আমাদের এ পরিচিত পৃথিবীর যেকোনো গ্রামীন পথ-কে সভ্যতা যখন পরিয়েছিলো পীচের পোষাক,মানুষের শ্রমের স্হানে যখন যন্ত্রের অনুপ্রবেশ-তারও অনেকদিন পর অভিজিতের পাশে দাড়িয়ে আমিও দেখি বাণিজ্যের দুয়ারে মানুষের অস্তিত্বের অনুপ্রবেশের কতইনা ব্যার্থ প্রচেস্টা,সীমান্তে সীমান্তে সৈনিকের সতর্ক প্রহরা,ক্যামোফ্লেজের সবুজ। আমিও অভিজিতের পাশে দাড়িয়ে লক্ষ্য করি "নিগ্রো পরীর হাতে কামরাঙা কেমন সবুজ" হতে পারে। সভ্যতার এতসব ব্যার্থতার পরও কিন্তু একদম থেমে থাকেনি একেবারে সীমান্তে দাড়ানো গাছটির শাখায় একটি পাখীর অবিলুপ্ত গান। নাকি তাকেও নাগালের বাইরে রাখার চলছে ষড়যন্ত্র!
কবি অভিজিত দাসের এই ২০০৮ বইমেলায় নব্যপ্রকাশিত ও কবির প্রথম কাব্যগ্রন্হটির নাম হলো 'নিগ্রো পরীর হাতে কামরাঙা কেমন সবুজ'। কে এই নিগ্রো পরী?যে কিনা কামরাঙা সবিশেষ রঙে নিজেই বিলুপ্ত!এই নিগ্রো পরী কি অবহেলিত জনপদের কোনো বাস্টার্ড বেবীর গর্ভবতী মা নয়?এ নিগ্রো পরী কি কোনো এক ধর্ষিত নারী,যার মুখে মেখে গেছে সমাজের কালিমা?তার হাতে যে কামরাঙা,সেটা কোন বিষবৃক্ষের ফসল?নাকি এ নারী শুধুই একটি চিত্র?রুপকে,উপমায়ই যাকে পাওয়া যায়-পাঠক এ বিষয় নিজেই উপলব্ধি করেন,আত্নবিবৃতি দেন ও ঢোক গিলে ফেলেন অজান্তেই!
অভিজিৎ-এর প্রথম বইয়ের এ কবিতায় আমি আমাদের নগ্ন শৈশবের টাটকা গল্পের আভাস পাই।
স্ট্যাটাসপ্রার্থী মাতাপিতা,এই নগরের মাঝে সম্পর্কহীন হয়ে বেড়ে ওঠা,মুনাফালোভী বিক্রেতার মন,প্রান্তিকদের অভাবটুকু জেনেশুনে সম্পর্কের বেলায় সযত্নে দুরে থাকা-ইত্যাদি এইসব দেখে তীর্যক দৃস্টি হেনে যে সগতোক্তি করার সাহস রাখে সে হলো কবি। তবে আমি তাকে নাগরিকদের সমস্ত ব্যার্থতার দায়ভার বহন করতে বলি না। তাকে আমি নাগরিক বোধাক্রান্ত কবিও বলতে চাইনা। সৃজনশীল হলেই কবিদের মাঝে এইসব ক্যাটাগরি করা আমার কাছে কোনো অর্থ নিয়ে আসে না।
বেবিফুড!আহা,প্রথম সন্ততি,
হাইব্রীড সোনামনি আদরের!
বাজার প্রসংগে কথা উঠলেই
মনে পড়ে,ক্রমশই মাতৃদুগ্ধে
পড়ে যাচ্ছে টান-
তোমাকে প্রায়শ দেখি
ঠোট উল্টে বসে থাক
মার বুক ছুতে পাওনা বলে!(নাগালের বাইরে রাখুন,পৃ:১৯)
এ চিত্রটি তো অতি স্বাভাবিক ঠেকে আমার কাছে।
আমাদের নাগালে থাকেনা কিছুই। মাতৃদুগ্ধ হতে শুরু করে শিশুদের প্রিয় বিষয়গুলোকে শিশুদের প্রিয়জনেরা অপ্রিয় করে তোলেন। মাতৃদুগ্ধ তো বটেই অনেক সময় মা-তো নিজেই চলে যান নাগালের বাইরে!মাতৃবিয়োগের পর অভিজিতের কবিতায়ও এ বিক্ষোভ দেখি-বইটির উৎসর্গপত্রে অভিজিৎ লিখেছেন,
"আমার মায়ের মৃত্যুকে মহিমান্বিত করে
কিছু লিখতে পারি নি........
আজও মনে হয় নিজেকে দুমরে মুচরে
মাতৃগর্ভে ফিরে যাই......
সবকিছু অস্বীকার করে প্রাথমিক স্টেজে ফিরে যাবার প্রবণতা অভিজিতের কবিতায় বেশ দেখতে পাই। সংগ্রামে জড়াতে চাননি কবি,তবে কি পিছু হটে যেতে চান?নস্টালজিয়া?নাঃ কোনো শব্দ-ই অভিজিতের কবিতার লেবেল লাগানোর মতো নয়। আমি একে সরল অর্থে পিছু ফিরে যাবার আকাঙা বলতে চাই।
হ্যা,আকাঙাই বটে,যেখানে সকল তাত্বিক বিশ্লেষন,যুদ্ধ ,পরাজয় ইত্যাদির উপর বিরুপ হয়ে মানুষ পলায়ন করতে পারেনা,একে স্হবিরতা বলি,যাকিনা কর্পোরেট পৃথিবীর জন্য একপ্রকার পশ্চাৎযাত্রা-ই বটে। বরঙ স্হবির হলেও তা একইসাথে আরেকধরণের আগুয়ান রুপ। আর এ কারণেই এ রিভার্স টেকনিকটিকে একধরণের রোমান্টিক আকাঙ্খা বোধহয় বলা যায়। তবে আমার কাছে এ রিভার্স করে পেছেনে যাওয়ার পদ্ধতিটি বেশ নতুন ঠেকে। যেমন:
"আর আমি অগ্নিকুন্ড হতে বেড়িয়ে এসে
কম্পমান পথে এক পায়ে লাফিয়ে অন্য
পায়ের মোজার সন্ধানে আঁতুর ঘরের দিকে
ফিরে যাব পুনরায়....(অনন্তের ছায়াপথে,পৃ:১১)
অভিজিৎ যেন দীর্ঘকাল ধরে ফেরার পথেই হেটে চলেছে।
অগ্রযাত্রার চাইতে তার কাছে যেন ফেরার পথটিকেই বেশি বিপদসঙ্কুল মনে হয়!
"ফেরার পথগুলো কেন এত ঢালময়
যাবার সময় এ কথা তো বলে দাওনি কেউ। .....
...না গিয়েই ফিরে এসে বলি:
'ঝরা পাতা গো,আমি তোমারি দলে' "(শেষ লাইনটি রবীন্দ্রনাথ হতে "কোট" করা)
ফেরার পথ,৩৪পৃ:
অভিজিতের এই উপস্হাপনটি আমার কাছে বেশ নতুন বলেই মজা লাগে। তার শরীরের হারানো সমস্ত সভ্যতার চিন্হ খুঁজতে গিয়ে সে কি বারবার ফেরত যাবে জন্মের নিকটে?বারবার সেই একই প্রশ্ন ফিরে ফিরে চলে আসে। তার এ সমস্ত গাত্রোত্থান বুঝি মেট্টোপলিটন শহরের সোডিয়াম লাইটের প্রতিভাকে নাড়া দেয়। ল্যাম্পপোস্টের দেহে যেসব শীতলতা আছে তা থেকে যায় অভিজিতের বিবর্ণ পকেটে।
চন্দ্র আর উজ্বল সোডিয়াম আলোর মিশ্রণের ভুতুরে পৃথিবীর রাত্রিকালীন উৎসবে অভিজিৎ কি এখনো খুঁজে চলছে সেই মোজা কিংবা দুইযুগ আগের সেই লালা ঝরবার কাপুড়ে ঝুড়ি?
"নিজের জন্মের দুইযুগ পরে প্রসুতিসদনে গিয়ে দেখি
এক প্রবীন দর্জির কারখানা। ....এই দর্জিকে আমি শৈশবে দেখেছি
লালা ঝরবার কাপুড়ে ঝুড়ি বানাতে...
...একজন প্রবীন দর্জি সেলাই করছেন শবদেহের
পরিধেয় জীবাশ্ম দিয়ে তৈরি মৃত্যুর ইউনিফর্ম। "(ইউনিফর্ম,পৃ:৭)
কে এই প্রবীন দর্জি যে কিনা অনাগত শিশুর ভবিষ্যৎ সভ্যতা নিয়ে ভাবিত?আবার সে-ই কিনা মানুষের অনাগত মৃত্যুর ইউনিফর্ম তৈরি করছে!পাঠক নিশ্চয়ই আমার সাথে সাথে এ কথা বুঝে ফেলেছেন যে এ দর্জিকে আসলে সমাজ,সভ্যতা,নগরায়ন ইত্যাদি নামে অভিহিত করা যায়। এই প্রবীন দর্জির পোষাক আমরা চিরকাল স্বেচ্ছায় হারাই,আবার অনিচ্ছায় অনিচ্ছায় খুঁজে ফিরি সেইসব সভ্য পোশাক!
মৃত্যুচেতনা চোখে পড়ে অভিজিতের কবিতায়। অথবা অভিজিতের কবিতার মৃত্যুচেতনার চোখে পড়ে যাই আমি!
"আজ আমার মৃত্যুদিন;সবার ঘরে একটি করে শ্মশান জ্বলুক!(মৃত্যুদিন,পৃ:৯)
অথবা
"মরিব না মরিব না করে
কন্ঠ তুলে,খোলা
তোমাদের জানিয়েছি,আছে মনে?
প্রত্যক্ষ মৃত্যুর সুর বাজে
পাথর সমান বাজে
বেজে ওঠে ধুলিরক্তজলে"(কৃষ্নোন্মুখ রাখালেরা,পৃ:২৯)
আমার তো মনে হয় আমরা প্রতিটি মুহুর্তেই মারা যাচ্ছি,মানসিক বিচারে আমাদের যাপিত জীবন হলো এক একটা মৃত্যুর নৈসর্গিক রুপ,সেখানে নৈরাজ্য উপস্হিত,অভাব উপস্হিত কেবল অনুপস্হিত ও উহ্য থেকে যায় ব্যাক্তি নিজেই।
অভিজিতের কবিতাশরীরে মেখে আছে নিজস্ব শৈশব। মনুষ্য ও কবিজীবন কি আলাদা কিছু?আলাদা হোক আর না হোক শৈশব হলো কবিজীবনের প্রাককথা। তাই শৈশবকে দেখি অভিজিতের মীমাংসায় মীমাংসায় ও বর্তমান জিঘাংসায়;
"শৈশবের লজ্জা-খুশি-মহাকলরব
সমস্ত দৌড়ের ছাপ,মাঠেই হারানো মুখচ্ছবি,
ওড়াওড়ি-"(কৃষ্নোন্মুখ রাখালেরা,পৃ:৩১)
আরো দেখি
"কাপুড়িয়া পট্টি জুড়ে
রোজ রোজ আমার জন্মোৎসব!"(কাপুড়িয়া পট্টি ও আমাদের পোশাক পরিবার,পৃ:৪১)
প্রেমবোধ রসায়নে অভিজিতের কবিতা বিপুল কম্পমান। তবে এ প্রেম কি প্রেমাস্পদের প্রতি,নাকি আত্নিক বা আত্ন-আলোরণের মতো প্রেমবোধ তা নিয়ে একটু সংশয় রয়েছে। পাঠকই বিচার করুন না এ লাইনগুলো
"এখনো শরতে আমি তোমার চাইতে প্রিয় কোন
মুখ দেখি না তো-মন্ডপের ভিড় ঠেলে
সপ্তমী সন্ধ্যায় ও হে ভুবনেশ্বরী আজো খুঁজে যাই
বেগুনী রঙের মায়া সম্মোহনী পূজোর পোশাক"(মাহামায়া,পৃ:৪৬)
"আমার অসহায়ত্ব তোমার সহায় হয়ে যায়!(বৈপরীত্য২,পৃ:৪৭)
"কেউ ঢিল না ছুড়লেও
একটি পাখি কিন্তু ঠিক উড়েই যাবে!
অপর পাখিটি বসে থাকবে ঠায়।
(নিঃসঙ্গতার রঙ,পৃ:৫৯)
অথবা
‘সেইদিন আমার পাজর যদি প্রেমের চুল্লিতে
জালানীর উপযোগী হয়...(আলখাল্লা পরিহিত প্রতিবিম্বের অব্যক্ত প্রলাপ,পৃঃ২৭)
নাগরায়নের কাঠামোতে কবি বোধহয় একটু বিচ্ছিন্ন থেকে যেতেই পছন্দ করেন। এ বিচ্ছিন্নতার মানে এই নয় যে কবি শিল্পের জন্য শিল্প মত মেনে ক্ষান্ত দিয়েছেন সমাজের দিকে দৃস্টি দেবার বিষয়ে। বরঙ আমার মনে হয় আর আর আট-দশজন নাগরিকের মতো করে কবিও একজধরণের অস্তিত্বের অস্বস্তিতে ভোগেন। বলা বাহুল্য কবির মতো বিরোধী ও মৌলিক ব্যাক্তিত্ব কোনো সার্বিক কল্যাণের দাস হতে রাজী নয়। অভিজিতের কবিতাতেও আমি দেখেছি এ সংকট।
পুরো কাব্যগ্রন্থটি পাঠক যদি ভালোভাবে পড়েন তবে দু ধরনের কবিতা চোখে পড়ে।
১। তিরিশীয় শাব্দিক প্রভাব সম্বলিত কবিতা। ও
২। হাল আমলের বোধগত কাব্যনিরীক্ষা।
আবার ব্যাপ্তির দিক দিয়ে আরো দু প্রকার কবিতা আমি পাই।
১। প্রচলিত কবিতা।
২। দীর্ঘ কবিতা।
(চেতনানগর এক্সপ্রেস,পৃ:২৩,কৃষ্নোন্মুখ রাখালেরা,পৃ:২৯,ডুমোচরে ডুবোগান,পৃ:৩৭)
তবে এ চারপ্রকার কবিতার একপ্রকার মিশ্রণ আছে বলে তা সাধারণভাবে ধরা না-ও পড়তে পারে। আমার মনে অভিজিতের দীর্ঘ কবিতা নিয়েই একটা আলোচনা হতে পারে। আলোচনা দীর্ঘ হয়ে যেতে পারে বলে সেদিকে যাবনা বরঙ ফিউশন বিষয়ে একটাই উদাহরণ দেই। 'অরণ্যে হলুদ সাইকেল' কবিতায়
অভিজিৎ তিরিশের শাব্দিক ঢং ও সমসাময়িক কাব্যবোধের একপ্রকার ফিউশন করেছেন। প্রথম ন'টি লাইন দেখলে তিরিশের সুধীন,জীবনানন্দ বা দুরবর্তী রবীন্দ্রনাথের সুর কি একটু পাওয়া যায়?
"স্ফুরণক্ষম,তোমার বল্গা দ্যুতি ঢেউ
ঝাউবনে মেঘ-পত্রপল্লবীর অগ্নিময় ছাচে
কুয়াশামন্ডিত কম্পমান........(অরণ্যে হলুদ সাইকেল'পৃ:১৩)
-তাইনা?আবার দশম লাইনে দেখুন-
".....অভিমুখে
হরণের প্রণতিপিয়াসী গানে
তবু আমার মুখের কয়েক খন্ড প্রচন্ড ব্লেড
অসাধ্য মমতা নিয়ে কেটে নেয় তন্ময়তা
করুণ ও বিমর্ষ লালসায়।
(অরণ্যে হলুদ সাইকেল'পৃ:১৩)-ঠিক এখান থেকেই কবিতাটি যেন তিরিশের শাব্দিক মাধুর্যের ঢং ও বর্তমান সময়ের কাব্যকলার বোধ ও নির্মাণশৈলির মাঝে কোলাজ তৈরি করে। তবে পুরোটিই নিরীক্ষাধর্মী বলে মনে হয়। দক্ষ কাজ নিঃসন্দেহে,তবে মনে হয় যেন আরেকটু পরিশ্রম প্রয়োজন ছিলো।
অভিজিতের সবগুলো কবিতা পড়ার পর আমার মনে হলো অভিজিৎ পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন অনেক। অভিজিতের সম্প্রিতি লেখা কবিতা বইতে বেশ কমই ছিলো,কেননা বিভিন্ন লিটলম্যাগে পূর্বপ্রকাশিত বেশিরভাগ কবিতাই বইতে স্থান পেয়েছে-যা আমি আগেই পড়েছিলাম।
অভিজিতের সাম্প্রতিক যে লেখাগুলো বইতে পড়লাম সেগুলো আবার কোনো দুরের বিষন্ন গানের মতো করে লেখা যেগুলোতে স্পস্ট মেলোডি রয়েছে বলে আমার মনে হয়। তো অভিজিতের আগের কবিতাগুলোর পরিক্ষার জায়গাগুলো কিন্তু সেগুলোতে নেই। তবে কি অভিজিতের কাব্যনিরীক্ষা শেষ?তা কি নতুন কোনো মাত্রা পেয়েছে?
আরো একটা প্রশ্ন আসে সেই সুত্র ধরে,সেটা হলো। বোধের প্রকৃস্টি কি শাব্দিক প্রকৃস্টি হতে আলাদা?অভিজিৎট কি এ প্রশ্নে তাড়িত?যদি তা না হয় কেবলমাত্র শব্দনীরিক্ষা অর্থ বহন করতে পারে। আমার মনে হয় শুধুমাট্র শব্দই কবিতা হতে পারে না।
এর সাথে জড়িত রয়েছে ব্যক্তির ব্যাক্তিত্ব ও কবির কবিত্ব।
তবে আমিও অভিজিতের মতো আমাদের এসমাজ ও ব্যাক্তিবর্গের কাছে বলতে চাই যে
"আমার অসহায়ত্ব তোমার সহায় হয়ে যায়"।
মগ্নচৈতন্যে বসিয়া কবি অভিজিৎ দাস।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।