সকল ব্লগার ও ভিজিটর যদি আমার ধারাবাহিক উপন্যাসটি পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা ও পরামর্শ রাখেন কৃতজ্ঞ থাকব- এখন থেকে প্রতি শনিবার পর্ব পোস্ট করব--লেখক
ছোটগল্প - প্রভু-ভৃত্য
= পার্থসারথি
গৃহকত্রী রুবিনা আখতার, বেগমের কান টেনে ধরে বললেন হারামজাদী, তোর এত বড় সাহস আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলিস! এই বলে ঠাস করে বেগমের গালে এক চড় বসালেন। আর যদি কোন দিন হাত তুলেছিস তবে মেরে তোর হাড় ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেব , হারামজাদী ! বল, আর কোন দিন হাত তুলবি ?
বেগম দু'দিকে মাথা নাড়ে ।
মনে থাকে যেন, বলে মেয়ে কণিকাকে কোলে তুলে পরম স্নেহে আদর করতে লাগলেন রুবিনা আখতার।
কয়েকটা হিচকে কাদুনে সুর ছেড়ে বাম হাতের পিঠে চোখের পানি মুছে কণিকা কান্না থামাল।
বেগম অ াঁড় চোখে একবার কণিকাকে দেখে আবার মাথা নিচু করে বসে রইল।
মায়ের আদরে কণিকা শান্ত হল । যেন ভোরের শিশির ভেজা ঘাসের ওপর মৃদুমন্দ বাতাসের পরশ লেগে গেল। তারই পাশে দুপুরের খর রৌদ্র -তাপে নতজানু বৃরে মত নি:শ্চল বসে আছে বেগম। একবার মনে মনে ভাবে বলবে কিন্তু সাহসে কুলোয় না , যদি আরও কয়েক ঘা পিঠে বসিয়ে দেয়! নানান ভাবনার জালে কথাগলো নদীর তরঙ্গের মত মনের অজান্তে বিলীন হয়ে যায়। হয়ত শিশু বয়সে অধিকার বোধটুকু খুবই যথার্থ থাকে।
ওরা বুঝতে পারে কার কাছে তার কতটুকু অধিকার পাওনা। মাথায় কয়েকবার হাত বুলিয়ে আদর করে মেয়েকে আরও জড়িয়ে ধরলেন রুবিনা আখতার। চোখ পাকিয়ে বেগমকে বললেন তাড়াতাড়ি হাতের কাজ সেরে তবে ভাত খাবি! এর আগে আমার ছাড়ানো কাপড়গুলো ধুয়ে রৌদ্রে দিয়ে আসিস। -- এই বলে রুবিনা আখতার অন্তর্হিতা হলেন।
কয়েক ফোটা অশ্র“ মেঝের উপর টপটপ করে গড়িয়ে পড়ল।
চাপা কান্নার জমাট ব াঁধা কষ্টগুলো যেন নদী হয়ে বয়ে চলেছে। বেগম এরই মধ্যে রপ্ত করে নিয়েছে মারার সাথে সাথে কান্নাকাটি করতে নেই ; করলে আরও ভীষণ শাস্তি পেতে হয়। সারাদিন অনাহারেও বেশ কিছুদিন থাকতে হয়েছে। ুধার তাড়নায় ক ঁচি মন যখন হৃদয়ের এপাশ-ওপাশ ধাক্কায় তখন দেহমন অবাধ্য হয়ে ওঠে। তাই একবার কাউকে কিছু না বলে বাড়ীতে চলে গিয়েছিল।
কিন্তু আবারও আসতে হল। শুধু শুধু আসা নয় : বাড়ীতে গিয়ে মায়ের হাতে পিটুনিও খেতে হয়েছে।
‘হারামজাদী কাম্ করবি না তো খাবি কী, আমার মাথা ? ঘরে ঢুকবি না , যা কইতাছি। ’- এই বলে মা শ াঁসাল ।
উঠানের মাঝখানে দ াঁড়িয়ে স্থির নয়নে মা জরিনা খাতুনকে আশ্চর্য দৃষ্টিতে পর্যবেণ করতে লাগল।
আর ভাবতে লাগল – কণিকার মা কণিকাকে কত আদর করে। আর আমার মা আমাকে একবার পর্যন্ত খে াঁজ করল না, আমি কেন চলে
এসেছি, চলে এসেছি ওটাই প্রধান বিষয়। আরও কতকিছু এই ছোট্ট মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল কিন্তু বেগম টাল সামলাতে না পেরে উঠানের মাঝখানে ধপাস করে পড়ে গেল।
জরিনা খাতুন কান্না আর চেপে রাখতে পারেন নি। ।
শাড়ির অ াঁচলে চোখের কোণ মুছে রুদ্ধশ্বাসে
দে ৗঁড়ে এসে বেগমের পাশে হ াঁটু গেড়ে বসলেন এবং মায়ায় , মমতায় আর ভালবাসায় মেয়ে বেগমকে বুকে টেনে নিলেন। তপ্ত রোদের মাঝে শুভ্র মেঘের ছায়া পড়লে যেমন সŸচ্ছ ছায়া পড়ে ঠিক তেমনি বেগমের চোখে ভেসে ওঠল সুখের একটু আভাষ। বেগম জানে এ সুখ ণিকের । অল্পণ পরেই আর থাকবে না ; যখন বাবা উনখোরাক নিয়ে ঘরে ঢুকবে। তবু যাই হোক মায়ের বুকে নিজেকে হারাতে পারলে পৃথিবীর সমস্ত সুখ-শান্তি হৃদয়ের পাশে বাসা ব াঁধে।
তা’ ণিকের হলেও অতি দুর্লভ। বেগম আশ্চর্য হয়ে আকাশ দেখছে। অনেক অনেক দূর আকাশে ঈগল পাখি উড়ছে। তবে দৃষ্টি মাটিতে।
সারাদিন কিছুই খাছ নাই , না ?
বেগম দু;দিকে মাথা নাড়ে ।
অব্যক্ত যন্ত্রণার ফ াঁদে পড়ে মন যেন অ াঁকুপ াঁকু করে ওঠল। নিজেকে সামলে নিয়ে বেগমকে কোলে তুলে নিলেন জরিনা বেগম। কোঠরাগত চোখ, বিবর্ণ চুল, খসখসে মুখখানি ণিকের তরে যেন মলিন হয়ে ওঠল। নিজের খাওয়া এখনও হয় নি । মাত্র সকলকে খাইয়ে গোসল করে সেরেছে।
যা ছিল তা’ পরম তৃপ্তিতে দু’জন খেল।
আসার কারণটা খেতে খেতে মায়ের কাছে বলল বেগম। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মেয়ের উদ্দ্যেশে বললেন - হেরা বড়লোক মানুষ, হেরা যা চায় তা করবি , তুইতো আর আগের মতন না , অহন কাজ করছ্ , বদলিতে খাওন দেয় । দু’ একটা চড়-থাপ্পড় দিলেও সইয়া যাবি। আর কোনো দিন মারিছ না।
হেয় তোরে মারছে বইল্যা তুইও মারবি ? হেরা অহন তোর প্রভু , তুই হেগোর দাস। হেরা যা কইবো তাই করবি বুঝলি ?
এ কথাগুলো অবশ্য কিছুদিন পূর্বে জরিনা খাতুন নিজেও বুঝতেন না। প্রথম দিকে, কাজে যাবার কিছুদিন পরেই মেয়ে বেগম ক াঁদতে ক াঁদতে বাড়ি ফিরল। আসার কারণ গৃহকত্রী রুবিনা আখতার বেগমকে মারধোর করেছিল। বেগম কণিকার গায়ে হাত তুলেছিল।
প্রথমে অবশ্য কণিকাই বেগমের গায়ে হাত তুলেছিল -- কাজের মেয়ে বেগমের অভিযোগ।
কাজের মেয়ে হয়ে তার মেয়ের গায়ে হাত তুলবে কেন ? -- রুবিনা আকতার কখনও বরদাস্ত করতে পারেন না। জরিনা খাতুনও ছাড়বার পাত্রী নন। সাথে সাথেই মেয়েকে নিয়ে কণিকাদের বাসায় হাজির।
ভদ্দর লোক, এমুন ভদ্দর লোক অনেক দেখছি, কত ভদ্দর লোক আয়ে আর যায়।
-- জরিনা রীতিমত ে ঁচচামিচি শুরু করে দিল।
ে ঁচচামিচি শুনে রুবিনা আখতার বেরিয়ে এলেন এবং বললেন - এমন ে ঁচচামিচি করছো কেন?
আমার মাইয়ারে মারছেন ক্যান ?
তোমার মেয়েকে জিঞ্জাসা কর, কেন মেরেছি ।
আপনের মাইয়াইতো আগে আমার মাইয়ারে মারছে। হের পরে আমার মাইয়া মারছে।
তোমার মেয়ের এত বড় সাহস আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলেছে।
তারপরও তুমি আমাকে শাসাচ্ছ।
না ! চুমা খাইয়া আদর করুম !
অনেক কথা কাটাকাটির পর জরিনা খাতুন তার মেয়েকে না খাইয়ে রাখবেন তবু কাজের জন্য দিবেন না বলে হনহন করে বাড়ীর দিকে পা বাড়ালেন। কিন্তু জরিনা খাতুন তার প্রতিঞ্জা রাখতে পারেন নি। আসলে এটা কোন প্রতিঞ্জা নয় , অভাবের প্রতি আক্রোশ। কিন্তু এখানেও তাকে হার মানতে হল।
না-খেয়ে থাকার চেয়ে পেটে-পিঠে ে ঁবচে থাকাও অনেক সুখের। অবশেষে একদিন বিকেল বেলায় অনাহার কিষ্ট দেহে টলতে টলতে সিহাবুদ্দীন সাহেবের বাসার সামনে এসে হাজির হলেন।
বারান্দায় চেয়ারে বসে সিহাবুদ্দীন সাহেব দৈনিক পত্রিকা পড়ছিলেন। তিনি স্ত্রী রুবিনা আখতারকে ডেকে বললেন - বেগমের মা এসেছেন।
বেশ খানেক সময় অতিবাহিত হওয়ার পর উপস্থিত হলেন রুবিনা আখতার ; জরিনা বেগমের দিকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে তাকিয়ে ব্যঙ্গ সুরে বলেন কী ব্যাপার , আসবে না বলে গেলে , তবে আবার এলে কেন ?
জরিনা খাতুন কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন – আপা আমারে মাফ কইরা দেন।
হেই দিন আমি বুঝবার পারি নাই। আপনেরে অনেক কিছু কইছি।
বেগম একবার ওর মায়ের দিকে আবার গৃহকত্রী রুবিনা আকতারের দিকে তাকাচ্ছে। মায়ের আচরণে বেগম খুব অবাক হচ্ছে। যেন ইতিহাসের প্তাায় লিপিবদ্ধ করছে ঘটনার পরম্পরা।
এত কান্নাকাটিতে রুবিনা আখতার নিজেকে আর স্থির রাখতে পারলেন না। হৃদয়ের কোণে যেন একটু ভালবাসা জাগরিত হল। সান্ত্বনার সুরে বললেন - ঠিক আছে আর কান্নাকাটি কর না। কিসের জন্যে এসেছো বল ।
বেগমরে আপনের এইহানে রাহেন।
হেয় আর কোন দিন আপনার মেয়ের গায়ে হাত তুলব না।
কিন্তু এখন তো আমার কাজের লোকের দরকার নেই বলে স্বামী সিহাবুদ্দীনের দিকে তাকালেন।
সিহাব সাহেব ঘাড় কা’ত করে সম্মতি জানালেন কাজের মেয়েটাকে রেখে দেয়ার জন্যে।
আচ্ছা ঠিক আছে, রেখে যাও , আর কান্নাকাটি কর না।
মেঘাচ্ছন্ন আকাশে একরাশ রৌদ্র কণা যেন বিচ্ছূরিত হল।
আকাশে মুক্ত বিহঙ্গ স্বাধীনভাবে উড়ছে। --জরিনার মুখমন্ডলে তার প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট হয়ে দেখা দিল।
সারাদিন কিছু খাও নি না? রুবিনা আখতার জানতে চান।
জরিনা বেগম মাথা নিচু করে বসে রইল। পাশে বেগম।
বেগম আমার সাথে আয় বলে গৃহকত্রী ঘরের ভেতর পা বাড়ালেন। পিছু পিছু বেগম ে ঁহটে চলল। কিছুণ পর এক থালা ভাত আর অল্প তরকারি নিয়ে বেগম হাজির হল। মা ও মেয়ে থালার কিছু ভাত চেটে-পুটে খেল । বাকী ভাতগুলো সযতনে গুছিয়ে জরিনা ভয়ার্ত কন্ঠে বলল , আপা থালাটা বাড়ী লইয়া যাই, পরে দিয়া যামুনে ?
বেগমের ইচ্ছে হচ্ছিল আরও ভাত খাওয়ার ।
কিন্তু মা জরিনা বেগম চুপি চুপি বলল তর ভাই- বোনদের জন্যে কিছু রাখবি না? হেরাও তো না খাইয়া আছে।
মায়ের কথা শোনার পর বেগম ভাতের থালায় হাত বাড়ায় নি । তবে খুব কষ্ট হয়েছে নিজেকে সংবরণ করতে। কারণ না খেয়ে দিন পার করা য়ায় কিন্তু চোখের সামনে ভাত থাকলে তার লোভ সংবরণ করা সত্যিই দুরূহ। বেগম চুপচাপ বসে হাত চাটতে লাগল।
গৃহকত্রী রুবিনা আখতার আরেক থালা ভাত নিয়ে এসে বললেন - এটা বাড়ীতে নিয়ে যাও। আর আগেরগুলো তোমরা খেয়ে নাও।
জরিনা খাতুন চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না। টপ টপ করে কয়েক ফোটা অশ্র“ মেঝেতে গড়িয়ে পড়ল। মুখে কোন কথা উচ্চারণ করতে পারলেন না ; আবেগে কন্ঠ বাস্পরুদ্ধ হয়ে গেল।
শুধু স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।
সেই থেকে বেগম কোনদিন কণিকার গায়ে হাত তোলে নি। আকাশ যেমন স্থির তেমনি বেগমের জীবনের গন্ডী তাদের মনের কাছে আবদ্ধ । নীল আকাশে কখনও শুভ্র চ ্াঁদ হাসির ঝর্ণা ছড়িয়ে স্বর্গীয় করে তোলে, সূর্যাস্তের মনোরম ছে াঁয়া পৃথিবীর গায়ে আবেশ বুলিয়ে দেয়। এই আকাশেই আবার ওঠে ঝড় , বজ্রপাত হয় আর চলে মেঘের খেলা।
-- এ যেন বেগমের হৃদয় মন ।
বেগম কোনদিন ওদের কোন কথায় এতটুকু অমান্য করে নি । সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এটা-ওটা কাজ লেগেই থাকে। চা চাপানো হল তো চিনি নেই, যাও বাজারে। কাপড়ের অ াঁচলে একটু ময়লা লেগে আছে যাও আবার ধুয়ে দাও।
মেহমান এসেছে কিছু একটা নিয়ে আস। কণিকা ক াঁদছে তো বাজার থেকে কিছু নিয়ে আস। নাস্তার টেবিলে বসে বাজার থেকে ডিম আনানো প্রায় দিনকার ঘটনা। রান্না শুরু মরিচ নেই যাও বাজারে। বিকেলের আড্ডা জমেছে সিগারেট নিয়ে আস।
মোট কথা কাজের অন্ত নেই। যেন আধুনিক সভ্যতার অতি উন্নত মানের যন্ত্র-মানব , কোন না মুখে আনতে নেই। এ যেন সৃষিটকর্তার এক অপূর্ব সৃষ্টি। যতদিন ভৃত্য হিসেবে থাকবে ততদিন এভাবেই চলবে এর কোন ব্যতিক্রম কখনও ঘটবার নয়।
অথচ কিছুদিন পূর্বেও বেগম আর কণিকা ছিল দু’জন দু’জনার সঙ্গী।
যদিও কণিকা বেগমের চেয়ে বয়সে বেশ ছোট। তবুও বেগম আর কণিকা এক অজানা বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ছিল। কণিকার একমাত্র খেলার সঙ্গী ছিল বেগম। তবে মাঝে-মধ্যে ঝগড়া হতো না তা কিন্তু নয়। তা’ ছিল ণিকের ।
বেগম সাচাইলের স্থায়ী বাসিন্দা আর কণিকা এক সরকারী চাকুরের একমাত্র কন্যা। কণিকার বাবা সিহাবুদ্দীন ভূ ঁইয়া তাড়াইল উপজেলা হাসপাতালের একজন প্রধান কেরানী। মাস ছয় হল কুলিয়ারচর থেকে বদলী হয়ে এসেছেন। সিহাবুদ্দীন সাহেব মিশুক প্রকৃতির লোক। অফিসের ছোট-বড় সবার সাথেই সমান ভাব।
সেটা তার ব্যবহারের জন্যই সম্ভব হয়েছে। পারত:পে কোনদিন অফিস কামাই করেন না। বরং সহকারী সাহেব মাঝে মাঝে বাড়তি কাজের বোঝা চাপিয়ে ছুটির বায়না ধরেন স্যার আজ আমাকে বাড়ীতে যেতেই হবে , নইলে ভীষণ অসুবিধায় পড়ে যাব।
ঠিক আছে যান , সময় মত চলে আসবেন। - বলে বাড়তি কাজের চাপ নিজের হাতে নিয়ে নেন।
কিছুদিন যাবৎ মেয়ে কণিকা খেলার সঙ্গী পেয়ে খুব খুশী। মেয়েটির গায়ে ময়লাযুক্ত কাপড়-চোপড় তাই মা রুবিনা আখতার নিজের মেয়েকে ওই মেয়েটির সাথে খেলতে দিতে নারাজ। পাছে নিজের মেয়ে বখে যায় এই তার ভয়।
সিহাবুদ্দীন মৃদু কন্ঠে বলেন আহা ! ওরা বাচ্চা মানুষ ওদের মাঝে ওসব কথাবার্তা ঢুকিও না । ভাল সঙ্গী যখন পেয়েছে খেলতে দাও।
রুবিনা আখতার নাছোড়বান্দা , খেলতে দিবেন না । হাত ধরে কণিকাকে ঘরে নিয়ে এলেন। কিন্তু কণিকা ক াঁদতে ক াঁদতে মেঝেতে গড়াগড়ি যাচ্ছে । এক সময় অতিষ্ঠ হয়ে রুবিনা আখতার বললেন – আচ্ছা যাও , তবে বেশিণ খেলতে পারবে না।
কথাটা কানে পে ৗঁছা মাত্র এক দে ৗঁড়ে বাইরে চলে গেল কণিকা।
বেগমকে না পেয়ে মর্মাহত হৃদয়ে বারান্দার এক কোণে চুপচাপ বসে রইল। বসে আপন মনে কাঠি দিয়ে মনের দু:খগুলো মেঝেতে অ াঁকতে লাগল। যেন ব্যথা ভরা কথাগুলো পৃথিবীর বুকে খোদাই করে রাখছে।
কী হল মা-কণিকা একা একা বসে আছ যে ... সিহাবুদ্দীন সাহেব আদুরে কন্ঠে বললেন।
কণিকা কোন কথা বলল না ।
আরেকটু পাশ ফিরে বসল। সিহাবুদ্দীন সাহেব মুচকি হাসলেন। তারপর দু’বাহুতে জড়ালেন এক মাত্র কন্যা কণিকাকে। চুমু খেলেন। কিন্তু কণিকা নির্বাক।
অভিমানে গাল দুটো যেন এক ইঞ্চি পরিমাণ ফুলে আছে। স্ত্রী রুবিনাকে ডেকে বললেন - দেখে যাও গো তোমার মেয়ে ভীষণ রাগ করেছে।
রুবিনা আখতার হাত মুছতে মুছতে পাশে সে দ াঁড়ালেন। দৃষ্টি বাহির থেকে ফিরিয়ে এনে বললেন কি ব্যাপার খেলার সাথী চলে গেছে বলে মন খারাপ? এখন গেছে পরে আবার আসবে। রাগ করে না মা লীটি -বলে গালে হাত বুলালেন।
প্রথম প্রথম কণিকা যখন অন্যান্যদের সঙ্গে খেলত তখন ওদের কাছে কণিকা তেমন পাত্তা পেত না। খেলার মাঝে কোয়ার্টারের কিছু বাচ্চা ছেলে-মেয়ে আর কিছু পার্শ্ববর্তী এলাকা সাচাইলের। কারও সাথে কাণকার মন মিলত না আবার ওদের মাঝে বেগমও তেমন পাত্তা পেত না। এক সময় দেখা গেল কণিকা আর বেগম খুব কাছাকাছির হয়ে গেল। ধীরে ধীরে দু’জন এক অজানা মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেছে।
স্কুল চলার সমযটুকু বেগমের কাছে যেন অসহ্য মনে হত ; প্রতিটি মুহূর্ত যেন যুগের সাথে হেটে চলত। কারণ বেগম স্কুলে লেখাপড়া করে না। তাই কণিকার শূন্যতায় যেন হৃদয়টা হাহাকার করে ওঠত। অগত্যা পথের দিকে সারাণ তাকিয়ে থাকত কখন কণিকা স্কুল ফিরে আসবে।
কাজের লোকের দরকার।
তাছাড়া বেগম আর কণিকা দু’জন দু’জনের খুব কাছাকাছি। তার ওপর বেগম এক ছিন্নমূল সংসারের জঞ্জাল। কাজের কথা যখন বেগমের মা জরিনা খাতুনকে বলা হল তখন এক হাসিতেই রাজি কী যে কন আম্মা, কাম করব না মানে ! কাম না করলে খামু কী?
সেই থেকে বেগম কাজের মেয়ে , শুদ্ধ কথায় ভৃত্য।
এরই মাঝে কীভাবে কাজের ফ াঁকে তিন-চারটা মাস কেটে গেল বেগম টেরই পায় নি। আর বুঝতেই পারে নি একদিনের প্রিয়তমা খেলার সঙ্গীটি এখন অন্য জগতের অচেনা মানুষ।
প্রথম দিকে কিছুদিন সম্পর্কটা যথাযথভাবে টিকে ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সম্পর্কের জাল ছিন্ন হয়ে গেল এক নীরব ঝড়ের তান্ডবে।
আজকের ঘটনায় বেগম কণিকার গায়ে হাত তোলে নি। কণিকা ভীষণ বিশ্রীভাবে বেগমকে খামচে ধরেছিল। সহ্যের সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পর নিজেকে ছাড়াতে গিয়ে কণিকাকে ধাক্কা দিয়ে সরাতে চেয়েছিল ।
কিন্তু কণিকা ধপাস করে মেঝেতে পড়ে গেল। তারপরই রুবিনা আখতার মনের খায়েসে হাত চালালেন বেগমের ওপর।
বেগম এখনও চুপচাপ মেঝেতে বসে আছে। কণিকা এক ঘা বেগমের পিঠে বসিয়ে ভে াঁ দে ৗঁড়ে অন্য রুমে চলে গেল। এতণের ভাবনার জগতে ছেদ পড়ল।
ভাবনার জগত থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিল বেগম। কিলটা ভীষণ লেগেছে। কিন্তু সামান্যতম বহি:প্রকাশ মুখে প্রকাশ করে নি বেগম। শুধু বাতাসে বাতাসে ধ্বনিত হয়ে বাজতে লাগল - তুমি আমার প্রভু আর আমি তোমার ভৃত্য । শুধু এতটুকুই অনুভব করল - সে ভৃত্য আর কণিকা প্রভু।
তার ওপর হাত তোলা মানে পেটের ভাত তোলা। কোথায় যেন একটা অদৃশ্যের ব াঁধা চোখের সামনে। চোখের সূতম দৃষ্টিও যেন প্রভুর গায়ে অ াঁচড় কাটতে পারে না ।
শেষ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।