আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জ্যান্ত কবর

চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা

তনুকে ওরা জ্যান্ত কবর দিয়ে দিল। হাতপা বাধা, মুখটাও কাপড় দিয়ে আটকে দিল যাতে চিৎকার করতে না পারে। তারপর ওরা ওকে নামিয়ে দিল পুরানো একটা কবরে যা কিনা দেবে গিয়ে বড় একটা গর্তের সৃষ্টি করেছিল। ওপরে ডালপালা ভেংগে ঢেকে দেয়া হল, কোনভাবেই বুঝার উপায় রইল যে একটা জ্যান্ত মানুষকে নীচে শুইয়ে রাখা হয়েছে। ঘটনার শুরু সন্ধার আগ দিয়ে।

তনু দাড়িয়ে দাড়িয়ে কবরখানার পাশের মাঠটিতে ক্রিকেট খেলা দেখছিল। রাস্তার কাগজ কুড়িয়ে দিন যাপিত হয় তনুর। সুযোগ পেলে অন্য ছেলেপুলের খেলা দেখে, নিজে খেলতে পারার কোন সুযোগ নেই বলেই। ভাল খেলা হলে হাত তালি দিয়ে আনন্দে ফেটে পড়ে। আজকে খেলার একটি মুহুর্তে টেনিস বলটি উড়ে গিয়ে পড়ল পাশের কবরখানায়।

খেলতে থাকা ছেলেগুলোর কারো সাহস হল না শেষ বেলায় কবরে বল খুজে বের করার। ছেলেগুলো পিছু হটলে তনু কবরখানার দেয়াল টপকে প্রবেশ করে ভেতরে। বলটা আরো ভেতরে গিয়ে পড়েছিল। খুজতে খুজতে ঝোপঝাড়ের মাঝে অদৃশ্য হয় ও। বলটা খুজে পায় যখন ও ঠিক ঐসময়টিতে জনাকয়জন ঝাপটে ধরে ওকে।

ওদেরকে ঠিক চিনতে পারে ও। স্থানীয় ভাষায় হেরোইনচি বলা হয়ে থাকে ওদের। নেশোখোর। নেশার টাকার জন্য ওরা সবকিছুই করতে পারে ওরা। মানবিক গুনাবলীর কিছুই আর অবশিষ্ট নেই ওদের মধ্যে।

শুরুতেই তনুকে বেধে ফেলল ওরা। সিদ্ধান্ত নিল ওকে জ্যান্ত কবর দেবার, ওদের অস্তিত্ব বাইরের কেউ যাতে টের না পায়। একটু পরেই অন্ধকার নেমে এল। চারিদিকেই কবরের নিস্তব্দতা, আক্ষরিক অর্থেই। ক্রমশ: ভয়ে আতংকে নির্জীব হয়ে এল তনুর দেহ এবং মন দুটিই।

তনু এমনিতে খুব সাহসী ছেলে। কিন্তু রাত গভীর হতেই কুকুর কিংবা শিয়াল আশেপাশেই কোথাও যখন ডাকতে শুরু করল তার ছোট্ট মনটা ভয়ে মোচড়াতে লাগল। মনে পড়ল গরীব মায়ের কথা, যিনি তার ফেরার পথ চেয়ে বসে আছেন। মায়ের কথা মনে পড়তেই চোখ বয়ে জনল নামল তার। চোখের সামনে কেবলই অন্ধকার, মাঝে মাঝে কেবল আকাশে আলোর ঝিলকানি চোখে পড়ছে, আশেপাশে হয়ত কোথাও ওয়েলডিং করা হচ্ছে।

অনেকটা অচেতন অবস্থাতেই রাত কাটল ওর। ভোরের আলো ফুটতে আস্তে আস্তে সব মনে পড়ল ওর। বেচে ওঠার চিন্তাটা শুরু হল মাথার ভেতর তখনই। হাত পা কষে বাধা হয়েছে। সূর্য আস্তে মাথার ওপর জেগে ওঠতে শুরু করল।

হঠাৎ করে তার মনে পড়ল রাতের আলোর ঝলকানি কথা সাথে করে গতকাল রাস্তার কুড়িয়ে পাওয়া এক টুকরা সুন্দর মত কাচের টুকরার কথা যা এখনো তার পকেটে আছে। তার মাথায় এখন একটিই চিন্তা কি করে কাচের টুকরাটিকে হাতের মুঠোতে আনা যায়। বাধা হাত দুটো আস্তে আস্তে নিয়ে এল সে পকেটের কাছে। নড়তে চড়তে খুব কষ্ট হচ্ছে তার। কবরের একপাশে বৃদ্ধ আমির আলীর বাস।

গত ৩০ বছর ধরে কবর রক্ষকের কাজ করছে আমির আলি। কবরখানাটির ওপর মায়া জন্মে গেছে তার, দুই সন্তান বড় হয়ে অন্য কোথাও বাসস্থান গড়েছে কবরখানার বাপের সংসারটি পছন্দনীয় নয় বলে। কিন্তু আমির আলী অন্য কোথাও যেতে রাজী হয়নি, সাথে রয়ে গেছে তার বৃদ্ধা বৌটিও দুপুর বেলায় খাবার সেরে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিল আমির আলি। ঠিক ঐসময়টিতে কবরখানা থেকে আলোর ঝলকানি তার চোখে পড়ে যা, এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছিল। তার স্ত্রী ভয় পেয়ে গেলেও আমির আলী আলোর উৎস খুজতে কবরখানার ভেতরে হাটা দেয়।

একসময় ঠিকই খুজে পায় উৎসটি। একটু ভয় করতে থাকলেও দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে ঝোপঝাড়গুলো সরাতে থাকে। তারপর চমকে ওঠে আবিস্কার করে সাতআট বছরের একটা বাচ্চাকে হাতপা বেধে ফেলে রাখা হয়েছে, কবরের গর্তে। সব সংশয় ফেলে আমির আলি দ্রুত হাতপা চালায় তনুকে উদ্ধার করতে। সবশেষে তনু মায়ের কাছে ফিরে আসে আসে নেশখোরদের আশ্রয় হয় কারাগারে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.