আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অভিশপ্ত সেই বৃস্টির দিন- ২৬ শে জুন ২০০৩.......



আগের দিন রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছিল। রাস্তায় পানি জমতে শুরু করেছে। সকালের দিকে বৃষ্টিটা মাঝে মাঝে একটু ধরে আসছিলো। রানার ইউনিভার্সিটিতে যাবার খুব একটা তাড়া ছিল না। কিন্তু কম্পিউটারে মাউসের একটা সমস্যা হচ্ছিলো।

একজন স্টুডেন্ট ভাল উইন্ডোজ ২০০০ সিডি আনার কথা। ওটার কথা ভেবেই রেডি হলো। ভাইয়া গাড়িতে করে দিয়ে আসলো। আসার সময় পানির অবস্থা দেখে মনে মনে প্রমাদ গনলেন। আজকে মনে হয় আর গাড়ি বের করার মতো অবস্থা থাকবেনা।

পানি হাটুর উপরে চলে যাচ্ছে অনেক জায়গায়। ইউনিতেও ঢিলেঢালা ক্লাশ। মাঝখানে রানার কলিগরা জোর করে টেনে নিয়ে গেলো ছাদে। চারদিকের পানির বন্দীদশা দেখার জন্য। সাধারণত খুব গম্ভীর থাকে বলে কেউ সহজে ঘাটায় না।

কিন্তু আজকে কেন জানি কলিগদের সাথে একটু হাসি ঠাট্টাও করলো। ছাদে হালকা ভিজলও। ১২ টার দিকে নেমে আসলো নীচে। ভাইয়াকে বল্লো- গাড়ি আনা সম্ভব নয়- সে সিএনজি বা রিকশায় চলে আসবে। অনেকক্ষণ দাড়িয়েও সি এনজি পেল না।

পানির তোড় অসম্ভব বেড়ে গেছে- পাহাড়ী ঢল নামা শুরু করেছে বড় বড় নালা উপচে। তীব্র পানির স্রোত। বিরক্ত হয়ে রানা রিকশা নিল একটা। সে বেটাও যাবে অলংকারের মোড় পর্যণ্ত। তারপর আবার বদলে নিতে হবে।

পানির স্রোত ঠেলে যখন অলংকারের মোড় পৌঁছালো তখন বৃস্টি আবার শুরু হয়েছে অঝোরে। রিকশার ভাড়া চুকিয়ে ফুটপাতের পাশের হোটেলে ঢুকলো। ফুটপাতের পাশেই বড় চওড়া নালা, যার কিছু কিছু অংশ স্লাব দিয়ে ঢাকা। কিন্তু পানি জমে এমন হয়েছে কোনটা নালা কোনটা পথ চলার কালভার্ট বোঝার কোন উপায় ছিলনা। হোটেলের ভেতর স্বর্ণার সাথে কথা বল্ল।

কিছুটা বাদানুবাদ বোধকরি হয়ে থাকবে। রিকশার খোঁজে হোটেল থেকে দ্রুত বের হতে চাইলো রানা। পরের ঘটনা প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে বলছি। পানিতে ডোবা ফুটপাত পার হতে গিয়ে কালভার্টের মরণ ফাদে পিছলে যায় রানার পা। পানিতে ডুবে যায় সম্পুর্ণ।

প্রত্যক্ষদর্শী যারা ছিল তারা বললো, পানি থেকে উঠার চেষ্টা করার সময় কালভার্টের নীচে সম্ভবত মাথা ঠুকে যায়। তারপরেও হাত উঁচু করে রাখায় লোকজন ধরাধরি করে টেনে তুলে। উঠার পর চেয়ারে বসে ও বলছিলো আমি ভাল আছি- এর পর পরই একবার বমি করে নিস্তেজ হয়ে পরতে থাকে। ওখানকার কয়েকজন তরুন মিলে তাকে প্রথমে পাশের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়- ওরা চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে- তারা রিকশা করে তাকে নিয়ে যেতে থাকে ইউ এস টি সি হসপিটালের দিকে( যেই ভার্সিটিতে ও শিক্ষক ছিল) সঙ্গে থাকা লোকজনের কথায় বুঝা যায় পথিমধ্যেই সে চলে যায় চিরতরে। (সবার ছোট ছিল তাই খুব নিরাপদ গন্ডির ভেতরেই বড় হয়েছিল আমার ভাইটা।

কখনো তাকে একলা ছাড়তে চাইতেন না বাবা-মা। বুয়েটের কম্পিউটার সাইন্স থেকে বের হয়ে ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হিসাবে ঢুকার পরও! মাঝে মাঝে একটু রাগ ও করতাম এটা নিয়ে। ভাইয়ার আহাজারী সারা জীবন যাবে না- কেন ওকে ঐদিন নিয়ে আসতে গেলোনা! বাবা মা এর কাছে কখনো এই প্রসঙ্গ তুলিনি ভয়ে, জানতে চাইনি ওকে হারিয়ে তোমরা কি ভাবছো, কেমন আছো! কখনো জানতে চাওয়া যায়না। ১০ই অক্টোবর রানার জন্মদিন- ওর ৩২ হবার কথা ছিল। ভেবেছিলাম লেখাটা সেদিন দিব।

কিন্তু কালকে আবার আমি ফিরে যাচ্ছি অচিন যান্ত্রিক শহরে। ভাবলাম ওনাদের কাছে থাকা সময়েই লেখাটা দিয়ে দেই। আম্মা জানেন আমি রানার কিছু কিছু লেখা অনুবাদ করছি, নেট এ দিচ্ছি সেটাও জানেন, কিন্তু ব্লগ বা নেট ব্যাপারটা উনি ওভাবে অভ্যস্ত নন। আমিও দেখাইনি কোন লেখা। উনি মাঝে মাঝে রুমে আসেন- দেখেন আমি লিখছি বা টাইপ করছি- একটু বসে থেকে আবার চলে যান।

হয়তো কখনো লেখাগুলি দেখবেন- হয়তো ভাইয়া দেখাবে। যদিও সেও ব্লগে আসেনা কখনো। তারপরেও আমি জানি- আমরা সবাই এক কষ্টের অনুভবেই বাস করছি)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।