সেই থেকে প্রায় দুই সপ্তাহ উদ্দেশ্যহীনভাবে সাগরে ভেসে বেড়ান চার শতাধিক বাংলাদেশী, রোহিঙ্গা শরণার্থীও ছিল কিছু। স্রোতের টানে এক সময় তারা ভাসতে ভাসতে চলে আসেন ভারতের সমুদ্রসীমানায়। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছে একটি বাতিঘর দেখতে পেয়ে তারা ভেবেছিলেন উপকুলের কাছাকাছি এসে গেছেন। তাই প্রাণ বাঁচানোর জন্য তারা একে একে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়েছিলেন।
উপকুল রক্ষীবাহিনীর সঙ্গে দ্রুত একটি হেলিকপ্টার ও চারটি জাহাজ নিয়ে উদ্ধার অভিযানে নেমেছিল ভারতের নৌবাহিনী। ততোক্ষণে তিন শতাধিক ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষ চিরতরে বঙ্গোপসাগরের জলে হারিয়ে গেছেন।
গাজার মতো এও ছিল গণহত্যা। ঠান্ডা মাথার খুন! তবে এমন মর্মন্তুদ ঘটনায় বাংলাদেশে একটিও প্রতিবাদী মিছিল হয়নি, বিধবা সংবাদ পাঠিকাদের মুখে খবরটি গুরুত্ব পায়নি, ঘরকুনো প্রতিবেদকরাও এই ঘটনায় গ্ল্যামারের অভাব বোধ করেছেন। তবে মানুষ আছে! আলজাজিরা-বিবিসি সবিস্তারে ঘটনার বিবরণ প্রকাশ করেছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় থাই প্রধানমন্ত্রী তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছেন। সিএনএনের প্রতিবেদক ঘটনাস্থল ঘুরে যে ক্লিপগুলো প্রকাশ করেছেন, দেখে চোখের জল পড়ে। ইন্দোনেশীয় টিভি চ্যানেল, অস্ট্রেলিয়ান চ্যানেলে একাধিক প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে এর মধ্যে। ভীতু বাঙালির বাইরেও দাঁড়ানোর মানুষ আছে!
ওপরের চারটি ভিডিও ক্লিপই সংগ্রহ করেছেন ব্লগার মাহবুব সুমন। 'আহা' 'উঁহু'র দরকার নেই (এইগুলার ুন মারি), অনুরোধ থাকবে, সম্ভব হলে সংবাদের ক্লিপগুলো দেখবেন।
ইউটিউবের ভিডিও ডাউনলোড করা যাবে এখান থেকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।