আমার দেশের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি কিন্তু, পইড়া রইলাম পরের দেশে। আপসোস !! বিগত দু’দশকের ব্যবধানে দেশি ফল ভাণ্ডারের অর্ধেকেরও বেশি বিলুপ্তির হুমকিতে পড়েছে। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে এবং কৃষি বিভাগের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতাই এর কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
জনসংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধিতে বাড়িঘর নির্মাণে নির্বিচারে ফলের গাছ কাটা, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইত্যাদিকে ঐতিহ্যবাহী দেশি ফল হারিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে দায়ী করছেন ফলবিজ্ঞানীরা।
এছাড়া বিদেশি ফলের আমদানিও দেশি ফলের উৎপাদনহ্রাস ও বিলুপ্তির জন্য অনেকখানি দায়ি বলে অভিমত তাদের।
বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে, বর্তমানে ফলের বাজারের ৮০ শতাংশই দখলে রেখেছে আমদানি করা ফল।
এসব কেমিক্যাল মেশানো ফল খেয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকির যেমন বাড়ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে পুষ্টিঘাটিতও। ঝুঁকি বাড়ছে ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও ।
লুপ্তপ্রায় দেশি ফল
বাংলাদেশের আবহাওয়া ও ভূ-প্রকৃতি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল উৎপাদনে বিশেষভাবে সহায়ক। রোপণ না করা সত্ত্বেও প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো ফলের সংখ্যাও ছিলো উল্লেখযোগ্য।
বৈশাখ, জৈষ্ঠ, আষাঢ় ও শ্রাবণ-এই চার মাসেই পাওয়া যায় শতকরা ৫৪ শতাংশ দেশি ফল। আর বছরের আট মাসে পাওয়া যায় ৪৬ শতাংশ।
ফল বিজ্ঞানীদের মতে, কৃষিপ্রধান ও উর্বর মাটির এই দেশের গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফলগাছের সংখ্যা ছিলো শতাধিক। তবে নানা কারণে গত দু’দশকের ব্যবধানে এ সংখ্যা নেমে এসেছে অর্ধশতে।
তবে এ বিষয়ে সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যের সঙ্গে কিছুটা তফাৎ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের তথ্যের।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের খাদ্যশস্য উইং এর তথ্যমতে, বর্তমানে প্রধান ও অপ্রদান মিলিয়ে দেশি ফলের সংখ্যা ৬০-৭০টি।
এগুলোর মধ্যে-আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, জাম, গোলাপজাম, নারিকেল, কুল, তৈকর, বীচিকলা, বিলিম্বি, বেতফল, লেবু, আমলকি, সফেদা, আতা, শরিফা, আনাজি কলা, জালিম, জাম্বুরা, সুপারি, বাঙ্গি, খরমুজ, বকুল, বেল, কামরাঙ্গা, জলপাই, চালতা, ডেউয়া, পেঁপে, তেঁতুল, তাল, বেল, গাব, পানিফল, কদবেল, আনারস, খেজুর, জামরুল, কলা, লটকন, আনার, আমড়া, কমলা, অরবরই, সাতকড়া, লুকলুকি, তরমুজ, চুকুর, প্যাসনফল, আঁশফল, মাখনা, আধাজামির, পীচফল, ফসলা, জগডুমুর, কাজুবাদাম, ডুমুর, কাউফল, করমচা, পানিয়ালা, জামির, বৈচি, মুনিয়া, ডেফল, চাম্বুল উল্লেখযোগ্য।
এসবের মধ্যে- কাউফল, করমচা, ডেউয়া, আশফল, গাব, জগডুমুর, চাম্বুল, আতাফল, ডুমুর, চালতা, অরবরই, বিলিম্বি, শরিফা, সাতকরা, তৈকর, ডেফল, লুকলুকি, বৈচি, মুনিয়া কোনো রকমে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।
দেশের বিশিষ্ট ফল বিজ্ঞানী ও ময়মসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুর রহিমের মতে, বিগত দুই দশকের ব্যবধানে দেশি ফল ভাণ্ডারের প্রায় অর্ধেক বিলুপ্তির পথে রয়েছে। কাগজেকলমে ৫৫টি দেশিয় ফলকে বর্তমানে চিহ্নিত করা গেলেও বাস্তবে ৩৯টির বেশি খুঁজে পাওয়া কঠিন।
অন্যদিকে, দেশে প্রধান ফলের উৎপাদন আগের চেয়ে বাড়লেও অপ্রধান ফলের উৎপাদন কমেছে।
ফল বাজারের ৮০ শতাংশ বিদেশি ফলের দখলে
বর্তমানে দেশে ফলের বাজারের শতকরা ৮০ ভাগ দখলে নিয়েছে আমদানি করা বিদেশি ফল। এসব ফলের মধ্যে- আপেল, কমলা, আঙুর, খেজুর, বেদেনা, স্ট্রবেরী, ড্রাগন, নাশপাতি উল্লেখযোগ্য।
রাজধানীর সদরঘাট সংলগ্ন বাদামতলী ফলবাজারের বিদেশি ফল আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে এ বাজার থেকে ৫০ টনের মতো ফল আভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রি হয়। যার অর্থমূল্য দাঁড়ায় কমপক্ষে ৫-৭ কোটি টাকা।
এ বাজারের ফল আমদানিকারক হাজী শামসুল হক আমদানিকৃত ফলে কেমিক্যাল মেশানো হয় না বলে দাবি করেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগের লোকজন পরীক্ষা করেই তা বাজারে প্রবেশের অনুমতি দেয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অপরদিকে, একই এলাকায় আহসান মঞ্জিল সংলগ্ন ওয়াইজঘাট দেশি ফলের বাজারে গিয়ে আপেল কুল আর বাউকুল ছাড়া অন্য কোনো মৌসুমী ফলের দেখা পাওয়া যায়নি।
আমদানি করা ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি
পুষ্টিবিদদের দাবি, প্রাথমিকভাবে ক্ষতিকারক রাসায়নিক মিশ্রিত ফল খাওয়ার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না দিলেও ভবিষ্যতে এর সুদূরপ্রসারি প্রভাব রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও বিএসটিআই’র সাবেক মহাপরিচালক ড. গোলাম মাওলা এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘আমদানি করা ফলের বেশির ভাগই ম্যাচিউর (পরিপক্ক) থাকে না।
ওইসব ফলের উজ্জ্বলতা ও পচে যাওয়া রোধে কার্বাইড, প্রিজারভেটিভসহ নানা ক্ষতিকারক ব্যবহার করা হয়। ’’
তার মতে, প্রাথমিকভাবে এসব ফল খেয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব দেখা না গেলেও পরবর্তীতে তা লিভার সিরোসিস, কিডনী বিকল, মেমব্রেনসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কার্যকারিতারোধ এবং কঠিন ও জটিল রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাহ্রাসেরও কারণ হতে পারে কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল।
কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকিই তৈরি করছে না, পুষ্টিঘাটতিও সৃষ্টি করছে-যোগ করেন গোলাম মাওলা ।
প্রয়োজন কৃষি বিভাগকে আরো নিবেদিত হওয়া
দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণ ও খাদ্য নিরাপত্তা অক্ষুন্ন রাখতে দেশি ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।
এজন্য সম্প্রসারণ বিভাগকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার উপরও জোর দেন তারা।
ফলবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আব্দুর রহিম এবিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘আম, কাঁঠাল, লিচু, কুল ইত্যাদি হাতে গোনা কয়েকটি ফল দেখতে পাওয়া গেলেও অপ্রধান বেশির ভাগ ফলই আর সহজলভ্য নয়। বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি কৃষি বিভাগকেও দেশিয় ফলের উৎপাদন ও সম্প্রসারণে আরো অগ্রাধিকার দিতে হবে।
হাইভ্যালু ক্রপসের দিকে ধাবিত হওয়াও ফল উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে, দাবি অধ্যাপক আব্দুর রহিমের।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের খাদ্য শস্য উইং এর অতিরিক্ত পরিচালক সত্য রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, “আমাদের ৭৩টি হর্টিকালচার সেন্টার এ বিষয়ে কাজ করছে।
এসব সেন্টার দেশি ফলের উন্নত জাতের মাতৃবাগান সৃষ্টি ও তা কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণে কাজ করছে।
লেখা গুলা বাংলানিউজ২৪.কম থেকে নেয়া । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।