আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুরাকীর্তি (পুরানো কীর্তি)-আছাড় বন্দনা

গলাবাজ আর সত্যিকারের লেখক এই ব্লগে টিকে থাকে, আমি কোনটাই না

ঘুমের জগৎটা খুব বিস্ময়কর, কতো রকম সম্ভব অসম্ভব ঘটনাই না ঘটে ঘুমের ভিতর। কখনো ঘুমের ভিতর দেখা দৃশ্য দেখে শিউরে ওঠা লাগে, কিংবা মনে হয় কত উঁচু পাহাড় থেকে পড়ে যাচ্ছি নীচে। অথবা ভয়ংকর একটা প্রাণী তাড়া করে ফিরছে, এত চেষ্টা করছি তবু যেন চিৎকার করতে পারছিনা। সাধারনত ঘুম যখন হাল্কা থাকে তখন এরকম ঘটনা বেশি ঘটে। কাল রাতে ঘুমটা কেবল জুড়ে বসেছে, কেমন করে যেন নিজেকে আবিস্কার করলাম কোন এক পুকুর পাড়ে, আর কথা নেই বার্তা নেই পা পিছলালাম।

আমি পড়ে গেলাম, সারা শরীরটা দুলে উঠলো, অবচেতন মনটা হালকা চেতনায় উঁকি দিলো, বুঝলাম ওটা সত্যি না। আর আধোচেতন অবস্হায় হাসি পেলো খুব, তারপর আবার তলিয়ে গেলাম ঘুমে। সকালে উঠে মনে পড়লো ঘুম পূর্ববর্তী আছাড়ের দৃশ্য। মনে পড়লো ছোটবেলায় নানারকম কায়দায় আছাড় খেয়েছি, কয়েকটা বলি। আমাদের বাসার সামনে একটা আছাড় চত্বর আছে, জায়গাটায় কোন ঘাস নেই, এটেল মাটি, বর্ষাকালে ওখানটা আছাড় খাওয়ার জন্য অতীব উপযোগি।

বাসা থেকে পুকুর যাওয়ার পথে ওটা পড়ে, তাই যাতায়াতটাও বেশি, বর্ষার আগে যদিও ইট বিছানোর তোড়জোড় হয়, বেশ কিছু চমৎকার আছাড়ঘটনা না ঘটলে কেউ আড়মোড় ভাংগেনা। তখন পুরা বর্ষাকাল, বৃষ্টি থেমে গেলে ঐসময়টা হয় আরো ভয়ংকর। তখন বেশ নিয়মিত মসজিদে যেতাম নামায পড়তে। তখন এশার ওয়াক্ত, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে, কারেন্ট ও নাই। আম্মা বললো , যেয়ে কাজ নেই, আজকে বাসায় পড়ে নে।

ঈমানে বলিয়ান হয়ে আম্মার সাথে তর্ক করে অযু করে স্পন্জের স্যন্ডেলটা পায়ে গলিয়ে রওনা দিলাম শুভ কাজে, আছাড় চত্বরে পৌঁছেই আমি একদম যাকে বলে চিৎপটাং। সারা গায়ে কাদা মেখে আর দেহের পিছন অংশে মর্মান্তিক বেদনা নিয়ে সোজা বাথরুমে চলে গেলাম। আম্মা অবশ্য কিছু বলেননি, তবে আমি নিশ্চিত নামায না হয়ে ওটা অন্য কোন কাজে হলে, আমাকে তিনি আরেকবার ধরাশায়ী করতেন। এর পরের ঘটনাটা আমার না, আমার ছোট আপার, ওর সাথে এহেন দুষ্টামি নাই যা আমি করিনি। একদিন দুজনে গেছি পুকুরে গোসল করতে, তখন অবশ্য অতোটা পিছলা ছিলোনা জায়গাটা, তবে দৌড় দিলে সমূহ বিপদ।

গোসল শেষে আসার পথে আপার কি মনে হলো আমাকে বললো, আয় আমরা উল্টো দৌড় খেলি। ঠিক আছে আমিও রাজি, পুকুর পাড় থেকে দুজনেই উল্টো দিকে দৌড়াচ্ছি। হঠাৎ শুনি খুব জোরে ধপ করে শব্দ, পাশে তাকিয়ে দেখি আপা নেই, মাটিতে পড়ে আছে। পায়ে পা জড়িয়ে উল্টা পড়েছে, মাথাটা সরাসরি লেগেছে মাটিতে, সেন্সলেস। ঘর থেকে শব্দ আম্মাও শুনেছে, দৌড়ে এসে অনেকক্ষন পানি ছিটানোর পর আপু চোখ মেললো।

কিন্তু ও তখনও কেমন যেনো ঘোরের ভিতর, আম্মা আমাকে বকার কথা ভুলে গেলেন। তিন চার দিন লেগেছিলো স্বাভাবিক অবস্হায় ফিরে আসতে। পরে অবশ্য আম্মা আর তেমন বকা দেননি। একদিন আমাদের বাসা থেকে দুই বাড়ি পরে এক স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে যাবো। পথের মাঝে আরেকটা বিশাল পুকুর ছিলো, খুব সুন্দর সানবাধানো ঘাট।

খুব বেশি বৃষ্টি হলে ঘাটেও ১/২ ফুট পানি উঠে যেতো, থাকতোও কিছুদিন। তো যাওয়ার সময় দেখি ঘাটে আমার কয়েক বন্ধু, ঘটনা জানার ইচ্ছা জাগলো। যেয়ে দেখি ঘাটের উপরে প্রায় ১ ফুট পানি জমে আছে, ওখানে কিছু নাইরোলি মাছ আর অন্য ছোট মাছ ছুটে বেড়াচ্ছে। সবাই ধরার চেষ্টা করছে, কিন্তু কেউ কাছে গেলেই মাছ গুলি পালাচ্ছে। এত মজার খেলা, অবহেলা করা ঠিক না, আমি বইখাতা গুলো ঘাটের উপরে রেখে প্যান্ট টা হাটু পর্যন্ত গুটিয়ে নামলাম খালিহাতে মাছ শিকারে।

মাছ আমার থেকেও অনেক দক্ষতায় দৌড়াদৌড়ি শুরু করলো। একপর্যায়ে আমি যথারীতি পা পিছলে ১ ফুট পানির ভিতর পড়ে গেলাম। সিমেন্টের মেঝে, পিছনে এমন ব্যথা পেলাম, উহ! মনে হলো ওখানে দুটো শক্ত দলা হয়ে গেছে , পড়ে গেলাম তাতে তো সমস্যা না, এখন এ অবস্হায় পড়তে যাই কি করে। আর বাসায় যে যাবো, আম্মাকে কার্যকারন ব্যাখ্যা করলে আর রক্ষা নাই। অনেক কায়দা করে, সবার চোখ ফাকি দিয়ে চোরের মতো দুইতলায় উঠে, জামাকাপড় চেন্জ করে বের হতে পেরেছিলাম সেইদিন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.