সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কইছিলেন মেলা আগে, বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য- এই আমাদের ভারতবর্ষ। ভারতবর্ষ তখন রাষ্ট্র আছিল না। আছিল, ইংরেজের ইনডিয়ান এমপায়ার। ভারতবর্ষ যে শতখণ্ডের বিভাজিত হইতে পারে, এইটা নিয়া চিন্তক, বিদ্বৎ সমাজের মধ্যে টেনশন আছিল।
তাই তারা ভারতবর্ষের সংস্কৃতি একই সংস্কৃতি বইলা প্রচার করছিলেন। আর এই ধরনের শ্লোগান তৈরি কইরা বাজারে ছাড়ছিলেন। ইনডিয়ান প্রচার মাধ্যমে এখনও কবি রবীন্দ্রনাথের সুরে সুরে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের ধূয়া উঠে। বঙ্কিমচন্দ্রের বন্দে মাতরমও উঠে। ইকবালে, জারে জাহাঁ ছে আচ্ছাও গাওয়া হয়।
ভারতবর্ষ থেকে ভারত হইতে গিয়া কোনো রাষ্ট্র আসলেই সম্ভব হইছে কি না, সেইটা আনে হুয়া কালই বাতাবে। কিন্তু দুষ্ট লোকে বলে, বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের হাইথট ধারণা এই কর্পোরেট মিডিয়ার যুগে কেউ খায় না। তাই ভারতের ঐক্যের প্রতীক নাকি ইনডিয়ান ক্রিকেট আর বোম্বাই সিনেমা। ইনডিয়ান ক্রিকেট ও বোম্বাই সিনেমাই নাকি ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ঐক্য মজবুত কইরা রাখছে। কথাটায়, নাটক আছে, তার থেকে বেশি আছে সত্য।
ক্রিকেটের সঙ্গে জাতীয়তাবাদের সম্পর্ক না থাকলে ইনডিয়ান দল হারার পর ধোনীর বাড়িতে হামলা হয় না। আবার টুয়েনটি টুয়েনটিতে জিতার পর সেই ধোনী আবার সম্রাট হয়ে যায় না। বিজ্ঞাপনে, আহারে বাহারে ক্রিকেট তারকা আর বোম্বাই তারকাদের শোর দেখলে বুঝা যায়, ইনডিয়ান কর্পোরেট জাতীয়তাবাদ কই যাইতেছে। ভারতে এখন সিং অ্যান্ড সোনিয়াই কিং ও কিং মেকার। কাল এইখানে আদভানী আসতে পারে আবার সিতারাম ইয়াচুরিও আসতে পারে।
কিন্তু ভারতে বাদশাহ বলতে বচ্চন, কিং বলতে শাহরুখ, মহারাজ বলতে সৌরভদের বুঝানো হবে। কর্পোরেটের বাদশাহীতে এনারাই নয়া ভারতের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর।
সে তুলনায় আমরা মেলা পিছায়ে, বাংলাদেশের মানুষের ঐক্যের সমস্যা নাই। তাই জাতীয়তাবাদের প্রচারণাও ঢিলাঢালা। তবু জাতীয়তাবাদ আছে।
আমাদের সিনেমা আর ক্রিকেটের অবস্থা মোটামুটি একই। সেই কবে একবার জিতছিল, মনে করা দুষ্কর। তবু নতুন খেলা শুরু হইলে মাইনষের মনে যে উচ্ছাস দেখি সেইটা দেখলে ভাল লাগার কারণ থাকে। কিন্তু বুঝা যায়, এইটা ইনডিয়ান মিডিয়ার বাংলাদেশী প্রভাব। লোকে ক্রিকেট ভালবাসে বটে।
দল ভাল খেলুক তাও চায়, কিন্তু দল তো রেডি না। তাই একটু সাফল্যে মানুষের শোরগোল ক্যাটগুলারে টাইগার বানায়ে ছাড়ে। ক্যাট যখন টাইগার উপাধি পায়, তখন তার অবস্থা কী হয়? সে শিকার করে? আমার মনে হয়, মাছের কাঁটা খুঁজতেও ভুলে যায়।
আমাদের হইছে সে অবস্থা। কতদিন ধইরা দেখতেছি, আশরাফুলের দল হারতেছে তো হারতেছেই।
উন্নতির কোনো লক্ষণ নাই। দলে কোনো রদবদল নাই। হাবিবুল বাহার থেকে কাপালি পর্যন্ত বহু খেলোয়াড়রে বসাইয়া রেখে বা লো প্রোফাইলে খেলানো হইতেছে। এ নিয়া খুব বড় কথা হয় নাই। এখন ওরা আইসিএলে গেল।
অমনি গেল গেল রব পইড়া গেল। ওরা যদি এখনই ফেরে তাইলে কি ওদের দিয়া খেলানো হবে?
ওদের সদব্যবহার হবে? বাংলাদেশ দল উন্নতি করবে?
ক্রিকেটে নানা দেশের দলগুলা, নির্বাচকরা, স্পন্সর, ব্রডকাস্টার অমুক তুমক মিলে যে কর্পোরেট রাজ তৈরি করছে তার বিরুদ্ধে অলটারনেটিভ ক্রিকেট তো দাঁড়ানো দরকার। হারজিতের খেলার সাথে জাতীয়তাবাদের এত মাখামাখির দরকার কী? সবাই তো আমরা জানি, জাতিকে মাতাইলেও মূল কথা হইলো বিজনেস। এইখানে আইসিএল বিজনেস করলে আমাদের সমস্য কোথায়?
হাবিবুলদের দশবছরের জন্য বহিষ্কার করে বিসিবি খুব খারাপ কাজ করছে। তারা নিজেদের ব্যর্থতার প্রতিশোধ নিছে এই ক্রিকেটারদের ওপর।
অথচ এই ব্যর্থতার জন্য তাদেরই উচিত আছিল, পদত্যাগ করা এবং মাঠে ও ম্যানেজমেন্টে সাম্প্রতিক ব্যর্থতাকে শিকার করা।
বিসিবি যদি হাবিবুলদের চ্যালেঞ্জটা নিতো, তারা যদি জাতীয় দলকে প্যারালালি শক্তিশালী কইরা সামনের খেলাগুলাতে সাফল্য আনতে পারতো তাইলে একটা ভাল ফল হইতো। আমার ধারণা, হাবিবুলরাও চ্যালেঞ্জটা নিতে পারে। ঢাকা ওয়ারিয়র্স যদি আইসিএলে ভাল খেলে তাইলে আমাদেরই সুনাম। আমরা চাই তারা খেলুক।
ভাল খেলুক। ব্যর্থ নির্বাচক আর ম্যানেজমেন্টের আওতার বাইরে যদি তারা সাফল্য দেখাইতে পারে, তাইলে দেশের মানুষ এদের নিয়ে নতুন করে ভাবতে। যারা দশ বছরের জন্য বহিষ্কার করছে। তারাই তখন দশ ঘণ্টার মধ্যে বহিষ্কারাদেশ তুইলা নিতে পারবে।
আমি খেলা বিষয়ে সম্পূর্ণ বেখবর একজন লোক।
জীবনে কোনো খেলা দেখি না। এ পর্যন্ত পত্রিকার খেলার পাতার কোনো আইটেম পড়ি নাই। কিন্তু খেলা কথাটা আমার ভাল লাগে। খেলাচ্ছলে কিছু জিনিশকে দেখতে পারলে আখেরে ভাল হয়, এইটা বুঝি। এইটাও বুঝি স্পোর্টের সাথে মেলা মানুষ জড়িত যারা কোনো জিনিশকেই স্পোর্টলি নিতে পারে না।
প্লেফুলনেস তাদের মধ্যে থাকে না। ফলে, খেলা নিয়া নানা রকম গেম চলতে থাকে। এইগুলা ঠিক না।
খেলা বিষয়ে মুর্খ একজন লোক হিসাবে আমার ভুল-ভ্রান্তি ধরায়ে দিলে উপকৃত হবো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।