বাংলাদেশে সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণের এবং বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে আমাদের গৌরবময় ইতিহাস জানানোর প্রত্যয়ে... www.bangladesh1971.org
একটা সত্যি ঘটনা দিয়ে শুরু করা যাক।
আমি তখন বেশ ছোট, যতদুর মনে পড়ে ক্লাস ফাইভে পড়ি। সময়টা বৎসরের শেষের দিকে। পরিবারের বাকি সবাই দুপুরে খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। বৃত্তি পরীক্ষার্থী বলে আমার দুপুরে ঘুম নিষেধ।
সকালেও আম্মু নামায পড়তে উঠার সময় তুলে দিতেন। আমার মা বেশ কড়া মহিলা ছিলেন তাই, আম্মু ঘুমালেও আমি পড়ার টেবিলে বসেই ঝিমাচ্ছি। এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ পেয়ে উঠে গেলাম। কাঠের দরজার পরে একটা লোহার গেইট ছিল বলে যে কেউ আসলে অনায়াসেই আমরা কাঠের দরজা খুলে দেখতাম কে এসেছে। দেখলাম ২৫-৩০ বছরের এক যুবক আমাকে আমার নাম ধরে বলে, "তোমার আম্মুকে ডেকে দাও।
" আম্মু ব্লাডপ্রেসারের রোগী ছিলেন বলে হুট করে ঘুম থেকে জাগানো নিষেধ ছিল। তাই আমি তার কাছে তার পরিচয় জানতে চাইলে সে আমাকে আমার মামা বলে পরিচয় দেয়। প্রথম দেখায় তাকে আমার পছন্দ হয়নি মোটেই। তাকে বাহিরে দাড় করিয়ে আম্মুকে ডেকে আনলাম। আম্মু নিজেও তাকে প্রথম দেখায় চিনতে পারলেন না।
পরে অনেক পরিচয় দেবার পর আম্মু দরজা খুলে তাকে ভেতরে আসতে দিলেন। বেশ কিছুক্ষণ আম্মুর সাথে কথা বলে চলে যাবার সময় দেখলাম আম্মু তাকে কিছু টাকা দিলেন। সেদিন সে যাবার পর আম্মুর কাছে জানতে চাইলাম সে কে। আম্মু বললো, আম্মুরা যখন ছোট ছিলেন তখন আমার নানার বাড়ীতে ঐ ছেলের বাবা কাজ করতেন। অভাবী পরিবার, বাবা মারা গেছেন তাই এখন তাকেই কস্ট করে সংসার চালাতে হয়।
পড়াশুনা মাদ্রাসায় করেছেন বলে ভাল চাকুরী পায়নি। তাই টিউশনি করেই এখন কোন মতে পরিবার চালায়।
পরদিন শুক্রবার। আমি ভোর থেকেই আমার পড়ার টেবিলে, আর আমার ছোট বোন মাত্র উঠে দাঁত ব্রাশ করছে বারান্দায় দাড়িয়ে। এমন সময় সেই মামা আবার এসে হাজির।
আমার ছোট বোন চিনতে না পারায় আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। আমি যেহেতু তাকে আগের দিন দেখেছি তাই আজ সরাসরি দরজা খুলে দিয়ে ড্রয়িং রুমে বসতে বললাম। সে আমার কাছে জানতে চাইলো আম্মু কোথায়। উত্তরে বললাম, রান্নাঘরে নাশতা বানাচ্ছে। সে সোজা চলে গেল রান্নাঘরে।
আমাদের সেই বাসাটা এমন ছিল যে রান্না ঘরে যেতে হলে মোটামুটি সব রুমই দেখা যায়।
আম্মু এত সকালে তাকে দেখে একটু অপ্রস্তুত হলেন। তারপরও সহানুভুতিতাতো তার জন্য আগের দিনই জন্মেছিলো তাই তাকে বললেন ডাইনিং টেবিলে আমাদের সাথে বসে নাশতা করতে। সবাই মিলে নাশতা শেষে আমি যথারীতি চলে যাই আমার পড়ার ঘরে। এইদিকে সে আম্মুর সাথে নানান কথাবার্তা বলছে।
প্রায় দশটার সময় সে চলে যাবার সময় হঠাৎ আম্মুকে বলে, "আপা, আপনার টু-ইন-ওয়ানটা কি আমাকে একটু দেয়া যায়, আমার বাসা কাছেই, তাছাড়া মিশু (আমার ডাক নাম) কে আমার সাথে নিয়ে যাচ্ছি। জুমার নামাযের আগে আবার ওকে সহ দিয়ে যাব। "
আমার অতি সাধাসিধে মা জননী তার কথায় না বলতে পারলেন না। আমাকে সহ সে নিয়ে গেল আমাদের টু-ইন-ওয়ান। বাসা থেকে বের হয়ে প্রথমে সে কাছের একটি স্থনের নাম বলে রিকশা নেয়।
তারপর সেস্থানে পৌছালে, টু-ইন-ওয়ান টা একটি দোকানে রেখে দোকান থেকে টাকা নিয়ে আমাদের রিকশা ভাড়া দিয়ে আমাকে বলে মামা তুমি বাসায় চলে যাও, আমার একটু কাজ আছে আমি পরে আসছি।
তখনই আমার মনে একটু সন্দেহ দেখা দেয়। তাছাড়া আমাদের টু-ইন-ওয়ানটা ছিল আমার ছোট বেলা থেকেই আমার সঙ্গী। আমি নাকি ছোট বেলায় কান্না করলে আম্মু এই টু-ইন-ওয়ান বাজিয়ে দিলে আমার কান্না থেকে যেত। যাই হোক ফিরে আসি মূল কথায়।
আমি সেই রিকশা নিয়েই বাসায় ফেরত আসি এবং সাথে সাথে আম্মুকে ব্যাপারটি জানাই। আম্মু তখনও কিছু আঁচ করতে পারেননি। জুমার নামায শেষে সবাই খেয়ে উঠার পর আম্মু ব্যাপারটি আব্বুকে বলেন। আব্বু আমাকে সাথে নিয়ে যান সেই দোকানে যেয়ে দেখেন সেই দোকানে আমাদের সেই টু-ইন-ওয়ানে খুব জোড়ে গান বাজচ্ছে। দোকানীকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে সে আজ সকালে ৫০০ টাকা দিয়ে এটা কিনে নিয়েছে।
শুনেই আমি কেঁদে ফেলি সেখানেই। যাই হোক স্থানীয় হবার সুবাদে আব্বু দোকানীকে আবার ৫০০ টাকা দিয়ে সেদিনের মত তা ফিরিয়ে এনেছিলেন।
কিন্তু সেদিন এই ব্যাপারটি শিখেছিলাম যে এই পৃথিবীতে এমন মানুষের অভাব নেই যাদের খেতে দিলে বসতে চায়, বসতে দিলে শুতে চায়। আমার ছোট্ট মাথায় ধরেনা তাদের কি করা যায়।
তাই আজ আমাদের চোখের সামনে আমাদের জাতীয় সংস্কৃতিকে মুছে ফেলার যে পায়তারা করছে একটি সংঘবদ্ধ গোষ্টি তাদেরকে আমরা কিভাবে রুখবো? আজ আমরা বিমানবন্দরের সামনে করা লালনের মূর্তি ভেঙ্গে ফেলার দাবী মেনে নিয়েছি।
তাদের কথায় আমরা তা ভেঙ্গেও ফেললাম। কালতো তারা দাবী করবে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের নিদর্শন "অপরাজেয় বাংলা" ভেঙ্গে ফেলতে।
কারণ এরা যে বসতে দিলে শুতে চায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।