সকল ব্লগার ও ভিজিটর যদি আমার ধারাবাহিক উপন্যাসটি পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা ও পরামর্শ রাখেন কৃতজ্ঞ থাকব- এখন থেকে প্রতি শনিবার পর্ব পোস্ট করব--লেখক
ছোটগল্প -
বসবাস
পার্থসারথি
বিলাস জীবনের প্রাণের বন্ধু । জীবনের এমন কোন কাজ বা ঘটনা নেই যা জানে না বিলাস। আবার বিলাসও কোন কিছু না জানিয়ে থাকতে পারে না ; জীবনকে খুটিনাটি সবই জানায় বিলাস। তবে কেউ কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। যে যার মত স্বাধীনচেতা।
জীবন বিলাসের অফিসে ওয়েটিং রুমে বসা। হাতে সুন্দর নক্সা করা একটা খাম। দু'আঙ্গুলে বারবার নাড়ছেন জীবন। চোখে-মুখে আনন্দের দ্যুতি সারা রুমে যেন হাসির ঝর্ণা ছড়িয়ে দিচ্ছে।
রিসেপশনিস্ট স্বপ্না এইমাত্র জানালেন, স্যার আপনাকে ভেতরে যেতে বলেছেন।
চেহারায় হালকা হাসির ছটা ছড়িয়ে জীবন বিলাসের রুমের দিকে পা বাড়ালেন।
স্বপ্না তাকিয়ে দেখলেন হাতের চেটোয় বয়ে নেওয়া খামটির দিকে ; নিশ্চয়ই বিয়ের কার্ড ।
জীবনের হাসির ঝিলিক হালকাভাবে স্বপ্নার মাঝেও ছড়িয়ে পড়ল; কার্ড নয় কার্ডের বিষয়টা।
কুশল বিনিময়, হালকা কিছু কথাবার্তার পর জীবন বয়ে আনা কার্ডটা বিলাসের হাতে দিয়ে বললেন- অবশ্যই থাকবি।
বিলাস খামের মুখ খুলে কার্ডটা দেখে নেন এবং বলেন- তা বলতে হবে না।
নতুন জীবনে পদার্পণ করছিস আর আমি থাকব না, তা কি হয় ? তো অচেনা একটা মেয়েকে বিয়ে করছিস অনুভূতি কেমন ?
অচেনাও বলতে পারিস আবার অনেকটা চেনাও বলতে পারিস- জীবন বেশ গুছিয়ে বলার চেষ্টা করেন।
ঠিক বুঝতে পারলাম না।
সত্যি বলতে কী ওকে চিনতাম না। মা-বাবার পছন্দ করা। তারপর দু’জন দু’জনকে বেশ কিছুদিন সময় দিলাম, অবশ্য দু’পরিবারের সম্মতিতে।
দু’জনার অচেনা জগতে দু’জনের কিছুদিন হাঁটাহাঁটি । কিছুটা জানবার এবং বুঝবার প্রয়াস আর কি। মিলে গেল, বিয়ের পিড়িতে যাচ্ছি।
বিলাসের সাফসাফ জবাব- ওসব বিয়ে-টিয়েতে আমি ধার ধারি না। দুজনার পছন্দ, অপছন্দ, মতামত মোট কথা চিন্তা-চেতনা এক, তো হাতে হাত রেখে বন্ধুত্ব এবং বসবাস।
পৃথিবীর সবকিছুই আপেকি ভাল বা মন্দ বলে কোন চিরায়ত জিনিস পৃথিবীতে নেই। তবে স্বল্প এবং আধিক্যের একটা ব্যাপার সবকিছুতেই জড়িয়ে আছে। তুই আজকের যে ব্যাপারটাকে তোর পছন্দনীয় ভাবছিস সেটা আগামীকাল হয়ত নাও থাকতে পারে।
ইয়েস, ইউ আর অ্যাবসুলিউটলি রাইট। আমি সেই কথাই তোকে বলছি।
তারপর?
তারপর আবার কী ? আইডিওলজি ডিফরেন্ট, দ্যান লাইফ উইল বি সেপারেট। অ্যান্ড দ্যান গো ফর অ্যানাদার পার্টনার।
যাযাবর জীবন- জীবন নিজেকে শুধরে নিয়ে আবার বলেন - না, না, যাযাবর জীবন হবে কেন? ওরা তো বিয়ে করে স্থায়ী জীবন সঙ্গিনী বেছে নেয়। লিভ টুগেদার। যাকে বাংলায় আমরা বলতে পারি একত্রে বসবাস।
ওটা আসলে একধরণের শখের সময়ে বসবাস। খেললাম, ভাল লাগল না ভেঙে দিলাম, ব্যস্ ।
সংকীর্ণ দৃষ্টিতে দেখলে তাই। তবে এতে কিন্তু প্রাণ প্রাণের গতিতে এগোয় ; থাকে দু’জনার মাঝে সতত বোঝাপড়া।
বোঝাপড়া নয়, বলতে পারিস হিসেব-নিকেস, হয়েছে তো অমিল দিয়ে দে ঢিল, ব্যস্ মৌমাছির উড়াউড়ি।
ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ানো।
এত সুন্দর এবং প্রাণময় ব্যাপারটাকে তুই এত হালকাভাবে নিচ্ছিস কেন? বিলাসের কন্ঠে কিছুটা ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
আমি বিন্দুমাত্র হালকা করে দেখছি না। তোদের মতে জীবনটা হচ্ছে হিসাব এবং ভোগ আর কিছু না।
তাইতো খাও-দাও-ূফর্তি কর ; এই তো জীবন।
তাহলে তো জোট সরকার থেকে শুরু করে অথবা তারও পূর্ব থেকে শুরু করে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারে সে সবকিছুর মিমাংসা হয়ে যেত। পুনরায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার কেন এল ?
বিলাস প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে।
জীবন বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন- হিসাব এবং ভোগ ছাড়াও এমন কিছু জিনিষ আছে যার জন্য আমরা বেচেঁ আছি। এবং যার জন্য পুনরায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দরকার হয়। যার জন্য ফুল মনের মধ্যে স্থান পায়।
একই সূর্য প্রতিদিন নতুন ভোর এনে দেয়। স্বাধীনতার জন্য, ভাষার জন্য মানুষ জীবন বলি দেয়। যার জন্য দেশকে মায়ের সাথে তুলনা করা হয়। প্রেম আর ভালবাসা এক নয়। সমস্যা আছে আবার তার সমাধানও আছে।
অন্তহীন গভীরতা অন্তহীন ভাবনা। লিভ টুগেদারের এতকিছু দরকার পড়ে না। শুধু তোমাতে আমাতে বোঝাপড়া, ব্যস্ দু’জনে বসবাস করা।
তুই অনেক বদলে গেছিস, বিলাস।
সময়ের টানে অনেক কিছুই বদলায়।
তা’তো অবশ্যই। দিকে এবং উল্টোদিকে। যে জীবন আমরা আদিম যুগেই ভোগ করে এসেছি তোরা এখন সেদিকেই ধাবিত হচ্ছিস। আগে দলে দলে লিভ-টুগেদার করত আর এখন দু’জনে একাকী। এই তো পার্থক্য।
যে যেরকম বুঝে- বিলাস আর তর্ক বাড়ায় না।
জীবন স্বাভাবিক ভাবেই বলে- কথায় কথায় অনেক কথা হল। তো আজকাল তোর খবরাখবর তেমন কিছুই পাই না। ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিস বুঝি?
বিলাস ইশারা করে বলেন - যাবার সময় রিসেপশনে বসা মেয়েটিকে দেখে যাস। তারপর মোবাইলে জানাস।
বল , চা না কফি ?
জীবন হাসতে হাসতে বলেন - তোর যেটা সুবিধে।
কফিটাই চলুক।
অসুবিধা নেই ।
২
কমিউনিটি সেন্টার। বরপ এবং কনেপ ; উভয় পরে লোকজনে সরগরম।
আত্মীয়-অনাত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব সবার মাঝে ফ’র্তির জোয়ার। যেন প্রাণ থেকে প্রাণে, জীবন থেকে জীবনে নানান রঙের আবহবার্তা পৌছে দিচ্ছে। আর নিংড়ে নিচ্ছে সুখ এবং দু:খের প্রাণরস। সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে জীবন ও মোহনা।
বিলাস ও স্বপ্না আসে।
জীবনের নতুন প্রবাহে কিছুণ ডুবে থাকে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রাণস্পন্দনে চোখ বুলায়। তারপর এগিয়ে যায় জীবনের কাছে। জীবন তখন নতুন জীবনের নতুন বাসিন্দা। আজ থেকে একসঙ্গে ব াঁধা হল জীবন-মোহনার জীবন গা ঁথা।
একটি মহাকাব্য।
বিলাস জীবনকে অভিনন্দন জানায়। তারপর বলেন- আমি আর স্বপ্না আগামীকালই বাসায় ওঠছি।
জীবন তাকিয়ে থাকে আরও কিছু শোনার প্রত্যাশায়।
বিলাস স্বপ্নার একটা হাতে নিজেকে সপে দিয়ে বলেন - আমরা ডিসিশন নিয়েছি ’ লিভ-টুগেদার ’ শুরু করব।
আমাদের দু’জনের মাঝে বোঝাপড়া কমপ্লিট।
স্বপ্না হাসতে হাসতে বলেন - আমাদের দু’জনার রুচি অসম্ভব রকমের মিল।
জীবন বিলাসের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। হাতে হাত মেলায়। এবং জীবন বলে- ওয়েলকাম, মোস্ট ওয়েলকাম টু দিস ওয়ার্ল্ড।
বিলাস বেশ খুশী হয়ে বলেন - তাহলে আমার বাসায় আসছিস তো ?
৩
ফ্যাট বাড়ী। বারিধারা অভিজাত আবাসিক এলাকা। চারদিকে সমাজের সব উচ্চবিত্তদের বসবাস। হুসহাস গাড়ী যাচ্ছে আর আসছে। বাগান বাড়ীর গাছের ডালে ডালে পাখিদের কলকাকলি প্রতি ভোরেই মোহিত করে।
কারও কারও মন পাখিদের কলকাকলি থেকে সুখ নিংড়ে নেয়। কেউবা আবার নষ্টালজিয়ায় ভোগে পাখিদের ঠোটে ঠোট মেলানো মনোরম দৃশ্য দেখে।
বিলাসকে এসবের কোন কিছুই আজকাল নাড়া দেয় না। পাখির কলকাকলি কোন ভাবান্তর ঘটাতে পারে না। বাগানের ফুলগুলো শুধুই ফুল মনে হয়।
ঘরের দামীদামী শো-পিচগুলো শুধুই প্রাণহীন বস্তু। অথবা জানালায় লেগে থাকা একটুকরো নীল আকাশ কষ্টের আর দু:খের নীলাবরণকে আরও গাঢ়তর করে তোলে। বিশাল সু-সজ্জিত ফ্যাট বাড়ীতে জনারণ্যে একাকী এক আহত-পঙ্গু সৈনিক। সঙ্গী বলতে খ াঁচায় বন্দী একজোড়া টিয়ে পাখি ( টিয়ে পাখি-জোড়া ঠে াঁটে ঠে াঁট মেলানো মমতাগুলো বেশ আলোড়িত করে )। পোষা বিড়াল ‘টুই’, আর অফুরন্ত বিদেশী মদের বোতল ও সিগারেট।
অবশ্য খাওয়া-পরায় কোন টেনশন অ াঁচ ফেলতে পারে না ; ব্যাংকে মোটা অংকের টাকা অলস ভঙ্গিতে পড়ে আছে।
অথচ গত সপ্তাহেও বিলাস ছিল এক টগবগে প্রৌঢ় যুবক। মাথার চুলে পাক ধরলেও তা কলপে ঢেকে দিয়েছে। মাঝে মধ্যে অনামিকার সোহাগী হাত ঊপড়ে ফেলেছে ঊ ঁকি দেয়া পাকা চুল। অথবা প্রেমের চাদরে ঢেকে দিয়েছে বিলাসের কষ্টের নি:শ্বাস।
দু’জন শুধুই দু’জনার ; কী এক অসীম মমতায় দু’জন দু’জনকে আগলে রেখেছে। এতটুকু কষ্টে বিলাস অথবা অনামিকা ভীষণ রকম মুষড়ে পড়েছেন। এক জন অন্যজনের জন্য প্রস্তুত ছিল ঝঞ্ঝা-বিুব্ধ সমুদ্র পাড়ি দিতে। মানুষের মন আকাশের রং। অনামিকা অথবা বিলাস নিজেদের যতই পরীা-নিরীা করুক : ওরা মানুষ ( ভাল-মন্দ অথবা সফল কিংবা বিফল পরে বিবেচ্য বিষয়) ।
এখানে উল্লেখ্য, স্বপ্নার সাথে লিভ-টুগেদার দ্বিতীয় বর্ষে গড়িয়েই ইতি টানতে হয়। স্বপ্না ও বিলাসের ঠিক বনিবনা হচ্ছিল না । দু’জনেই ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যে পৃথক স্বত্তা ; একই ছাদের তলায় এসেছিল স্বপ্ন মেলানোর তাগিদে। প্রথমে ওরা উভয়েই উভয়ের মধ্যে দারুণ মিল খু ঁজে পেয়েছিল। কিন্তু যখন একই বিছানায় নি:স্বাসে নি:স্বাস ভাগাভাগি করছিল মনের অজান্তেই অমিলগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
ধীরে ধীরে দিনে দিনে অমিলগুলো মহীবুহ হয়ে প্রকাশ পেল। আর টুকরো টুকরো প্রেম, টুকরো টুকরো স্মৃতি, স্বপ্ন মেশানো ভাল লাগাগুলো আগাছায় ঢেকে গেল। মহীরুহের ছায়ায় ছায়ায় একসময় প্রাণহীন হয়ে মিইয়ে যায় স্বপ্না- বিলাসের সাজানো বাগান। বিলাস ভ্রমর হয়ে উড়ে যায় অন্য বাগানের সদ্য ফুটন্ত ফুলে মধু সংগ্রহের আশায়। আর এদিকে পড়ে থাকে স্বপ্না নাম্নী আশাহত পাখির ছটফটানি ( অবশ্য স্বপ্না আরেকজনের সঙ্গে আরও পাচ বছর লিভ-টুগেদার করে কাটিয়েছে আরও পাচ বসন্ত ) ।
সম্পর্কের টানাপোড়েনে কারও ঔরসের সন্তান নিতে পারে নি স্বপ্না। স্বপ্নার বাগানে এখন ভ্রমর আর উড়াউড়ি চলে না। কী এক চমৃ রোগের প্রভাবে সারা মুখ-মন্ডল বিশ্রী আকার ধারণ করেছে। কিন্তু মন তো আগের মতই ; হলে কী , ভ্রমর উড়ে চলে যায় অন্য বাগানে।
স্বপ্নার স্বপ্ন থেকে সরে এসে বিলাস ডুবেছিল আকন্ঠ মধ্য পানে।
খু ঁজে বেড়াত ফেলে আসা সুখময় মুহূর্তগুলোকে।
ণিকের তরল ভাবনায় ভেসে বেড়াত বিলাস আর সিগারেটের ধে াঁয়ায় কুণ্ডলী পাকিয়ে ওড়ে বেড়াত বিলাসের হোচট খাওয়া প্রেমের নি:শ্বাস। পথ চলতে চলতে পথের মোহনায় অপরুপা রূপসী , হৃদয় মোহিনী অনামিকার সঙ্গে পরিচয়। পরিচয় থেকে চেনা-জানা। অত:পর প্রেম।
প্রেমের বীজগুলো দু’জনকে তাড়িয়ে বেড়াত পাবার বাসনায়। বেশ বোঝাপড়া হয় দু’জনার মাঝে। অনামিকা ভাবে লাইফ পার্টনারের সঙ্গে যুৎসই হচ্ছে না। পরিবর্তন দরকার। হাতবাড়িয়ে ডেকে নেন বিলাস নামের সুঠাম-দেহী, অপরূপ হৃদয়কাড়া ধনবান এক স্বপ্নকে।
তারপর কেটে যায় দু’টো যুগ। ফসল এক সন্তান ; অনিকেত।
অনিকেত তেইশ বছরের টগবগে যুবক। বাবার আদর্শে লালিত হয়ে নিজেই এখন স্বতন্ত্র পুরুষ, জীবন সঙ্গীনি বেছে নিয়েছেন। দেশে ফেরার কোন তাগিদ অনুভব করেন না অনিকেত।
বিলাসের মনের কোণে স্বপ্ন উ ঁকি দেয় ; অনিকেতকে সঙ্গে নিয়ে বাকীটা জীবন কাটিয়ে দিতে। কিন্তু অনিকেত তো স্বাধীন স্বপ্নপুরুষ। বড়জোড় এক ঘন্টা দু’ঘন্টা , এক দিন অথবা দু’দিন সময় কাটিয়ে যেতে পারেন পিতা বিলাসের আঙিনায়।
বিলাসকে ঘৃণা করে অনামিকা চলে গেছে তা’ নয়। ‘লিভ-টুগেদার’ বেচে থাকে ভোগে , ত্যাগে নয় ।
অনামিকা প্রমাণ করল ‘ভোগ’ নামের সন্দেশ থেকে বঞ্চিত হবার ােভে । ভোগের আকর্ষণে ছুটে গেছে অন্য বাগানে। বিলাস এখন একাকী। বিরহের সুরগুলো এখন বিলাসের নিত্যসঙ্গী।
আকন্ঠ মদ পান করে সোফায় নেতিয়ে পড়ে আছেন বিলাস বাবু।
চোখের পাতায় পাতায় কষ্টগুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কলিং বেলটা বেজে ওঠতেই চেতনায় ফিরে আসেন বিলাস ববিু। হেলে-দুলে এগিয়ে গিয়ে খুলে দিলেন দরজাটা। দরজায় দ াঁড়িয়ে জীবন বাবু।
পথ ছেড়ে দ াঁড়ালেন বিলাস বাবু।
প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন জীবন বাবু। এদিক - সেদিক তাকান। জীবন বাবুর চোখ জোড়া কাউকে যেন খু ঁজছে। বিলাস সোফায় বসতে বসতে একটা সিগারেট ধরায়।
কাউকে দেখতে না পেয়ে জীবন বাবু জিঞ্জাসা করেন- ভাবী কোথায় রে?
বিলাসের রস-কষহীন উত্তর - নেই ।
নেই মানে ! – বিস্ময় প্রকাশ করেন জীবন বাবু।
নেই মানে চলে গেছে। আমার সাথে ওর আর ভাল লাগছে না, তাই ...।
পারিস তোরা! খেলার ছলে জীবন ফেলে তামসা নিয়ে মেতেছিস। এর কোন মানে হয় না বিলাস।
জীবনটা বিলাসের বস্তু নয়, ভোগের ত্রে নয়। ভোগ এবং ত্যাগ দু’টো মিলে জীবনের পূর্ণতা।
বিলাস বাবু আর কথা বাড়ায় না। চুপচাপ সিগারেট টেনে চলেন ।
একটা কার্ড বের করে এগিয়ে দিয়ে জীবন বাবু বলেন - আমার ছেলের বিয়ে।
অবশ্যই আশীর্বাদ করতে আসবি।
হাত বাড়িয়ে কার্ডটা নেন বিলাস বাবু এবং বলেন- জীবন তুই খুব ভাল আছিস। আমি সত্যিই মরীচিকার পেছনে ছুটেছি । আমার টাকা-পয়সার কোন অভাব নেই । অথচ আমি ভিখারীর চেয়েও ভিখারী ।
আমার ‘আছে’ বলে কিছুই নেই।
ধন্যবাদ , দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছিস। জোড়ায় জোড়ায় ঘুরে বেড়ানো শালিক অথবা ময়না অথবা টিয়া পাখির সুখ দেখিস। ওরাও সুখী , বাস করে সুন্দর সাজানো ঘরে । আমরা কেন পারব না।
ভাল থাকিস । -- এই বলে জীবন বাবু সুখী সুখী পায়ে বেরিয়ে আসেন। ে ঁহটে চলেন সেখানে , যেখানে মোহনা হয়ত ওর জন্যে অধীর আগ্রহে বসে আছেন । ঘরে ফিরতেই এক গ্লাস ঠান্ডা শরবৎ এগিয়ে দেবেন মায়ায় , মমতায় আর ভালবাসায় । প্রশান্তির নি:শ্বাসে নি:শ্বাসে ভরিয়ে দেবেন অন্দরমহল।
শেষ
০৩/০৩/২০০৭ ইং
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।