সৃষ্টি সুখের উল্লাসে।
বাংলার প্রাচীনরূপ : চর্যাপদের ভাষাঃ-
চর্যাপদের কবিতাগুলো প্রচীন বাংলা ভাষায় লেখা। প্রাচীন বাংলায় লেখা হলেও চর্যপদের শাব্দিক অর্থ ও ভাব বোঝা খুবই কঠিন। মুনিদত্তের লেখা সংস্কৃতি ভাষার টিকা না পাওয়াগেলে এর অর্থোদ্ধার দুরূহ হয়ে পড়ত। কেও কেও চর্যাপদের ভাষাকে অপভ্রংশ, প্রাচীন হিন্দি, মৈথিলি, উড়িয়া বা আসামি ভাষা বলেছেনে।
তবে ডঃ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ তা নাকচ করে বলেছে একই ভাষা গোষ্ঠীজাত বলে উক্ত ভাষাগুলোর সাথে মিল থাকলেও মূলত চর্যপদের ভাষা বাংলা।
চর্যাপদের ভাষার বৈশিষ্ট্য:
বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন হিসেবে চর্যাপদের ভাষার ব্যকরণগত সে সকল বৈশিষ্ট্যলক্ষ করা যায় বা হল--
১. স্বর ও ব্যঞ্জনবর্ণের ধ্বনিগত বিশেষত্ব আধুনিক বাংলা ধ্বনির মত।
২. সংস্কৃতি বানানে সর্বত্র এক নিয়ম পালন করা হয়নি। যেমন: সবর, শবর।
৩. হ্রস্ব ও দীর্ঘ্য উচ্চারণের কোন নিয়ম ছিল না।
যেমন: পঞ্চ, পাঞ্চ।
৪. চর্যাপদে শ,ষ,স তিনটি বর্ণের পার্থক্য ছিল না। যেমন: সবর, শবর, ষবরাণী। তেমনি জ,য এবং ন ও ণ-র মধ্যেও পার্থক্য ছিল না।
৫. চর্যাপদে পুং ও স্ত্রী লিঙ্গের পার্থক্য থাকলেও ক্লীব লিঙ্গ ছিল না।
৬. শব্দরূপের গঠনে একবচন ও বহুবচনের তফাত নেই।
৭. একবচনে কতৃ, কর্ম, করণ ও অধিকরণ কারকে কোন বিভক্তি ব্যবহৃত হত না। যেমন: "সসুরা নিদ ভেলি বহুড়ী জাগই। "
সন্ধাভাষা:
হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে চর্যাপদের ভাষা সন্ধাভাষা। কারণ চর্যাপদের ভাষায় আলো-আঁধারির লুকোচুরি দেখা যায়।
কিছু বুঝাযায় আবার কিছু দুর্বোদ্ধ থেকে যায়। মুনিদত্ত সংস্কৃত টীকার মাধ্যমে সন্ধাভাষাকে সহজ করার চেষ্টা করেছেন। তবে চর্যার ভাব যে দ্ব্যর্থক ও রূপাত্মক সে বিষয়ে কারো কোন মতানৈক্য নেই। আসলে নিছক কবিতার জন্য চর্যপদ লেখা হয়নি। আমাদের প্রাচীন কবিরা ছিলেন বৌদ্ধ বাউল সাধক।
তারা সাধনা করতেন গোপন তত্ত্বের। সে তত্ত্বগুলো যাতে সাধকরাই বুঝতে পারে, সাধারণ লোকের হাতে পড়ে যাতে বিকৃত না হয় সে জন্য সন্ধাভাষার ব্যবহার চর্যাপদে পরিলক্ষিত হয়। চর্যাপদ পড়ার মানে হল চমৎকার ধাঁধার ভেতর প্রবেশ করা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।