গলাবাজ আর সত্যিকারের লেখক এই ব্লগে টিকে থাকে, আমি কোনটাই না
ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় আমার সত্যিকারের পাখা গজিয়েছিলো। না না ব্যাপারটা এমন নয় যে বখে গিয়েছেলাম, নেশা করে পড়ে থেকেছি, এরকম কিছুই না। তবে স্বাধীনতার স্বাধীন ব্যবহারের মাত্রা ছিলো চরমে। এসএসসি পর্যন্ত যে ভালো ভালো টাইপের জামাটা গায়ে ছিলো,আস্তে আস্তে সেটা ছেড়ে অন্য ফ্যাশনে অভ্যস্ত হতে থাকি।
ফার্স্ট ইয়ারে প্রধান কাজ ছিলো প্রাইভেট টিউশনির নামে সাইকেল নিয়ে বন্ধুর বাসায় আসা, পড়ার সময় টুকু বাদে বাকিটা পুরোটাই সাইকেলে চড়ে এলাকা ভ্রমণ, দিনে একাধিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলা, ছাদে বসে আড্ডা দেয়া, প্রিয় দোকানের ২ টাকা দামের সমুচা খাওয়া, হোমওয়ার্ক না করার নিয়মিত মহড়া, বিকাল বেলায় হেটে হেটে কোন আকর্ষনীয় মুখের খোঁজ করা আর আম্মার নীতিবাক্য শোনা।
এভাবে যখন একটা বছর পার হয়ে গেলো তখনও পরীক্ষার খাতায় কিছু লেখার মতো যোগ্যতা হয়ে ওঠেনি। এরই মধ্যে কলেজের মিড টার্ম পরীক্ষায় প্রায় সবগুলো সাবজেক্টে অসাধারণ প্রতিফলন ঘটেছে দৈনন্দিন রুটিনের। প্রিয় শিক্ষক আর অভিভাবকই শুধু না আমি নিজেও তখন কিছুটা ভয়ে শংকিত।
বাসায় বিশেষ মিটিং করে আমার চকচকে ভবিষ্যতের লক্ষ্যে আমার জন্য একজন তৎকালীন বিআইটির স্টুডেন্ট কে ঠিক করা হলো। তিনি কিছুদিনের ভিতরেই আমার হাল দেখে ঘাবড়িয়ে গেলেন।
আমার শ্রদ্ধেয় আম্মা তো ঘোষনাই দিলেন, এসএসসিতে পার পেয়েছিস ভালোভাবে, এবার যা শুরু করেছিস তোর ফেল করা কেউ ঠেকাতে পারবেনা। আমিও প্রায় বিশ্বাস করা শুরু করলাম আম্মার এই বাণী।
এভাবেই সময় বাবাজি আমাকে টেনে পরীক্ষা বাবাজির কাছে এনে ফেললো। পড়িমড়ি করে জান মান ইজ্জত বাঁচাতে পরীক্ষা সব শেষ ও করে ফেললাম। একসময় সেই রেজাল্টের দিনও ঘনিয়ে এলো।
একা আমি কলেজের গেট দিয়ে ঢুকলাম নিজের পরিণতি দেখার আশায়। খারাপ করেছি জানি, কতোটা খারাপ করেছি সেটার স্বীকৃতি তো চাই।
তারকা পাইনি, কোন বিষয়ে চিঠি পাইনি, তবুও কেমন করে যেন সাত শতকের ঘরটা পেরিয়ে গেলাম। আমার আম্মাজান এতেই খুব খুশী, ফেল করতে করতে ছেলেটা বেঁচে গেছে। আমার চারপাশে কেউ অনেক ভালো করেছে, কেউ অনেক খারাপ করেছে প্রত্যাশার চেয়ে।
তারপর অনেক সময় গড়িয়েছে, সময়ের সাথে কিছু অনুভুতি জমা হয়েছে আমার ভিতরে। আজ এইচএসসির ফলাফল, প্রতিবছর বের হয়, কেউ ভালো করে কেউ খারাপ করে। তাদের জন্য সেই একান্ত অনুভুতিগুলো শেয়ার করতে ইচ্ছা হলো।
-এই পরীক্ষাগুলো অনেক গুরুত্ব বহন করে আমাদের জীবনে, কিন্তু তাই বলে এগুলোকে জান পরান ভেবে অনেকেই তাদের স্বাভাবিক নৈপূন্যও দেখাতে পারেনা।
-সবাই ভালো করতে চায়, কিন্তু একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, প্রত্যেকটা মানুষের বৈশিষ্ট আলাদা, তাই শুধু তুলনা না করে নিজের যোগ্যতার বিচারে ফল চাওয়াই শ্রেয়।
-খারাপ করলে প্রথমেই যেটা হয়, আমরা অনেক বেশি প্রতিক্রিয়া দেখাই, যার ফলে পরের পদক্ষেপগুলোতে ও খারাপ করে ফেলি, যেটা মোটেও করা উচিত না।
-সবার উচিৎ প্রথমে নিজের ঐকান্তিক চেষ্টা, চেষ্টা অর্জিত মেধা, সাথে প্রাপ্ত মেধা এবং সর্বোপরি ভাগ্য সবগুলোকেই মাথায় রাখা এবং কোনটার অভাবে অন্যগুলোকে অযত্ন না করা।
-আত্নবিশ্বাস না থাকলে অনেক মেধাও হারিয়ে যায়, তাই নিজের সম্পর্কে পজিটিভ ধারণা নিয়ে সামনে এগুনোর চেষ্টা করা।
-আরেকটা কথা কখনোই ভুলে যাওয়া ঠিক নয়, লক্ষ্য স্হির করে এগুলে কিছু না কিছু অর্জন লাভ হয়ই।
কথাগুলো ঠিক নীতি বাক্য না অনেকটা সাহস জোগানোর জন্য বলা যেতে পারে, যারা এবার পরীক্ষা দিলো কিংবা সামনে দিবে।
হয়তো অনেক সুন্দর পয়েন্ট বাদ থেকে গেছে, তাই আপনারা চাইলেই সেটা লিখতে পারেন, সানন্দচিত্তে সেগুলো সংযোজন করা হবে।
শেষ করার আগে যারা এবার সাফল্যের সাথে এইচএসসি উত্তীর্ণ হলো আর যারা পারেনি সবার জন্যই রইলো ভবিষ্যতের জন্য আন্তরিক শুভকামনা।
ছবি কৃতজ্ঞতা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।