মানুষকে ভয় দিতে না পারলে সে আবার কিসের ভূত! তাং তুংয়ের সমস্যাটা এখানেই। সে ভূত হয়েও কিছুতেই মানুষকে ভয় দিতে পারে না। ভূত সমাজে তাই অনেকেই টিটকেরি করে তাকে ছ্যাবলা তুং বলে ডাকে। তবে শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধুরা ডাকে তুং নামে। মানুষ নামের আজব প্রাণীটা দেখলেই নাকি তুংয়ের ভয়ে গলা শুকিয়ে যায়।
এ নিয়ে প্রতিদিনই উঠতে-বসতে বাবা নুপংয়ের বকা শুনতে হয় তাকে। ছেলের এমন কাণ্ডকীর্তিতে ভূত সমাজে তাদের পরিবারের মানসম্মান ডুবতে বসেছে। সেদিন সন্ধ্যায় তাং তুংকে নিয়ে বসেছে পারিবারিক মিটিং। সব আলোচনাই তাং তুংকে ঘিরে। পিচ্চি ভূতগুলো ওকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে।
তাং তুংয়ের দাদা এবং চাচাও খেতাবপ্রাপ্ত ভূত। তবে তাং তুং খেতাব চায় না। শান্তি মতো খেলেধুলে সময় কাটাতে চায়। অথচ তাকে প্রতিদিন ভয় দেখানোর কৌশল শিখতে ক্লাসে যেতে হচ্ছে। ক্লাসের সব পড়াই তার ঠোঁটের আগায় থাকে।
জিজ্ঞেস করা মাত্রই গড় গড় করে সব পড়া বলে দিতে পারে। খাতায় লিখতেও তার জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু প্রাকটিক্যাল এলেই বাধে যত বিপত্তি। ভূতদের স্কুলে প্রাকটিক্যালটাই আসল। ক্লাস অনুযায়ী মনুষ্য জীবকে ভয় দেখানোটাই হচ্ছে প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা।
এ ভয় দেখানোর আবার মাত্রাও থাকে। ক্লাস অনুযায়ী মাত্রা ঠিক করা হয়। ১০ বছরের কম বয়সী মানব শিশুর সামনে শুধু দাঁড়িয়ে থাকলেই ব্যস। অথচ তুং কোনোবারই এই কাজটি করতে সমর্থ হয় না। মানব বসতিতে নিয়ে এলেই তুং ভয়ে গুটিসুটি মেরে বসে থাকে।
ইতোমধ্যে সে পাঁচবার প্রাকটিক্যালে ফেল করেছে। ফলে প্রাইমারির গণ্ডি পেরিয়ে সেকেন্ডারিতে ওঠা হচ্ছে না তার। একবার হলো কী, শিক্ষকরা অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে যেই না তুংকে মানব বসতিতে নিয়ে এলো, বড় করে কালো মতো একটা মানুষ দেখে ভয়ে একেবারে সে বেহুঁশ হয়ে গেল। অথচ সেই মানুষটার চেয়ে কিম্ভূতকিমাকার কতশত ভূত যে আছে তার হিসাব নাই। তুংয়ের সমস্যা ঠিক কোথায় ওর স্যারেরা বুঝে উঠতে পারে না।
তুংয়ের এবারই শেষ প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা। পাস না হলে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হবে তাকে। এজন্য তাং তুংয়ের খুব মন খারাপ। মানব বসতিতে এনে তাংকে পথের পাশে একটি ঝোপের আড়ালে বসিয়ে রাখা হয়েছে। কোন পাপে যে ভূত হয়ে জন্মেছিলাম, ঝোপের মধ্যে বসে বসে আফসোস করে তুং।
মশারা কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করে। নিজের প্রতি ভারি রাগ হয় তার। সে নিশ্চিত কোনো দিন মানুষ নামের প্রাণীটাকে তার পক্ষে ভয় দেখানো সম্ভব নয়। এই প্রাণীটাকে দেখলেই তার পরানে পানি থাকে না, সে কীভাবে মানুষকে ভয় দেখাবে। মনে মনে ভেবে নিল তুং, পরিবারের আত্দমর্যাদা ধূলিসাৎ করার চেয়ে, ভূতের জাত-মান নষ্ট করার চেয়ে মরাই তো ভালো।
মানুষ নাকি খুব বেশি হতাশ হলে আত্দহত্যা করে। তুংয়েরও ভারি আত্দহত্যা করতে ইচ্ছে করে। মানুষ সত্যিই ভাগ্যবান। মনে এত কষ্ট পুষে রাখার চেয়ে মরাই ভালো। অথচ তার মরার সুযোগ নেই।
মানুষের প্রতি হিংসা এবং ক্ষোভ দুটোই জেগে ওঠে তুংয়ের মনে। মানুষের জন্যই তো তার আজ এই দশা। বসে বসে ভাবতে থাকে, একবার যদি মরার সুযোগ পেতাম!
২. ভূতকে একদমই ভয় করে না টুটুল। ভূত বলে কিছু আছে নাকি, নাক সিটকোয় সে। তবে রাতুলের হচ্ছে তাং তুংয়ের দশা।
ভূত শুনলেই সে ভয়ে মরে। ভূতের গল্প শুনলে ওই দিন মায়ের আঁচলেই সেঁটে থাকে সে।
ছোট ভাইকে ভূতের ভয় দেখিয়ে ভারি মজা পায় টুটুল। এদিকে চূড়ান্ত প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা দিতে তাং তুংকে যখন ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল তখন ওই পথ ধরেই বাড়ি ফিরছিল টুটুল। দূর থেকে টুটুল দেখেই ভয়ে কাঁপাকাঁপি শুরু করেছিল তুং।
তার কাঁপাকাঁপিতে ঝোপও কাঁপতে লাগল।
টুটুলের বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো। ভয়ে ইয়া এক চিৎকার দিল সে। চিৎকার শুনে ভ্যাবাচেক্কা খেয়ে কান্না থেমে গিয়েছিল তাং তুংয়ের। কিন্তু টুটুলের কী হয়েছিল- মনে করতে পারে না সে।
টুটুল নিজেকে আবিষ্কার করলো নিজের বিছানায় শুয়ে আছে।
চোখ খোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু ভয়ে খুলতে পারছে না। তার চারপাশে অনেক মানুষ নাকি ভূত দ্বিধাগ্রস্ত সে। ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে দেখে চারপাশে বাবা-মা, ভীতুর ডিম রাতুল আরও অনেকে তাকে ঘিরে রেখেছে।
টুটুল তাকাতেই বাবা-মা ওর গালে আদর করে দেয়। পিচ্চি রাতুলটার চোখ ভেজা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তুতুল ভাইয়া বলে ডাকে সে। রাতুলকে কাছে টেনে সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে, আর কখনোই রাতুলকে ভূতের গল্প শুনিয়ে ভয় দেবে না সে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।