আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেইসব ধুলিমাখা দিন আর এইসব রক্তরাঙা রাত

কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...

যখন ইশকুলে পড়ি আর পড়ি উত্তরাধিকার-কালবেলা-কালপুরুষ কিম্বা গর্ভধারিণী, তখন স্বপ্ন দেখতাম জিন্সের শার্ট-প‌্যান্ট পইরা খালি পায়ে কান্ধে বন্দুক নিয়া জঙ্গলের মধ্যে রবিন হুডের জীবন...মানুষের মুক্তির সংগ্রামে নিবেদিত রোমাঞ্চকর জীবনের হাতছানি! তখন ভালোবাসতাম নকশাল বাড়ির মানুষগুলিরে, যারা শ্রেণী শত্রুগো বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রামের ঘোষণা দ্যায়...যারা নিপীড়িত মানুষের অন্তরের টান অনুভব করে। সেই কৈশোরে যেই কারনে চেষ্টাও চালাইছিলাম আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনৈতিক দলে ভিরা যাইতে...যোগাযোগের সকল সমস্যা নিয়াও রওনা দিছিলাম উত্তরবঙ্গে... বয়সের সাথে সাথে শহুইরা মনোবৃত্তি আর অভিলাষের চাপে আমিও ধীর স্থির হইছি...রাজনীতির যে কয়টা ধারা আছে, রাষ্ট্রচরিত্র বিশ্লেষণ আর উৎপাদন সম্পর্কের রিয়েলাইজেশনে তার একটারে বাইছা নিলাম নিজের জীবনের গতিধারা হিসাবে। রোমাঞ্চের মাত্রাগত পার্থক্য নিয়া ছাত্র রাজনীতি করছি দীর্ঘ সময়...ছাত্রজীবন শেষেও রাজনৈতিক সংগ্রামের সাথে কাটাইছি কিছুকাল...এরপর নিজের র্চচাগত সীমাবদ্ধতায় রাজনৈতিক সংগ্রামের সক্রিয়তা থেইকা কিছুটা ছিটকাইছি...চর্চাগত বিরোধ থাকলেও মতাদর্শিক বিরোধ কোনকালেই ছিলো না...এখনো এই রাষ্ট্রের চরিত্র বিশ্লেষণে একটা পুঁজিবাদী রাষ্ট্ররেই দেখি...এখনো বুঝি আধা সামন্তীয় চেতনা বইলা কোন কিছুর অস্তিত্ব এই অঞ্চলে নাই... কিন্তু যাগো লগে আমার বিশ্লেষণগত ঐক্য নাই তারা কি অপরাধী!? এই প্রশ্নের উত্তরে আমি হা কিংবা না এই উত্তরেই সীমিত থাকি। সমাজ পরিবর্তনের লড়াইয়ে সকল অংশগ্রহণকারীর চেতনারেই আমি শ্রদ্ধা করি...এই শ্রদ্ধায় ভালোবাসা আছে নতমুখ নাই। ষাইটের দশকে এই ভূখন্ডেও সারা বিশ্বব্যবস্থার লগে তাল মিলাইয়া বিভাজন আসছে।

কেউ মস্কো'র বৃষ্টিতে ছাতা ধরছে, কেউ কোন চীনামুখরে চেয়ারম্যান বানাইছে নিজদেশে। প্রেসক্রিপশন দিয়া যে মার্ক্সবাদী সংগ্রাম চলেনা সেই বোধ অপসারিত ছিলো তাগো সংগ্রামে...বাঙালি'র চিরায়ত দর্শন, অন্যের দ্বারা পরিচালিত হওনের শর্ত মাইনাই তারা চলছে...হয়তো ভুল ছিলো সেই চেতনায়, হয়তো হঠকারীতা ছিলো সেই চেতনায়...কিন্তু উদ্দেশ্যমুখীনতা ছিলো পরম... রাজনীতিরে আমি বিবেচনা করি এই উদ্দেশ্যমুখীনতা দিয়াই...যখন সিরাজ সিকদাররে হত্যা কইরা শেখ মুজিবর রহমান সংসদে উল্লাস করেন, তারে আমি পাশবিতায় অনুবাদ করতে পারি। যখন শেখ ওয়াহিদুর রহমান নির্যাতিত হ'ন তারে আমি সামাজিক অনিয়ম বলতে পারি...যখন মোফাখ্খর চৌধুরী ক্রসফায়ার নামক আজগুবি নাটকের শিকার হ'ন তারে আমি প্রতিহিংসা বইলা বুঝি। তবুও অপেক্ষা করি এই আধুনিক বুর্জোয়া আধুনিক সমাজে হয়তোবা যৌক্তিক নির্ভরতা আসনের সম্ভাবনা থাকে...তাই ভাবি তপন মালিথা কিম্বা ডাক্তার টুটুল রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের উপলক্ষ্য হইবো না। এই রাষ্ট্র অনিয়ম করে, এই রাষ্ট্র মানুষের মানবিক অধিকার দ্যায় না, এই রাষ্ট্র চায় না মানুষ তার নিজের প্রজাতির লগে দ্বান্দ্বিক সংগ্রাম খ্যান্ত দেক...এই রাষ্ট্র চায় শোষণের অধিকার, এই রাষ্ট্র প্রতিযোগিতামূলকতার নামে বৈষম্য টিকাইয়া রাখনের চক্রান্তে নামে, রাষ্ট্রের পরিচালকেরা অতএব সুখে দিনাতিপাত করনের সার্টিফিকেট পায়।

কিন্তু তাগো এই চক্রান্ত যেইসব মানুষ উপলব্ধি করে, তারা কি করবো!? বিদ্রোহ কি চেতনার প্রকাশ নয়! অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ যদি অপরাধ হয়, তাইলে সেই প্রতিবাদের জোয়ারে আমি গা ভাসাইতে রাজী চিরকাল... ধরা যাক এই সব বিপ্লব অন্ত্যপ্রাণ যদি অপরাধীও হয় এই রাষ্ট্রের সূচকে, তাইলে কি রাষ্ট্রীয় আইনেই তারা বিচারের সুযোগ পাইতে পারে না!? রাষ্ট্র যদি তার নিজের আইন ভাঙতে শুরু করে, তাইলে কি সে নিজেই অপরাধী হয় না!? নাটকের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরীর অপচেষ্টায় যতোটা নিপুন এই রাষ্ট্র, তার চাইতে অনেক কম মনযোগী সে মানুষের দুর্দশা দুরীকরণে...আর তাই ডাঃ টুটুলেরা প্রাণ দ্যায়...কিন্তু তাতে কি বিদ্রোহ থমকায়!? বিদ্রোহ কোন অলীক মেঘ নয়, বিদ্রোহ হইলো পুঞ্জিভূত ক্ষোভ...এই ক্ষোভের সমাপ্তি কখনো ক্রসফায়ারে সম্ভব নয়!

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।