হাত নিশপিশ করছে। কিছু একটা নিয়ে লিখি। বিষয় পাচ্ছি না। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর কোনটাই আকর্ষণীয় লাগছে না। আওয়ামীলীগের কাউন্সিল? সেতো তিন বছর আগের কাউন্সিলের ফটোকপি।
হরতাল? কিংবা টাঙ্গাইলের রেপ? সেও তো নিত্য নৈমিত্যিক ব্যাপার। হাতির ঝিল, বনানীর ওভারপাস? সরকার নিজেই গুণগান করছেন, আমার না করলেও চলবে। ইদানীং ফ্যাশান চলছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কোন ফর্মুলা দেওয়া। যদিও জানিয়ে দেয়া হয়েছে ব্যর্থদের ফর্মুলা শোনা হবে না। তবে দিতে বারন করা হয় নি।
আচ্ছা, যদি জিজ্ঞেস করি দেশকে ঘিরে খুব সম্ভাবনাময় একটি স্বপ্ন কি হতে পারে? দুটো উত্তর বোধহয় সবাই বলবেন ‘রেমিটেন্স’ আর ‘আউট সোর্সিং ‘। এদেশে পাওয়া যায় পৃথিবীর অন্যতম সস্তা শ্রমিক। খুব কম খরচে এদেশের মানুষকে দিয়ে অনেক কাজ করিয়ে নেয়া যায়। জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে, লেবারকষ্ট মনে হয় না খুব বাড়বে। সাপ্লাই আর ডিমান্ডের খেলায় সাপ্লাই সব সময় কম থাকবে।
ফলে এই একটি ব্যাপারে আমরা বেশ প্রতিশ্রুতিশীল। কখনও তাই তাঁদের ডাক পরে বিদেশে আসে রেমিটেন্স। কখনও বা এদেশেই কাজ পাঠিয়ে দেয়, ‘আউটসোর্সিং’। আমাদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী চীন একটি সন্তান ফর্মুলা দিয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধি থামিয়ে ফেলেছে কিন্তু লেবারকষ্ট বাড়িয়ে ফেলেছে। আমরা তাই আবার প্রতিযোগিতায় ফিরে এসেছি।
আউট সোর্সিং নিয়ে একটু পড়াশোনা করতে গেলাম। আউট সোর্সিং অনেকগুলো সেক্টরে হচ্ছে। মেডিকেল ট্রান্সক্রিপশান, সফটওয়ার, গার্মেন্টস ইত্যাদি। হয়ত ধীরে ধীরে আরও অনেক সেক্টর যোগ হবে। তবে এই সবগুলোতেই জরুরী হচ্ছে ‘স্কিলড লেবার’।
দক্ষ শ্রমিক তৈরির জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও তৈরি হচ্ছে। তবে সবক্ষেত্রেই চীন এবং ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। হঠাৎ চোখ আটকে গেল একটি আউট সোর্সিং এ।
‘চাইল্ড বার্থ’ আউটসোর্সিং। একজোড়া দম্পতির সন্তান এখন তৈরি হবে অন্যের গর্ভে।
দম্পতি হওয়া জরুরী না। কোন মানুষ একাও যদি সন্তানের পিতা বা মাতা হতে চান, এখন পারবেন। আঁতকে উঠবেন না। নতুন এই ফিল্ডটি অনেক আগে থেকে তৈরি হয়েই ছিল। এখন গুটি গুটি পায়ে আউট সোর্সিং এর পথে পা বাড়াচ্ছে।
এখনও খুব বেশী আলোচনায় আসে নি। কারণ এর জন্য প্রয়োজনীয় মেডিকেল ফ্যাসিলিটি আমাদের দেশে এখনও খুব সহজলভ্য না। আমাদের দেশে শুরু না হলেও কাজটি শুরু হয়ে গেছে। ভারতকে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশী সম্ভাবনাময় ভাবা হচ্ছে। এই আউট সোর্সিং এ প্রতিযোগিতায় থাকছে না অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ওদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এর জন্য তৈরি আইনের জন্য।
আমরা এই আউট সোর্সিং এ অংশ গ্রহণ করব কি না? সময় বলে দেবে।
শুনতে বেশ খটমট আর অনৈতিক লাগলেও, এই প্রজেক্টটা কিন্তু বেশ প্রমিজিং। সন্তান চাই? তাও আবার নিজের সন্তান? যার শরীরে থাকবে নিজের রক্ত। পালক কিংবা অন্যের নয়। অথচ আপনার নিজের সময় নেই বা ইচ্ছা নেই।
কিংবা আপনি সমকামী। কিংবা নয় মাস ধরে কষ্টটা নিজে করতে চাইছেন না। খুব সহজ সমাধান হিসেবে বেছে নিতে পারেন নতুন এই প্রজেক্ট ‘চাইল্ড বার্থ’ আউট সোর্সিং। শুধু কিছু টাকা খরচ করবেন, নিজেদের স্পার্ম এবং ওভাম দিবেন। অন্যের গর্ভে তৈরি হয়ে যাবে আপনার সন্তান।
উন্নত দেশ গুলোতে বেশ দ্রুত হারে সমকামিতা বাড়ছে, সমকামীদের বিয়েও হচ্ছে। বারাক ওবামা তাঁর ভিক্টরি স্পীচে প্রথমবারের মত সমকামীদেরকে সম্বোধন ও করেছেন। কোন কোন দেশে সমকামী বিয়েও বৈধ করে দেয়া হয়েছে। তাঁদের যদি হঠাৎ কখনও সন্তান নেয়ার শখ হয়? বিদেশে এখন তৈরি হয়ে গেছে স্পার্ম ব্যাংক। হয়তো ওভাম ব্যাংক ও।
যা চাই কিনে নিবেন। এর পরের অংশের জন্য তাঁদেরকে একটু কষ্ট করতে হবে। ‘চাইল্ড বার্থ’ আউট সোর্সিং। এটি একটি ইন্ডাস্ট্রি হলে এর এজেন্ট ও তৈরি হবে। এর এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে দরদাম ঠিক করতে হবে।
এরপর শুরু হয়ে যাবে প্রজেক্ট ‘চাইল্ড বার্থ’ আউট সোর্সিং।
শুধু কি তাই? সেসব দেশে বিবাহিতদের ভেতরও সন্তান নেয়ার ইচ্ছা কমে আসছে। অনেক দেশের জন্ম হার তো নেগেটিভ। তবে কি তাঁদের সন্তান নেয়ার ইচ্ছা নেই? অনেক ক্ষেত্রেই হয়তো তাই। সন্তান লালন পালন কে ঝামেলা মনে করছেন।
কর্মক্ষেত্র কিংবা ক্যারিয়ারের জন্য বাঁধা হচ্ছে। সমাধান হিসেবে এসে গেছে ডে কেয়ার সেন্টার। কিছু ক্ষেত্রে ডে কেয়ার সেন্টার খানিকটা কষ্ট লাঘব করছে। অর্থাৎ লালন পালন ব্যাপারটা আউট সোর্সিং অনেক আগেই হয়ে গেছে।
বাকী ছিল সন্তান উৎপাদন।
নতুন নতুন আবিস্কার এক্ষেত্রও সম্ভাবনা জাগিয়েছে। সন্তান না নেয়ার অন্য অনেক কারণের ভেতর অনেক সময় একটা কারণ হয় সন্তান নেয়ার সময় নেই, কিংবা সন্তান নেয়ার জন্য নিজের শারীরিক পরিবর্তন মেনে নিতে রাজী নন। এবং সেক্ষেত্রে এই চাইল্ড বার্থ আউট সোর্সিং তাঁদের জন্য নতুন একটি সুযোগ এনে দেবে। যেখানে দম্পতিদের দুজনই কর্মজীবী এই প্রজেক্ট তাঁদের কাছে জনপ্রিয় হতে উঠতে পারে। চাই শুধু আর্থিক সামর্থ্য।
একটি গর্ভকে নয় মাসের জন্য ভাড়া নিতে একেক জন বিদেশী দম্পতি কত খরচ করতে রাজী জানেন? প্রায় পঁচিশ থেকে ত্রিশ হাজার পাউন্ড। ত্রিশ থেকে চল্লিশ লাখ টাকা। হয়তো এর সঙ্গে অনাগত সন্তানটি যেন হ্রীস্টপুস্ট হয় তাঁর জন্য হয়তো দিতে রাজী হবে আরও কিছু মাসহারা। এমন প্রস্তাবে রাজী হবেন হয়তো অনেকেই। সমস্যা দেখা দিবে হয়তো সমাজ থেকে।
নৈতিকতার নামে। পতিতাবৃত্তিকে টিকিয়ে রাখতে সমাজের খুব বেশী আপত্তি নেই তবে এক্ষেত্রে আপত্তি করবে বলেই আমার ধারণা।
নিঃসন্তান অনেক দম্পতিদের ক্ষেত্রে টেস্ট টিউব বেবী সমাধান হিসেবে এসেছে। এসেছে আর্টিফিসিয়াল ইন্সেমিনেশান। কখনও দেখা যায় স্ত্রীর সমস্যা নেই কিন্তু স্বামীর আছে, এক্ষেত্রে স্পার্ম ডোনেশান একটা সমাধান হতে পারে।
পৃথিবীর অনেক দেশেই শুরু হয়েছে। তৈরি হয়েছে স্পার্ম ব্যাংক। আর যেসব দম্পতির দুজনেরই সমস্যা, কিংবা কোন কারণে গর্ভাশয় কেটে ফেলতে হয়েছে কিংবা গর্ভাশয়ে সমস্যা এমন অনেকের ক্ষেত্রেই হয়তো একমাত্র বা বিশেষ উপকারী সমাধান হতে পারে এই ‘চাইল্ড বার্থ’ আউট সোর্সিং।
এদেশে ফারটিলিটি সেন্টার নেহাত কম। যা আছে তা ঢাকায়।
এবং অবশ্যই বেশ ব্যয়বহুল। এই বিষয়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসক অপ্রতুল। নিঃসন্তান দম্পতিদের একটি বিশাল অংশ তাই বিদেশে যাচ্ছেন। একটু চেষ্টা করলে যা এদেশেই সম্ভব। চাহিদা থাকলে সাপ্লাই ও তৈরি হয়ে যায়।
আমার ধারণা, আজ হোক কাল হোক এদেশে আরও ফারটিলিটি সেন্টার হবে। এবং এই ফিল্ড অনেক এগিয়ে যাবে। তৈরি হবে দক্ষ জনবল, উন্নত সুযোগ সুবিধা।
কিছু কাজে যেহেতু নৈতিকতা ব্যাপারটা জড়িত না, সেগুলো শুরু হয়ে গেছে। টেস্ট টিউব বেবী, আর্টিফিসিয়াল ইন্সেমিনেশান শুরু হয়ে গেছে।
কিছু ক্ষেত্রে, যেমন স্পার্ম ব্যাংক তৈরি, চাইল্ড বার্থ আউট সোর্সিং? এসব কি শুরু হবে? নৈতিকতা নিয়ে কি প্রশ্ন উঠবে? একজন দরিদ্র মহিলাকে যদি অর্থের বিনিময়ে কিডনি বিক্রি করতে দিই তবে তাঁর গর্ভ ভাড়া দিতে আপত্তি কেন? তাঁর কোন অঙ্গ হানি তো হচ্ছে না। আর এই ক্ষেত্রে যে পরিমাণ অর্থ খরচ করতে রাজী বিদেশী দম্পতি তা দিয়ে হয়তো তাঁর অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে।
আমাদের দেশ কিংবা সমাজ অনুমুতি দিক কিংবা না দিক, ‘চাইল্ড বার্থ’ আউট সোর্সিং হবেই। এদেশে দরিদ্র মহিলার অভাব নেই। পতিতালয়ও আছে।
প্রথমটায় হয়তো হবে লুকিয়ে। পুরো নয় মাস হয়তো মহিলাটি সেই ফার্টিলিটি সেন্টারের কোন এক রুমে লুকিয়ে কাটিয়ে দিবে। কারণ, জানতে পারলে সমাজপতিরা নাক সিটকাবেন। বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধান দিবেন। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ রাও সাহস করে কিছু বলবেন না।
ভোট কমে যেতে পারে। বিভিন্ন অভিযোগে কিছু ফারটিলিটি সেন্টার হয়তো ভাংচুর ও হবে।
কিন্তু এই প্রজেক্ট কি আটকাবে? শুরু হতে পারবে না? নাকি বাধার মুখে থেমে যাবে? এদেশকে আমি যতটা চিনেছি, এদেশের নীতি নির্ধারকদের যতটা বুঝেছি, আমি আশাবাদী। কারণ? কারণ আমরা দুর্নীতিতে অপ্রতিদ্বন্দী। এই সমাজপতি এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ঐ একটা ব্যাপারে বেশ দুর্বল।
মুখ বন্ধ রাখবার জন্য কিছু খাবার দিলেই তাঁরা চুপ করে থাকবেন। শুরু হবে নতুন এই ‘আউট সোর্সিং’।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।