আমি লিখি মানুষের কথা,মানুষ পড়ে না। তারা হাসে। তাদের হাসির জন্যে আমি লিখি 'সবকিছু হাসির বিষয় নয়' তারা হাসে না! তবু আমি লিখব।
সুন্দর সকাল।
মুবারক এসে দাঁড়িয়েছে মায়ের ঘরে।
ঘরটি যেন এতক্ষণ তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছিল।
একমাস হয়ে গেল মা চলে গেছেন।
টেবিলে রাখা তাঁর ছুঁচ-সুতোর কৌটো ঝলমলিয়ে হাসছে।
মা হাসছেন ফটোতে।
টেবিলের একপাশে খাড়া করে রাখা আছে তাঁর জায়নামাজ।
যেন,মা
এখনই আসবেন নামাজ পড়তে।
তাকে রেহেলের উপর লাল-কাপড় জড়ানো মায়ের 'বড়চিজ'।
পাশে পড়ে আছে চশমার খাপ। মুবারক যেন চোখ বন্ধ রেখে শুনতে
পাচ্ছে,মায়ের সমর্পিত উচ্চারণ মেঘমালায় প্রতিধ্বণি তুলে,
বাতাসের হৃদয়ে তিরতির করে ছড়িয়ে পড়ছে।
প্রতি বৃহস্পতিবার মা বলতেন--পুকুর থেকে ক'টা মাছ ধরে আন তো
বাপ,তোর আব্বার নামে ভাত দেব।
বড় মাছ আব্বা ভালবাসতেন। তিনি চলে গেছেন কিন্তু তাঁর
পছন্দ-অপছন্দ রয়ে গেছে মুবারকদের জীবন-যাপনের অনেক
কিছুতে।
প্রতি বৃহস্পতিবার আব্বার নামে ভাত দিতেন মা। কমপক্ষে পাঁচজন
মুসাফিরকে খাওয়াতেন তিনি।
বৃহস্পতিবার মায়ের বাপের বাড়ির 'ভাত দেওয়ার 'দিন।
মুবারকের
দাদির মৃত্যুর পরে সেটা এ-বাড়িতে চালু করেন মা।
বৃহস্পতিবার ভাত-দেওয়ার রেওয়াজটি মুবারকের বোন মেরিনা
নিয়ে গেছে তার শ্বশুরবাড়ি।
মুবারকের শ্বশুরবাড়িতে অবশ্য শুক্রবারে ভাত দেয়। সে-কথা কতবার
মুবারকের কাছে ঠারে-ঠোরে বলেছে মিনু। মুবারক বলছে--মা'কে
বলো।
মিনু বলেছে--ওরে বাপরে,তোমার মা-কে আমার খুব ভয় লাগে।
আজ শুক্রবার। জুম্মা। মুবারকের সংসারে এই দিনটি সাপ্তাহিক ঈদ।
বাজার থেকে খাসীর মাংস আনা হয়।
আজও এসেছে।
গোসল করতে পুকুরঘাটে যাচ্ছিল মুবারক। হাসিমুখে তার সামনে
দাঁড়াল মিনু। বলল--জালটা নিয়ে যাও,একটা বড় মাছ ধরে আনো।
মা চলে গেছেন।
তবু তাঁর সংসার ফাঁকা হয়নি। মিনু এখন পাকা
গৃহিনী। তার অনুরোধে বিব্রত মুবারক বলল--বাজার থেকে
মাংস আনলাম যে!
--কাল তোমার আব্বার নামে ভাত,দিয়েছো মায়ের নামে দাওনি।
আজ আমি দেব,বড় মাছ তোমার মা-ও ভালবাসতেন খুব।
একের পরিবর্তে অন্য এক।
বৃহস্পতিবার বদলে যায় শুক্রবারে।
মুবারক বুঝল,গৃহকর্ত্রীর জায়গা দখল করে মিনু এখন তার বাপের
বাড়ির প্রথা চালু করতে চায়ছে সন্তর্পনে।
এভাবেই পৃথিবীর প্রথাবদল হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।