কিছুদিন আগে ক্লোজআপওয়ানের একটি পর্ব দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। প্রতিযোগীদের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। প্রাতিযোিগরা বলির পাঁঠার মতো লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। উপস্থাপক বললেন, আমি যে দুজনের নাম বলবো, সেই দুইজন সামনে এগিয়ে আসবেন। নাম ঘোষণা করা হল।
( এবার নাম ঘোষণা করলেন, উপস্থাপক নয়, উপস্থাপিকা। এও এক নতুন কায়দা। একজন এক লাইন বললে- আরেকজন পরের লাইনটা বলে )। কাঁপতে কাঁপতে দুই প্রতিযোগি এগিয়ে এলেন। উপস্থাপক বললেন, কি মনে হচ্ছে, তোমাদের মধ্যে কে যাবে পরের রাউন্ডে, আর কার জন্য এটাই হবে শেষ আসর।
আমরা সেটা জানবো, তার আগে একটা বিজ্ঞাপন বিরতি।
বিজ্ঞাপন বিরতির পরও কিছু জানালো হলনা, জানতে চাওয়া হল বিচারকদের মন্তব্য। টিভি স্ত্রিণে দেখে মনে হল, দুই প্রতিযোগি আতংকে মোটামুটি নীল হয়ে গেছেন ( আমার চোখের ভুল কিংবা ডিশের লাইনে সমস্যার কারণে এটা হতে পারে। )
বিচারকরা অনেক কথাই বলেলেন, সবই উচ্চামার্গিয় জ্ঞানের কথা। একজন তো তার দীঘল চুল ঝাকিয়ে আঙ্গুল তুলে কি বললেন তার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলাম না।
যাই হোক, এর মধ্যে একজন প্রতিযোগির ফলাফল গোষণা করা হয়েছে , তিনি এসএমএস এবং বিচারকদের নাম্বার কত পেয়েছেন তা জানা গেল। এরপর অপর প্রতিযোগির নাম্বার ঘোষণা করা হবে। খুব সম্ভবত : পৃথিবীর যাবতীয় টেনশন ভর করেছে সেই প্রতিযোগির হাঁটুতে, সে কাঁপছে ( এটাও চোখের ভুল কিংবা ডিশের লাইনের ... ) এবার আরেকটি বিজ্ঞাপন বিরতি।
বিরতির পর সেই প্রতিযোগির নম্বরও জানা গেল। রেসলিং প্রতিযোগিতায় ধারাভাষ্যকার কন্ঠে যেরকম উল্লাস নিয়ে ফলাফল ঘোষণা করেন, সেই একই রকম উত্তেজিত ক্যানকেনে কণ্ঠে উপস্থাপিকা পুতুল জানালেন, তোমাদের দুজনের কেউই পরবর্তী রাউন্ডে যাচ্ছ না, দু্জনই বাদ।
ও হরি! অনুষ্ঠান পরিকল্পকের সৃজনশীলতা তারিফ করতে হয়!!
প্রতিযোগিতায় হারজিৎ থাকবে, তা বলে , পরাজিতদের নিয়ে এরকম মেলোড্রামা টিভিতে করতে হবে? এছাড়া কি অনুন্ঠানকে জমজমাট করার কোন পদ্ধতি নেই ? আইডিয়া নেই?
আচ্ছা, যদি জীবনের আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে এরকম সৃজনশীলতা দেখানো যায়, তাহলে ব্যাপারটা কেমন হয়? যেমন কারও চাকরি চলে গেল, অফিসের বস তার কলিগদের ডেকে এভাবে বলতে পারেন, অাপনাদের মধ্যে াাজ একজনের শেষ কর্মদিবস, কে সেই জন ? জয়নাল সাহেব আর হাবিব সাহেব আপনারা এগিয়ে আসুন ... আগে দেখে নেই, আপনারা ডেনজার জোনে আছেন কি নেই? সেটা জানার আগে একটা টি ব্রেক ....
আসলে দেশে এখন সৃজনশীলতার বাম্পার ফলন ঘটছে। বরিশালের নির্বাচন কমিশনেও খুব সম্ভবত একই ক্রিয়েটিভ সিনড্রোম দেখা গিয়েছিল, নইলে একটি কেন্দ্রের ফলাফল কেন আটকে রাখা হবে ? তারা কি ক্লোজআপ ওয়ান দেখে উত্তেজিত নাকি অনুপ্রাণিত ?
জরুরী অবস্থায় নির্বাচন করা যাবে, কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষনা করা হবে না, ট্রুথ কমিশন , আলু ক্যাম্পেন , রোডম্যাপ - এসবই ক্রিয়েটিভ চিন্তাভাবনার ফসল। সাথে যুক্ত হয়েছে এইসব টিভি অনুষ্ঠান ...সাধু, সাধু !!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।