আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিয়ানমারে মানবিক বিপর্যয়ের শিকার রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারে মানবিক বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে রোহিঙ্গরা। গুলিবিদ্ধরা চিকিৎসাহীন অবস্থায় মৃত্যুপথের যাত্রী। কোথাও চিকিৎসা নিতে পারছে না। অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছে। এদিকে গুলিবিদ্ধ কয়েকজন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে।

গুলিবিদ্ধ কয়েকজন হল- মংড়– জামতলী পাড়ার আহমদ হোছনের পুত্র কালা হোছেন (৬০), নাপিতের ডেইল এলাকার মকুতল হোছনের পুত্র হাফিজুর রহমান(২০), বাসুরপাড়া দুদুমিয়া পুত্র ছৈয়দি (৩৫), কাহারীপাড়া হাফেজ আহমদের পুত্র রিদুয়ান (১৭), মংডু নয়াপাড়া এলাকার আবু জমিলের পুত্র মোঃ তৈয়ুব (১৮)। গুলিবিদ্ধরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। চিকিৎসা নিতে আসা গুলিবিদ্ধ কালা হোছন(৬০) জানান- মিয়ানমারে চিকিৎসা নিতে না পারায় মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে চিকিৎসা নিতে এসেছি। এছাড়া সরকারী বাহিনীর ইন্ধনে রাখাইনদের অমানুষিক নির্যাতন সইতে না পেরে ১১ জুন ৮টি ট্রলার যোগে প্রায় ৫০৪ রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ অপোয় নাফনদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ভাসছে। কিন্তু বিজিবি ও কোস্টগার্ডের বাধার মুখে তারা বাংলাদেশে ঢুকতে পারছে না।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের সাবেক মেম্বার নুর মোহাম্মদ জানান- এসব ট্রলারে গুরুতর অসুস্থ, আহত, গুলিবিদ্ধ, সন্তানসম্ভাবা মহিলারা আছে। তাছাড়া অনাহারে জনিত কারনে তাদের অবস্থা ছিল অত্যান্ত কাহিল। দ্বীপের লোকজন রান্না করা ভাত ও পিপাসা মিটানোর জন্য পানি দিতে চেয়েছিল। কিন্তু বাধার মুখে তা দেয়া সম্ভব হয়নি। ব্যাপক অনুপ্রবেশের জন্য মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম নাফনদীতে নৌকা নিয়ে অবস্থান করতে দেখা যাচ্ছে।

নিরুপায় হয়ে সাগরে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে । খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে ভাসমান ট্রলারে ৮জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ১১ জুন ভোর রাতে নাসাকাবাহিনীর ধাওয়া হয়ে ৪টি রোহিঙ্গা বোঝাই বোট ডুবির ঘটনাও ঘটেছে। প্রত্যদর্শী জেলেরা সাগরে ৫/৬টি লাশ ভাসতে দেখেছে বলে জানায়। মিয়ানমারের রাখাইন সম্প্রদায় আরাকান রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের উপর দমন-নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে।

আর প্রত্য ও পরোভাবে পে রয়েছে সেদেশের সামরিক জান্তা ও সীমান্ত রী নাসাকা বাহিনী। গত ৮ জুন শুরু হওয়া দাঙ্গায় কমপে ৩০ জন নিহত ও কয়েকশত মুসলিম রোহিঙ্গা আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা চিরস্থায়ী করে রাখা এবং এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর চলছে নতুন করে এ চরম নির্যাতন। গত ৩ জুন রোববার মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনের তোয়ানগোকিতে কট্টরপন্থি বৌদ্ধদের হামলায় ১০ জন মুসলিম নিহত হওয়ার খবরে আরকান রাজ্যের মংডুসহ বিভিন্ন শহরে ৮ জুন বিােভরত মুসলিম নাগরিকদের উপর নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে ও অসংখ্য মুসলিম আহত হয়ে চিকিৎসাবিহীন মৃত্যু পথের যাত্রী। রাখাইন সম্প্রদায় ইতিমধ্যে জ্বালিয়ে দিয়েছে মসজিদ, মুসলিম পল্লি, লুটপাট করছে মুসলিমদের দোকানে।

অনাহারে, অর্ধহারে দিনাতিপাত করছে মুসলমানরা। নিহতদের জানাযা তো দূরের কথা তাদের লাশ নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ বাহিনী। চিকিৎসা নিতে পারছে না গুলিবিদ্ধরা। মানবতার লেশ মাত্র নেই সেখানে। মিডিয়াকর্মীদের অবাধ তথ্য সরবরাহের স্বীধানীতা না থাকায় প্রচার হচ্ছেনা নির্যাতনের বাস্তব চিত্র ও সঠিক খবর।

অসংখ্য সেনা বাহিনী শহরে ও গ্রামে টহল দিচ্ছে। সেনাবাহিনী টহল দিলেও রাখাইন সম্প্রদায় লুটপাট ও পল্লীতে অগ্নি সংযোগ অব্যাহত রয়েছে। অবাধে রাখাইন সম্প্রদায় বিচরন করলেও মুসলিম সম্প্রদায় বাড়ী-ঘর হতে বের হতে দিচ্ছেনা ফলে অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এদিকে মিয়ানমারের অনুপ্রবেশকারী গুলিবিদ্ধ একজন রোহিঙ্গাকে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে গতকাল সকালে পুলিশ আটক করেছে। আটক ব্যক্তির নাম তৈয়ব (২৫)।

তিনি মংডুর বাসিন্দা। অন্যদিকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কালা হোসেন (৫০) নামের আরো একজন গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গাকে পুলিশ আটক করেছে । সূত্র জানায়-১১জুন সকাল ৯টারদিকে দাঙ্গারোধে নিয়োজিত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রসদ বোঝাই ২টি হেলিকপ্টার মংন্ডুটাউনশীপে অবতরনের পর চলে যাওয়ার সাথে সাথে একদল উচ্ছৃখল রাখাইন পাশ্ববর্তী রাসিদং, বুমেপাড়া,খাইরীপাড়ায় মুসলিমদের ১৪/১৫টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। মুসলিম যুবকেরা নেভাতে গেলে নাসাকাবাহিনী কারফিউ ভঙ্গ করায় এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। এসব অঞ্চলে খাদ্য,চিকিৎসা সংকট ও নিরাপত্তাহীনতায় মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে।

মুসলিমদের বিভিন্ন গ্রামে থেমে থেমে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও চোরাগুপ্তা হামলা অব্যাহত রয়েছে। মিয়ানমারের মুসলিম ও রাজনৈতিক নেতবৃন্দ রাখাইনদের চোরাগুপ্তা হামলা-লাশ গুম করা বন্ধ, জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ বিতরণ, মানবিক বিপর্যযরোধে আর্ন্তজাতিক হস্তপে ও সহায়তা কামনা করেছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা (আরআরসি) ও সরকারের যুগ্ম সচিব ফিরোজ সালাহ উদ্দিন এই প্রতিবেদককে জানান, মিয়ানমার থেকে নতুন করে কোনো অনুপ্রবেশকারী যাতে টেকনাফ ও উখিয়ার দুটি রোহিঙ্গা শিবিরে ঢুকতে না পারে, সেজন্য শিবিরের পুলিশ ও আনসারদের সতর্কাবস্থায় রাখা সূত্র:http://www.dailynayadiganta.com/details/51960 ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.