আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার পরিচয়ে মেয়েকে বড় করব

বাংলাদেশকে নিয়ে শংকিত
বিয়ের তিন বছর পর যখন প্রথম বাচ্চা হলো, বাবার বাসায় গিয়েছিলাম এক মাসের জন্য। এসে দেখি, আমার সংসারে কোথায় যেন একটা ফাঁক। স্বামী কীভাবে মানসিকভাবে নির্যাতন করবে, তাতে ব্যস্ত (শিক্ষিত মানুষ! শারীরিক নির্যাতন করলে নিজের পরিচয় যে সমাজে প্রকাশ পাবে, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তো)। একদিন সে আমায় বলে, আমাকে নাকি এখন তার ভালো লাগে না। সে যে রকম মেয়ে চেয়েছিল আমি নাকি সে রকম নই।

আমি যে কাজ করি তা নাকি একজন কাজের মেয়ে রাখলেই করা যায়। সে যে অন্য মেয়েতে আকৃষ্ট, সেটা ঢাকার জন্য আমার যত দোষ বের করা যায়, যতভাবে আমাকে ছোট করা যায় সে করতে শুরু করল। তার মা-বোনদের বললে তারা উল্টো আমাকে দোষ দেয়−আমি নাকি তাদের ছেলের ভালো বউ হতে পারিনি; এ জন্য সে অন্য মেয়েতে আকৃষ্ট হয়েছে (আসলে ভালো বউয়ের সংজ্ঞাটা কী?)। ছেলেদের নাকি ঘরের বাইরে অন্য মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা দোষের কিছু নয়। শুধু বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকিয়েদিন কাটাচ্ছিলাম।

হঠাৎ শাশুড়ি একদিন খবর পাঠালেন। তিনি অসুস্থ। শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দুই দিন পরে আমাকে সেখানে রেখে আমার স্বামী চলে এল। আমার শাশুড়ি একদিন আমার বাবাকে ফোন করে বাসায় ডাকলেন এবং বললেন, আপনার মেয়েকে নিয়ে যান, আমার ছেলে আপনার মেয়ের সঙ্গে সংসার করবে না। কিন্তু তাঁরা আমার কোনো দোষ দেখাতে পারলেন না।

তাঁদের কথা, তাঁদের ছেলের ভালো না লাগলে এখন তারা কী করবেন? ভাবখানা এমন, বাজার থেকে জিনিস কিনে এনেছি, এখন ভালো লাগছে না, তুমি চলে যাও। বারবার চেষ্টা করেও আমরা তাঁদের ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। আমার বাবা বিয়ের সময় আমাকে তিন লাখ টাকার আসবাবপত্র দিয়েছিলেন। তাঁরা সব জিনিসের কথা অস্বীকার করলেন। কারণ আমাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই যে সে জিনিসগুলো আমার বাবার দেওয়া।

কোনো বাবা-মা কি অশুভ কোনো চিন্তা করে এর প্রমাণ রাখেন। উপরন্তু তার মা আমাকে চাপ দিতে লাগলেন, আমি যেন তাঁর ছেলেকে ডিভোর্স দিই, তাহলে আর কোনো দায়ভার পোহাতে হবে না। সে এখন অন্য বাড়ি ভাড়া নিয়ে আমার বাবার দেওয়া জিনিসপত্র নিয়ে ওই মেয়ের সঙ্গে বসবাস করে। আমার তিলেতিলে সাজানো সংসারের কোনো কিছুতেই আমার কোনো অধিকার নেই (শুধু আমার দুটি জামা ও বাচ্চার কিছু কাপড় তখন সঙ্গে ছিল (কারণ কখনোই চিন্তা করিনি বা বুঝতে পারিনি আমার শাশুড়ির অসুখের ভান আর স্বামীর চক্রান্ত)। আইনজীবী তারানা হালিমের পরামর্শে দেখলাম, জিনিসপত্র ক্রয়ের রসিদ রাখতে।

কেউ কি কখনো ভবিষ্যতের খারাপ চিন্তা করে, নাকি এখন সেই চিন্তাগুলো আগে থেকে করে মানুষের বিয়ে করা উচিত। সংসার তো বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে গড়া। সেই বিশ্বাসটা যদি না থাকে, তাহলে জিনিস দিয়ে কী হবে। মা-বাবাদের কাছে আমার অনুরোধ, ছেলেদের ঘরে ফেরানোর জন্য বিয়ে দিয়ে অন্যএকটা মেয়ের জীবন নষ্ট করবেন না। ছেলের বউকে নিজের মেয়ে ভাবতে শিখুন।

নিজের ছেলেবউয়ের সঙ্গে খারাপ আচরণ করলে তা আপনার মেয়ের জীবনেও ঘটতে পারে। আর প্রেমিকাদের কাছে অনুরোধ, প্রেম করার আগে চিন্তা করবেন, অন্যএকটা মেয়ের সংসারে হানা দিয়ে সেই মেয়ের সাজানো সংসারটা তছনছ করে কোনো বাচ্চাকে তার বাবার আদর থেকে বঞ্চিত করলেন কি না। কাউকে ভালো লাগতেই পারে কিন্তু তার মানে এই না যে আত্মকেন্দ্রিক হব। আমার বাচ্চার বয়স মাত্র ১৩ মাস। আমি তাকে ছোট থেকে জানাব, তার বাবা মারা গেছে।

এই সমাজ যেন তাকে আঙ্গুল উঁচিয়েনা বলে, তার বাবা চরিত্রহীন। হয়তো আমার সময়লাগবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে কিন্তু আমি এর জন্য প্রস্তুত। আমি আমার মেয়েকে আমার পরিচয়ে বড় করে তুলব। শুধু নিজের ভেতরটাকে হালকা করার জন্যকথাগুলো লিখলাম। আমার জন্য দোয়া করবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক: নারীমঞ্চ থেকে
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.