/
পুরো উপত্যকা ধ্বংসস্তুপের তলায় চাপা। শহরের অধিকাংশ ভবন গুড়োগুড়ো। ইস্পাতের লম্বা রডগুলো দুমড়ে মুচড়ে এদিক ওদিক বেঁকে আছে। দু একটা বাড়ির দেয়াল কোথাও কোথাও দাঁড়িয়ে। দেয়ালের এপাশ ওপাশের চেহারায় কোন পার্থক্য নেই।
ধ্বসা এবড়ো খেবড়ো ইট সিমেন্টের পলেস্তরায় মাটি দেখা যায় না। দরজা জানালা, আসবাবপত্রের ছালবাকল ছিঁড়ে লাকড়িতে পরিণত হয়েছে। বিরাণ এলাকায় হালকা বাতাসে ধুলা কুন্ডুলী পাকিয়ে ছরছর করে সামনে আগায়ে। কোথাও প্রাণের চিহ্ন নেই। যন্ত্রনার কাতর উহ্ আহ্ শব্দ, মর্মন্তুদ আর্তনাদ ধ্বংসস্তুপের তলায় থম মেরে আছে।
শুধু কান পাতলে শোনা যায় শ্মশ্মানের মাটির নিচে হালকা নড়াচড়া শব্দ আর বাদুড়ের মত বিস্তৃর্ণ কালো দিগন্তের ভারী নিঃশ্বাস।
বিধ্বস্ত বাড়িগুলোর মাথা থেকে বেরোনো গলগলে কালো ধোঁয়ায় পৃথিবী আঁধার। এখন দিন না রাত বোঝা দায়। আকাশের গায়ে ছোপ ছোপ লাল। তা গোধুলির না সুর্যাস্তের বলার জন্য কোন মানুষ বেঁচে নেই।
হঠাৎ মাটির তলা যেন দুলছে। সিমেন্ট সুড়কির ওপরকার বালি সরু স্রোতের মত ঝরা শুরু করলো। যেখানে লোহার রড বেশি বেড়িয়ে ছিল সেখানে তেমন পরিবর্তন না বোঝা গেলেও সব ভাঙা ইমারতে যেন হালকা ঢেউ উঠেছে। ঢেউটা মধ্যস্থল হতে ধীরে ধীরে বাইরে প্রসারিত হতে থাকলো। জমে থাকা ইটের খন্ড দু পাশে সরিয়ে ছোট ছোট আঙুলের ফর্সা ছোট দুটো হাত বেরিয়ে আসে।
এরপর সে হামাগুড়ি দিয়ে মাথা বের করে। অনেকক্ষণ ঘুমিয়ে দুম করে জেগে উঠবার পর বিস্মিত শিশু চারপাশে চায়। হাতে ভর দিয়ে কোমড় বাঁকিয়ে বসে। বুড়ো আঙুল খায়। ঠোটের কোণা বেয়ে লালা ঝরে।
ফর্সা আদুল পায়ে রক্তের চিহ্ন। সে আঙুলে রক্ত মাখিয়ে মুখে দেয়। নোনা।
ধ্বংসস্তুপ থেকে বেরিয়ে আসে শত শত শিশু। নুলো, ঘাড় মচকানো, কন্ঠা থেকে খুলে যাওয়া হাড় নিয়ে ল্যাংচিয়ে, হামাগুড়ি দিয়ে, গড়িয়ে, আছাড় খেয়ে আগায় মানব বসতির দিকে।
রাত। কোন এক ঘরে আট মাসের প্রসূতি ঝিমঝিম শরীর নিয়ে বাতি নেভায়। ঘুমঘুম। ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ। খাটের তলা ঘাপটি মেরে বসে থাকা শিশুরা প্রসূতির পেটে চেপে বসে।
তাদের ভাঙা হাড়ের তীক্ষ্ম ফলায় চেরা পেট তরমুজের মত টসটসে লাল। আট মাসের বাচ্চাটি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মারা যায়। এরপর শিশুর দল পৃথিবীর বাকি শিশুদের হত্যায় মাতে। সে দলের একপাশে আট মাসের বাচ্চাটিও যোগ হয়।
শিশুদের দল একে একে পৃথিবীর সব শিশু খুন করে।
অন্ধকারের প্রাণযজ্ঞে কেউ কিছু টের পায় না। সকাল হয়। সূর্যের প্রখর আলোয় কতিপয় দামী বিশেষজ্ঞ নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।