আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন বাঙ্গালী ইন্ডিয়ানা জোনস এর কথা।

::::: দেখবো এবার জগতটাকে :::::
একটি টিপিক্যাল তিব্বতী গুম্ফা। শরত চন্দ্র দাস নামের ভদ্রলোকের নাম কয়জন শুনেছি আমরা। কিন্তু অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞ্যানের কথা তো আমরা সবাই জানি। শরত চন্দ্র দাস এরকম একজন ভুলে যাওয়া ইন্ডিয়ানা জোনস। শরত চন্দ্র দাস জন্মান সিপাহী বিপ্লবেরও আগে ১৮৪৯ সালে।

চট্টগ্রামে। তার পড়াশুনা কিংবা বাল্যকাল সম্পর্কে তেমন কোন ইনফর্মেশন আজ আর খুজে পাওয়া যায় না। তবে শুরুর দিকে একজন ব্রিটিশ স্পাই হিসাবে চায়নাতে পোস্টিং হয় তার। ব্রিটিশ সরকার তাদের ভারতীয় সম্রাজ্যকে সুসংহত করতে চায়না এবং তার প্রতিবেশী রাশিয়া সম্পর্কে কড়া নজরদারী দরকার বোধ করে। প্রথম দিকে স্পাই হিসাবে শরতচন্দ্রের দায়ীত্ব ছিল নিষিদ্ধ দেশ তিব্বতের বিভিন্ন অঞ্চল ভ্রমন।

হয়তো ব্রিটিশ সরকারের সম্রাজ্যবাদী প্ল্যানে চীনের দিকেও লোভ ছিল, এবং সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তীব্বতে তার পরিচয় ফাঁস হয়ে যায় দ্রুত। প্রান বাচাতে তিব্বতের এক গুম্ফা থেকে আরেক গুম্ফাতে পালিয়ে বেড়াতে থাকেন। তিব্বতের রাজা তার মাথার মুল্য ঘোষনা করে। শরত চন্দ্র সম্পর্কে আরেকটা সুত্র বলে উনি তিব্বতে ঘুরতে ঘুরতে বুদ্ধ ধর্মাবলম্বী লামা গোষ্ঠি সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

তিব্বতে অজানা অচেনা ভ্যালী গুলো রহস্যের আধার। অনেকেই হয়তো হিল্টনের দি লস্ট হরাইজন বইটা পড়েছেন। শাংরি লা নামের রহস্যময় গুম্ফার ভেতরে প্রায় অমর লামাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে। ওটা অবশ্য সাইফাই ধর্মী কল্প কাহিনী। কিন্তু নিঃসন্দেহে তখন এই গুম্ফা গুলোতে সাধারনের জন্যে নিষিদ্ধ ছিল।

শাওলিন টেম্পল গুলোতে আসলেই হলিউডি মারদাঙ্গা কংফু হতো নাকি বুদ্ধ ধর্মের শান্তির বারতায় নতুন কিছু ছিল সেটা নিয়ে গবেষনার অন্ত নেই। লামাদেরকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেন শরত চন্দ্র। কিন্তু নিষিদ্ধ এলাকায় ক্রমাগত ভ্রমনে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কারনেও হয়তো তিব্বত রাজের রোষানলে পড়েন। পায় হেটে হিমালয়ের অচেনা অজানা রহস্যময় বিভিন্ন মন্দিরে পালিয়ে বেড়ান। লামারা তাদের ভেতরের খবর পেটে বোমা মারলেও বাইরে বের করতো না।

শরত চন্দ্র প্রথমবারের মত খেয়াল করলেন চৈনিক বুদ্ধরা অতীশ দ্বীপঙ্কর নামের একজনকে প্রফেটের সম্মান দেন। ভারতবর্ষ থেকেই বুদ্ধ ধর্ম হিমালয়ের ওপারে গেছে। কিন্তু কি ভাবে সেটা ছিল এক বিরাট রহস্য। শরত চন্দ্র উঠে পড়ে লাগলেন হাজার বছর আগের রহস্যময় চরিত্র অতীশ দীপঙ্করকে নিয়ে। এবং বের করলেন সেই ভারতীয় পন্ডীতের জন্ম স্থান বাংলাদেশের বিক্রমপুরের বর্জ্যযোগীনী গ্রামে।

সামান্য সুত্র ঘেটে ঘেটে এবং ততকালীন ইতিহাস ঘেটে বের করলেন, সত্যি এসময়ে চন্দ্রগর্ভ নামের রাজবংশ এ অঞ্চল শাষন করে। পরে দেশে ফিরে ঘুরে ঘুরে আবিষ্কার করলেন বর্জযোগীনী গ্রামে নদীর পাশে একটা প্রাচীন বসতির কথা যেটাকে স্থানীয় গ্রামবাসী বলে 'নাস্তিক পন্ডিতের ভিটা' যাইহোক স্পাইং এর কারনে চায়না থেকে চলে আসতে বাধ্য হলেন। কিন্তু অতীশ দীপঙ্করের ভুলে যাওয়া স্মৃতি পুনরাবিষ্কারের পাশা পাশি আরো কিছু কাজ করেন। যার মধ্যে আছে তিবেটিয়ান টু ইংলিশ ডিকশনারী (১৯০২), টেবিটিয়ান গ্রামার, এবং ইংরেজী থেকে সহজে টিবেটিয়ান ভাষা শেখার কিছু পুস্তিকা। জার্নি টু লাসা এন্ড সেন্ট্রাল টিবেট, কন্ট্রিবিউশন অফ রিলিজিয়ন হিস্ট্রি এন্ড কালচার অফ টিবেট, ন্যারেটিভ টু দি জার্নি অফ লাসা এরকম অনেক গুলো বই লিখেন এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে।

উনি এশিয়াটিক সোসাইটির একজন ফেলো ছিলেন। তিব্বত থেকে ফেরার পরে উনি পাহাড়ের মায়া কাটাতে পারেননি। দার্জিলিং এ স্থায়ী হন। এবং স্থানীয় স্কুলের হেডমাস্টার হিসাবে যোগ দেন। তিব্বতের রাজধানী লাসার নামানুসারে উনার বাড়ির নাম দেন দি লাসা হাউজ।

ধারনা করা হয় তিব্বত থেকে বিতারিত হবার পরেও উনি স্পাইয়িং এর সাথে জরিত ছিলেন। অনেক ব্রিটিশ হিমালয় অভিযাত্রিক ছদ্মবেশে এর পরে গোয়েন্দারা তিব্বতে যায়। এবং এরা প্রায় সময়েই লাসা হাউজে আনাগোনা করতেন। ১৯১৭ সালে উনি পরলোকগত হন। আমাদের ইতিহাসবিদরা অতীশ দিপঙ্করের উপর খুব বেশি গবেষনা করতে নারাজ।

শরত চন্দ্রের উপরে গবেষনা খুব বেশী আশা করা যায়না। শরত চন্দ্রের কোন ছবিও পেলাম না। নেটের ইনফর্মেশন ও অপর্যাপ্ত। কেউ আগ্রহী হলে উনার বই গুলো পড়তে পারেন। কপিরাইট নাই তাই নেটে খুজলে ফ্রি পাওয়া যাবে।

আশা করি এশিয়াটিক সোসাইটিতেও পাওয়া যাবে।
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.