আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্যবসায়ীদের জন্য উন্মুক্ত সংস্কৃত

বাংলাদেশ লিনাক্স ইউজার্স এলায়েন্স (বিএলইউএ) হচ্ছে বাংলাদেশের লিনাক্স ব্যবহারকারীদের জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন। বর্তমানে এ সংগঠনটি বিশ্বব্যাপী লিনাক্স কমিউনিটিগুলোর মধ্যে বাংলা ভাষার এবং বাংলাদেশের লিনাক্স ব্যবহারকারীদের প্রতিনিধিত্ব করে চলেছে। পাশাপাশি ক্রিয়েটিভ কমন্সের বাংলাদেশী অ্যাফিলিয়েট হিসেবে কাজ করছে এবং বিভিন্ন ওপেনসোর্স প্রজেক্টের সাথে জড়িত। http://www.linux.org.bd  

মুক্তসোর্স উন্মুক্ত সংস্কৃতির বিতর্কের একটি অংশ হচ্ছে ব্যবসায়ীরা উন্মুক্ত সংস্কৃতি অনুসরণ করবেন কিনা, করলে তাদের লাভ কি হবে? অধিকাংশ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান প্রশ্ন করবেন "আমি আমার প্রস্তুতপ্রণালী, কর্মপদ্ধতি উন্মুক্ত করে দিলে কালকে আরেকজন সেই প্রস্তুতপ্রণালী বা কর্মপদ্ধতি দেখে একই জিনিস তৈরি করবেন। এতে আমি আমার ক্রেতা হারাবো।

" আপাত দৃষ্টিতে নতুন প্রতিযোগীর এই হুমকি খুব বড় করে দেখা দিলেও কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে খুব বড় সমস্যা করে না। এর একটি কারন আধিপত্বমূলক বাজার সম্পর্ক(মনোপলিস্টিক মার্কেট রিলেশন) বা একজন বিক্রেতা সকল ক্রেতার চাহিদা পূরণ করার সময় নিজের মর্জিমত ক্রেতাদের জিম্মি রাখার বিষয়টি এখনকার বিশ্বায়নের যুগে বলতে গেলে নেই। এখন উন্মুক্ত প্রতিযোগীতার বাজার। এখন যেকোন ব্যবসার ক্ষেত্রেই টিকতে হলে আপনাকে দিতে হবে সর্বোত্তম পণ্য ও সেবা। এই সর্বোত্তম পণ্য/সেবা দেবার একটি উপায় হচ্ছে উন্মুক্ত সংস্কৃতির সহায়তা নেয়া।

উন্মুক্ত সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কী কী সুবিধা হচ্ছে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য তা একনজরে দেখা যাক.. = সহজে ব্যবহারযোগ্য তথ্য ভান্ডার = তথ্যানুসন্ধানের জন্য সুবিশাল স্যাম্পল পপুলেশন = সুদক্ষ অভিজ্ঞ লোকের মতামত সহজে সংগ্রহ = সম্পদের সদ্ব্যাবহার = নতুন চিন্তাভাবনা, ধারণা, নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবণ = দীর্ঘমেয়াদী লাভজনক সম্পর্ক = অন্য প্রতিযোগীদের সাথে পার্থক্য = অন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে কৌশলগত জোট গঠনে সুবিধা প্রশ্ন জাগতে পারে কীভাবে এগুলো সম্ভব উন্মুক্ত সংস্কৃতিতে। উন্মুক্ত সংস্কৃতির অগ্রগতির পিছনে মূল জ্বালানী হিসেবে রাখা যায় ইন্টারনেট ও তথ্য প্রযুক্তির অগ্রগতিকে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষকে এক স্থানে আনা সম্ভব হচ্ছে। একারনে যদি কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তাদের ক্রেতা বা পন্য সংক্রান্ত কোন তথ্যের প্রয়োজন হয় তাহলে সহজেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের লোকদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ সম্ভব। আবার একই ভাবে অভিজ্ঞ পরামর্শকদের মতামত/পরামর্শ ইন্টারনেটের সাহায্যে ক্ষেত্রবিশেষে বিনামূল্যে পাওয়া যায়।

এই সাধারন ব্যবহারকারী ও অভিজ্ঞদের পরামর্শ মতামতের সহায়তায় অনেক সময় আরও উন্নত পণ্য বা সেবা প্রস্তুত সম্ভব যা দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসা ও ব্যবহারকারী সবার জন্য মঙ্গল হবে। এটা ঠিক যে এই কাজগুলো উন্মুক্ত সংস্কৃতি অনুসরণ করেননা এমন প্রতিষ্ঠানও প্রয়োগ করতে পারেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে বিষয়টিতে সেরকম স্বতস্ফূর্ত সাড়া পাওয়া যাবে না যেরকমটা পাওয়া যায় উন্মুক্ত সংস্কৃতি অনুসরণকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে। মানুষ স্বাভাবিকভাবেই এমন প্রজেক্টে অংশগ্রহণ করতে চায় যেখানে তার সময় দেবার বিনিময়ে সে কিছু পাবে। সেটা হতে পারে আর্থিক পুরস্কার অথবা মানসিক প্রশান্তি।

মজার বিষয় হলো বড় বড় প্রতিষ্ঠান অর্থ খরচ করে যতো না সাড়া জাগাতে পারে তারচেয়ে বহুগুন বেশি সাড়া জাগানো সম্ভব মানুষের ইতিবাচক মনোভাবের কারনে। ফোরাম, ব্লগ বা সাইটের মাধ্যমে দ্রুত একটি বিষয়ে তথ্য ও খবর ছড়িয়ে পরে, অর্থ খরচ করেও যা অনেক সময় পাওয়া সম্ভব হয় না। আধুনিক ব্যবসায়ের পথপ্রদর্শকরা বলে থাকেন সকল ব্যবসাই সম্পর্কের আন্তঃজালে গাঁথা। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে ক্রেতা বা সেবাগ্রহণকারীর দীর্ঘমেয়াদী ইতিবাচক সম্পর্কই ব্যবসা প্রসারের অন্যতম শর্ত। এখন উন্মুক্ত সংস্কৃতির মাধ্যমে যখন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ক্রেতা বা সেবাগ্রহণকারীর উপর আস্থা প্রদর্শন করবেন তখন সেই ক্রেতা বা সেবাগ্রহণকারীরাও নিজে থেকেই উক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একনিষ্ঠ ব্র্যান্ড লয়াল কাস্টমারে পরিনত হবেন।

সেই সাথে তারা ইতিবাচক প্রভাবও ফেলতে চাবেন, সেটা কেবল বার বার পণ্য বা সেবা ক্রয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় কিভাবে পণ্য বা সেবা উন্নত করা যায় সে সম্পর্কেও পরামর্শ মতামত দিবেন। উন্মুক্ত সংস্কৃতির আরেকটি বৈশিষ্ট্য, উন্মুক্ত মানেই কিন্তু সত্বাধিকার একেবারেই নেই তা নাও হতে পারে। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান প্রস্তুতপ্রণালী থেকে কর্মপরিচালনার সকল খুটিনাটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে রাখতে পারেন যাতে অন্যরা প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে। তবে ব্যবহারের সময়ও অন্যদের উল্লেখ করতে হতে পারে যে তারা অমুক প্রতিষ্ঠানের আদর্শ অনুসরণ করছেন। এর ফলে বাজারে প্রথম প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও প্রতিষ্ঠানের উপর আস্থা বহুগুন বেড়ে যাবে।

বাজারে সুনাম ভালো থাকলে স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য প্রতিষ্ঠান উন্মুক্ত সংস্কৃতির সুবিধা পেতে কৌশলগত বোঝাপড়ায় আসবে। এতে কিন্তু আরও সহজে উন্নত পণ্য ও সেবা প্রস্তুত সম্ভব এবং প্রতিযোগী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে সুবিধাজনক ব্যবসায়িক কর্মকান্ড পরিচালনা সম্ভব। সার্বিক দিক চিন্তা করলে তাই বলা যায় উন্মুক্ত সংস্কৃতি ব্যবসায়ীদের জন্য ক্ষতির চেয়ে বরং দীর্ঘমেয়াদী লাভ এনে দেয়।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.