দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জামায়াত-শিবিরের জঙ্গী ক্যাডারদের জড়ো করা হচ্ছে বগুড়াসহ বিভিন্ন এলাকায়। প্রকাশ্যে লাঠিসোটা ও দেশী অস্ত্র নিয়ে তারা মিছিল করে। স্পেশাল ক্যাডাররা কৌশলে কাঁধে রাখা স্কুল ব্যাগে বোমা ককটেল ও অস্ত্র নিয়ে এই মিছিলে থাকে। এরাই পুলিশের সঙ্গে যুদ্ধ ও বোমাবাজি করে। হালে শিবির ক্যাডাররা কৌশল পাল্টে মাঠে নামার সমস্ত পরিকল্পনা সম্পন্ন করেছে এবং নামছেও।
সহজে এদের চেনা যায় না। জিনসের প্যান্ট-শার্ট পরে এমনভাবে চলে মনে হবে কলেজ শিক্ষার্থী। এদের অনেকের ব্যাগে ল্যাপটপও থাকে। উচ্চশক্তির মোডেম ব্যবহার করে এরা দ্রুত খবর আদানপ্রদান করে। এদের পকেটে উন্নতমানের মোবাইল ফোন ও খুবই সহজে বহনযোগ্য ট্যাব ও নোট বুক (মিনি কম্পিউটার) থাকে।
যখন যেখানে যেটা প্রয়োজন তা ব্যবহার করে। সূত্র জানায় মানবতা বিরোধী মামলার রায় সামনে রেখে শুধু বগুড়াতেই নয় ঢাকাসহ দেশের সর্বত্রই শিবিরের অস্ত্রধারী ক্যাডাররা সমবেত হচ্ছে। বগুড়ায় এরা কতটা বেপরোয়া হতে পারে তার এ্যাসিড টেস্ট করেছে বৃহস্পতিবার হরতালের দিনে। প্রথম ভাগে উপশহরে টহল পুলিশের কাছ থেকে শর্ট গান ছিনিয়ে নেয়। পরে অবশ্য তা ফেলে রাখে।
বিকেল থেকে শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথায় শুরু করে সন্ত্রাস। গোহাইল রোড, সেউজগাড়ি, সবুজবাগ, জহুরুলনগর, ঠনঠনিয়া এলাকা তথা চারদিক হতে রণকৌশলে সাতমাথা ঘিরে ফেলে মুহূর্তেই যুদ্ধ শুরু করে দেয়। পুলিশ র্যাব কিছু বুঝে ওঠার আগেই একসঙ্গে ১৫/২০ জন করে ককটেল ও বোমা ছুড়তে থাকে। বৃষ্টির মতো বোমাবাজি শুরু হলে পুলিশ পিছু হটে থানার কাছে অবস্থান নেয়। পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোঁড়ার সময়ও শিবিরের অস্ত্রধারী ক্যাডাররা পাল্টা ইট-পাটকেল ও বোমা ছুড়তে থাকে।
শিবিরের রণকৌশল দেখে এটা পরিষ্কার বোঝা যায় এরা বিশেষ ট্রেনিংপ্রাপ্ত। রাতে শহরের জহুরুলনগরে পুলিশ র্যাব অভিযান চালালে শিবিরের অস্ত্রধারী ক্যাডাররা ছাদের ওপর থেকে গুলি ও বোমা ছুতে থাকে। পুলিশ পাল্টা গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়। শিবিরের এ ধরনের কৌশলের সঙ্গে যোগ হয়েছে লাশ নিয়ে রাজনীতি। বগুড়ায় হরতালের দিনে ছুরিকাঘাতে প্রথম নিহত আবু রুহান (২৪) শিবিরের নেতা।
অনেক খোঁজ-খবর করে বাকি দুই জনের কোন রাজনৈতিক পরিচয় মেলেনি। তারপরও জামায়াত-শিবির দাবি থেকে পিছু তো হটেই নি, আরও একজনের মৃত্যুর খবর প্রচার করছে যা কয়েকটি টিভি চ্যানেলের স্ক্রলেও দেখা গেছে। এ ধরনের গুজবও ছড়াচ্ছে জামায়াত। এলাকার লোকজন জামায়াতের এসব দাবিকে অযৌক্তিক বলছে। বগুড়া সদরের সাবগ্রামে চোরগোপ্তা হামলায় ছুরিকাঘাতে যে হ্যাচারি ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান নিহত হয়েছেন তার পরিবার ও দেশের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস উপজেলার উত্তরমানিকনগর গ্রামের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তার রাজনৈতিক কোন পরিচয় মেলেনি।
মিজানুরের স্ত্রী মামলা দায়েরের সময় বলেছেন, তার স্বামী বিদ্যুত বিল জমা দেয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। তিনি জামায়াত দূরে থাক কোন রাজনীতির সঙ্গেই জড়িত ছিলেন না। শিবির পুলিশ বন্দুকযুদ্ধে গুলিতে নিহত আব্দুল্লাহ আল মামুনও কোন রাজনীতির সঙ্গেই জড়িত নন। আবদুল্লাহ বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক্যালের প্রথম বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার থানা পাড়ায়।
বাবা আখের আলী সবজি ব্যবসায়ী। আবদুল্লাহ বগুড়া শহরের সবুজবাগ ছাত্রাবাসে থাকত। ঘটনার দিন সে জামিলনগরে মামাত ভাইয়ের কাছে যায়। ফেরার পথে বন্দুকযুদ্ধের মধ্যে পড়ে নিহত হয়। নিহত মিজানুর ও আব্দুল্লাহ দু’জনকেই জামায়াত শিবির তাদের কর্মী বলে দাবি করছে।
পুলিশ সূত্রের খবর- অনেক খোঁজ করেও এই দু’জনের কোন রাজনৈতিক পরিচয় মেলেনি। জামায়াত রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতেই লাশ নিজেদের বলে দাবি করছে। পুলিশের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, চোরাগোপ্তা হামলা নিয়ন্ত্রণ করতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে বাইরে থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব ক্যাডার জড়ো হচ্ছে সেই খোঁজ পুলিশের কাছেও আছে। বগুড়ায় জড়ো হওয়ার অন্যতম একটি কারণ, বাংলা ভাই ও শায়খ আব্দুর রহমানের (ফাঁসিতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর) দীর্ঘদিন বগুড়ায় নানান ছদ্মবেশে অবস্থান করেছেন।
তাঁরা যে ঘাঁটিগুলো ব্যবহার করতেন সেই ঘাঁটিগুলোতেই শিবির ক্যাডাররা অবস্থান নিচ্ছে। গোকুলের শেখেরকোলা এলাকায় নদীর তীরে গ্রামের ভেতরের একটি মাদ্রাসায় একটা সময় নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতুল মুজাহিদীনের (জেএমবি) গোপন ঘাঁটি ছিল। বর্তমানে ওই এলাকায় এক প্রভাবশালীর নিকটাত্মীয়ের চলাফেরা সন্দেহজনক। স্থানীয় সূত্র জানায় বর্তমানে সেখানে অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়েছে। গভীর রাতে দামি গাড়িতে করে অচেনা লোকজন তার বাড়িতে আসে, ভোরের আগেই ফিরে যায়।
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল, দিনাজপুরের পার্বতীপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, গাইবান্ধার সাঘাটা থেকেও এ ধরনের খবর মিলছে। বগুড়া শহরে হালে অপরিচিত তরুণদের সংখ্যাও বেড়েছে। সূত্র জানায়, এরা সাধারণত আশ্রয় নেয় শিবির পরিচালিত মেস ও ছাত্রাবাসগুলোতে। জামায়াত শিবিরের ইনটেলিজেন্স উইংও আছে। যারা বিভিন্ন স্থানে বসে প্রতিনিয়ত খবরাখবর রেখে হাই কমান্ডের কাছে পৌঁছে দেয়।
বগুড়ায় এরা কতটা তৎপর তার প্রমাণ মেলে এভাবেও- গেল ২৩ জানুয়ারি বিএনপিসহ ১৮ দলের গণসংযোগ কর্মসূচীর অনুষ্ঠানে শরিক দল জামায়াতই ছিল মুখ্য। বিএনপির মিছিলকে পেছনে ফেলে জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মীরা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মুক্তি দাবি করে উত্তেজনাকর সেøাগান দিতে থাকে। ওই অনুষ্ঠান যে বিএনপির তা মনেই হয় নি। দেশ অস্থিতিশীল করতে জামায়াত শিবির নানাভাবে নানা কৌশলে এভাবেই বিভিন্ন ফ্রন্টে ঢুকে পড়ছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।