আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুনামগঞ্জ বিএনপিতে 'মোরগা' লড়াই

সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির পদসর্বস্ব পয়সাওয়ালা নেতাদের দাপটে কোণঠাসা ত্যাগী ও রাজপথের নেতা-কর্মীরা। দলীয় পরিমণ্ডলে এদের পরিচিতি 'মোরগা' হিসেবে। কেবলমাত্র পয়সা এবং ওপর মহলে লবিংয়ের জোরে ১৯৫ সদস্যের জেলা কমিটিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক 'মোরগা' হিসেবে পরিচিত নেতারা জায়গা করে নিয়েছেন দলের নিবেদিতপ্রাণ রাজপথের কর্মীদের বঞ্চিত করে। এদের অনেকে আবার প্রবাসী। নির্বাচনকে সামনে রেখে সাম্প্রতিক সময়ে ডজনখানেক 'মোরগা' হিসেবে পরিচিত নেতা দাবড়ে বেড়াচ্ছেন জেলার পাঁচটি আসনে। দলীয় নেতা-কর্মী ও জনগণের সঙ্গে সম্পর্কহীন এসব নেতাদের পকেটের টাকায় তৈরি 'অমুক ভাইকে সংসদে দেখতে চাই' লেখা ব্যানার-বিলবোর্ডে সেঁটে দেওয়া হয়েছে 'প্রচারে সর্বস্তরের জনগণ'। কেউ কেউ আবার পকেটের টাকা খচর করে নিচ্ছেন সংবর্ধনা। এসব সংবর্ধনায় ভাড়ায় আনা কর্মীদের পারিশ্রমিক চুকাতে অনেক সময় সৃষ্টি হচ্ছে অনাকাক্ষিত পরিস্থিতি। এসব দৃশ্য দেখে বিব্রত হচ্ছেন দলের ত্যাগী ও রাজপথের কর্মীরা।

দলীয় সূত্র জানায়, বর্তমান সুনামগঞ্জ জেলা কমিটিতে দলীয় গঠনতন্ত্রের নির্ধারিত সর্বোচ্চ সীমার বাইরে গিয়ে আরও ৪৪ জনকে অন্তর্ভুক্ত করে পুনর্গঠন করা হয়। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ১৯৫ সদস্যের বিশাল বহরে জায়গা করে নেন তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কহীন অনেকে। 'জায়গা করে নেওয়াদের' প্রায় সবাই প্রবাসী ও অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল। কেন্দ্রের দ্বিতীয় সারির কোনো কোনো নীতিনির্ধারকের সঙ্গে তাদের রয়েছে 'মধুর' সম্পর্ক। এসব কেন্দ্রীয় নেতাদের বিদেশ সফরের সময় অতিরিক্ত খাতির-যত্ন করে দৃষ্টি কাড়েন এরা। যে কারণে প্রকৃত অবস্থা জানার পরও তাদের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন জেলার নেতারা। অপরদিকে, স্থানীয়ভাবেও অনেক নেতাদের খরচ জোগানের উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয় 'মোরগা' পরিচিত এসব নেতাদের। অপরদিকে, 'মোরগা' হিসেবে পরিচিত পয়সাওয়ালাদের জায়গা করে দেওয়ার জন্য দলীয় গঠনতন্ত্র নির্ধারিত পদের সংখ্যার দ্বিগুণ-তিনগুণ পদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। জেলা সংগঠনের সঙ্গে বেখাপ্পা অভিনব পদ-পদবিও সৃষ্টি করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, বিএনপির মতো একটি বড় দলের জেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদের পরিচয় বহনের যোগ্যতা 'মোরগা' হিসেবে পরিচিত অনেক নেতারই নেই। শিক্ষাগতযোগ্যতার দিক থেকেও তাদের অনেকেই অতিক্রম করতে পারেননি মাধ্যমিকের সীমানা। সূত্র জানায়, রাজনৈতিক শিষ্টাচার জ্ঞানহীন এসব নেতারা কেবলমাত্র পয়সার জোরে জেলা সংগঠনের মর্যাদাপূর্ণ পদ-পদবি ব্যবহার করছেন সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত শোভা বর্ধনের কাজে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, বর্তমান জেলা কমিটিতে এমন অন্তত ৪০ জন রয়েছেন যাদের নাম কর্মীরা দূরে থাক, সক্রিয় নেতারাও জীবনে কোনোদিন শোনেনি।

সূত্র আরও জানায়, দলীয় ফোরামে 'মোরগা' হিসেবে পরিচিত এসব পদসর্বস্ব নেতাদের কারণে ন্যায্য পদ-পদবি ও সম্মান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক ত্যাগী ও রাজপথের কর্মী। অপরদিকে হরতাল, অবরোধসহ ঝুঁকি রয়েছে এমন কর্মসূচিতে এদের দেখা না গেলেও শোডাউন কর্মসূচিতে সেজেগুজে হাজির হন এরা। আর তাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের শ্রম-ঘামে সাজানো কর্মসূচিতে দেখা দেয় অনাকাঙ্ক্ষিত বিপত্তি।

জেলা যুবদলের অপর এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মিছিলে ব্যানার আর সভায় চেয়ার না ছাড়ার কঠিন শপথ নিয়ে 'মোরগা' হিসেবে পরিচিত নেতারা অংশ নেন। যে কারণে ব্যানার নিয়ে কাড়াকাড়ির মতো দৃষ্টিকটু বিষয়ও প্রত্যক্ষ করতে হয় রাজপথে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১ সেপ্টেম্বরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিশাল র্যালিতে টানাটানি-ঠেলাঠেলির একপর্যায়ে ব্যানার পেছনে ফেলে সামনে আসতে বাধ্য হন জেলার শীর্ষ নেতারা। তারা জানান, ওইদিন ব্যানার দখলের 'যুদ্ধে' কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি ছিলেন না 'মোরগা' হিসেবে পরিচিত একাধিক নেতা।

অপরদিকে, যেসব আসনে একাধিক পদসর্বস্ব নেতা রয়েছেন, সেখানে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বও রয়েছে। তাদের এ দ্বন্দ্বকে সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতা-কর্মীরা 'মোরগের লড়াই' হিসেবে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে থাকেন।

সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন বলেন, বড় দলে সামান্য সমস্য থাকেই। তার দাবি, নির্বাচনের মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়ে গেলে এ সমস্যা আর থাকবে না।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.