আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিজের চোখে দেখা বিভৎস দৃশ্যগুলোর একটি

বাংলাদেশ ব্লগারস এসোসিয়েশন সদস্য নং: ১০ । facebook.com/milton3d

তখন আমি কলেজে পড়তাম, মনে হয় ফার্ষ্টইয়ারে। ফিজিক্স পড়তাম একজন স্যারের কাছে। সপ্তাহে দুই দিন। সকাল সাতটায় শুরু হতো স্যারের ব্যাচ।

আমরা সেই ব্যাচে মোটে মনে হয় ৬ জন ছিলাম। আমি আর আমার পাশের বাসার বন্ধু বাচ্চু একসাথে যেতাম। প্রতিদিনের মত সেদিও পড়া শুরু হয়েছিল যথাসময়ে। পড়ার প্রথম অংশে স্যার লেকচার দিতেন। তারপরের অংশে আমরা তার কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করতাম বা নিজেদের মধ্যে ডিসকাস করতাম।

সেদিন স্যার কেবল লেকচার দিয়েছেন মনে হয় পাঁচ মিনিটের মত। হঠাৎ প্রচন্ড একটা শব্দ চারিদিকে কাঁপিয়ে তোলে। আমাদের কানে ধাঁধা লেগে যায়। স্যারের বাসার সামনে একটা বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার ছিল। আমরা ভেবেছিলাম সেইটা হয়ত বিস্ফোরিত হয়েছে।

কিন্তু যেহেতু লোডশেডিং হয়নি, তার মানে তো সেটা ঠিকই আছে। স্যার সহ আমরা বের হয়ে আসলাম রাস্তায়। দেখলাম স্যারের পাশের বাসা থেকে খুব ধোঁয়া বের হচ্ছে। আর বাসার ভিতর থেকে চিৎকারের শব্দ। ঘটনা কিছুই বুঝতে পারলাম না।

আশেপাশের বাসা থেকেও অনেকে বের হয়ে এসেছে। আমরা দৌড়ে গেলাম সেই বাড়ীর দিকে। কিন্তু এতই ধোঁয়া যে ভিতরে ঢোকাই টাফ হয়ে গিয়েছিল। যাই হোক সবাই এগিয়ে আসলো কারণ কোন বিপদ হলে তো অন্ততঃ মানুষদের কে বাঁচাতে হবে। আমরাও ঢুকলাম সবার পিছে পিছে।

ধোঁয়া সব বের হয়ে যাবার পরে। দেখলাম খাটের উপর অচেতন হয়ে পড়ে আছে একটা ছেলে। পুরো ঘরে টুকরা টুকরা কাঁচ। সিলিং ফ্যানের ব্লেডগুলো বেঁকে গিয়েছে। টিভিটা ভেঙ্গে চুরচুর।

জানালার কাঁচ নেই। আসলে একটা বোমা বিস্ফোরন হয়েছে। পরে জানতে পারলাম, ছেলেটা স্কুলে পড়ে। ছোট বেলা থেকেই সে সখের বশে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্সের কাজ করতো। তার পড়ার টেবিলের পাশে সবসময় তাতাল, রাং, রজন ইত্যাদি থাকতো।

ঘটনার কয়েকদিন আগে সে পুকুরে গোসল করতে যেয়ে একটা কৌটা পড়ে পায়। বাসায় নিয়ে আসে। ঘটনার দিন সে কৌতহলবশতঃ সেটা স্ক্র-ড্রাইভার দিয়ে খুলতে গেলেই সেটা কি ভাবে যেন ব্লাষ্ট হয়। আর মুহুর্তেই ঘটে যায় সেই ঘটনা। সবাই ওকে ধরাধরি করে নিথর দেহটা হাসপাতালের দিকে নিয়ে গেল।

দেখলাম, ওর ডান হাতটার কনুই এর নিচ থেকে আর নাই। চামড়া গুলো ঝুলছে। সে এক বিভৎস দৃশ্য। চোখে সহ্য করার মত নয়। গায়ের কাপড়গুলোর কোন চিহ্ন নেই।

পুড়ে ছাই। পুরো শরীরের সব জায়গায় কালো হয়ে গেছে। পুরো এলাকায় নেমে এলো বিষন্নতা। কানাকানি। চিৎকার-চেচাঁমিচি।

বাড়ীর ভিতরে কান্নার রোল। সব মিলিয়ে সেদিন আমাদের সবার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। আর পড়া হলো না। কিছুক্ষণ থেকে বাসায় ফিরে এলাম। পরে শুনেছিলাম ছেলেটি আর বাঁচেনি।

কয়েকদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে হেরে গেল। মৃত্যুই জিতে গেল। মাঝে মাঝে এ ঘটনাটা মনে হলে খুব খারাপ লাগে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.