আমি আমার "বাস্তব" কর্মব্যস্ত জীবনের ফাকে একটু বিনোদনের আশায় সুধু মাত্র ফান/মজা/টাইম পাশ/বন্ধুত্ব/দুষ্টামি করার জন্যেই আমার " "ভার্চুয়াল লাইফ" ব্যাবহার করি। আমার কোনো কমেন্টে বা পোস্টে কেউ যদি আঘাত পান, তাহলে সরাসরি জানাবেন, আমি“প্রকাশ্য সরি” বলে দিব। এটা ছিল আসমত পাগলের প্রিয় গান। যেটা আমারো খুব প্রিয় তাই আজ এই লিখা।
সে অনেক কাল আগের কথা।
আমাদের গ্রামে এক পাগল ছিল, নাম আসমত পাগলা। সে পাগলামি কথাবার্তা বলত। যেমন এক দিন হাটে এসে মানুষে বলে “আমার ছাগলে কথা কয়”, “আমার ছাগলে কথা কয়”।
মানুষ সেটা পাগলের প্রলাপ মনে করে কান দিল না, কিন্তু দেখা গেল সে তার ছাগল বিক্রি করে একটা রেডিও কিনেছে, তাই তার বুদ্ধি(?) মতে এখন থেকে ছাগলই কথা কয়।
আরো একটা উদাহরন দেই, একবার সে এক মন্দিরে গিয়ে মুর্তির মত আসন গেরে বসে থাকে।
মুর্তিদের সামনে পুজা দেবার জন্যে যত খাবার মানুষ রাখে সে সব খেয়ে ফেলে। তার এইরুপ “অত্যাচারে” গ্রামের হিন্দু “সমাজ” খেপে যায়। এমনকি মুসলিম সমাজ পতিরাও চিন্তিত হয় যে এই পাগলে যদি আবার মসজিদে হানা দেয় তখন কি হবে????
সমাজের সবাই খুব রাগান্বিত হয়ে এক গ্রাম্য সালিস বসায় আসমত পাগলের বিচার করার জন্যে। অতি উতসায়িত কেউ কেউ আবার দুই-চার “ঘা” বসিয়ে দেয় এই নিরিহ পাগলের পিঠে।
বিচারে সুশীল সমাজ পতিরা আসমত পাগলে’কে জিজ্ঞাসা করে “তুই এমন কাজ করিস কেন?” আসমত পাগলের উত্তর ছিল “আমি অভাবি মানুষ,আমার খিদা লাগে, আমাকে কেউ খাওন দেয় না, কিন্তু মাটির মুর্তি যার খিদা নাই তার সামনে আপনেরা খাওন দেন, সে খাইতে পারেনা তাই আমি খাই।
তার এই সহজ সরল উত্তরে সমাজ পতিদের সেদিন মন গলেছিল কিনা জানি না, তবে আমার মনে ঠিকই দাগ কেটেছে।
আসমত পাগলের ছিল নিজের প্রতি অনেক বেশি বিশ্বাস যেটা আজকের সমাজে আমরা “কনফিডেন্স” বলি। সে অনেক খানি সমাজ বহির্ভুত ছিল। তাতে তার কিছু এসে যেত না। সে একাই নিজের বাজার, রান্না বান্না, ঘরের কাজ কর্ম করত।
সে রাত বিরাতে হ্যারিকেন ছাড়া একা একা চলা ফিরা করত।
সে তার নিজের বাক স্বাধীনতার চরম ব্যাবহার করে। যেমন একবার এক বিয়ে বাড়ীতে গিয়ে মাইকের মাইক্রফোন কেড়ে নিয়ে নিজের ইচ্ছা মত গান গাওয়া শুরু করে। কেউ তার গান শুনুক বা নাশুনুক। তার সে দিকে খেলায় নেই।
আরএকবার মসজিদের সামনে হেড়ে গলায় “আলিফ জবর আ” “আলিফ জবর আ” বলে চিৎকার করা শুরু করল। মুসল্লিরা ক্ষিপত হয়ে তার উপর চড়াও হতে চাইলে সে বলেঃ “সে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইছে”, যেহেতু সে নামাজ পড়তে পারে না বা আর্বি সুরা জানেনা, তাই সে যে টুকু পারে তাই বলেই আল্লাহ কাছে দোয়া করছে।
আসমত পাগলা তার নিজ বাক স্বাধীনতার চরম ব্যাবহার করলেও কখনো কাউকে গালি বা কটু কথা বলে নাই। এতে মনে হয় সে তার “বাক দায়িত্বশীলতা” সম্পর্কেও সজাগ ছিল।
আসমত পাগলের মনে যা আসে সে তাই বলে এবং তাই করে।
কোনো রুপ চিন্তা ভাবনা করে না, কারো লেজুড় বৃত্তি করে না, কাউকে তৈল দেয় না বা কারো ধার ধরে না। কোনো ভন্ডামি করে না।
আসমত পাগলা’কে আজও আমার মনে আছে তার আরো কিছু কর্মকান্ডের জন্যে। একবার সে তার নিজ ঝোপের বাঁশ কেটে রাস্তায় চার (বাঁশের সাকো) বানাচ্ছিল। তাকে জিজ্ঞেস করাতে সে বলে “ছুট ছুট বাচ্চারা যেন স্কুলে যাইতে পারে, জামাজুতা যানি না ভেজে তাই এইডা বানাইতাছি”।
গ্রামের বাচ্চাদের সে সকালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিয়ে আসত এবং দলবদ্ধ করে স্কুলের পথে পাহারা দিয়ে নিয়ে যেত। তার মত পাগলকে যেহেতু কেউ বিয়ে করে নাই তাই তার কোনো ছেলে মেয়েও হয় নাই। হয়তবা এর জন্যে বাচ্চাদের সাথে ছিল বেশি ভালবাসা।
তার এই সব কাজ কর্ম প্রায় লোকই ভাল চোখে দেখত। তবে ব্লগে যেমন কিছু কুটিল থাকে তেমনি সেই গ্রামেও কিছু বখাটে ছিল।
তারা আসমত পাগল’কে ভাল ভাবে মেনে নিতে পারত না। কারন তার ভয়ে স্কুলের মেয়েদের কে “উত্তাক্ত” করা যেত না। তাই প্রায়ই বখাটেরা তাকে বকা ও গালি দিত। তখন আসমত পাগলা এই গানটি গাইত “আমি কারো খাই না পরি?? না কারো চাকুরি করি? আমাকে যখন তখন মন্দ বলা চলবে না। শোনো গো ললনা......””
আসমত পাগলা’কে আমি দেখছি মাত্র দুই বছর।
যে দুই বছর আমার পরিবার আমাকে বনবাসে পাঠিয়েছিল। হ্যা, বাস্তবিক অর্থেই বনবাসে পাঠিয়েছিল। আমার অতি মাত্রায় বাঁদরামির ও সারাদিন ভিডিও গেমস নিয়ে পরে থাকার জন্যে পড়াশুনা “চাঙ্গে” উঠছিল। সবাই চিন্তিত হয়ে ঢাকার এক বিখ্যাত আবাসিক প্রি-ক্যাডেট স্কুল নামক “আবাসিক জেল খানায়” আমাকে ভর্তি করেছিল। কিন্তু ঢেকি যেমন সর্গে গিয়েও ধান বাধে, তেমনি সেখানেও আমার বাঁদরামি অব্যাহত ছিল।
এতে “সুশীল সমাজের, অন্যান্ন সুশীল ছেলেমেয়েরা” ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাই আমাকে আমার প্রিয় জন্মস্থান ঢাকা থেকে বিচ্ছিন করে এক অজপাড়াগার এক গ্রাম্য হোস্টেলে ভর্তি করা হয়।
যে আমি নিজের হাতে মাত মাখানো তো দূরের কথা, জুতোর ফিতেও বাধতে পারি না, সেই আমি একা একা থেকেছি দুই দুইটি বছর। ঐখানে “পড়শুনা” ও “ভদ্রতার” পাশা-পাশি শিখেছি একা চলা, কারো উপর নির্ভর না করা, নিজের প্রতি আস্থা রাখা, নিজের তৈরি পথে নিজে চলা, আর আসমত পাগলার কাছ থেকে জেনেছি “বাক স্বাধীনতার” মন্ত্র।
হ্যা আমি কথা বলব। আমি আমার মত করে কথা বলব, কাউকে ট্যাক্স দিয়ে বা ভয় করে কথা বলতে পারব না।
এই দেশ স্বাধীন দেশ, আমার বাবা মা এই দেশ স্বাধীন করছে, আমাদের স্বাধীন ভাবে মত প্রকাশ করার জন্যে। বাংলাদেশের সংবিধানেও সকল নাগরীক’কে স্বাধীন ভাবে মত প্রকাশের অধিকার দিয়েছে।
আমি তো কাউকে গালি দিয়ে বা ব্যাক্তি আক্রমন করে কিছু কোনো দিন বল নাই, একজন আসমত পাগলের মধ্যে যদি “বাক দায়িত্বশীলতা” থাকতে পারে তাহলে আমার ভিতরেও আছে।
আমি যখন প্রকাশ্যে সভা সেমিনারে পাকিস্তানিদের বিরোধিতা করে মত প্রকাশ করি তখন আমাকে কেউ “ভাদা” ভাবলে সেটা তার মানসিক সমস্যা।
আমি যখন ইউল্যাবের ঘটনা নিয়ে চিল্লা ফাল্লা করছি তখন কেউ আমাকে সুবিধা বাদী ভাবলে সেটা তার নিচুমনতা।
আমি যখন ইভটিজিং এর জন্যে নারীর পোশাক’কে দায়ী না করে পোস্ট দেই তখন কেউ “ইসলাম বিরোধী” ভাবলে সেটা তার অজ্ঞতা।
আমি যখন রুশানকে নিয়ে পোস্ট দেই তখন কেউ আমাকে সুবিধা বাদী “হীট খোর” ভাবলে সেটা তার নিচুমনতা।
আমি যখন সমাজে ধর্ষনের প্রতীবাদের ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে রাস্তায় মিছিল করি তখন কেউ আমাকে “লাইম লাইটে আসার ভন্ড” ভাবলে সেটা তার অপরিপক্বতা।
সামু ব্লগ’কে একটি পরিবার মনে করে এই পরিবারে অনেক সদেস্য/ব্লগারের পোস্টে আমার ফান বা স্যাটায়ার মন্তব্য’কে কেউ যদি না বুঝে “খারাপ দৃষ্টিকোন” থেকে দেখে, তাহলে সেটা তার অক্ষমতা।
তাই আজ আমি জোর গলায় এবং অহংকার করেই বলি, কেউ যদি আমাকে লুল/ / ভাদা/পাদা/ছাগু ইত্যাদি ট্যাগ দিতে চাও তো দাও।
তোমার মত “সুশীল” আমাকে ট্যাগ-ফ্যাগ দিলে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। কারন আমি কারো উপর ডিপেন্ডেট নই, না কোনো ব্যাক্তি/গোস্টির কাছে, না কোনো সমাজের কাছে। তথাকথিত সমাজ আমাকে তৈরি করে নি, আমি আমার সমাজ নিজেই তৈরি করি।
আমি নিজেকে বদলাতে পারব না।
পারব না “সুশীলের” মুখোশ পরে ভন্ডামি করতে,
পারব না নিজের জীবন যাত্রা বদলাতে,
আমি নিজের পথ ও মত থেকে এক বিন্ধুও সরে দাড়াব না।
এতে প্রান গেলেও যাক, আর ব্লগ তো সামান্য বিষয়।
_________________________________________________
পুনশ্চঃ ইহা কোনো সাহিত্য কর্ম নয় যে নির্বাচিত পাতায় নিতে হবে, বা ইহা কোনো স্যাটায়ার পোস্ট নয় যে ঊচ্চ মর্গিয় জ্ঞানি মন্তব্য করতে হবে। ইহা একটি পাগলের প্রলাপ, তাই কানের এক পাশ দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য পাশ দিয়ে বের করে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।