বাংলাদেশে সম্প্রতি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুঃখজনকভাবে বিরোধী দল এ নির্বাচন বর্জন করে বিবেচনাহীন সহিংসতায় লিপ্ত ছিল। জনগণের অনেক কষ্টার্জিত অর্জন ভোট দেওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং এর প্রধান মিত্র জামায়াতে ইসলামী ভয়াবহ নাশকতার সৃষ্টি করে। ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত পাঁচ শতাধিক স্কুলে আগুন দেওয়া ছাড়াও কয়েকজন নির্বাচনী কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়, যারা কিনা ঐতিহ্যগতভাবেই ধর্মনিরপেক্ষ দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থক_ হামলার শিকার হন। তাদের শতাধিক বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেওয়া হয়।
বিরোধী নেতাদের অবশ্যই জনগণের দাবি মানতে হবে। অবিলম্বে সন্ত্রাস বন্ধ করে গণতন্ত্রের প্রতি তাদের অঙ্গীকারের প্রমাণ দিতে হবে। তাদের অবশ্যই সহিংসতার পথ পরিহার করে গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসতে হবে।
বিগত পঁাঁচ বছরে কোনো ধরনের ভুলত্রুটি বা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ ছাড়াই বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন অভূতপূর্বভাবে ৫৮২৮টি নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। বিরোধী দলের প্রার্থীসহ ৬৫ হাজারেরও বেশি জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। বিরোধী দল এসব নির্বাচনের একটির ফলাফল নিয়েও প্রশ্ন তোলেনি। নির্বাচন কমিশনকে স্বশাসিত ও শক্তিশালী করায়-ই এটা সম্ভব হয়েছে।
সাম্প্রতিক সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ধ্বংসাবশেষ অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করছে। সুপ্রিমকোর্ট ২০১১ সালে এ ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা দিয়ে বাতিল করেন। তাছাড়া সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হয়েছিল। সেই সরকার এমনকি সামরিক শাসনকে উসকে দিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে সংসদে আলোচনার জন্য বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আহ্বান খুবই অবজ্ঞাপূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করে বিরোধী দল সহিংসতার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। প্রধানমন্ত্রী গত মে মাসে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দিতে বিরোধী দলকে প্রস্তাব দেন। জবাবে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া উগ্রপন্থিদের (নারীদের ঘরবন্দী করে রাখাসহ বিভিন্ন দাবি তাদের) সঙ্গে নিয়ে রাজধানী ঢাকাকে জিম্মি করে সরকার উৎখাতের চেষ্টা করেন। বিরোধীরা সে সময় সম্পদের বিপুল ক্ষতিসাধন ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি। কারণ তাদের সঙ্গে জনসমর্থন ছিল না এবং নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তায় সরকার তার অঙ্গীকারের প্রতি ছিল অবিচল।
সরকারের পক্ষে এমন পরিস্থিতিতে প্রস্তাব ফিরিয়ে নেওয়া যৌক্তিক হলেও তা করা হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিসভায় নাম দেওয়ার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে বলা হয়। প্রধানমন্ত্রী হরতালের মতো ধ্বংসাত্দক কর্মকাণ্ড ছেড়ে সংসদে ফিরে আসার জন্য বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। জবাব, পুনরায় প্রাণনাশক হরতাল, বাসে আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষ পোড়ানো হয়।
প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচন থেকে দেশকে কেন বঞ্চিত করা হলো, বিএনপিকে অবশ্যই বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্বের কাছে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে। কাণ্ডজ্ঞানহীনভাবে হিন্দু-খ্রিস্টান সংখ্যালঘুসহ নিরীহ মানুষ হত্যা ও সম্পদ ধ্বংস করায় কেন বিএনপি-জামায়াত জোটকে জবাবদিহি করা হবে না, তারও ব্যাখ্যা তাদের দিতে হবে।
বিএনপি-জামায়াতের উচিত, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনের পরামর্শ আমলে নেওয়া। অবিলম্বে হত্যা, সহিংসতা ও ধ্বংসাত্দক কর্মকাণ্ড বাদ দিয়ে আলোচনা শুরুর পথ সুগম করতে হবে। তাদের বুঝতে হবে, কোনো দায়িত্বশীল সরকার এ রকম নিষ্ঠুর নৃশংসতা কর্মকাণ্ড বসে বসে শুধু অবলোকন করতে পারে না। বিরোধীদের অবশ্যই ক্ষমতাসীন দলের সদস্য, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি ও প্রসিকিউটরদের ওপর হামলা বন্ধ করতে হবে। তাদের জামায়াতের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। গণতান্ত্রিক ধারা নস্যাৎ করে শরিয়া আইনের নামে বর্বর ও পশ্চাৎপদ শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের কারণে দলটিকে ইতোমধ্যে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচনের বাইরে রাখা হয়েছে। স্বাধীন ট্রাইব্যুনাল করে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের কিছু নেতার বিচার চলছে।
শেখ হাসিনা সরকারের বিগত পাঁচ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও চমকপ্রদ অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ এখন প্রধান স্তম্ভ, আঞ্চলিক সন্ত্রাস দমনেও অগ্রগামী। বিএনপি-জামায়াতের ২০০১-০৬ আমলে দেশের জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী উগ্রপন্থিদের সহিংসতার যে ঢেউ শুরু হয়, তা কঠোরভাবে দমন করা হয়েছে। সমৃদ্ধশালী, প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সব ধর্মের প্রতি সম্মান ও নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী একটি সরকার থাকায়ই এই অসাধারণ সাফল্য সম্ভব হয়েছে। সংকীর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশে নিরীহ মানুষ হত্যা, সম্পদ বিনষ্ট ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলাকারী একটি জোটের কাছে দেশের এই অগ্রগতি জিম্মি হতে পারে না।
[শাহরিয়ার আলম : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ডেইলি কলার ডটকমে প্রকাশিত নিবন্ধন থেকে অনূদিত।]
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।