২৪ অক্টোবর সরকারের ক্ষমতা ছাড়া-না ছাড়ার দোলাচলে ২৫ অক্টোবর রাজধানীতে আটঘাট বেঁধে মাঠে নামছে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তাদের সঙ্গে থাকছে জোট-মহাজোটের শরিক দলগুলোও। ওই দিন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে জনসভা ডেকেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একই দিনে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আড়ালে মহাসমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। গতকাল সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপির কাছে আবেদন করেছে দলটি। অন্যদিকে, গতকাল নগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় জনসভার আড়ালে ওই দিন রাজধানীতে বিশাল শোডাউনের সিদ্ধান্ত হয়।
ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নয়াপল্টন ছাড়াও রাজধানীর পল্টন ময়দান এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এ জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদেও অনুমতি চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠি পাঠানোর সত্যতা স্বীকার করে আবদুস সালাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, আমরা তিনটি স্থানে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছি। আশা করি সরকার অনুমতি দেবে। জানা গেছে, ওই দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা পল্টন ময়দান সমাবেশের অনুমতি না মেলার সম্ভাবনাই বেশি। তাই নয়াপল্টনকেই প্রাথমিকভাবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এদিকে, গতকাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বর্ধিত সভা ডাকা হয়। সভায় ২৫ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে জনসভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিএনপি-জামায়াতকে প্রতিরোধে স্বাধীনতার পক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিএনপিকে সংবিধানের বাইরে কথা না বলারও আহ্বান জানান তিনি। আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ২৫ অক্টোবর বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হবে তাতে বিএনপি-জামায়াত ভয় পেয়ে গর্তে ঢুকে যাবে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজের সভাপতিত্বে বর্ধিত সভায় উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সহ-সভাপতি কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ সেলিম, সংসদ সদস্য সানজিদা খানম, শাহে আলম মুরাদ, আবদুল হক সবুজ, সহিদুল ইসলাম মিলন প্রমুখ।
অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দুরভিসন্ধিমূলক : বিএনপি
২৪ অক্টোবরের পর জাতীয় সংসদের অধিবেশন চললে নির্বাচন নিয়ে আবারও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হবে বলে মনে করে বিএনপি। দলটির মতে, জাতির সামনে আবারও অন্ধকার নেমে আসবে। সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে তা হবে দুরভিসন্ধিমূলক ও নিজেদের রচিত সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আওয়ামী লীগ অতীতের মতো আবারও নিজেদের সংশোধিত সংবিধান সংশোধনী লঙ্ঘন করবে। নেতারা বলেন, বিএনপির দাবি একটাই- নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যথাসময়ে নির্বাচন হতে হবে। না হলে ২৪ অক্টোবরের পর আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করা হবে।
গতকাল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, যুগ্ম-মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু এমপি ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন। বুধবার জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে চলতি অধিবেশন ২৪ অক্টোবরের পরও চালিয়ে যাওয়ার জন্য স্পিকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন মহাজোটের চার এমপি তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মতিয়া চৌধুরী ও মাইনউদ্দিন খান বাদল। তারা বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা ২৪ অক্টোবরের পর আন্দোলন শুরুর যে হুমকি দিয়েছেন তা অসাংবিধানিক। সাংবিধানিকভাবে এ সংসদের মেয়াদ আগামী বছরের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত আছে। সুতরাং ২৪ অক্টোবরের পরও সংসদ চলতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২৪ অক্টোবরের পর অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারেরও নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সংসদের অধিবেশন চালানোর কথা বলেছেন এবং ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে আগামী নির্বাচন হবে বলে গণমাধ্যমে তাদের বক্তব্য এসেছে। কিন্তু বুধবার সংসদে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা ২৪ অক্টোবরের পরও অধিবেশন চালিয়ে যেতে স্পিকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এতেই বোঝা যায়, বর্তমান সংবিধান কতটা অকার্যকর, সাংঘর্ষিক ও অস্পষ্ট। ২৪ অক্টোবরের পর আবার অধিবেশন চালানো হলে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতি এক অন্ধকার ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। সংসদে এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত হলে পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
সরকারের মাথা ঠিক নেই বলে মন্তব্য করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তার ভাষায়, ক্ষমতার মোহে সরকার অন্ধ হয়ে গেছে। গণমাধ্যমের জরিপে জনপ্রিয়তার ধসে তারা পাগল হয়ে গেছে। তাই সরকারের নীতিনির্ধারকরা এখন আবোল-তাবোল বলছেন। তারা নিজেরাই সংবিধানে সংশোধনী এনে তা লঙ্ঘন করতে চাচ্ছেন। কারণ, সর্বশেষ সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদের ৯০ দিন আগে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী ২৪ অক্টোবর সংসদ ভেঙে যাওয়ার বিধান রয়েছে। এখন তারা ২৪ অক্টোবরের পরও সংসদ চালানোর অপচেষ্টা করছেন। এটা ঠিক হবে না। আমরা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ২৪ অক্টোবরের পর কর্মসূচি দেব। সরকার কী করবে না করবে, তা তাদের বিষয়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার মতে, ২৪ অক্টোবরের পর সংসদের অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানো হলে নির্বাচন নিয়ে অস্পষ্টতা বাড়বে। এটা সরকারের দুরভিসন্ধিমূলক সিদ্ধান্ত হবে। তারা নির্বাচন না দিয়ে ক্ষমতায় চিরস্থায়ী থাকার চক্রান্ত করছে। এটা জাতির কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। বিএনপিও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। সময় হলেই আমরা দলের অবস্থান তুলে ধরব।
যুগ্ম-মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু এমপি বলেন, নিজেরাই সংবিধান সংশোধন করে আওয়ামী লীগ তা আবারও লঙ্ঘনের ষড়যন্ত্র করছে। দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তারা এ ষড়যন্ত্র করছে। অতীতেও তারা এ ধরনের কার্যক্রম চালিয়েছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত হলে বিএনপির সংসদীয় কমিটি বসে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ভাষায়, আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে সংসদে যা খুশি তাই করতে চাচ্ছে। কিন্তু এর পরিণতি কখনই ভালো হবে না। তারা আসলে কবে নির্বাচন দেবে তা এখনো অস্পষ্ট।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।