অভিজিৎবাবু তার এই আলোচনায় মার্ক্সিজম সম্পর্কে যেসব মতামত রেখেছেন কিংবা মার্ক্সিজমকে বিভিন্ন সেময় যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন সেগুলো পড়তে গিয়ে বারবারই মনে হয়েছে তিনি পরের মুখে ঝাল খেয়ে ঝাল! ঝাল! বলে চিৎকার করেছেন। যেমন: তিনি তার লেখারশুরুর দিকে মার্ক্সিজমকে অবৈজ্ঞানিক প্রমাণ করতে গিয়ে বলেছেন:
“মার্ক্সের প্রতিটি কথাই কিন্তু অভ্রান্ত নয়। এক সময় তার তত্ত্বের অনুরাগীরা কিন্তু সেভাবেই মার্ক্সকে দেখতেন। তারা ভাবতেন, এই মতবাদ এমন এক ‘সত্যের’ উপর প্রতিষ্ঠিত যা থেকে পদস্খলন কখনোই সম্ভব নয়। ঢালাওভাবে তাঁর সমস্ত বানীকে 'বৈজ্ঞানিক' হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিলো।
.....”
অভিজিৎ সাহেব, আপনি মার্কসের কোন কোন এবং কেমন অনুসারীর লেখা বা বক্তব্য থেকে এমন সিদ্ধান্তে আসলেন? আপনি কি মার্কসের ইন্টারপ্রিটেশান সম্পর্কে লেনিনের লেখা পড়ে তারপর এই কথাগুলো বলছেন নাকি আপনার অন্য আরও সিদ্ধান্তের মত এ সিদ্ধান্তটিও আপনি টানছেন লুইস ফয়ের, উইলিয়াম ষ্ট্যানলি, কার্ল মেঞ্জার, বার্টান্ড রাসেল, গিবন এমন কোন বিখ্যাত ব্যাক্তির লেখা পড়ে? যুক্তি যদি বা নাই দিলেন, সূত্র তো দিতে পারতেন!
লেনিন বা অন্য মার্কসবাদীদের কথা বাদই দিলাম, আচ্ছা, আপনি কি, যার বাণীর ভ্রান্ততা/অভ্রান্ততা নিয়ে কথা তুলেছেন, সেই মার্কস তার নিজের এ বিষয়ে মতামত কি সে বিষয়ে একটু খোঁজ খবর করে দেখেছিলেন?দেখেননি, তাহলে সহজেই দেখতে পেতেন কমিউনিষ্ট মেনিফেস্টো প্রকাশের ২৫ বছর পর কার্ল মার্কস ১৮৭২ সালে প্রকাশিত সংস্করণের মুখবন্ধে বলেছেন::
The practical application of the principles will depend, as the Manifesto states, everywhere and at all times, on the historical conditions... for that reason, no special stress is laid on the revolutionary measures proposed at the end of section two. That passage would, in many respects, be very differently worded today. In view of the gigantic strides of Modern Industry in the last twenty five years, and of the accompanying improved and extended party organisation of the working class, in view of the practical experience gained, first in the February Revolution, and then, still more, in the Paris Commune, where the proletariat for the first time held political power for two whole months, this programme has in some details become antiquated. One thing especially was proved by the Commune, viz., that ‘the working class cannot simply lay hold
of the ready-made State machinery, and wield it for its own purposes’.
Quoted by Dr Raj Sehgal, Philosophy Department, Roehampton University
সবচেয়ে বড় কথা, আপনাকে কে বলেছে কিংবা কোন মার্কসবাদীর লেখায় পেয়েছেন যে মার্ক্সিজম কতগুলো "অভ্রান্ত বাণী সমষ্টি" যার কোন একটি 'ভ্রান্ত' প্রামাণিত হলে পুরো মার্ক্সিজমই ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়ে যায়?
অভিজিত সাহেব মার্কসের কল্পিত 'ভবিষ্যত বাণী'র কথা এবং সেই ভবিষ্যত বাণীর ব্যর্থতার কথা বলতে গিয়ে লিখেছেন:
" পুঁজিবাদী শোষণের কারণে 'দেয়ালে পিঠ' ঠেকে গেলে যদি বিপ্লব হয়ে যেত, তাহলে বিগত শতকের ত্রিশের দশকে সারা দুনিয়া জুরে অর্থনৈতিক মন্দার ঢেউ নেমে এসেছিল তখন কেন পশ্চিমে কোন বিপ্লব হল না সে ব্যাপারটি মোটেই বোধগম্য নয়। এরকম উদাহরণ আছে বহু। মার্ক্স তার তত্ত্বে আদর্শবাদী দৃষ্টিকোন থেকে পুঁজিবাদী সমাজের ধংসের ভবিষদ্বানী করেছিলেন, কিন্তু প্রায়োগিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মাধ্যমে পুঁজিবাদি ব্যবস্থা ধ্বংস না হয়ে যে টিকে গেছে – সেই টিকে থাকার পেছনে 'অন্তর্নিহিত বিবর্তন'টি গোনায় ধরেন নি, কিংবা ধরতে চাননি। "
'ভবিষ্যত বাণী' কথাটি বোধ হয় ইচ্ছাকৃত ভাবে ব্যবহৃত যেন মার্কসকে সহজে ধর্ম নেতা বা নবী রাসূলের সাথে তুলনা করা যায়। মার্কস যেটা করেছিলেন সেটা হলো প্রেডিকশান, কোন দিনক্ষণ ঠিক করে গণকের মত ভবিষ্যত বাণী নয় ।
তাও আবার মোটেই কোন আদর্শ বাদী দৃষ্টি ভঙ্গিতে নয়, যেমনটি অভিজিত দাবী করেছেন। আর সে প্রেডিকশান এর শর্ত যে কেবল শোষণের ঠেলায় শ্রমিকের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া নয়.... মার্কসের মনোযোগী পাঠক মাত্রই তা জানেন।
মার্কস তার সময়ে পুজিঁবাদকে যেভাবে এবং যে মাত্রায় বিকশিত হতে দেখেছেন এবং সে বেড়ে উঠার মাঝে যেসব অর্ন্তদ্বন্দ্ব দেখেছেন তার বিশ্লেষণের মাধ্যমেই পুজিঁবাদের বিনাশের একটি প্রেডিকশান করেছিলেন।
কিন্তু তা মোটেই শর্তহীন কোন বেদবাক্য ছিলনা কিংবা তার ভিত্তি কেবল দেয়ালে পিঠ ঠেকা নয় । তিনি পুজিঁবাদের অন্তর্দ্বন্দ্বজাত কতগুলো প্রবণতা চিহ্ণিত করেছিলেন সেগুলো হলো:
১)ক্রমশ হ্রাসমান মুনাফার হার
২)পুজিঁর ক্রমাগত কেন্দ্রীভবন
২) সর্বহারার সংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি
মার্কসের দৃষ্টিতে এই প্রবণতার ফলে পুজিঁবাদ প্রতিনিয়ত সংকটের জন্ম দিতে থাকে।
এই সংকটের অনেক গুলো প্রকাশের একটা হলো শ্রমিকের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়া । এই সংকটগুলো পুজিঁবাদ বিনাশের অবজেক্টিভ সম্ভাবনা তৈরী করে কেবল, নিজে থেকেই বিনাশ করে দেয় না। এরজন্য প্রয়োজনীয় সাবজেক্টিভ প্রিপারেশানগুলো সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন ক্যাপিটালের ভলিঅম ১, অধ্যায় ৩২ এ Historical Tendency of Capitalist Accumulation অংশটিতে। তাছাড়া তিনি The Civil War in France লেখাটিতে পারি কমিউনের শিক্ষা নিয়ে বলেন:
The working class did not expect miracles from the Commune. They have no ready-made utopias to introduce par decret du peuple. They know that in order to work out their own emancipation, and along with it that higher form to which present society is irresistably tending by its own economical agencies, they will have to pass through long struggles, through a series of historic processes, transforming circumstances and men.
সুতরাং অবজেক্টিভ কন্ডিশান এবং সাবজেক্টিভ প্রিপারেশান যথোপযুক্ত না হলে তা সে যতই সংকট বা মন্দার জন্ম দিক না কেন পুজিঁবাদ বহাল তবিয়তেই থাকবে।
আবার মার্কসের জীবদ্দশায় ঘটা পুজিঁবাদের কোন্ অন্তর্নিহিত পরিবর্তনকে মার্কস 'গোনায় ধরেন নি, কিংবা ধরতে চাননি' বলে অভিযোগ করেছেন অভিজিত সে বিষয়টি পরিস্কার নয়।
নাকি তাঁর জীবদ্দশার পরবর্তীতে পুজিঁবাদের সাম্রাজ্যবাদের স্তরে রুপান্তর এবং তার ফলশ্রুতিতে বিশ্ব পুজিঁবাদের নব অবস্থানের প্রেক্ষিতে কেন মার্কস এর 'ভবিষ্যত বাণী' সফল হলো না সে জন্য তার এই ক্ষোভ!
ক্ষুব্ধ হওয়ার কিছু নেই অভিজিত, মৃত মার্কস ধ্বংস না হয়ে টিকে থাকা পুজিঁবাদের টিকে থাকার অন্তর্নিহিত বিবর্তনটি গোনায় না ধরলেও মার্কসের একজন উত্তরসূরী লেলিন তার Imperialism, the Highest Stage of Capitalism গ্রন্থে এবিষয়টি আলোচনা করেছেন। আসুন দেখি আপনার ব্যাবহৃত Wikipedia এর লেনিনিজম বিষয়ক ভূক্তিটি এ বিষয়ে কি বলছে:
Lenin developed a theory of imperialism aimed to improve and update Marx's work by explaining a phenomenon which Marx predicted: the shift of capitalism towards becoming a global system (hence the slogan "Workers of the world, unite!"). At the core of this theory of imperialism lies the idea that advanced capitalist industrial nations increasingly come to export capital to captive colonial countries. They then exploit those colonies for their resources and investment opportunities.This superexploitation of poorer countries allows the advanced capitalist industrial nations to keep at least some of their own workers content, by providing them with slightly higher living standards.
For these reasons, Lenin argued that a proletarian revolution could not occur in the developed capitalist countries as long as the global system of imperialism remained intact. Thus, he believed that a lesser-developed country would have to be the location of the first proletarian revolution. This was an open revision of Marx's thesis that such a revolution could only occur in a developed capitalist country. A particularly good candidate, in his view, was Russia - which Lenin considered to be the "weakest link" in global capitalism at the time. At the time, Russia's economy was primarily agrarian (outside of the large cities of St. Petersburg and Moscow), still driven by peasant manual and animal labor, and very underdeveloped compared to the industrialized economies of western Europe and North America.(emphasis মন্তব্যকারীর)
এখন দেখুন আপনার উল্লেখিত ধর্মপ্রচারক মার্কস সাহেবের একজন প্রধান সাহাবা কেমন করে তার মূল বাণীকে improve and update করছে এমনকি উল্টো কথাও বলছে!!
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।