আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোটগল্প: চিলেকোঠায় অবরুদ্ধ দেবদুত



১ মন্টু সরু চোখে দুই দেয়ালের কোনে ডাল-পালা ছড়ানো ঝুলের দাড়ি-গোঁফ দেখছিল, যেখানটায় ফাঁদে পড়া ক'টা মাছির নির্জাস ছাড়া ছিবড়ে মৌন ঝুলে আছে। ভেন্টিলেটার চোঁয়ানো ফোটা-ফোটা আঁধার ঝুলের দাড়ি-গোঁফে, নির্জাস ছাড়া ছিবড়ে মাছির সাথে জোট বেঁধে ঘনিভুত হলে মন্টুর শুকনো কন্ঠা অস্থির হয়ে ওঠে। দেয়াল চারটে, যাদের একজনের বগলে গাঁথা ৩ কি ৫ বছরের পুরনো কান ঝোলানো ক্যালেন্ডার, আরেক জনের কাঁখে রং করার টেবিল,বেলচা, সিমেন্টের দুটো বস্তা, এসব কিছু নিয়ে হামা দিয়ে মন্টুকে চেপে ধরতে চায়। "সর, খানকির পোলারা সর কইলাম!" আগুয়ান দেয়াল চারটে মন্টুর দাঁত খিঁচানোয় খানিক দম নেয়। এই ফাঁকে মন্টু বেতো চকির পিঠে মুখ গুঁজে দেয়।

বেতো চকির খোঁড়া বাঁ পা কাঠ পোকার অনিবার্য দাঁতের দখলে কাতর, কটরকটর শব্দ বুড়ো কাঠের পেশি ছিঁড়ে ঠিকঠাক মন্টুর কানে জমা খোইল পেরিয়ে পৌঁছে যায় মগজে। "থামলি শুয়োরের বাচ্চা! থাম...বাচ্চা বাচ্চা." খিস্তিটা জিভ আর টাকরার সংগম থেকে পিছলে চলে গেলে মন্টু খেই হারিয়ে ফেলে। পলাতক খিস্তি ক্রমশ ঘনিভুত চটচটে আঁধারে লেপ্টে গেলে,আলোর খোঁজে মন্টুর চোখের কার্নিসের নিচে মনি দুটো ছটফট করতে থাকে। গত রাতের ১১টা কি ১২টা তক জ্বলে থাকা ৬০ পাওয়ারের বাল্বটা জিরিয়ে নিচ্ছে, মন্টুর চোখের খরখরানি উত্তপ্ত করতে পারেনা ওকে। খিস্তি ভোলা মন্টুর গোংগানি লালা হয়ে ঝুলে থাকে থুথনির কাছে কাচা-পাকা দাড়ির শেকড় আঁকড়ে।

"মা আসতেসেনা ক্যান, ক্যান....চা...বিস্কুট, আসতেসেনা ..ক্যান." এই সময়টাতে যখন মৃত শোলের তলপেটের মতো ঘোলা বিকেল ঢলে পড়ে সন্ধ্যের দিকে, সেই কবেকার বুড়ো মগের পেট ভর্তি আগুন-গরম লাল চা আর কুড়মুড়ে দুটো টোস্ট নিয়ে মা আসে। "অ, মন্টু জিভ পুড়াইসনা বাপ। বিস্কুট ভিজায়া খা। " লাল-চায়ের ওমে মন্টুর নাকে আদুরে ঘামের বিন্দু টলমলিয়ে উঠলে মা মুছিয়ে দেবে। মন্টু চায়ের অপেক্ষায় ক্রমশ শীতার্ত হতে থাকলে মধু ময়রার উনুনের আঁচ চিলেকাঠার দখল নেয়।

মধু ময়রার ঢাউস কড়াইয়ে একঝাঁক লালমোহন হুটোপোটি করে আর মন্টু ওদের বাদামি থেকে লাল হওয়া অব্দি অপলক তাকিয়ে থাক, যতক্ষন না বিরেনের ছাপরা দোকানের কলিজার সিংগাড়ার ঘ্রান নাকের সুড়ং এ ধাক্কা দিয়ে জিভের কাছটায় থিক-থিকে হয়ে উঠতে থাকে। মধু ময়রার উনুনের আঁচ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করতে মন্টুকে দ্বিধার খপ্পরে খানিক টলমলো হতে হয়, ফের বিরেনের নাছোড়বান্দা সিংগাড়াগুলো বেহায়ার মতো ফুঁসে উঠলে কিছু করার থাকেনা মন্টুর,শহীদ চাঁন মিয়া স্মৃতি সড়ক মন্টুর পায়ের নিচে নিজেকে দ্রুতই হারাতে থাকে; প্রমানিক স্টোর, লক্ষীরতন বালিকা বিদ্যালয় না পেরুতেই হাপিয়ে ওঠে শহীদ চাঁন মিয়া স্মৃতি সড়ক, রুপসী সিনেমা হলের সামনে ববিতা, শাবানা নাকি অন্জু ঘোষের পোস্টারে মন্টু নিজেকে গেঁথে নিলে রাস্তাটা জিরোবার ফুরসত পায়। খানিক বাদে হেলে পড়া কালভার্টের কাঁধে উঠে শহীদ চাঁন মিয়া স্মৃতি সড়কটাকে মুক্তি দেয় মন্টু, কালভার্টের উপর চিৎ হয়ে পড়ে থাকা মৃত ব্যাংগ ফুলতে ফুলতে মন্টুর পেরুবার জায়গাটুকু দিব্যি দখল করে আছে, সামনের পা দুটো জুনের তুমুল রোদে প্রার্থনার আদলে বেঁকে গেলে মন্টু চোখ কুঁচকে আকাশের দিকে তাকানোর প্রয়াশ পায়. পিঁপড়ে বহর মৃত ব্যাংগটার দখল নিলে মন্টু টের পায় ওর নাকের সুড়ংগে বিরেনের সিংগাড়ার সাথে পিঁপড়ে বহর ব্যাংগটাকে দিব্যি টেনে নিয়ে যাচ্ছে। মৃত ব্যাংগের প্রার্থনা অস্বস্তিতে ফেলে দেয়ার পায়তারা করলে বিরেনের সিংগাড়া মন্টুকে উদ্ধারে তৎপর হয়ে ওঠে। "ও মন্টু, এ্যাম্বা কইরা চায়া রইছস ক্যান?" কালভার্টের উপর মরা ব্যাংগ আর বিরেনের সিংগাড়ার মাঝে মা কখন জানি এসে ৬০ পাওয়ারের লাইটটা জালিয়ে মন্টুর কাঁধে কাঁপা-কাঁপা হাতটা রেখেছে, ওর ঘোলা চোখের মনিতে তার কোন ছায়া পড়ে না।

"মা, মধু ময়রার দোকানে গেসিলাম, অর অইখান থিকা বিরেনের দুকানে যাওনের পথে..." বিরেনের দোকানে যাওয়ার পথে হেলে পড়া কালভার্টের উপর চিৎ হয়ে পড়ে থাকা ব্যাংগটা বর্ননা থেকে হঠাৎ লোপাট হয়ে যায়। "ধুরো, মধু ময়রার দুকান তো সেই কুস্টিয়ায়, আর কতোদিন আগের কথা!" মা'র কোঁচকানো ভ্রুর চাপে মধু ময়রা কি বিরেনের সিংগাড়ার দোকান মন্টুর চোখে জেগে উঠতে পারেনা, কিন্তু মন্টু প্রার্থনারত মৃত ব্যাংগের কথা ভুলতে পারেনা এমনকি মায়ের পোড় খাওয়া বলিরেখার ভাটিতে কবেকার কুস্টিয়া ভেসে পুরানো ঢাকার চোয়ালে এসে ঠেকলেও। "কাইল কইলি তর বাপে আসছিল, এরফানের পানে গাল ট্যাপা কইরা, আর বলে তর চউকির পায়ায় পিক ফেলচে পিচিক কইরা। অ মন্টু আজিমপুর গোরস্থান থেইকা এ্যাতো বসর পর তর বাপ তর কাসেই আসলো? এ্যাতো বসর তার পাগলা পোলারে আগলায়ে রাখলাম, আমারে কি তর মরা বাপের চউক্ষে পড়ে না?" মৃত স্বামি অথবা পাগল ছেলে অথবা যুগপৎ বাপ-ব্যাটার চিন্তাই মন্টুর মা মাগরিবের নামাজে রুকু সিজদার খেই হারিয়ে বিপন্নতায় ডুবে গেলে আসমানী সূরাগুলো সর্পিল জড়াজড়িতে গিঁঠ বেধে যায় আর মন্টুর মা গিঁঠ ছুটিয়ে সূরাগুলোকে পরস্পরের পেছনে ছোটাতে ব্যার্থ হয়ে মৃত স্বামী আর পাগল ছেলের উপর অভিমানে ডুকরে ওঠে। মন্টু কাঁচা-পাকা চুলের গোড়ায় খুসকির ক্ষেতে খস-খস করে আংগুল চালায়, নখে খুসকির সন্তসজনক স্তুপ জমে উঠলে নাকের ফুটো বড়ো করে শুঁকে দেখে।

"মা আমারে বাইরে নিয়া চলো। ডাইলপুরি খাইতে মন চায় আর সেলিমের হুন্ডা নিয়া দৌড়ামু। " মন্টু লিকলিকে ডান পা'টা বাঁকিয়ে সেলিমের হুন্ডায় কিক দেয় একটা, ধোঁয়াটে স্মৃতির ক্ষয়ে আসা কিনারে সেলিমের আবছা হয়ে ঝুলে থাকা হুন্ডা প্রথম কিকে সাড়া না দিলে "ইন্জিনডা বইসা গেসে মনে হয়" বলে আরেকটা কিক মারে মন্টু। মন্টু অবলিলায় ৫ কি ৭ বছর আগের মৃত সেলিমকে হোন্ডার পেছনে সরিয়ে নিজেই সওয়ার হয় আর মা'র ধ্বসে পড়া চোখের সামনে ঘরটাকে বেংগল সার্কাসের খাঁচা বানিয়ে দিব্যি চক্কর মারতে থাকে। খানিক আগের আগুয়ান চারটে দেয়াল মৃত সেলিমের হুন্ডার চাকায় নিজেদের বিছিয়ে দিলে মন্টুর কাজ কিছুটা সহজ হয়,মন্টু এবার মৃত সেলিমকে বাতিল করে মাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে, চিলেকোঠা পেরিয়ে মন্টু সিঁড়ি ঘরের সিথানে এসে একটা হর্ন দেয় যেন রমিজ আলির পুরানো সিঁড়ির বাঁকগুলো ঢলে পড়তে পারে সহজে, ৫ তলা পেরিয়ে ৪ তলার সামনে এসে ব্রেক করে মন্টু, যেখানে ওর মা আরো দুটো ফ্যামিলির সাথে আড়াই খানা ঘর ভাগাভাগি করে থাকে।

আড়াই খানা ঘরে ৬ কি ৭ জন মানুষের অস্বস্তি ঢাকতে ঢাকতে দরজাটা বিব্রত হতে হতে শেষতক নুয়ে পড়েছে। মন্টু গিয়ার চড়িয়ে ফের নামতে থাকে সিঁড়ি বেয়ে, কলাপসিবল গেট পেরিয়ে লাফিয়ে পড়ে বিহারী লাল স্ট্রীট তখন ঝিমিয়ে পড়া মানুষগুলোকে প্ববাহিত করছিল মেইন রাস্তায়। "মা, শক্ত কইরা ধইরা থাকো" মেইন রাস্তার পাঁজর না ছুঁয়েই মৃত সেলিমের হোন্ডা উড়ে যেতে থাকে, ঢাকার আদ্ধেকটা ঘুরে বিরেনের সিংগাড়ার গন্ধে হোন্ডাটা কুস্টিয়ার দিকে ছুট দেয় আর খানিক বাদে কুস্টিয়ার ১০/১২ নাকি ১৫ বছরের পুরানো স্মৃতি দগ্ধ রাস্তাগুলো জ্যান্ত হয়ে মন্টুকে ডাকা-ডাকি শুরু করে। শহীদ চাঁন মিয়া স্মৃতি সড়কের হৃৎপিন্ডের কাছে, যেখানটায় বিচ্ছিন্ন আর ভাবলেষহীন ট্রফিক পুলিশ বাঁশি ফুঁকে চমকে দিচ্ছে ভাসমান মানুষ আর রিকশার কাফেলা, সেখানটায় এসে খানিক দ্বিধায় পড়ে যায় মন্টু। লক্ষীরতন বালিকা বিদ্যালয় ছুঁয়ে রুপসী সিনেমা হলের কাছে যাবে নাকি হেলে পড়া কালভার্টের উপর মৃত ব্যাংগের প্রার্থনায় সাড়া দেবে বুঝতে না পেরে ফিরে আসে পুরোন ঢাকায় রমিজ আলির চিলেকাঠায়।

২ রাতে মন্টু চোখ বুজলেই ঘুমের কার্নিশ বেয়ে একটা কালো বেড়াল রেটিনায় সেঁধিয়ে পড়ে আর টানেলের গন্তব্যে যে আলোর বিন্দুটুকু; সেটা ছোটবেলার পাঁচ'সিকের লজেন্সের মতো ঝুলতে থাকে আর মন্টুর সেই টানেল বেয়ে তলিয়ে যাওয়া হয়না। কোন কোন দিন ওর মৃত বাবার সাথে অচেনা কিছু লোক জড়ো হতে হতে রমিজ মিয়ার চিলেকোঠা ভরিয়ে ফেলতে থাকে আর মন্টু বেতো চকির উপর হাটু জোড়া মুচড়ে বুকের কাছে নিয়ে আসে মন্টু আর কালো বেড়ালটা বাবা আর আগন্তক লোকগুলোর পায়ে মাথা-লেজ ঘসতে থাকে। "মন্টু, কি ঘরে থাকস, বাজান? এইখানে মইনষে থাকবার পারে?" বাবা'র বিরক্তি আগন্তকগুলোর মধ্যেও সংক্রামিত হয়, তারও মাথা নাড়ে, কেউ কেউ চিলেকোঠার এপাশ-ওপাশ উড়ে যায় আলগোছে। "হ, আব্বা, পেশাব-পায়খানার খুব সমিস্যা, আর...আর..." বাবাকে অভিযোগের ফিরিস্তি দিতে যেয়ে খেই হারিয়ে ফেলে মন্টু। এর ফাঁকে মন্টুর ছোট বোন বুলি তার ৩ বছরের বাচ্চাটা কাঁখে নিয়ে হাজির হয় কুমিল্লা নাকি বরিশাল থেকে; "ভাইজান, আমার পোলাটা মামারে দেখব কয়্যা জিদ করে খালি।

" এই সময় রমিজ মিয়ার ছোট ছেলেটা শিষ বাজাতে বাজাতে ছাদে উঠলে বাবা, বাবার সাথের আগন্তকগুলো আর কাখে ৩ বছরের বাচ্চা নিয়ে বুলি উধাও হয়ে যায়। রমিজ মিয়ার ছোট ছেলের সুচলো করা ঠোটে একবার "পাগলা হাওয়ার তোড়ে" আরেকবার "মুজসে শাদি কারোগি" বাজতে থাকে, এর মাঝে সে স্টিক বানাতে শুরু করলে শিষের সুরে খানিক চড়াই-উৎরায় দেখা দেয়। "অ, মন্টু কার লগে কতা কও মিয়া, এ্যা?" স্টিকটা ঠোঁটে ঝুলিয়ে দেয়াশলায় জ্বালানোর ফাঁকে কাঠিটা পড়ে গেলে রমিজ মিয়ার ছোট ছেলে খিস্তি কেটে ওঠে এবং কালি গোলা আঁধারে কাঠিটা ডুব দিলে খিস্তির ঢেউ মন্টুর চিলেকাঠার দরযায় আছড়ে পড়ে। "তুমি মিয়া জাতের পাগল, বুঝলা? হাওয়ার নাতি তুমি আমারে পাগল চিনাও, না? আন্ধার ঘরে একলা-একলা ফাল পাড়লেই পাগল হয় মিয়া? নজু পাগলারে দেখছ, অইযে, বড় রাস্তার মুড়ে ল্যাংটা হয়্যা, গায়ে গু মাইখ্যা টেরাফিক কন্ট্রল করে, হ্যায় হইলো আসল পাগল। " রমিজ মিয়ার ছোট ছেলে অন্ধকার খুঁটে দেয়াশলায়ের কাঠিটা খুজে পেলে ওর ঠোঁট দুটো স্টিকের দখল নিতে ব্যাস্ত হলে মন্টু রেহাই পায়।

সুচোল ঠোঁট দিয়ে এবার গাঁজার ধোঁয়ার সাথে বাংলা/হিন্দি গানের অসমাপ্ত টুকরোগুলো বেরিয়ে গেলে রমিজ মিয়ার ছোট ছেলে খুশি হয়। "তুমি মিয়া সিয়ানা পাগল। কামের বেটিরা ছাদে কাপড় শুকাইতে আইলে এ্যাতো গুজুর-গুজুর ফুসুর-ফুসুর করো ক্যালা, আমি বুঝি না? মিয়া তুমার চউকির তলা বিচরাইলে কনডোম-উনডোমের প্যাকেট পাওয়া যাইবো, কছমে কইলাম!" আরেকটা স্টিক ধরাতে বিরতি নেয় রমিজ মিয়ার ছোট ছেলে, আর মন্টু রেটিনার মধ্যে লুকানো কালো বেড়ালটাকে তালাশ করে আর টানেলের শেষ মাথায় ঝোলানো পাঁচসিকার লজেন্সের খোঁজে হামা দেয়। "কি মিয়া, দিবা নাকি একটা টান? আগল-পাগলগো তো এইসব ছাড় চলেনা শুনছি। তুমার কাসে নাকি মরা মাইনসেরা আহে? মান্নারে একদিন ডাকোনা ক্যালা, আমার খুব হিট নায়ক আসিল।

ভং চুদাও না, মন্টু মিয়া? আমার লগে........" রমিজ মিয়ার ছোট ছেলে অস্পস্ট হতে হতে মিইয়ে গেলে বাংলা/হিন্দি গানের কিছু ভাংগা চোরা সুর ছাদের উপরে ভাসতে থাকে আর ভাসতে ভাসতে মন্টুর কানে নোংগর ফেললে মন্টু মাথা ঝাঁকিয়ে তাড়াতে চায়। "খানকির পুতেরা বারাস না ক্যান?" "পাগলা হাওয়ার তোড়ে" আর "মুজসে শাদি কারোগি" পরস্পরের সাথে জোটবেধে মন্টুর কানের খইলে বসত করতে চাইলে ক্ষেপে ওঠে মন্টু। মন্টু এবার কালো বেড়ালের খোঁজে এদিক ওদিক চাইলে দেখতে পায় দেয়াল চারটে পরস্পরের মাথা ছোঁয়ার প্রতিযোগীতায় ছাদটাকে খেয়ে ফেলেছে, আর এই খেয়ো-খেয়ির মাঝে ৬০পাওয়ারের বিদগ্ধ বাল্বটার তলে বুড়ো টিকটিকিটার দু'একফোটা গু যেখানে ঝুলে আছে, তারো নিচে যেখানে কান ঝোলানো ৩কি৫ বছরের পুরোন ক্যালেন্ডার তারো নিচে একটা মানুষ না পাখা ওয়ালা কি জানি একটা গেঁথে আছে, আর রেটিনাচারী কালো বেড়ালটা ওর পাখাটা চেটে দিচ্ছে। "ঐ, মিয়া, তুমি ক্যাঠাই?" বাবার সাথে আগত আগন্তকদের সাথে একে মেলাতে না পেরে বিরক্ত হয় মন্টু। "আমার বাপের কাছ থিকা আসছ নাকি? না সেলিম তুমারে পাঠাইছে ওর হুন্ডার লাইগা?" মানুষ না পাখা ওয়ালা কি জানি ঠাহর হয় না; সে মন্টুর কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না, নির্দিস্ট অবয়বে না পৌছুতে পেরে, মন্টু শুধু টের পায় পাখা ওয়ালার ঠোঁট না ঠোঁটের মতো কিছু একটা বেঁকে যাচ্ছে, হাসি না অবজ্ঞা নাকি দুটোই বুঝতে না পেরে ক্ষেপে ওঠে মন্টু।

"আমার লগে দিগ্দারি করো, না? কে পাঠাইছে তুমারে? ল্যাংটা হয়্যা আমার ঘরে পইড়া রইছ ক্যান মিয়া?" মন্টু থামলে সে পাখা ঝাপটিয়ে ওঠার চেস্টা করে, মন্টু একটা ঘ্রান পায়। উঠতে না পেরে দেয়ালের গায়ে কোন মতে ঝুলে থাকে আর পাখাজোড়া তিরতির করে কাঁপতে কাঁপতে ছড়াতে চেস্টা করে। খানিক বাদে পাখা জোড়া বিস্তৃত হতে হতে দুটো দেয়াল ঢেকে ফেলে। "ফিরিস্তাগিরী চোদাও আমার লগে? কে পাঠাইসে তুমারে, না কইলে কিন্ত বাইন্ধা রাখুম চৌকির পায়ার লগে, চৌকির নিচে ইন্দুর আর তেলাচুরার লগে হোগা মারামারি করবা, মিয়া!" কালো বেড়ালটা পাখা ওয়ালার পায়ে মাথা ঘসে আর টানেলের অতলে ঝুলে থাকা পাঁচসিকার লজেন্সের আমন্ত্রনে গরগর করে। মন্টুর ক্রমাগত খিস্তি আর কালো বেড়ালের বাৎসল্যে পাখাওয়ালা শেষ-মেষ একটা আদল পায়, অলৌকিক ঘ্রান আর ঠোঁট মুড়ানো হাসি না অবজ্ঞা নাকি দুটোই ঠিক ঠাহর হয়না এসব নিয়ে পাখাওয়ালা চিলেকোঠায় ভাসতে থাকে।

মন্টু লাফিয়ে একটা ডানা ধরে ফেলে; "খানকির পুত আমারে ফালায়া কই যাও?" মন্টু পাখাওয়ালার পিঠে সওয়ার হতে পাছড়া-পাছড়ি করে, অলৌকিক ঘ্রানে ডুবে যেতে যেতে মন্টু টের পায় রমিজ মিয়ার পুরোন বাড়ি দুলিয়ে চিলেকোঠা সমেত পাখাওয়াল উড়ে যাচ্ছে! আর কালো বেড়ালটা টানেলের গন্তব্যে ঝোলানো পাঁচসিকের লজেন্সটা মুখে নিয়ে দৌড়াতে থাকে.........

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.